পুজিঁবাদী গল্প
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ০৪:০১:১৯ রাত
ভোদড় জেলার লোকেরা চরম অশান্তিতে কালাতিপাত করতে থাকে। যত চেষ্টাই করুক ভাল থাকার,কিছুতেই কাজ হয়না। তাদের এই অশান্তির প্রধান কারন হল বান্দর। এলাকার বনে,বাদাড়ে বান্দর ভরপূর। কখনও বাড়ির এটা সেটা চুরি করে,কখনও বাচ্চাদের খামছি মারে ,কাপুড় চোপড়ও চুরি করে নিয়ে যায়। তাদের কারনে বাচ্চাদের খেলাধুলাও চুলায় গেছে।
একদিন দূর শহর থেকে স্যুট টাই পরা এক ভদ্রলো আসলো এবং লোকদেরকে বলল,কিছু মনে করবেন না। আমি খবর পেয়েছি এই এলাকায় ব্যপক বান্দর আছে। এটা কি সত্য ? বলেই তিনি একটি সিগারেট ধরালেন। আর সঙ্গে সঙ্গে এক বান্দর এসে তার সিগারেটটি কেড়ে নিয়ে দু টান দিয়ে পালালো। এলাকাবাসী বলল-এবার দেখলেন তো বান্দর আছে কিনা ?
গম্ভীরভাবে লোকটি বলল, আসলে আপনাদের সমস্যাটাই আমার ব্যবসা। লোকেরা জিজ্ঞেস করল-তা কিভাবে ? তিনি বললেন-ব্রাজিল এবং আফ্রিকার সাথে আমার ব্যবসা আছে। সেখানকার আমাজন ও আফ্রিকার জঙ্গলে অভয়ারন্য তৈরী করা হবে,তো তার জন্যে আমাদের বহু সংখ্যক বান্দর দরকার। আমরা যে প্রজাতি চাই সেগুলো এখানে রয়েছে। আমরা এটা নিতে চাই।
এলাকার ক্রিমিনাল চাচা বলে উঠল,আসলে বাবা বান্দরগুলো বিরক্ত করে ঠিকই কিন্তু ওরা তো আমাদের সন্তানতুল্য। ওদের আচরণ আমরা উপভোগই বেশী করি। আপনি ওদের চাইলেই তো আর....
না না...আমি উপযুক্ত মূল্য প্রদান করেই আপনাদের বান্দর গ্রহন করব।
: তবে আর দেরী কেন ? যদিও কষ্ট হবে ,তারপরও অভয়ারন্যের স্বার্থে...যদি আমরা কোনো উপকার করতে টরতে পারি,,,,হে হে হে...
: আচ্ছা ওই কথাই রইলো। আমি এলাকায় একটি বিশাল সাইজের খাচা তৈরী করব,যাতে বান্দরগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে রাখা যায়। আর আপনারা বান্দর ধরে আমার কাছে বিক্রী করুন। প্রতি বান্দর ৪০ টাকা।
: বলেন কি, মাত্র ৪০ টাকা ? অন্তত ৫০টাকা ধরতে পারেন।
: আচ্ছা ৫০ টাকাই ফাইনাল।
=======
এলাকার কিছু লোক দ্বীধা দ্বন্দের পর অবশেষে কয়েকজন যখন বান্দর ধরে লোকটির কাছে দিল এবং যথাযথ মূল্য পেল,তখন এলাকায় রব পড়ে গেল যে-বান্দর এখন ঝামেলা নয় বরং এটা সম্পদ। লোকেরা কাম কাজ বাদ দিয়ে নানান কৌশলে বান্দর ধরতে লাগল। প্রতি পিছ ৫০ টাকা। কিছু দিনের মধ্যেই এলাকার শ্রমজীবী মানুষ জীবীকার নতুন সন্ধান পেল। এক শ্রেনীর মানুষ আবার লোকটিকে বলল-আমার বান্দর আগে নিন,প্রয়োজনে ৪০ টাকা দিন,এতেই চলবে। কিন্তু লোকটি সাংঘাতিক নীতিবান। সে ৫০ টাকার নীচে কিনতে রাজি নয়।লোকেরা তার নীতিতে খুশী।
হাজার হাজার বান্দর কিনল লোকটি। এলাকার ব্যবসা জমজমাট।
=======
কিছুদিন পর আরেক স্যুট পরা লোক আসল একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে। তার সাথে ৪ প্রজাতির বান্দর। লোকটি বলল-আমি সরাসরি ব্রাজিল থেকে এসেছি। আপনাদের বিরল প্রজাতির বান্দর আছে শুনেছি। আমার কাছে ৪টি স্যাম্পল আছে,আপনাদেরগুলো কি এরকম? জনগন বলল-জি এগুলো এরকম।
লোকটি বলল-আমার কাছে ৫০ হাজার বান্দরের অর্ডার আছে। জরুরী ভিত্তিতে এটা লাগবে। লোকেরা বলল-কিন্তু আপনি এত দেরীতে আসলেন ক্যান ? আমরা তো প্রায় সবগুলোই বিক্রী করে ফেলেছি। তারপরও দেখী কি করা যায়। তা আপনি কত দাম দিবেন ?
লোকটি বলল-২৫০ টাকা দিব প্রতিটির জন্যে। সত্য বলতে কি আমি বেশ কিছু টাকা লাভ করি কিন্তু আমার অনেক ঝামেলাও আছে। ২৫০টাকায় চলবে তো ?
: চলবে না মানে, একেবারে গড়াগড়ি খাবে ।
লোকেরা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। হায় আল্লাহ মহা মূল্যবান বান্দর আমরা কত কমে বেচেছি ! লোকেরা বান্দর খোজ করে অল্প কিছু নিয়ে আসল। আর প্রতিটি ২৫০ টাকায় বিক্রী করল। আনন্দ আর তাদের ধরেনা।
এবার একটি মাস্তান শ্রেনী জনগনকে সাথে নিয়ে পূর্বের সেই ক্রেতার কাছে গিযে বলল-মিয়া আমাদের সরল পেয়ে তো মাল ভালই কামালেন। কোথায় ২৫০ টাকা আর কোথায় ৫০ টাকা।....আমরা এলাকাবাসী যা বলি তা শোনো নইলে খবর আছে।
: জি বলুন।
: তোমার বান্দর আমাদের কাছে বিক্রী করতে হবে।
: দেখুন এটা আমার ব্যবসা,আমাকে তো বাচতে হবে। আর আপনাদের এমপি সাহেবও আমার ব্যবসায়িক অংশীদার। কয়েকজন মন্ত্রী তো সরাসরি আমার কোম্পানীর লোকাল এজেন্ট। এই দেখেন মন্ত্রীর সাথে আমার ছবি। সেদিন আমরা বান্দর নিয়েই আলোচনা করছিলাম্ ।
লোকেরা একটু চুপসে গেল। তারপর বলল-আচ্ছা ঠিক আছে,আপনি কিছু পয়সা বেশী নেন,এবং আপনার বান্দর আমাদের কাছে বিক্রী করেন। আমরা আপনাকে ১৫০ টাকা করে দেব প্রতিটি।
লোকটি কাকে যেন ফোন করল এবং বলল-এরা ১৫০ দিতে চায়। ওপার থেকে বলল, ২০০টাকার এক পয়সা কমে হবেনা। আমাদের অনেক খরচ আছে। জনগন লাউড স্পিকারে তা শুনল। তারা ভাবল এরপরও তাদের ৫০ টাকা লাভ থাকে।
দু একজন লোক কয়েকটি বান্দর ২০০টাকায় তাৎক্ষনিক কিনে পরবর্তী ক্রেতার কাছে গেল এবং ২৫০ করে দাম পেল।
এবার অন্যরা বলল এই ক্রেতাকে বলল-আচ্ছা আপনি কতগুলো কিনতে পারবেন ? লোকটি বলল-আমি তো বড় গাড়ি নিয়ে আসিনি। আপাতত ৫০টি স্যাম্পল নিয়ে যাব এবং পরের রবীবারে ৩০টি বড় ট্রাক এনে সবগুলো বান্দর নিয়ে যাব। অর্ডার আমার পাকা।
এবার লোকেরা পূর্বের ক্রেতার কাছে আসল। লোকটি তখন বলল দেখুন, আমাকে শুক্রবারের মধ্যে বান্দর ডেলিভারী দিতে হবে,নইলে আমার লস হবে। আর মন্ত্রী সাহেবের নির্দেশও আছে। ...
: না মিয়া সেটি হচ্ছে না। আগে বান্দ বেচবা তারপর এলাকা থেকে যেতে দেব।
লোকটি বলল-ঠিক আছে,তবে শুক্রবারের আগেই আপনাদের কিনতে হবে। লোকেরা এবার তাদের ঘটি বাটি বিক্রী করে সেই টাকা দিয়ে বান্দর কিনতে লাগল। মাস্তান শ্রেনীর লোকেরা অনেক কে পিছু হটিয়ে নিজেরা কিনে নিল। আগে বান্দর কেনার জন্যে অনেকে সেসব প্রভাবশালীদের তেল মালিশ করতে লাগল। সকলে মিলে লোকটির সকল বান্দর ক্রয় করে নিল। অবশেসে শুক্রবারে লোকটি জনগনের শুভেচ্ছা নিয়ে চলে গেল।
ওদিকে বড় ক্রেতাটি হাত নেড়ে সকলকে বিদায় জানিয়ে গেল এবং পরবর্তী রবীবারে ৩০টি ট্রাক নিয়ে আসবে বলে জানালো।
===========================
এলাকাবাসীর অনেক দিন পার হল,কিন্তু রবীবার আর আসেনা। শুক্র যায়,শনি যায় তারপর সোমবার....কোনো রবীবার নেই। মাস চলে গেল মাগার রবীবার নেহী আতা হায়.....
তারা বুঝল হারামখোরের দল আমাদের বান্দর আমাদের কাছে বেচে দিয়ে সপ্তাহ থেকে রবীবারটিকে নিয়ে পালিয়েছে। ...তাদের রবীবার আজও আসেনি।...অতপর: তারা বান্দরের জ্বালায় অস্থির হয়ে উঠল ,হতেই থাকল,হয়েই চলল.......
বিষয়: বিবিধ
১২২০ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আসেন না এমন একটা ব্যাবসা খুলি। একেবারে আমেরিকায় রেজিষ্টার্ড কোম্পানি নিয়া!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন