আজকের দিনটা ভালই লাগল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৩:০১:২৫ দুপুর
আমি আমার শৈশবের বন্ধুদের কখনও ভুলে যাইনি। সেসব বন্ধুদের অধিকাংশই সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত। অনেকের লেখাপড়া বেশীদূর আগায়নি। কিন্তু আমি তাদের সাথে আচরনের সময় তাদের মত হয়ে যেতাম। এতে তারা আমাকে পর পর ভাবত না। ঢাকাতে অামি অফিস নিয়ে ব্যপক ব্যস্ত থাকতাম। কখনও কখনও রাত ১০টা পর্যন্তও অফিসের কাজ করতে হয়েছে। বিদেশী প্রতিনিধিদের সাথে বিশেষ মিটিংয়েও গ্রামের কোনো বন্ধু ফোন দিয়ে বসলে তা রিসিভ করতাম। কারন তারা দ্রুত মনে আঘাত পায়। একজন শিক্ষিত সচেতন লোক নিশ্চয়ই কাউকে ফোন করার আগে কিছু চিন্তা ভাবনা করে। আমার সেইসব বন্ধুদের অনেকেই তা সম্ভবত জানেনা। কিন্তু এতে আমার আক্ষেপ নেই। আমি কখনও বিরক্তও হয়েছি,কারন অযথা আলাপ দির্ঘায়িত করা ছাড়া তেমন কিছু বলার থাকেনা তাদের। আবার গীবতও থাকে অনেক সময়। তখন মনে করিয়ে দেই যে-গীবত হয়ে যাচ্ছে। বিরক্ত হলেও কখনই প্রকাশ করিনা,তাতে তারা কষ্ট পাবে বলে। কখনও কখনও হাসতে হাসতে বলেছি-তোর কোনো কাজ নেই,নাকি রে ? আমি একটা কাজ করছিলাম আর দিলি ভন্ডুল করে....ইত্যাদী। তখন হাসতে হাসতেই তারা বলে আচ্ছা পরে ফোন দেব। এমনিতেই আমি ফোনবাজ লোক না। কিন্তু ইদানিং এক ছোটবেলার ভাল বন্ধু বেশ জ্বালাচ্ছে।
সে সময়ের হিসাব বোধহয় ঠিকঠাক করতে পারেনা,তাই আমি ঘুমালেই তার মিসকল পাই। কখনও কল ব্যাক করি,কখনও করিনা। কয়েকদিন ফোন রেসপন্স না করলে সে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করে। আমি পূর্বের থেকে অনেক বেশী ভোতা হয়ে গেছি। যে কোনো ঘটনা ঘটলেই সর্ব প্রথম আল্লাহর কথা মনে পড়ে। হঠাৎই মনে হয়,এটা নিশ্চয় আমার পরিক্ষা। তাহলে ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর সাহায্যে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। পরিস্থিতি ভাল হোক আর মন্দ হোক আমি উত্তেজিত হইনা,রেগে যাই না বরং ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে থাকি। সকল পরিস্থিতিতে আমি আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকি,আর এটাই আমার সুখী থাকার সিক্রেট।
আজ সকালেও সেই বন্ধুর মিসকল পেলাম। ঘুম ভাংল, খানিক বিরক্ত হলাম। তারপর ভাবলাম হয়ত এই ঘুম ভাঙার মধ্যেই কোনো কল্যান রয়েছে। বাইরে তাকিয়ে দেখলাম আরেকটি আলো ঝলমলে দিন। ভাল লাগল। বন্ধুকে মনে মনে পেটানোর পরিবর্তে ধন্যবাদ দিয়ে রেডী হলাম।
সেদিন ১০ পাউন্ড কমলা কিনেছি,বেশ কিছু ব্যাগে ভরে নিলাম। ঝটপট নাস্তা করলাম ৮০ মাইল স্পিডে। সাইকেল নিয়ে রওনা হলাম আমার প্রিয় অলামেট নদীর ধারে।
কিছুদিন আগেও নদীর দুকূল ছাপিয়েছিল ,তার রেশ রয়েছে পার্কে। দেখলাম ঢোকার রাস্তায় ছোট ব্যারিকেড দেওয়া,মানে যাওয়া যাবেনা। কিন্তু এক পাশ দিয়ে ঢুকে পড়লাম। ভেতরে দেখলাম পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ করছে এবং ২জন পুলিশ। ইদানিং শুধু পুলিশের সাথে দেখা হচ্ছে। সেদিন একজনকে লিফ্ট দিতে বললাম,কিন্তু সে দেরী করছিল বলে-রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম, তখন সন্ধ্যারাত্ । হঠাৎ পুলিশের গাড়ি আমার কাছাকাছি আসল,আমি কঠিনভাবে পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। পুলিশ গাড়ি না থামিয়ে চলে গেল। কিন্তু আরেক রাস্তা ঘুরে দূর থেকে আমার দিকে আবার তাকালো, এবার বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম এবং দেখার চেষ্টা করলাম,এই জনাবটা কে? খানিক এগিয়ে তাকে দেখলাম, লোকটা মনে হল বেশ লজ্জিত হল, চোখ সরিয়ে নিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। এরপর দাড়িয়ে না থেকে বেশ খানিকক্ষন জোরে দৌড়াদৌড়ি করলাম,তাতে শিতের মধ্যে দাড়িয়ে থাকতে সুবিধা হল।
যাইহোক, পার্কে পুলিশ অফিসারকে দেখে থামলাম এবং হাতের ইশারায় জানালাম সামনে যাওয়া যাবে কিনা। উনি উচ্চস্বরে রসিকতা করে বললেন-পার্ক আজ তোমার জন্যে,এগিয়ে যাও। এগিয়ে গিয়ে বুঝলাম আমিই একমাত্র বান্দা এখানে। সবুজ ঘাসের উপর থেকে নদীর পানি সরে যাওয়াতে পলিমাটি জমেছে,তবে কয়েক সপ্তাহের ব্যাবধানে নতুন ঘাসও জন্মেছে। নদীর পাশের সুন্দর গাছগাছালি দেখে মনে হল মরা আগাছা।
নদীর ধার ঘেসে বসলাম। নদীর চেহারা এখানে মলিন হলেও একা ভালই লাগল। গত কয়েকদিন ধরে আমার নীচের ঠোটটা শুষ্ক ঠেকছিল। ভেসলিন লাগালেও খানিক পর আবারও শুষ্ক হয়ে যাচ্ছিল। এক আমেরিকান ডাক্তার বন্ধুর কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বললেন-ভেসলিন লাগাতে। বললাম-সে তো চলছে। তিনি বললেন-এটা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এটা বেশ বিরক্তিকর ছিল। আজ চমৎকার সূর্যের আলোয় ঘন্টা খানেক বসে থাকার পর বুঝলাম আমার ঠোটের সমস্যা আর নেই। তার মানে দীর্ঘ দিন সূর্যের আলোর অভাবে আমার ভিটামিন ডি কমে গিয়েছিল। শীতের দেশে এটা হয়।
অনেকক্ষন সাইকেল চালালাম্ । এমনিতেই যেন ভাল লাগছিল। দুপুরে ভূনা ছোলার ডালের সাথে মুরগীর মাংস ঝোল,ভাত খেলাম। রান্নাবান্না খারাপ হচ্ছেনা।
ইদানিং লোকজন বিয়ে নিয়ে কথা বলছে। সুখে থাকার দিনগুলোর কি তবে ইতি ঘটতে যাচ্ছে ! আমাকে মেরে জনগনের লাভ কি !
বিষয়: বিবিধ
১২৬৫ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ছোলার ডালের সাথে মাংশ দিয়ে রান্নার চিন্তা
করতে ছিলাম। তা আর হবে না। ছোলার ডাল সংগ্রহ করতে হলে ইন্ডিয়ান স্টোরে যেতে হবে। তাই লামা বিন সংগ্রহ করেছি। ওটা দিয়ে রান্না করবো। টেষ্ট কেইচ হিসাবে। আপনার ওখানে বরফ পড়েনি।
আপনার সুখের জীবণ ইতি ঘটাতে ইচ্ছে না করলে করবেন না? কেউ মানা করলেও শুনার দরকার নেই
তাহলে কবিগুরুদের কথা তো ভালোই শুনের
যেমন মজা ডাইল তেমনি গোস্ত!!!
যে সব সপ্ন দেখছেন জনগনের দোষ কি?
আলামেট নদি নিয়ে মার্কিন-আদিবাসি বা রেড্ইন্ডিয়ান দের নিয়ে কোন গল্প পরেছিলাম বোধহয়। এই বিষয়ে কিছু জানা আছেকি?
লামা বিন দিয়ে আমিও ক্যাট ফিস রান্না
করে ছিলাম। সীমের বিচির মত লাগে। খারাপ না। আপনিও রান্না করেন। খেতে ভাল।
আপনি ক্যানে পাবেন। যে কোন সুপার মার্কেটে।টেষ্ট শিমের বিচির মত।
বাণী দিলাম-
মন্তব্য করতে লগইন করুন