আমার নানীকে যা বলেছিলাম
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০১:৩৩:২৭ দুপুর
আমার নানীর বৃদ্ধ বয়সে চোখে ছানি পড়ে কিন্তু ভাল চিকিৎসার বন্দোবস্ত সে এলাকায় ছিলনা। তাই আস্তে আস্তে তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে যান। নানার বংশে জমিদারী থাকলেও নানীর মধ্যে আভিজাত্যের লেশমাত্র ছিলনা। যৌবন থাকতেই তিনি নানাকে হারিয়ে বিধবার জীবন নিয়েই চলছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই ধার্মিক আর সরল সোজা মানুষ। সাধারণত তিনি আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে তেমন যেতেন না।
আমি ছোটবেলায় যখন নানী বাড়ি যেতাম,তখন তিনি খুব ঝাপসা দেখতে পেতেন। আর সেই সুযোগের নানান সদ্যবহার আমরা করতাম। একবার নানী আমাদের বাড়িতে এক মাসের জন্যে আসল। কাহিনী তখনকার :
আমি ছিলাম একটু শয়তান জাতের। এক রাতে মনে হল নানীকে একটু ৯/৬ বুঝাবো। নানীকে বললাম নানী ঢাকা শহরের গল্প শুনবা ?
সে বলল-ঠিক আছে শুনা। নানী কখনই ঢাকায় যায়নি। সেখানে যাবার প্রয়োজনও ছিলনা। আর তার দৃষ্টিতেই যেহেতু সমস্যা গেলেও লাভ ছিলনা।
বললাম শহরটার নাম ঢাকা এ কারনে হয়েছে যে-ওই শহরটাই হল ঢাকা।
নানী অবাক হয়ে বলল,তাই ?
তার আওয়াজ শুনে বুঝে গেলাম যে নানীর চিন্তার দৌড়ও বেশী না। খানিক পর অবাক হয়ে বলল-তা কি দিয়ে ঢাকা ?
বরলাম -চাল দিয়ে ঢাকা। বিশাল বিশাল গোলপাতা আর খড় দিয়ে পুরো শহরটা ঢাকা। ফলে সেখানে বৃষ্টির পানি পড়েনা।
নানি গবীর বিষ্ময়ে আমার কথা শুনছে। পাশ থেকে আমার অন্য বোনরা কিট কিট করতে করতে হেসে উঠে তা চেপে যাচ্ছে ,যাতে নানী বুঝতে না পারে। সম্ভবত মা ছিল রান্নাঘরে, সে বলে উঠল-এই এসব কি বলছিস ? তাকে ম্যানেজ করলাম।সেও হেসে কুটি কুটি....
নানী বলল-কারা তবে ঢকা শহরের উপর এত বড় চাল তুলল ?
আমি তখন বললাম মাত্র দুজন এই কাজ করেছে....সেই দুজনের নাম বললাম আমার নানার নাম এবং নানার ছোট ভায়ের নাম। নানী তারপরও বুঝল না।...ওদিকে আমার দুই বোন হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বললাম দূরে গিয়ে হাস। আমি সিরিয়াসভাবে আবারও বলতে থাকাম।
এবার বললাম,ঢাকা শহরে কিন্তু ফল গাছে পল হয়না।
নানী অবাক হয়ে বলল, তাহলে কোথায় হয় ?
আমি বললাম, সেখানে পেপে হয়,কিন্তু তা পেপে গাছে নয়। মানুষ লাঠি পুতে রাখে। আর লাঠির মাথায় পেপে ধরে ঝুলে থাকে।
অনেক বছর পর সব কথা মনে করতে পারছি না,কিন্তু সে রাতে নানীকে আবোল তাবল সবকিছুই প্রায় বিশ্বাস করাতে পেরেছিলাম্ । মাঝে মাজে ডোজ বেশী হয়ে যাওয়াতে সে ফাকি কিছুটা বুঝতে পারছিল কিন্তু এমনভাবে পরবর্তী ঘটনা বলে মেকআপ করছিলাম যে, নানী বিষ্ময় নিয়েও বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছিল।
এরপর নানী তার বাড়ি গিয়ে আমার মামাতো ভাইদের সামনে এসব কথা বললে-তারা হেসে আরেকচোট গড়াগড়ি খেয়েছে। মামার বড় ছেলে একদিন আমাকে বলল-তুই দাদীকে ওসব কি বলেছিস ? সে তো বিশ্বাস করেছে...আমরা তো হাসতে হাসতে শেষ।
অবশেষে নানী বুঝল যে,আমি তাকে উদ্ভট কথা বলেছি।....
আজ পোর্টল্যান্ডের ফুটপাথে মিশরীয় জিরো নামক খাবার খেয়ে ব্যপক তৃপ্ত হলাম। তারপর এশিয়ান মার্কেট থেকে সব্জী কিনলাম। দিনটা দারুন লাগল। কিন্তু ফেরার সময় নানীর সাথে সেই রাতের গল্পের কথা মনে পড়াতে হাসতে হাসতে শেষ হচ্ছিলাম্ । এরকম আরও অনেক করেছি।.....
বি:দ্র: পোস্টে একটা ছবি সংযোজনের নিমিত্তে গুগলের কাছে যে কোনো নানীর ছবি চাইলাম। আর গুগল আমার চিন্তার গুড়ে বালি দিয়ে নানী নামক এই ফুটবলারের ছবি উপহার দিল। হাতে সময় কম,তাই আপতত এই লোকটিই নানী,মেনে নিলাম।
বিষয়: বিবিধ
৩১৭৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার নানি কিন্তু ঠিক উল্টা!! ৯২ ব্ছর বয়সে কানে একটু কম শুনলেও নিজের হাতে মাছ কাটা এবং রান্না করতে পারে।
১৯৫৬ সালে আমার নানা ইন্তেকাল করেছেন। তার বিশাল পরিবার এবং সম্পদ পরিচালনা করেছেন এবং এখনও কিছুটা করছেন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন