সহজ বিয়ে-কঠিন বিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৫২:৪৪ রাত
যে সমাজে বিয়ে কঠিন,সে সমাজে ব্যভিচার সহজ। আর সে সমাজে অপরাধও বেশী। কারন অবাধ সম্পর্কের মাধ্যকে ইন্সটিংক্টকে উসকে দিয়ে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করা হয়। সকল হতাশাসমূহ,সকল ক্রোধসমূহ,সকল অহংকারসমূহ,হিংসাসমূহের একটি বড় অংশই এই পথ ধরে ধাবিত হয়। আর এর প্রত্যেকটির সাথে সামাজিক অপরাধের যোগসূত্র তৈরী হয় বা সেই সম্ভাবনা প্রবল হয়।
আমাদের সমাজের উচ্চ বিত্তের লোকেরা বিয়েকে এমন এক ধরনের অনুষ্ঠানের সমষ্টি বানিয়ে ফেলেছে যে-প্রায় সকল মানুষের বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে উক্ত বিষয়াবলীই মনে পড়ে। এবং সেসব পালনকেই অবশ্য কর্তব্য মনে করে।গরিবরাও একই পথ ধরে হাটার চেষ্টা করে। নানামুখী অনুষ্ঠানের খরচ এবং উভয় পক্ষের বাহানা যোগাড় করতে পিতা-মাতা কখনও তাদের সর্বোস্ব হারান।
অথচ বিয়ে এমন কোনো কঠিন বিষয় নয়। এটি হল নারী এবং পুরুষের মিলিত হয়ে নতুনভাবে জীবন গঠন করার একটি প্রকাশ্য প্রক্রিয়া,যা মানুষের স্রষ্টা অনুমোদন করেছেন। রসূল(সাঃ)বলেন-কম খরচপূর্ণ বিয়েই বরকতময়।
আমার এক নিকট আত্মীয়ের বিয়ের সময় পরপর ৮ দিন ধরে অনুষ্ঠান চলেছিল। এমনসব অনুষ্ঠান যা আমি পূর্বে জানতাম না। এসব অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আয়োজন করতে বিভিন্ন প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। ব্যপক ব্যয়বহুল এসব অনুষ্ঠানের লক্ষ্য হল বিয়ের উপলক্ষ্যকে আনন্দময় করা এবং এর সামাজিক প্রভাব বিস্তার করা। নিজেদেরকে অবস্থা,অবস্থানকে প্রকাশের এটি একটি মাধ্যম। এই অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ্য করে সমাজের নামী-দামী মানুষের অগমন ঘটানোও সামাজিক মর্যাদা বাড়ার কারন বলে মনে করা হয়। আর বরের যৌতুক বা উপহার এবং কনের মোহরানার পরিমান আকাশ ছোঁয়া না হলে সামাজিক মর্যাদায় ঘাটতি থাকে বলে মনে করা হয়,বা আচরণ তাই প্রমান করে।
রসূল(সাঃ)বলেন-সমাজের মানুষেরা বংশ,রূপ,অর্থ সম্পদ ইত্যাদী দেখে বিয়ে করে। এর মধ্যে তারাই কল্যানের পথে ,যারা চরিত্র দেখে বিয়ে করে।(এই সহী হাদীসটি পুরো মনে করতে পারলাম না কিন্তু বিষয় ঠিক রয়েছে)
অথচ সারা বছর ইসলামী লেকচার দেওয়া মুসলিমের ক্ষেত্রেও দেখা যায় তারা বিয়ের সময় সর্বপ্রথম অর্থ-সম্পদের দিকে তাকাচ্ছে,এরপর রূপ তারপর চরিত্র-আচরন আখলাক। এটি মূলত সামাজিক প্রচারনায় প্রতারিত হওয়া । কারন ব্যক্তির মস্তিষ্কে এই তথ্যগুলো গভীরভাবে গেথে গেছে যে-ইসলামী নিয়মেই সব হতে হবে কিন্তু মানুষ কি মনে করবে বা বলবে ! ফলে তারা আনুষ্ঠানিকতায় সর্বোচ্চ সাধ্য নিয়োগ করে।
বিয়ের পরও নানান আচর অনুষ্ঠান রয়েছে এবং প্রত্যেকটি অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে দেখানো। আর এই দেখানোর উপকরনটি হল অর্থ,যা বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়। অথচ তাদের এসব প্রক্রিয়া নতুন জুটির বৈবাহিক জীবন বা সংসার জীবন সুখময় হবে কিনা বা কল্যানকর হবে কিনা সে বিষয়টিকে উপেক্ষা করা হয় বা কম গুরুত্ব দেওয়া হয় বা সেটি আলোচনায় আসেনা।
বিয়ের পর অনেক সময় আর্টিফিসিয়াল সম্পর্ক রক্ষনাবেক্ষন করতে দেখা যায়। গ্রাম থেকে গরিব আত্মীয়স্বজন দেখা করতে আসলে তারা বিব্রত বোধ করে। কত দ্রুত তাকে পার করা যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় নিকট আত্মীয়কে দূরবর্তী আত্ময়ীয় বা এলাকাবাসী হিসেবে প্রকাশ করে আত্মসম্মান রক্ষার চেষ্টা করা হয়। সমাজের উচু শ্রেনী বা সম্পদশালীদের সাথে সুসম্পর্ককে জোরে সোরে প্রচার করা হয়। নিজেকে অভিজাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মানষে এমন সব কমকান্ড পরিচালনা করা হয় যা তাকে এই বিষয়েই ব্যতিব্যস্ত রাখে। এবং অন্তরিক সম্পর্ক হয়ে ওঠে চরম মাত্রায় আর্টিফিসিয়াল। এই অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় এটি এক সময় ঠুনকো হয়ে ওঠে এবং তা হঠাৎ ভেঙ্গেও যায়। দৃষ্টিভঙ্গীগত পার্থক্য বৈবাহিক জীবনে শান্তি আনতে পারেনা।
বিয়ে হল এমন একটি বিষয় যা খুব সহজ করা হয়েছে,যাতে যুবক-তরুনরা তাদের চারিত্রিক পূর্ণতার পাশাপাশি আদর্শ ও দায়িত্বশীল হতে পারে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবনের পূর্ণতা পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় এবং একাগ্রচিত্ত হওয়া সম্ভব হয়। এর মাধ্যমে তারুন্যের উদ্দীপনাকে বা শক্তিতে সঠিক পথে ব্যবহার করার সম্ভাবনা তৈরী হয়। পারিবারিক,সামাজিক শান্তি ও সমৃদ্ধীতে এর ভূমিকা অনন্য।
একজন আলীমের বিয়ের ব্যাপারে জেনেছিলাম। তিনি মেয়ের বিষয়ে খোজ খবর নিয়ে শেষে মেয়ে দেখতে গেলেন এবং বললেন-আমি একজন সাধারণ লোক। আমার উপার্জন এরকম। আমার এই উপার্জন দিয়ে আপনাকে মোটা চালের ভাত এবং সস্তা তরি তরকারী খাওয়ানো সম্ভব। আমার ব্যাপারে আপনি যা শুনেছেন এবং জেনেছেন তা সত্য। আর এখন আমাকে তো দেখছেনই। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে দেখা শেষ। এখন আপনি আপনার মতামত প্রদান করতে পারেন।
আল্লাহ অবশ্যই মুমিনদের জন্যে মুমিনাদেরকে রহমতস্বরূপ করেছেন। উক্ত ভদ্র মহিলা তাৎক্ষনিকভাবেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন। এই নারী যে বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করে বিয়েতে রাজি হলেন,সে বিষয়টিকে যারা গুরুত্ব প্রদান করতে ব্যর্থ হবে-তারাই দুনিয়া এবং আখিরাতে লাঞ্চিত।
আমার ধনী আত্মীয়ের পাশাপাশি এক গরিব আত্মীয়ের কথা বলি। সে মেয়ের পিতাকে বলেছিল-আমি আপনার কন্যাকে উত্তম চরিত্রের একজন হিসেবে মনে করি। আমি তাকে নিকাবের কারনে কখনই দেখিনি। কিন্তু আমি যে বিষয়টিকে বেশী প্রাধান্য দেই সেটিই তার মধ্যে বর্তমান। আমার অর্থনৈতিক অবস্থা এরকম। আমি কি আপনার কন্যাকে দেখতে পারি ? তার পিতা ছিল একজন আলিম। তিনি তার কন্যাকে দেখালেন। এবং এই ছেলেকে পছন্দ করলেন।
