সালাম আজাদী ভাই !! শুনতে পাচ্ছেন ? আমি আপনাকে ভালবাসি !!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ মার্চ, ২০১৫, ০৫:২৮:০২ সকাল
আজ সকালে লম্বা দৌড় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া তেমন সুবিধার না হওয়াতে শুয়ে থাকলাম। ব্লগে অনেক সময় কাটালাম,বিভিন্ন স্কলারদের লেকচার শুনলাম অনলাইনে তারপর ভাবলাম কিছু একটা লিখি কিন্তু কি লিখব সেটা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। দুপুরে পিস.টিভি দেখলাম আর দেখি সালাম আজাদী ভাই কথা বলছেন।
ইনার কথা এত মিস্টি যে,কারো কাছে তার কথা পৌছালে তিনি এই লোকটির কথা ফেলতে পারবে বলে মনে হয়না। অত্যন্ত আবেদনময়ীভাবে তিনি কথা বলেন। বিষয়বস্তু খুবই সাধারণ কিন্তু তার উপস্থাপনটা দারুন। উনার কথা শুনে মনে হচ্ছিল,আমি পেছনের সেই সময়ে ফিরে গিয়ে ঘটনা বাস্তবে দেখছি।
তিনি হিজাবের ব্যাপারে বলছিলেন এবং এই ব্যাপারে সাহাবাদের ডেডিকেশন তুলে ধরলেন। তার যে বিষয়টা আমাকে হিট করল তা তুলে ধরছি।
আমাদের ভেতর ইসলামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে হীনমন্যতা কাজ করে। এটা না বোঝার কারনে হতে পারে আবার বুঝেও লোক লজ্জার কারনে হতে পারে। সে কি ভাববে? এটা মাথায় আসার পর এমনটা হতে পারে। আর এ কারনে আমরা অন্যকে ইসলামের ব্যাপারে বলতে লজ্জা পাই। দেখা যায় স্ত্রী,বোন,আপনজন বা আত্মীয়দের অনেকে বেপর্দা চলছে কিন্তু অত্যন্ত মনোরমভাবে তাদেরকে হিজাবের কথা বলিনা। অথচ যখন পর্দার আয়াত নাযিল হল তখন পুরুষরা তাদের নারীদেরকে নির্দেশ দিলেন এবং তারা তা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিলেন। তারা চিন্তা করার সময়ও নেননি,কারন এই আদেশ এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আবার যখন আয়াত নাযিল হল-নারীরা তাদের মাথার কাপড় এমনভাবে রাখবে যাতে তাদের বুক ঢেকে যায়। এটা নারী সাহাবীরা শোনার সাথে সাতে সেই কাপড়টা চিরে এমনভাবে পরলেন যাতে সমস্ত বুকের অংশ ঢেকে যায়। এটাই ডেডিকেশন। এ কারনেই তারা সাহাবা। তারা কোনো আদেশ শোনা মাত্রই ঝাপিয়ে পড়ে আমল করতেন। আর এজন্যেই তারা কল্যানের উপর আছেন আর আল্লাহ তাদেরকে সর্বাধিক সম্মানিত করেছেন।
আজাদী ভাই দুটো উদাহরণ আনলেন যা আমার মাথায় গেথে গেছে। মূত লজ্জা ঈমানের অংশ এবং রসূল(সাঃ)বলেছেন তোমার যদি লজ্জা না থাকে তবে যা খুশী তা করতে পারো।-বুখারী
পর্দা মূলত লজ্জারই অংশ। আর লজ্জা শালিনতা আল্লাহর পছন্দ। এ কারনে একজন মুসলিম মহিলা শুধু বাধ্য হয়েই নয়,বরং তার লজ্জার কারনেও পর্দা করে। আর সবকিছু সে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করে। এই লজ্জার দুটো উদাহরণ তিনি দিলেন।
১. হযরত আয়েশার(রাঃ)কাছে হযরত ওমর আবেদন করেছিলেন আবু বকর,রসুল(সাঃ)এর কবরের কাছে যেন তাকে দাফন করা হয়। আয়েশা(রাঃ)বললেন-ঠিক আছে আমি রাজি,যদিও স্থানটি আমার জন্যেই মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। এর কিছুকাল পর ওমর(রাঃ)মৃত্যুবরন করেন। আর তাকে সেখানে দাফন করা হয়। মা আয়েশা(রাঃ)বলেন এরপর যখনই আমি কবরগুলোর কাছে যেতাম,আমি পর্দা করতাম। যদিও তারা জিবিত নন,তারপরও ওমর সেখানে শায়িত থাকার কারনে আমার লজ্জাবোধ প্রবল হত,মনে হত তিনি বোধহয় দেখতে পাচ্ছেন...
আমি খেয়াল করলাম মা আয়েশার পয়েন্ট অব ভিউ কত মারাত্মক পর্দার ব্যাপারে। সুবহানআল্লাহ !
২. রসূল(সাঃ)এর কন্যা ফাতিমা(রাঃ) জান্নাতের নারীদের সর্দার। তিনি একজন মহিলা সাহাবীকে বলেছিলেন আমার জন্যে একটি খাটিয়া বানাতে চাই। সেটি এমন খাটিয়া যার দুপাশে উচু রেলিং থাকবে তার উপর আমাকের শোয়ানোর পর উপরে খেজুর পাতা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। যাতে মরার পরও আমার অবয়ব মানুষ স্পষ্ট বুঝতে না পারে। আর আমাকে গোসল এবং দাফন করাতে হবে রাতে্। উনার মৃত্যুর পর তার ওসিয়ৎ মোতাবেকই কাজগুলো করা হয়।
যদিও মৃত্যুর পর মানুষ আর তার দেহের ব্যাপারে দায়ী হয়না,তারপরও তারা এতটাই লাজুক ছিলেন যে তাদের মৃত্যুর পরের কথাও ভেবেছেন। মূলত এই লজ্জাবোধটিই পর্দা। আর অন্যের সামনে নিজের শারিরীক প্রকাশ না ঘটানোটা হল আল্লাহর নির্দেশ,যার মাধ্যমে তার অন্তরের সেই লজ্জাশীলতা রক্ষিত হয়। এই বিষয়টিই সালাম আজাদী ভাই দারুন করে তুলে ধরলেন আর তার সুমিষ্ট কথায় পাশে থাকা গ্রীন টি খেতে থাকলাম। তার কথা আমার গ্রীন টির উপরও যেন প্রভাব বিস্তার করল এবং সেটার স্বাদও সুমিষ্ট হয়ে উঠল।
জাজাকাল্লাহ ভাই জাজাকাল্লাহ খায়রান। আল্লাহ আপনাকে অতি উত্তম প্রতিদান প্রদান করুক ! আল্লাহ আপনাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন ! আল্লাহ আপনাকে সর্বোত্তম স্থানে থাকা রসুল(সাঃ)এর কাছাকাছি থাকার ববস্থা করুন ! আপনি যেন হন সেইসব মানুষদের অন্যতম,যারা আল্লাহর পথে থেকে সর্বোচ্চ সফল হয়েছেন।
সমালোচনা: আপনি একটা হাদীস উল্লেখ করেছেন-এক লোক রসূলকে(সাঃ) বলল-আমি আপনাকে ভালবাসি,জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। তিনি(সাঃ) বললেন-তুমি এ ব্যাপারে আমাকে সাহায্য করো বেশী বেশী সেজদার মাধ্যমে।
আপনি এরপর কিছু দুর্বল কথা বলেছেন। বলেছেন,আমরা তো আর তেমন হতে পারব না ! এরপর আপনার ভয়েস যেমন হওয়া উচিৎ ছিল তেমন বলিষ্ঠ হয়নি্ (আমার দৃষ্টিতে)। মনে হয়েছে আপনি বলিষ্ঠ আশার স্থলে দূর্বল বা হতাশার অবস্থায় গিয়ে কথা বলছেন। আমার ধানা মতে এসব হাদীসের শিক্ষা হচ্ছে আমরা এমনভাবে আশান্বিত হব যেন আমিও হতে পারি সেই সাহাবীর মত। এটা সম্ভব। আল্লাহর রহমতের উপর আস্থা থাকবে হিমালয়ের চাইতে কঠিন এবং দৃঢ়। বক্তব্যের ওই অংশে আমি আপনার কন্ঠে হিট আশা করছিলাম। ইনশাআল্লাহ আমরাও হতে পারি সেই সাহাবীর মত ....এর উপর আরও বেশী জোর দেওয়া আমার দৃষ্টিতে উচিৎ ছিল বলে মনে হয়েছে।
একটা হাদীসে পড়েছিলাম রসূল(সাঃ)বলেছেন-তুমি তোমার ভাইকে ভালবাসলে তাকে তা জানাও...সহি হাদীস,তবে ভাষাটা হুবহু হয়নি
সালাম আজাদী ভাই, আমি আপনাকে আল্লাহর জন্যেই ভালবাসি,খুব ভালবাসি। অন্তর থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সমালোচনার জন্যে আন্তরিক দৃ:খিত।
বি:দ্র: সেদিন আমার ছোটবোন আমাকে বলল-ভাইয়া, আমি পর্দা করা শুরু করেছি। আমি জানি এটা শুনে তোর মত এত খুশী আর কেউ হবেনা।....সত্যিই আমি মারাত্মক খুশী হয়েছি।
পিস.টিভিকে ধন্যবাদ। আজাদী ভারে কাছে অনরোধ,আপনি এ ব্যাপারে ভাবুন,কিভাবে বাংলার গৃহবধুদেরকে হিন্দি সিরিয়াল থেকে বাইরে আনা যায়। যারা ঘরে আছে তাদের জন্যে একটা কম্পিলিট প্যাকেজ নিয়ে যদি বলতেন,তারা অনেক উপকৃত হত। এটা অতি জরুরী।
বিষয়: বিবিধ
৩১১২ বার পঠিত, ৫২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যারা দীনের কথাগুলো সুন্দর ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন তাদেরকে সর্বত্তম পন্থায় আল্লাহর দীনের দাওয়াত দিতে হবে মানুষের মাঝে যাতে আলতু ফালতু বয়ান কারীরা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে।
ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহু খায়রান প্রিয় ভাই, আহাব্বাকাল্লাহু বিমা আহববাতানী ফীহ।
ব্লগের জগতে নিয়ে এসেছিলেন আমার এক ছাত্র, জোর করে একটা নিক 'আবু আফরা' ও ইউজার নেইম ও পাস ওয়ার্ড ও তার তৈরি। এর পরথেকে যাদের সাথে প্রতিটি দিনের উঠা বসা তারা এই ব্লগার সমাজ। আল্লাহ আমাকে যেন তাদের সাথেই রাখেন এবং জান্নাতে যাওয়ার একটা পথ করে দেন।
আমি আমার প্রিয় ভাই এর জন্য দুআ করছি, আপনার প্রশংসা আমাকে উদ্বেলিত করেছে। ভাই, আপনাকে আল্লাহ উম্মাতের জন্য কবুল করুন।
আমরা অনেক ছোট, জানার জগতে, লিখার জগতে একেবারেই শিশু, আপনাদের মত বিদ্বান লোকদের সাহচর্য খুবই দরকার, আশা করি মাঝে মাঝে এসে সংগ দিয়ে আমাদের ধন্য করে যাবেন।
আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম হায়াত দারাজ করুন। আমিন।
আল্লাহ আপনাদের দুজনকেই উত্তম প্রতিদান দান করুন ।আমীন ।
তৈরী হবে।
যারা দীনের কথাগুলো সুন্দর ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারেন তাদেরকে সর্বত্তম পন্থায় আল্লাহর দীনের দাওয়াত দিতে হবে মানুষের মাঝে যাতে আলতু ফালতু বয়ান কারীরা সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে।
ধন্যবাদ। সহমত
আমি সেদিন ব্লগে একটা কমেন্ট পড়ে খুব হাসছিলাম, আমার পতিজ্বী পাশে শুয়ে বই পড়ছিলেন! হাসির কারন জানতে চাইলেন , আমি বললাম! উনি শুধু বললেন- ব্লগে লিখা ও মন্তব্য করার ব্যাপারে তোমার কলমকে হিজাব পড়াও! আমি চিন্তিত আছি এ বিষয়টা নিয়ে এখন! দোআ করবেন! জাযাকাল্লাহু খাইর!
আলহামদুলিল্লাহ্। আল্লাহ্ তাকে এই পথে অটল অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন। সত্যি আমাদের বোনেরা যদি বুঝতে পারতো, তাদের পর্দা করায় আমরা কি পরিমাণ সুখি হই, তাহলে পর্দা করায় ঝাপিয়ে পড়ত! আমার ৫বোনের মধ্যে ছোট বোনটাই যথাযথভাবে পর্দা করে, তাঁর স্বামীও পর্দা করা পছন্দ করেন এবং সে অনুযায়ী নার্সারিং করেন, অন্যেরাও মানুসিকতার দিক থেকে ভাল, আমি চেষ্টা করছি, তাদের মাঝে পর্দার বিষয়টি ব্যপকভাবে অনুশীলন করার জন্যো, আমার জন্য দোয়া করবেন।
আজাদী ভাইয়ের লেকচার আমি শুনিনি, শুনেছি, পড়েছি আপনার অসম্ভব ভাললাগায় ভরা উপস্থাপনা, সত্যি দারুণ বলেছেন সালাম আজাদী ভাই, আল্লাহ্ উনার কণ্ঠে বরকত দিন।
আল্লাহ্র রাসূল যথার্থই বলেছেন, লজ্জা না থাকলে তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো, তাই দেখা যায় বোরকা পড়েও প্রকাশ্যে নোংরামী করে বেড়াতে। লজ্জা না বলেই বোরখা পড়েও বোরকার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে নি! কিছু বিপথগামী বোরকা পরিহিতা ছাড়া, যথাযথভাবে পর্দা পালনকারী মা বোনেরা কখনই পাপ কাজে পা বাড়াতে পারে না, লজ্জাই তাদের আটকে দেয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, সালাম আজাদী ভাইয়ের কথাগুলো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, পাশাপাশি নিজের বক্তব্য তুলে ধরার জন্যও।
তবে দ্য স্লেভ ভায়ের এই উদ্যোগে আমি খুব লজ্জিত হয়েছি, এবং বেশ ছোট মনে হয়েছে নিজকে।
আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। আপনাদের কে অনেক মর্তবা দান করুন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন