পুলিশের সেকাল-একাল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১২:১১:৪২ দুপুর
আমার এক বোন ছোটবেলায় আমার ভাইয়ের কাছে জিজ্ঞেস করেছিল-চোর মানুষ কিনা। সেসময় চারিদিকে চোরের বেশ উৎপাত চলছিল এবং তাদেরকে ধরে ধোলাইও চলত। গ্রামের মাুনষ ছিল এক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা ছিল প্রতিবাদী এবং নিজেদের সমস্যার বেশ ন্যায়সঙ্গত সমাধান নিজেরাই করে ফেলত। সময়ের ব্যবধানে আজ চোরেরা পরিচালকের আসনে বসাতে, চোরদের বিচার নেই।
আমার সেই বোনটি যদি আজও ছোট থাকত,তবে জিজ্ঞেস- ভাই ! পুলিশ কি মানুষ ?
এটা অবশ্য শুধু শিশুদের প্রশ্ন নয়,পরিনত বয়সেও মানুষ এই প্রশ্নটি তুলতে পারে।
আমাদের রাজনৈতিক অবস্থার ডাইমেনশন মোটামুটি একই রকম। এর মধ্য থেকে সততার সাথে কাজ করা বলতে বুঝায় সরকার পরিচালকদের খুশী রেখে কিছুটা হম্বিতম্বি করা। বহু সংখ্যক করাপ্টেড জোনের মধ্যে পুলিশ(শাসন বিভাগ),আইন,বিচার বিভাগ এখন বোধহয় তালিকায় পরপর আছে।
বর্তমানকালে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যাতে পুলিশ শব্দটা আতঙ্কের নাম। ক্ষমতাসীনদের পক্ষে পুলিশ এর আগেও কাজ করেছে কিন্তু এতটা নগ্ন আচরণ পূর্বে দেখা যায়নি। এটা সত্যি যে বহু সদস্য অন্যায় করতে চায়না কিন্তু তারা বাধ্য হয়। অনেকে মানুষিক যন্ত্রনায় থাকে। অনেকে বিপদে থাকে। চাকুরী চলে যাবার আশঙ্কায় থাকে বা দূরতম স্থানে বদলী হবার ভয়ে থাকে। তবে তাদের সাহসীকতা এই মাত্রায় পৌছেনি যে বলবে-অন্যায় করার চাইতে চকুরীই ছেড়ে দেব।
পুলিশ পূর্বেও ছিল। এটি ছিল একটি মর্যাদাপূর্ণ পদবী। ব্রিটিশ আমলে পুলিশের পোষাক ছিল হাফপ্যান্ট এবং হাতে লাঠি। তারা সাইকেল চালাতো। অথচ তখন তাদেরকে ভয় করত সকল খারাপ মানুষ। এমনও হয়েছে কয়েকজন এমন হাফপ্যান্ট পরা পুলিশের ভয়ে লোকজন ভয়ে ছুটে পালিয়েছে। আর অাজ তাদের সাথে মানুষ যুদ্ধও করে। তারা এমন আচরণ করেছে যে-কিছু মানুষের ভয় ডর উঠে গেছে।
সিনেমার গল্প লেখা হয় সামাজিক সাষ্কৃতির উপর নির্ভর করে। পূর্বের সিনেমাগুলোতে পুলিশের ভূমিকা থাকত মহান। গল্পের শেষে তারা প্রধান ভিলেনকে পাকড়াও করত। দর্শকও মেনে নিত -তাকে শাস্তির আওতায় আনা হল।
পরবর্তীতে সামাজিকতার পরিবর্তন হল এবং সিনেমার গল্পে স্থান পেল পুলিশের মধ্যে ভিলেনের লোক ঢুকে ভিলেনকে সাহায্য করে। আর এখনকার সিনেমায় স্বয়ং পুলিশ অফিসারকে অথবা পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদার লোকটিকেও ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে। আর পুরো বিষয়টি দর্শক স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। অর্থাৎ সামাজিকতায়,মানুষিকতায় কত বড় বড় পরিবর্তন হয়েছে তা মানুষ বুঝতেও পারেনি।
বর্তমানের চালচিত্রও এমন। এখানে পুলিশের সর্বোচ্চ পদের লোকদেরকে এমনভাবে কথা বলতে শোনা যায়,যেন তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোক নয়,বরং কারো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের বৈধ হাতিয়ার।
আমার ধারনা এই মহান পেশা আজ অধিকাংশ মানুষের কাছে খুবই ঘৃণ্য হয়ে উঠেছে। পুলিশের বহু সংখ্যক কর্মকান্ড জনগনের সামনে নগ্নভাবে প্রদর্শিত হওয়ার কারনে,সকল পুলিশের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন হয়েছে। মনের এই অবস্থার পরিবর্তন খুব দ্রুত হওয়া সম্ভবপর হবে বলে মনে হয়না। পুলিশকে দলীয়করন করা বন্ধ হলে এবং তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করলে হয়ত সরকারী উচ্চপদস্ত লোকদেরকে জেলে যেতে হত। কিন্তু সে সমস্যার সমাধানকল্পে নিজেদের লোকজনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে সবকিছু হয়েছে একতরফা। হয়ত পরবর্তী সরকার এসে এদেরকে তাদের মত করে তৈরী করবে। এভাবে ৫ বছর পরপর পুলিশের ভূমিকায় আমূল পরিবর্তন আসবে।
জনগন যেহেতু উটপাখির মত হয়ে গেছে, তারা বালির মধ্যে মাথা গুজেই পড়ে থাকবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৫১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই পুলিশ কখনই ভাল ছিলনা ইতিহাসে। বাংলা গদ্য সাহিত্যের অন্যতম পুরাতন নিদর্শন "হুতুম পেঁচার নকশা" এর একটি লাইন হচ্ছে "দারোগা ভাল মানুষ ছিলেন(অতি কম পাওয়া যায়)। ১৮৬০-৮০ সালের দিকে কলকাতা পুলিশের একমাত্র গোয়েন্দা আর.রিড এর লিখা বইতে আছে পুলিশ এর মধ্যেই কতটা ডাকাত ছিল।
আর বর্তমান পুলিশ কে কিছুতেই মানুষ বলা যায়না। আমার জানা কয়েকটি বড় হাউজিং এ একাধিক দামি ডেকোরেশন করা ফ্ল্যাট কিনেছেন পুলিসের এস.আই পদবির লোক। যেই ফ্ল্যাট টি গ্রামিনফোন এর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দাম বেশি বলে কিনেননি!
এরা মানুষ নয়।
আপনাকে ঈমাম তায়মিয়ার ডায়ালগ শোনাচ্ছি। তিনি যখন জেলে ছিলেন শাসকের কিছু অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারনে। তখন ধর্মভীরু জেলার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন-আমি সরকারের কথায় আপনি ন্যায়ের মধ্যে আছেন জেনেও আটক করেছি আপনাকে। এতে আল্লাহ কি আমাকে এই জুলুমের সহযোগী হিসেবে গন্য করবেন ? ইবনে তাইমিয়া বললেন- না, কারন তুমি নিজেই জালিম।
বর্তমানের পুলিশগুলি কোহিনূর মিয়ার চেয়ে শতগুণ বেশি অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে, রাষ্ট্র তাদের গণহত্যায় উস্কানি দিচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন