আজকের দিনটা খুবই আনন্দময়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ মার্চ, ২০১৫, ০১:৪৪:২৫ রাত
আজ শুক্রবার। আমি খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি। এরপর সাধারনত ঘুমাতাম কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ আমি এরপর নেটে আসি। অনলাইনে কিছু খবরাখবর পড়ি এবং ব্লগে ঢুকি। ব্লগাররাই যেন আমার আপনজন। একজনকে ছাড়া আর কাউকেই কখনও দেখিনি তারপরও কেন যেন অতি আপন মনে হয় এদেরকে। এটার কারন হল,আমাদের অনুভূতি এক। আমরা মুসলিম এবং এক দেহ। আমরা যেখানেই থাকি না কেন,কুরআন সুন্নাহ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার কারনে আমরা একে অপরের আপন জন। রক্তের সম্পর্কের চাইতে এই বন্ধ অতি শক্তিশালী। জীহাদের ময়দানে এক মুজাহিদ তার মুসলিম ভাইয়ের সহায্যের জন্যে জীবন দিতে পারে,কিন্তু তার নিজ সন্তান যদি কাফির পক্ষে অবস্থান করে তাহলে সে তার বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে এবং সামনে পেলে তাকে ছেড়ে দেয় না। এমন প্রচুর উদাহরণ ইতিহাসে আছে। আমি সেই বন্ধনের জন্যেই এখানে।
অামি জাতে খাদক,তালে মুসলিম। পূর্বে অলিভ খেলে আমার মুখ জুতিয়ে আসত। উপকার আছে ভেবে দু একবার খেয়েছিলাম কিন্তু মনে হয়েছে-এ জিনিস মানুষ খায় কিভাবে ? আর এখন আমি এ জিনিস খুবই পছন্দ করি। গতকাল বড় সাইজের ২ বোয়েম কিনলাম। অলিভের ভেতর থেকে বিজ বের করে সেই স্থানে রসুন অথবা হালাপেনীয় পেপার ঢুকানো থাকে। কিন্তু এক বসাতেই আধা কেজী উধাও। নিজেই অবাক হলাম,খাদক ! তাই বলে এরকম খাবি ??
ঢাকায় থাকতে নিয়মিত শরীর চর্চা হত কিন্তু এখানে পার্টনার না থাকাতে ভাল লাগেনা। একা একা অনেক কিছু করা যায় না। আমেরকিানরা মোটামুটি অলস জাতের। ফিগার নিয়ে এরা মাথা ঘামায় না। কিন্তু আমি আবার সচেতন। খাওয়ার পর সেসব আবার পুড়িয়ে শরীরে এনার্জী না ঢুকালে খাওয়ার মানেই হয়না।
আজ পণ করেছিলাম। একটু ওয়ার্মআপ করে দিলাম দৌড়। একস্থানে দৌড়ালে একঘেয়েমী লাগে তাই আজ লম্বা দৌড় দিলাম। হাট,মাঠ পার হয়ে বহুদূরের ফসলের ক্ষেত চলে গেলাম্ । দৌড়ানোর সময় বিশেষ কিছু তসবীহ পাঠ করছিলাম আর সেগুলো শেষ হলে অনেক রকম চিন্তা করছিলাম।
জীবন সম্পর্কে নানান চিন্তা আসল। পৃথিবীতে বসবাসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে,অনাগত ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নানান চিন্তা আসতে থাকল। ছোট্ট একটা জীবনের জন্যে পৃথিবীতে টিকে থাকার প্রয়োজনে মানুষ কত কি না করছে ! মানুষের যেন হুশ নেই তার গন্তব্য সম্পর্কে। গত কিছুদি যাবৎ আমার মনটা বেশ অস্থির চঞ্চল ছিল,তার জন্যে আল্লাহর কাছে দোয়া চাচ্ছিলাম্ । আল্লাহ আমাকে স্থিরতা দান করেছেন। আজ আবারও চিন্তা করলাম,ইয়া আল্লাহ আমার ভেতর হতাশা তৈরী হয়,আশা আর নিরাশার দোলায় দুলি,অনেক সময় খুব খারাপ লাগে,কষ্ট হয়,জানি এটাই জীবন কিন্তু আপনিই তো এসব সৃষ্টি করেছেন,তাই আপনিই আমার ভেতর থেকে এগুলোর স্থলে এমন ানুভূমি সৃষ্টি করুন যার কারনে আমার অনেক ভাল লাগে। আর আমাকে আপনার উপর অবিচলিত রাখুন। আপনি ছাড়া আমার আর কেউ নেই। সত্যিই কেউ নেই। আমি একা। আমি শুধু আপনাকেই অভিভাবক জানি।
দৌড়ানোর এ পর্যায়ে আমি একটি স্কুলকে অতিক্রম করছিলাম,আমার সামনে ছিল একটি রেলওয়ে ক্রসিং,আমি সুন্দর পুটপাথের উপর দিযে দৌড়াচ্ছিলাম। আমি হঠাৎ সে অবস্থায় দুহাত উপরে তুললাম এবং আকাশের দিকে তাকালাম। মনে হল আকাশের মালিক আমাকে দেখছেন। আমি বললাম আমার আত্মাকে প্রশান্ত করুন। আমি আপনার জন্যেই,আর আপনার দিকেই আমার যাত্রা।
হঠাৎ এক সুন্দর আলোড়ন হল আমার দেহ মনে। ছড়িয়ে পড়ল তা সকল স্থানে। এক সুন্দর ভাললাগা কাজ করতে থাকল। মনে হল আমি পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ। খুব ফুরফুরে মনে হল। শরীরে যেন আরও শক্তি পেলাম। আমি মনের আনন্দে দৌড়াতে শুরু করলাম।
প্রায় দেড় ঘন্টায় আমি ১৫ কি:মি: দৌড়ালাম। শেষে বেশী জোরে দৌড়ে সমাপ্ত করলাম এবং আরও কিছুক্ষণ ওয়ার্মআপ করে সদ্য রান্না করা গরুর মাংস পাউরুটি দিয়ে খেলাম। ব্যপক মজা পেলাম। এখন ব্লগ লিখছি আর অলিভ খাচ্ছি। এই জিনিস খুবই দারুন। আল্লাহ সূরা তীনে এর শপথ করেছেন। আর সে কারনেই মুলত এর প্রতি আমার একটা ভালবাসা তৈরী হয়েছে,নইলে এই জিনিস খাওয়ার চেষ্টা আমি করতাম না। আমি পাপী হলেও আমার আল্লাহকে আমি খুব ভালবাসি। আমি আমার সকল বিষয় তাকে জানাই। আর আমার তখন মনে হয় তিনি যেন ফেরেশতাদের বলছেন-ওই পাগলাটা আহাম্মক হলেও ওর কাছে থেকো.......
ব্লগে সন্ধ্যাতারা নামক একজন ব্লগারের প্রতি-মন্তব্য পড়ে আমার দৌড়ানোর সময়ের অনুভূতির কথা মনে হল। যে সময়ে উনি মন্তব্য করেছিলেন,হিসাব করে দেখলাম সম্ভবত সেই সময় আমি উক্ত স্কুলের কাছে ছিলাম এবং তখন হঠাৎ করেই আল্লাহ আমার ভেতর এক প্রশান্তি দান করলেন,যা আমি অনুভব করতে পারলাম। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাকে আমি বোন বলেছি। জানিনা কেন করেছি কিন্তু হঠাৎ মনে হল। আল্লাহ যেন তার উপর শান্তি বর্ষিত করেন সবসময় ! সকল ব্লগাররা আমার আপন জন। আপনারা আমার জন্যে দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সকল সময়ে আমাকে শান্তিতে রাখেন।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪০ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ফুলেল শুভেচ্ছা...।
চমৎকার,সাবলীল বর্ননায় আপনার সকালের কাহিনী পড়লাম! আপনি যখন আপনার মনের অনুভূতি লিখেন তা সত্যি পাঠকের মনকে স্পর্শ করে! আলহামদুলিল্লাহ!
জাতে খাদক হলেও সর্ববস্থায় মুসলিম থাকুন এই দোআ আপনার , আমার, আমাদের সবার জন্য!
সুন্দর অনুভূতিসম্পন্ন মন ছোঁয়া ভালোলাগাময় লিখাটির জন্য আন্তরিক শুকরিয়া! জাযাকাল্লাহু খাইর!
আপনি আমার বোন না হলে মোবাইল দিয়ে গুলি করে দেব.....আপনি অলরেডি...দোয়া করেন যেন আমরা জান্নাতে দেখা করতে পারি।
জাতে খাদক, তালে মুসলিম! স্বভাবে ঈমানদার!
ব্লগের লেখক পাঠক সবাই আপনার বোন-ব্রাদার!
মন্তব্য করতে লগইন করুন