আমরা তার বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। উভয় পক্ষের ৩০/৪০জন লোক উপস্থিত ছিল। বিয়ে হল মসজিদে। জীবনে প্রথমবার মসজিদের বিয়েতে অংশ নিলাম। আমরা এরপর মেয়ের বাড়িতে ওলিমায় অংশ নিলাম।
আমি এমন আদর্শ ও সুখী জুটি খুব কমই দেখেছি। তারা তাদের অবস্থাতে সন্তুষ্ট। ছেলেটি মসজিদে ফজরের নামাজের উদ্দেশ্যে রওনা হলে আশপাশের লোকদেরকেও ডেকে তুলে দিত মসজিদে যাবার জন্যে,এখনও তাই করে। এই ছেলেটিকে আমি বেশ পছন্দ করি,সেও আমাকে পছন্দ করে। আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাত দান করেন। ইসলাম জানার পরিধী তার কম কিন্তু তার আমল এবং নিয়তের বিশুদ্ধতা দেখলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবার যোগাড় হয়।
সাহল ইবনে সাদ(রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত-একদা এক মহিলা রসুল(সাঃ)এর কাছে এসে বসে পড়ল এবং বলল-ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি আমার জীবনকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত করলাম(এর অর্থ বিয়ে)। রসূল(সাঃ)তার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নীচু করে চুপ করে বসে থাকলেন। এ দৃশ্য দেখে একজন সাহাবী বললেন-ইয়া রাসুল্লাহ(সাঃ) আপনার যদি তাকে প্রয়োজন না থাকে,তবে আপনি তার সাথে আমার বিবাহের ব্যবস্থা করে দিন। তিনি(সাঃ) বললেন-তোমার কাছে মোহরানার জন্যে কিছু আছে ? সাহাবী উত্তর দিলেন- আল্লাহর কসম ! কিছুই নেই। রসূল(সাঃ০বললেন-তুমি তোমার পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং দেখ কিছু পাও কিনা। লোকটি চলে গেল..এবং ফিরে এসে বলল-কিছুই পেলাম না। তখন রসূল(সাঃ)বললেন-দেখ, একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে এসো। লোকটি আবার গেল এবং ফিরে এসে জানালো সেটাও সে জোগাড় করতে পারেনি। কিন্তু এ পর্যায়ে সাহাবটি বললেন-তবে আমার কাছে এই চাদরটি আছে(যেটি তার গায়ে ছিল),আমি এর অর্ধেক মোহরানা হিসেবে প্রদান করতে পারি।হযরত সাহল(সাঃ) বলেন,তার এই একটিই চাদর ছিল। রসূল(সাঃ) বলেন-তুমি যদি এটা তাকে পরাও তবে,নিজে কি পরবে ? আর নিজেই পরে থাকলে তাকে কি পরাবে ? লোকটি বসে পড়ল এবং অনেকক্ষন বসে থাকল। তারপর উঠে দাড়ালো এবং চলে যেতে থাকল। তার এভাবে ফিরে যাওয়া দেখে রসূল(সাঃ)তাকে ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন-তোমার আলকুরআনের কতটুকু মুখস্ত আছে ? লোকটি একে একে উল্লেখ করতে থাকল কোন কোন সূরা বা কতটুকু তার মুখস্ত আছে। রসূল(সাঃ)বললেন-এসব তুমি মুখস্ত তিলাওয়াত করতে পার ? লোকটি বলল-হ্যা পারি। তখন রসূল(সাঃ)বললেন-ঠিক আছে তোমার এই মুখস্ত আয়াতসমূহের বিনিময়ে উক্ত মহিলার সাথে তোমাকে বিয়ে দিলাম।-(বুখারী-হাদীস নং ৫০৩০,মুসলিম,হাদীস নং ১৪২৫)
হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফের বিয়ের বিষয় বুঝতে পেরে রসূল(সাঃ)বললেন- এ কি ? বা কি খবর ! তখন তিনি(রাঃ)বললেন-জি আমি বিয়ে করেছি একটি খেজুরের আটির পরিমান স্বর্ণের দ্বারা । রসূল(সাঃ)বললেন-আল্লাহ তোমার এই বিয়েতে বরকত দান করুন। এখন তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওলীমার আয়োজন কর।-(বুখারী ৫১৫৫,মুসলিম ১৪২৭)
যারা ব্যপক খরচ করে বিয়ে শাদীর আয়োজন করে,তারা দু:খে এবং অন্যরা সুখে থাকে বিষয়টি এমন নয়। বরং বুঝাতে চেয়েছি ইসলামের দৃষ্টিতে কোনটি আসলেই কল্যানকর। এবং বিয়ের ক্ষেত্রে কোনটিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। তবে যদি তুলনা করা হয়,তবে দেখা যায় ব্যপক খরচপূর্ণ বিয়ের পরবর্তী সময়েও উভয়ের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সম্পদ একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে। প্রতিবেশী,আত্মীয় স্বজন,বন্ধুরা বিভিন্ন সামাজিক উৎসবে বিভিন্ন দামী উপহারসমূহ আদান প্রদান নিয়ে মন্তব্য করেন। অথবা অন্যের উপহার প্রাপ্তীতে নিজের ভেতর একই অনুভূতি সৃষ্টি হয় এবং সেখান থেকে ডিমান্ড তৈরী হয়। এভাবে নিন্ত্রনহীন সম্পদ ব্যক্তিকে এমনসব বিষয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে যা তার মধ্যে মানবিক বহু গুনাবলীর তিরোধান ঘটায় বা ম্রিয়মান করে ফেলে। তাকে সম্পদ অর্জন এবং তার যথেচ্ছাচারে নিমজ্জিত করে। এই বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রনের বিষয়টি যদি তার সহজাত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য না হয়,তবে সম্পদ তার ক্ষতির কারন হয়ে দাড়ায়।
অপর দিকে অভাবী দম্পতির অন্তরের হিংসা বিদ্বেষ,দারিদ্রের অহংকার ইত্যাদীও তাদেরকে ভেতর থেকে ধ্বংস করতে থাকে। অন্যকে দেখে অসহ্য অনুভূতিতে ভোগার মানুষিকতা তাদেরকে পারিবারিকভাবে বিপর্যস্ত করে।
ইসলাম এই উভয় প্রকার ব্যক্তির বা সমষ্টির জন্যে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন তৈরী করেছে,যেখানে সম্পদ মূখ্য নয় বরং একটি প্রয়োজনীয় উপকরণ্, এটি ভাল মন্দ নির্নয়ের মাধ্যম নয়,বরং একটি উপলক্ষ। ব্যক্তিকে উত্তম আদর্শে জীবন যাপন করার বিষয়টিই ইসলামের শিক্ষা। আর এটি তৈরী হলে তার সম্পদ থাকুক বা না থাকুক,তার চারিত্রিক পরিশুদ্ধিতে আঘাত লাগবে না। সে উভয় অবস্থানে সন্তুষ্ট চিত্তে কাল যাপন করতে সক্ষম হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৮ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হারিকেনটা কই গেলোরে
ভালো লাগলো অনেক শুকরিয়া বড় ভাইয়া।
যে যাই খাওয়ার চিন্তা করেন, আমি কিন্তু ৩জনার ওয়ালিমাই খাব। দাওয়াত দিলেও খাব না দিলেও খাব। জায়েজ আছে। রাসূলের(সা) বিয়ের ওয়ালিমা আমার দলীল!
তিন তিনটা ভাই..অথচ এখনও কারো ওয়ালিমা খেতে পারলাম না!!
আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথে রাখুন এই দোআ রইলো!শুভকামনা নিরন্তর.....।
বিয়ের নামে যে পরিমান অপচয় আল অশ্লিলতার অনুষ্ঠান হয় এখন তার পুরাটাই ক্ষতিকর। কিন্ত বিশেষ করে নারিরা একে অতি প্রয়োজনিয় মনে করেন। আমার এক বন্ধু যে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ভাল বেতনে কর্মরত বিয়ে করে বাজে খরচ না করেই। কিন্তু তার ঘন্ষ্টি আত্মিয় স্বজন রা তার স্ত্রিকে এত কথা বলে যে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়র উপক্রম হয়। আল্লাহর রহমতে এত খারাপ এর হাত থেকে বাঁচলেও সে এখন বাধ্য হয়েই তার অনেক ঘনিষ্ট আত্মিয় কে এড়িয়ে চলছে।
দেনমোহর একটা মেয়ের অধিকার তার স্বামীর কাছ থেকে যেটা স্বামীকে আদায় করতে হবে স্পর্শ করার পূর্বেই ।
তাই একজন ২৫-২৬ বছর বয়সী ছেলের উপর সেই পরিমান দেনমোহরই ধার্য্য করা উচিত যা সে তার স্ত্রীকে ষ্পর্শের পূর্বেই শোধ করতে পারবে ।
উপর বললাম এই কারণে যে দেনমোহর যেহেতু ছেলেই দিবে তাই তারই বলা উচিত সেটা কতটুকু হবে যা সে ষ্পর্শ করার পূর্বেই শোধ করে ফেলতে পারবে ।
একটা ২৫-২৬ বছরের ছেলে যে কি না ১-২ বছর হল চাকরি করে তার পক্ষে নিশ্চয়ই ৫ লাখ টাকা দেনমোহর একবারে প্রথমেই শোধ করা সম্ভব না !
অথচ আমাদের সমাজে এই দেনমোহর ধার্য্য করে মেয়ের পরিবারের লোকেরা । এটা বলে যে ,''এর চেয়ে কম হলে সে তার অন্য বোন , ভাবী বা আত্মীয়দের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না । তাছাড়া এটা তো ছেলেকে আর একেবারেরই শোধ করা লাগবে না আর তার তো এখন যে অবস্থা ভবিষ্যতে তো আর এরকম থাকবে না । সে তো আরও কামাবে । পরে না হয় আস্তে আস্তে শোধ করে দেবে । আর বউও তো তাকে দেন মোহরের বাকী অংশ মাফ করে দিতে পারে।''
এভাবেই আমাদের সমাজে অধিক দেনমোহরে বিয়ে হয় । অধিক দেন মোহর কি সংসারের সুখ নিয়ে আসতে পারে ? দেখা যায় যে এর বাইরেও স্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের গিফট দিতে হয় স্বামীর । কিন্তু সেটা দেন মোহরের বাকী অংশ বলে দেওয়া যায় না ।
স্ত্রী - সন্তানের ভরণপোষনসহ সংসারের সমস্ত খরচই বহন করতে হয় স্বামীকে । অন্যদিকে স্ত্রীর যদি স্বামীকে তার বশে না আনতে পারে তাহলে সে সংসারে সে আগুন জ্বালিয়ে দেয় , অশান্তির সৃষ্টি করে । ফলে ছাড়াছাড়ি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায় । এতে কোনই লাভ হয় না স্বামীর , যা লাভ হয় তা সবই স্ত্রীর ।
যদিও বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন , বর্তমান পরিস্থিতিতে তা হয়ে গেছে একটা অহি-নকুল সম্পর্কের মত ।
বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা সম্পর্কের ব্যাপারে একেবারেই অসহিষ্ণু । সবারই প্রবনতা হল কিভাবে অন্যকে ঠকিয়ে নিজের লাভটা উসুল করে নেওয়া যায় ।
সামনে এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য আসছে যে বিয়ের মত দ্বায়িত্বপূর্ণ সম্পর্কে না যেয়ে কিভাবে একে অপরের মাধ্যমে নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণ করবে সেটার ব্যাপারেই বেশী আগ্রহী হয়ে যাবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন