অত:পর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৪ মার্চ, ২০১৫, ০২:৪৪:২৪ দুপুর



আসগর সাহেব শহরের অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ধনী লোক। সাইফ এটা জানত না যে, মিনা তারই কন্যা। একদিন ক্যাম্পাসে কালো রঙের লেকসাস সিগনাসে করে মিনা যখন আসল এবং বাই বাপি-বলে মিনা তার পিতাকে বিদায় জানালো তখনই সাইফের বুকের মধ্যে ছ্যাৎ করে উঠল। সে অনুধাবন করল এতদিন যার সাথে অতি সহজে কথা বলেছে,পড়াশুনার প্রয়োজনে নানান আলোচনা করেছে, হাসি ঠাট্টা করেছে,সে অনেক উপরের কেউ।

একই সাথে পড়াশুনার সুবাদে কথা হলেও মনের মধ্যে মিনাকে নিয়ে তার কিছুটা তোলপাড় হত। এটা মিনাই হতে দিয়েছে। বিভিন্ন সময় সে প্রশ্রয় দিয়েছে। কখনই সে ক্যাম্পাসে গাড়ি নিয়ে আসেনি। এমন কোনো আভিজাত্য প্রকাশ করেনি যাতে মনে হতে পারে সে সমাজের প্রভাবশালী অংশের কেউ। সাইফ মেধাবী ,তার তৈরী থিসিস,নোট অনেকে দেখতে চায় ,কিন্তু মিনার জন্যে তার চিন্তার অন্ত নেই। তার রেজাল্ট ভাল করার জন্যে সে মিনার চাইতে যেন বেশী চিন্তিত থাকে। এভাবেই চলছিল।

দিনে দিনে মানুষিকভাবে তারা কাছাকাছি আসল। সাইফ ভাবত মিনা মধ্যবিত্ত পরিবারের,আর সে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। শিক্ষা শেষ করে মোটামুটি একটা ভাল চাকুরী পেলে সেও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। তখন সে মিনাকে বিয়ের প্রস্তাব করবে।

সাইফের পিতা গ্রামের তরি তরকারী ফলায় এবং হাটে এনে বিক্রী করে। ছোট্ট এক খন্ড জমি আছে তার পিতার,এটাতে ধান,পাট তেমন হয়না। তবে তরকারী হয় বেশ। এতে তাদের কোনো মতে চলে যায়। ছেলে বাড়ি আসলে পিতা-মাতা তাদের অভাব বেশী করে লুকিয়ে রাখে,যাতে তার কষ্ট না হয়। ঢাকায় ফেরার দিন মা তার পোষা মুরগীর একটা অন্তত জবাই করবেই। সেটা একটু বেশী আলু,কাঠালের বিচি দিয়ে রান্না করলে যা মজা লাগে ! সাইফ এটা খুব পছন্দ করে। তার মনে হয় যদি তার টাকা হত,তাহলে সে বাজার থেকে অনেক দেশী মুরগী কিনে মাকে রান্না করতে বলত। তার জন্যে তার মাকে মুরগীর ডানা,একটু আলু আর ঝোল খেতে হত না। সে যতই না করে,তার মা কিছুতেই শুনেনা। সে বলে-আমি যথেষ্ট খেয়েছি,আর মুরগীর চামড়া আমার বেশী ভাল লাগে। অথচ সাইফ জানে এটা তার বানানো কথা।

সাইফের পিতাও ওরকম। ছেলেকে কিছু বুঝতে দেয়না। টাকা ধার করে হলেও একটু ভাল বাসে তার টিকেট কেটে দেয়। সাইফ জানে তার বাস ভাড়ার টাকা উসুল করতে তার পিতার শ্রম ঝরানো কত কেজী তরি তরকারী বিক্রী করতে হবে। আরৎদাররা কখনই নায্য মূল্য প্রদান করেনা। মধ্যস্বত্তভোগীরা চাষের ধারে কাছে না থেকে,কষ্ট না করেও লাভের বড় অংশ নিয়ে যায়্ । ভুক্তভোগী হয় উৎপাদক আর ভোক্তাগন।

কিচ্ছু করার নেই,এটাই নিয়তি। সাইফ ভাবে চাকুরী পেলে সে তার পিতা-মাতার দু:খ কষ্ট লাঘব করবে। শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে তাদেরকে মাঝে মাঝে নিজের কাছে রাখবে। ভাল ভাল খাবার খাওয়াবে।

=================

সাইফ,মিনা দুজনই ভাল রেজাল্ট করেছে। সাইফ মিনাকে বলে -চলো আজ তোমাকে চাইনিজ খাওয়াব। মিনা আসমান থেকে পড়ে, কারন সাইরে পকেটে বাদাম,চটপটির টাকা থাকা হয়ত সম্ভব কিন্তু ভাল কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া সম্ভব না। মিনা জানতে চায়, এত টাকা কোথায় পেলে ? সাইফ জানায় আজ টিউশনির টাকাটা পেলাম,কখনই তো এভাবে খরচ করা হয়নি,তাই খরচ করতে চাই। সাইফ হাসে। গত মাসে নতুন পাওয়া টিউশনিতে তার পকেটে একটু বাড়তি এসেছে।

খেতে খেতে মিনাকে সে বলে যে-তোমার ক্যাম্পাস ছাড়ার সময় তো নিকটে। কিছু ভেবেছো ?

মিনা বলে হ্যা, ভেবেছি। এবার বোধহয় বিয়েটা করতে হবে।

সাইফ লাজুক হাসে। কিন্তু পরক্ষনেই যখন বলল-নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে, বাপি বোধহয় না করবে না। সাইফ চুপসে যায়।

সাইফের মনে মনে পছন্দের বিষয়ে মিনা যে অনুমান করতে পারে না তা নয়। কিন্তু সেভাবে তারা কখনও কথা বলেনি। আজ সাইফ চুপসে গেলেও বলে ফেলে-তাহলে তো আর কিছু করার নেই।

তার এই হতাশার সুর শুনে মিনা পুলকিত হয়ে উঠে বলে-কেন কিছু কি করার ছিল নাকি ?

সাইফ বলে- না, কি আর করা। কোথায় নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান আর কোথায় নীলগঞ্জের তরকারী বিক্রেতা।

মিনা বিষয়টি সিরিয়াসলি নেয়,যেন হঠাৎই সে কিছু বিষয় আবিষ্কার করেছে। সে সরাসরি জানতে চায়,তুমি কি আমাকে পছন্দ কর ?

সাইফ বলে-অনেক বেশী।

আমাকে বিয়ে করতে চাও ?

: সত্যিই চাই, কিন্তু আমাদের অবস্থান দুই মেরুতে। এটা কি সম্ভব ?

মিনা বলে,আসলে আমিও তোমাকে খুব ভাল ছেলে হিসেবে জানি। দীর্ঘদিন তোমাকে চিনি। অনেক কিছু দেখেছি এবং তুমি আদর্শ তাতে আমার সন্দেহ নেই। কিন্তু সমাজের লোক অর্থ সম্পদ দেখে,তার স্টাটাস দেখে। তবে আমার পিতা,ধনী হলেও তিনি আদর্শবান। আমার বিশ্বাস তিনি তোমাকে মেনে নেবেন।

সাইফ আশাবাদী হয়ে ওঠে। এই টেবিলে বসেই তারা ঠিক করে, সাইফ মিনার পিতার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবে।

=============================

সাইফ মিনার পিতার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। সিকিুইরিটি গার্ড পার হয়ে অফিসের নিধারিত স্থানে অপেক্ষমান থাকে। চারিদিকে তাকিয়ে সে ঘাবড়ে যায়। জীবনেও সে এমন সুসজ্জিত অফিস দেখেনি। নিজের শরীরের পোষাকের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পায়,কারন তাদের পিওনের গলায়ও টাই ঝুলছে। আর এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের মেয়ের ব্যাপারে সে সম্বন্ধ করতে এসেছে !

সাইফ খুব ছোট হয়ে যায়। ইতিমধ্যে পিওন চলে এসেছে। চেয়ারম্যান সাহেব তার মেয়ের ক্লাশমেটের সাথে সাক্ষাৎ দিতে চাইলেন। সাইফ সালাম দিয়ে দাড়িয়ে থাকল। বসতে বলাতেও ইতস্তত করছিল কারন অতি রাজকীয় অফিস কক্ষ। এমন দামী সোফায় সে কখনই বসেনি। তারপরও সাহস করে বসল।

সাইফ ভুলে গেল সে কি বলবে। এতক্ষন যা চিন্তা করছিল সব গুলিয়ে গেল। চুপ করে বসে নখ খুটতে থাকল।

মিনার পিতাই কথা বলা শুরু করল। ...তা তুমি তাহলে সাইফ, মিনার সাথে পড়। পড়াশুনার পাট তো শেষ হল,তা কিছু ভেবেছো কি করবে ?

: না, এখনও সেরকম কিছু ভাবিনি,তবে ভাবতে তো হবেই। ভাল কোনো চাকুরীর জন্যে চেষ্টা করব।

: হুমম,,, ভাল। তুমি এসেছো,আমি খুশী হয়েছি। তুমি কি শুধু দেখা করতেই এসেছিলে ? নাকি কিছু বলবে ?

: না, স্যার, আমি এমনিতেই এসেছি। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম ...

হুমম , তা ভাল। চা দিতে বলি ?

: না, না তার দরকার নেই। আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ খানিক কথা বললাম,এতেই খুশী। আমি বরং আজ উঠি !

: সাইফের দিকে তাকিয়ে মিনার পিতা বলল: হুমম ঠিক আছে , তাহলে পরে কোনো সময় কথা হবে।

রাতে মিনার প্রচন্ড দুষ্চিন্তা হতে থাকল। সাইফ কি কিছু বলেছে ? কি বলেছে ! বাপি কি উত্তর দিল ইত্যাদী।...

রাতে তার পিতা বাড়িতে ফিরে কিছুই জানালো না। মিনার চিন্তার অন্ত নেই। ওদিকে সাইফকেও ফোনে পাওয়া যাচ্ছেনা। কিছুই সে বুঝতে পারছে না। অস্থির অবস্থায় নির্ঘুম রাত কাটল তার।

সকালে তার বাপিকে জিজ্ঞেস করল-সাইফ দেখা করেছিল কিনা। তিনি বললেন-ওহ হ্যা আমি তো ভুলেই গেছিলাম্ ,সে এসেছিল। তা ওর কি চাকুরী বাকরী দরকার নাকি ? আমাদের এ মুহুর্তে লোক দরকার নেই বটে,কিন্তু মামনির সুপারিশ তো ভেবে দেখার মতই...তিনি হাসলেন।

মিনা বললেন, না সেরকম কিছু না। ও এমনিতেই দেখা করতে গিয়েছিল। মিনা সত্য গোপন করল। তার এত সাহস হলনা অসম সম্পর্কের বিষয়টি উপস্থাপন করতে। তার পিতা কিছু অনুমান করতে পারল কিনা সেটাও বুঝা গেল না।

===========================

সাইফ মন মরা। তার কোনো কিছুতেই ভাল লাগেনা। বিরহ বেদনা সহ্যও হয়না। আগে ক্যাম্পাসে মিনার সাথে দেখা হত, এখন সে রাস্তা নেই। একদিন সকল ভয় ভীতি দূরে ফেলে সে মিনাদের বাড়িতে উপস্থিত হয়। সে মিনার মায়ের সামনে সাহস করে মিনাকে তার ভাল লাগার কথা বলে এবং বিয়ের প্রস্তাব করে।

মিনার মা বিচলিত না হয়ে তার স্থাবর,অস্থাবর সকল বিষয়ে জানতে চেয়ে বুঝতে পারে তার পিতা গ্রামের একজন তরকারী বিক্রেতা। কিন্তু তিনি তার মুখোভঙ্গিতে কিছুই প্রকাশ না করে বললেন,তার পিতার সাথে আলোচনা করে পরে জানাবে।

মিনার পিতা মিনাকে সামনে রেখে অনেকক্ষন আলোচনা করল। সামাজিক,পারিবারিক অনেক দিক তুলে ধরল। মিনার মানুষিকতার সাথে এই ছেলে যে খাপ খাওয়াতে পারবে না,তাই প্রকাশিত হচ্ছিল বারবার। তার পিতার অনড় অবস্থান,সামাজিক,পারিবারিক বিষয় বিচেনা করে মিনা পিতার সম্মতিতেই নিজের সম্মতি প্রকাশ করল। সাইফ তার চিন্তা থেকে দূর না হলেও তাকে দূর করার চেষ্টা করতে থাকল।

ওদিকে সাইফ ভিষণভাবে মুষড়ে পড়ল। উভয়ের অসমতা দেখেও সে মনকে কোনোভাবে বুঝ দিতে পারল না। সে একটি মোটামুটি চাকুরী পেল এবং তারমত থাকতে লাগল। মিনার স্মৃতিকে বুকে রেখে তার জীবন প্রবাহিত হতে থাকল।

==========================

বিশাল জাকজমকের মাধ্যমে মিনার বিয়ে হল। সে অনুষ্ঠানে মন্ত্রী,এমপি,ব্যবসায়ী,সরকারী,বেসরকারী বড় কর্তাগন উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমন্ডিত করল। বিয়ের পর মিনা পূর্বের কথা প্রায় ভুলেই গেল। নতুন জুটি বিশ্ব ভ্রমনে বের হল । বিশ্বকে দারুনভাবে তারা উপলব্ধী করল।

তার স্বামী বেশ দারুন,স্মার্ট,রোমান্টিক। তবে মাঝে মাঝে মনে হয় একটু বদরাগী বা ঘাড়তেড়া টাইপের। কিন্তু তার অন্য গুনের কারনে সেসব বোঝা যায়না।সংসার চলছিল বেশ।

বছর খানেক পর মিনার স্বামীর আচরনে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল। ব্যবসা নিয়ে বেশী চিন্তিত হয়ে পড়ল সে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কিছু সমস্যা হল,যা মিনাকে সে জানায়নি। মিনা এসব বোঝেও না। প্রায়ই রাত করে ঘরে ফেরে তার স্বামী। সারাক্ষন হিসেবনিকেষ করতে থাকে। রাতে বাসায় ফিরেও ব্যবসায়িক আলাপ সারে ফোনে।

মিনা সবকিছু মানিয়ে নেয়। সে অত্যন্ত চমৎকার একটি মেয়ে। এক সময় তার স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে পড়ে। সেসময় তার ব্যপক সাপোর্টের দরকার হয়ে পড়ে।

একদিন মিনার শ্বসুর মিনার পিতার সাথে দেখা করে নানান আঠালো ও রসের কথা শুরু করে এবং শেষে তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নতিতে কিছু পয়সা ধার চায়। এমনভাবে চায় যে বিষয়টি উপেক্ষার উপায় থাকেনা।

মিনার পিতা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত হলেও কন্যার মঙ্গলের কথা ভেবে টাকা দিয়ে দেয়। কিন্তু মিনার শ্বসুরদের প্রতিষ্ঠান ভাল ফল করতে পারেনা। কোনো ব্যাংকই তাদেরকে লোন দিতে রাজি হয়না। তাই আবারও মিনার পিতার সাথে শ্বসুর দেখা করে নিজেদের অবস্থার কথা তুলে ধরে। কিন্তু এবার সরাসরি টাকা চায়না।

এদিকে বিয়ের পর শরীরের দিকে না তাকানোতে মিনা বেশ মোটাসোটা হয়ে পড়েছে। ইদানিং হাটাহাটি করলেও মেদ কমানো সম্ভব হয়নি। ফলে স্বামীর চোখে সে এখন ততটা সুন্দরী নয়। স্বামীর আচরনে মিনা এটা খানিক আন্দাজ করতে পারে।

স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দূরাবস্তা তাকেও চিন্তিত করে। সে কোনো উপকার করতে পারে কিনা জানায়। জবাবে স্বামী বলে-তোমার পিতাকে বলে আরও কিছু অর্থ ধার চাইতে পার। আমার সম্পদ মানে তো তোমারই সম্পদ।

মিনা বাড়িতে ফোন করে ,তার পিতা অনেক দূরদর্শী লোক। সে বুঝতে পারে,এটা হল আধুনিক স্টাইলে যৌতুক চাওয়া। আর এটাতে না করলে তার মেয়ের পরিনতিই ভাল হবেনা। ইদানিং মিনার মর্যাদা বেশ কমে গেছে। মিনা ভাবতে থাকে -তাহলে স্যেন্দর্য্য হল দেহ, আর আকর্ষণ মানে হল সম্পদ !

দিন দিন তার এই উপলব্ধী বেশ ভালই হতে থাকে। ইতিমধ্যে তার দারুন স্বামী মাঝে মাঝে রাগ করতে শুরু করেছে। খোচা দিয়ে কিছু কথাও বলে,যা আগে করত না। শ্বসুর,শাশুড়ীদের আচরনেও কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শিঘ্রই মিনার কাছে শ্বসুর বাড়ি তিক্ত হয়ে ওঠে।

একদিন তার স্বামী সরাসরি বলে বসে,তোমার পিতাকে বলে কিছু টাকা ম্যানেজ কর,নইলে প্রতিষ্ঠান টিকছে না। কর্মচারীদের বেতন ভাতা আটকে আছে। তারা আন্দোলন করছে। মিনা এক কথায় না করে দেয় এবং এই প্রথম সে স্বামীর কাছ থেকে থাপ্পড় উপহার পায়। বাকরুদ্ধ শান্ত শিষ্ট মিনা শুধু কাদতেই থাকে।

মীনার স্মৃতিতে অতীত ভেসে ওঠে। সকল সম্পর্কের মধ্যে অর্থ সম্পদ ছাড়া আর কিছু সে আবিষ্কার করতে পারেনা। সম্পদ ও সামাজিক মর্যাদার কারনেই সাইফের থেকে শারিরীক,মানুষিক সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেকটা ম্লান একজনকে সে সকলের সম্মতিতে বিয়ে করল। আর সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের পরিনতি হল এই।

ওদিকে মিনার পিতার সাথে শ্বসুরের দ্বন্দ শুরু হয়েছে। তাদের অর্থলোভী মনোভাবকে তিরষ্কার করাতে তারাও তার মেয়ের নানান খারাপ দিক বর্ণনা করে তাকে অবিলম্বে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলেছে। মিনার স্বামী চুপ থেকে সম্মতি দিয়েছে। মিনার সামনে তার শ্বসুর তার পিতার সম্পর্কে অত্যন্ত জঘন্ন কথা বলেছে,গালি দিয়েছে,অপবাদ দিয়েছে। মিনা তার স্বামীর কাছ থেকে প্রতিবাদ আশা করেও পায়নি। বরং সে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেছে।

অবস্থা যখন প্রতিকূল হয়ে উঠল তখন মিনা শ্বসুর বাড়ি ছাড়ল। অথচ ২ মাস পার হলেও তার স্বামী তাকে নিতে আসেনি। এক সময় ডিভোর্স লেটার আসল এবং মিনা অনেক কষ্টে স্বাক্ষর করে এই পাট চুটিয়ে ফেলল।

===============================

তারপর অনেক দিন পার হয়েছে। এক বিয়ের অনুষ্ঠানে হঠাৎ সাইফকে দেখে মিনা নিজেকে লুকাতে চাইলো কিন্তু পারল না। একটু মোটা হয়ে গেলেও তাকে দেখে প্রথমেইসে চিনতে পারল। কিন্তু কাছে যায়নি। ভাল করে দেখল মিনার সাথে তার স্বামী আছে কিনা। একা পেয়ে সে কাছে গিয়ে বলল-কেমন আছো ? চেনাই যায় না। একটু মটু হয়েছো। শ্বসুর বাড়ির খাবারে ফ্যাট একটু বেশী থাকে।..সে একটু হাসল...

মিনা মোটেও হাসল না। তাকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হল। সাইফ বলল-যা হবার তা তো হয়েছেই, এখন আমার মনে কোনো দু:খ নেই। তুমি সঠিক কাজটিই করেছো। তা তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা ?......

মিনা এ কথার উত্তর না দিয়ে বলল-আমার কথা বাদ দাও,তোমার ছেলে মেয়ে কয়টা সেটা বল।

সাইফ হাসতে হাসতেই বলল-এখনও হয়নি।

: মানে নতুন বিয়ে করেছো ?

: আরে না, বিয়ের কপাল না থাকলে বিয়ে হয়না। কপালে ছিলনা,তা কি করব ?

:হুমম, তাইলে ব্যাচেলার ?

: তা বলা যায়।

এরপর তারা উভয়ে উভয়ের বাড়ি চলে গেল।

=======================

সাইফ তার কোম্পানী থেকে নতুর গাড়ি পেয়েছে। তার পিতা-মাতা গ্রামে থাকতেই পছন্দ করে কিন্তু ঢাকায় পিতা-মাতার জন্যে সে আলাদা একটি রুম সাজিয়ে রাখে। তার ও পিতা-মাতার রুমটির সকল আসবাব একই রকম,দুটোতে পার্থক্য নেই। বরং নিজের খাটটি তুলনামূলক একটু সস্তা। এটা হল তার পিতা মাতাকে সম্মান করার একটি পদ্ধতি। সে কখনই তার গরীব পিতার পরিচয় দিতে কুন্ঠিত হয়না।

=========================

সাইফ তার এক কলিগের মাধ্যমে মিনার পিতা এবং মিনার শ্বসুরের দ্বন্দের কথা জেনেছে। মিনার সাথে যোগাযোগ আছে এমন এক পুরোনো বন্ধুকে খুজে বের করে জানল মিনার সকল ঘটনা।

========================

এক সপ্তাহ পর:

সাইফ: আস সালামু আলাইকুম।

মিনার পিতা: ওয়া আলাইকুম সালাম।আপনাকে ঠিক চিনলাম না।

:সাইফ: আমি সাইফ,মিনার সাথে পড়তাম। আপনার সাথে সেসময়ে দেখা করেছিলাম কিন্তু যে কথাটা আপনাকে সাহস করে বলতে পারিনি,আজ তা বলতে চাই। আমি মিনাকে আজও ভুলতে পারিনি। তার স্মৃতি সরাতে না পারার কারনে বিয়ে করতে পারিনি। আমি আপনার মত সম্পদশালী নই কিন্তু আমার থাকার মত একটি বাসা আছে। দু বেলা মোটামুটি ভাল খাবারের ব্যবস্থাও আছে। আমার কৃষক পিতা-মাতার সম্পদ বলতে শতভাগ খাটি ভালবাসা,যা আপনার কন্যার জন্যে বরাদ্দ থাকবে। আমি কি আপনার মেয়ের ব্যাপারে প্রস্তাব করতে পারি ?

: আল্লাহর কসম ! আমি তোমার উপর যুলুম করেছি। তোমাকে চেনার চেষ্টা আমি করিনি। আর এ কারনেই আমার ক্ষতি হয়েছে। আর আমার পবিত্র মেয়ে মিনার...

: না, মিনার কোনো ক্ষতিই হয়নি। বরং ক্ষতি হয়েছে তার, যে তাকে চিনতে পারেনি,মুল্যবান সম্পদ তো সেই হাতছাড়া করল,তা চিনতে না পেরে।....আমি তাকে সারাজীবন ভালবাসব। আমার এই ভালবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই,সেখানে কোনো খাদ নেই।

==============

অত:পর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।

বিষয়: বিবিধ

১২০০ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

307195
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৩
আবু জান্নাত লিখেছেন : মাশা আল্লাহ, অনেক লম্বা প্রবন্ধ, মনে হচ্ছে অনেক রোমান্টিক হবে। পরে সময় করে পড়বো, এখন একটু ব্যস্ত। ধন্যবাদ।
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১৩
248532
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
307196
০৪ মার্চ ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৬
হতভাগা লিখেছেন : হ্যা , রুপকথার মতই একটা গল্প ।
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১৪
248533
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বেশ খানিকটা সত্য। আমি এরকম একটা ঘটনা দেখেছি।
307209
০৪ মার্চ ২০১৫ বিকাল ০৪:৫৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১৫
248534
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
307231
০৪ মার্চ ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৩৮
রাইয়ান লিখেছেন : আপনার অনেকগুলো খেতাবের মধ্যে এখন নতুন আরেকটি খেতাব যুক্ত হলো .... ঔপন্যাসিক ! Thumbs Up Tongue
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১৬
248535
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে তাইলে তো বিষয়টা ভেবে দেখার মত মনে হচ্ছে, অঅমি তো যা তা না.....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
307238
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৮:১২
অষ্টপ্রহর লিখেছেন : ভাল লাগলো।অনেক ধন্যবাদ নিবেন|
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:২৮
248562
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ জনাব
307248
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:১০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম! সুন্দর লিখেছেন! Thumbs Up
দেশি মুরগি আর কাঠালর বিচির যে উদাহরন দিলেন তাতে তো শান্তি লাগছে না! Crying

শুভকামনা রইলো! Good Luck
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:২৯
248563
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম আপনিও আমার লাইনে আসলেন...পুরো লেখায় ওই অংশটুকু চোখে পড়লRolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০৫ মার্চ ২০১৫ রাত ০২:০৫
248573
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : Tongue Don't Tell Anyone
307250
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ০৯:১৬
শেখের পোলা লিখেছেন : বাঃ চমৎকার৷ বেশ দক্ষতার ছাপ আছে৷ এ ঘোড়া দৌড়ে জিতবে বলে মনে করি৷ শুভেচ্ছা রইল৷
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:৩০
248564
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহে এ কি প্রশংসা নাকি Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
307268
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ১০:৪৩
আফরা লিখেছেন : গল্পটা ভাল লিখেছেন তবে বিয়ের পর ডিভোর্স হওয়াটা ভাল লাগে না ।আমাদের এখানে এরকম কয়েকটা হয়েছে বিয়ে করে এখানে এসে এখানকার সিটিজেনশিপ নিয়ে স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে আগের প্রেমিককে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে ।
০৪ মার্চ ২০১৫ রাত ১১:৩৩
248565
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মানুষ পারেও...Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor আসলেই ডিভোর্স ভাল জিনিস নয়। রসূল(সাঃ)বলেন- বৈধ দুটি বিষয় আছে যা আমি খুবই অপছন্দ করি। একটি হল ভিক্ষা করা, অন্যটি তালাক
307287
০৫ মার্চ ২০১৫ রাত ০২:৩০
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শ্রদ্ধেয় সুহৃদ ভাইয়া। দারুণ গল্প তবে পছন্দের মানুষকে নিয়ে বিবাহত্তোর প্রথম দাম্পত্য জীবনে সুখী হলে আরও জমতো ভালো।
০৫ মার্চ ২০১৫ সকাল ১১:৫৩
248597
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ছোট গল্পে বেশী জমানো যায় না। জনগনের ধৈর্য বলে একটা ব্যাপার আছে। গল্পের বাকীটা নিজের মনে ভেবে নেন Happy আপনি আসলে সরল সোজা মানুষ তাই পরবর্তী সুখের কাহিনীটাও আশা করেছেন।Happy আপনার সেই দুই সন্তানদেরকে তো ব্লগে দেখা যাচ্ছে না..
০৫ মার্চ ২০১৫ দুপুর ১২:৫৯
248605
রাইয়ান লিখেছেন : আপুনি , দুষ্টু দুটোকে একটু বলুননা , ব্লগে এসে আবার কিচির মিচির করে ব্লগ পাড়া জাগিয়ে তুলতে ! খুউউব মিস করি ওদের .... !

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File