ইরাকী ফুড খেলুম রাস্তায়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১০:৫২:২০ সকাল
আজ পোর্টল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। উদ্দেশ্য ফুটপাথে খাবার খাব। হালকা বৃষ্টির মধ্যেই চলা শুরু হল। পথিমধ্যে একটি স্টোর থেকে কিছু সরঞ্জাম কিনলাম,বলাই বাহুল্য-সবগুলোই রান্না সংক্রান্ত।
৪র্থ স্ট্রিটের খাবারের দোকানগুলোর বেশ কয়েকটি বন্ধ ছিল। উদ্দেশ্য ছিল মিশরীয় খাবার খাব কিন্তু দোকান বন্ধ। হাটতে হাটতে আরেক মাথায় এসে দেখলাম ইরাকী দোকানে এক হিজাবী ভদ্র মহিলা খাবার প্রস্তুতে ব্যস্ত। দোকানগুলো বেশ উঁচু,একেবারে মাথা সমান বা আরও একটু উচু। বোর্ডে নানান খাবারের ছবি আছে,নীচে লেখা হালাল। ভাল লাগল।
সালাম প্রদানপূর্বক জিরো নামক খাবারের অর্ডার করলাম ভেড়া এবং মুরগীর দুটি। উনাকে বললাম আমি অনেক দূরে থাকি,শুধু খাবারের জন্যেই এখানে আসা। উনি খুশী হয়ে হাসলেন, দেখলাম উপরের মাড়ির পেছনের দিকে একটা দাঁতও নেই....বেচারী !! তবে বয়স উনার ৫০ এর বেশী হবে বলে মনে হলনা। ..... উনারা স্বামী-স্ত্রী এই দোকানটি চালান।
উনি আমার কাছে জানতে চাইলেন আমি কোন দেশের। বললাম-বাংলাদেশ। আবারও জানতে চাইলেন মুসলিম কিনা । বললাম -জি মুসলিম। এবং আবারও জিজ্ঞেস করলেন-শিয়া নাকি সুন্নি । বললাম-সুন্নি। আবার জিজ্ঞেস করলেন-আমাদের দেশে শিয়া আছে কিনা। বললাম -নাই। অবাক হয়ে বললেন-তা কিভাবে সম্ভব ! বললাম আমাদের ৯২% লোক মুসলিম এবং সবাই সুন্নি। অল্প কয়েকজন অবশ্য শিয়া আছে কিন্তু আমি তাদেরকে কখনও দেখিনি।
তিনি বললেন সুন্নিদের চাইতে শিয়া ভাল। তার এই সরল উক্তিতে আমার হাসি পেল। তিনিও হাসতে হাসতেই বললেন। বললাম-শিয়ারা ভাল কেন ? তিনি জবাব দিলেন-শিয়ারা বেশী ফ্রেশ চিন্তা করে। এবার একটু জোরে না হেসে কোনো উপাই থাকলো না। জানতে চাইলাম না,সুন্নিদের চিন্তা-ভাবনা ভেজাল বা ফর্মালিনযুক্ত এ তথ্য তিনি কোথায় পেলেন। তিনি বললেন-আমি শিয়া মুসলিম,শিয়ারা ভাল। বললাম-আমি অবশ্য নিজেকে শুধু মুসলিম হিসেবে দেখী। একেবারে সরল লোক না হলে এভাবে কেউ সরাসরি কথা বলতে পারেনা। বিষয়টা হালকাভাবেই গ্রহন করলাম।
শিয়াদের সম্পর্কে আমার জ্ঞান অবশ্য একেবারেই সীমিত। তবে অল্প যা জানি তাতে তাদের মুসলমানিত্ব নিয়েই প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। কারন তাদের অধিকাংশ লোকই আল্লাহর পাশাপাশি ঈমামদেরকে স্থান দিয়েছে। তাদের ১২জন ঈমাম রয়েছে(ইমাম আলী(রাঃ),হাসান(রাঃ),হুসাইন(রাঃ),ঈমান জাফর সাদিক, ঈমাম মূসা কাদিম,ঈমাম জয়নুল আবেদীন......ঈমাম খোমেনী প্রমূখ) এবং তারা বিশ্বাস করে ঈমামদের কখনও ভূল হয়না,তারা ভুল করতে পারেনা। তারা নিষ্পাপ,নির্ভূল। তারা পথ নির্দেশনা দেন। ঈমামের মর্যাদা রসূল(সাঃ)এর সমান বা নবীদের সমান। এবং ঈমামদের কাছে আল্লাহর বার্তা আসে। ....তারা মাত্র কয়েকজন সাহাবী(হযরত সালমান ফার্সী(রাঃ),আবুযর গিফারী(রাঃ)আলী(রাঃ)সহ কয়েকজন) ছাড়া সকল সাহাবীকে কাফির মুশরিক মনে করে। হযরত ওমর(রাঃ),আবু বকর(রাঃ),ওসমান(রাঃ)সহ সম্মানিত প্রায় সকল সাহাবীই কাফির(নাউযুবিল্লাহ)বলে তারা মনে করে। আর এসকল সাহাবীদেরকে অশ্লীল ভাষায় গালি প্রদান এবং অভিশাপ প্রদানকে তাদের কর্তব্য মনে করে। এমন কিছু বিষয় বিশ্বাস করে ও কর্মকান্ড করে যা সরাসরি শিরক। .....
যাইহোক, আমি দুই প্যাকেট খাবার নিয়ে ধন্যবাদেরসাথে বিদায় হলাম এবং খেতে খেতে পথ চললাম। মিশরীয় জিরোর মত ততটা মজা না লাগলেও বেশ লাগল। এবার এশিয়ান স্টোরে গেলাম। প্রধান উদ্দেশ্য লাউ। কিন্তু পূর্বের দিনের লাউগুলো বিক্রী হয়নি। হাত দিয়ে দেখলাম নরম হয়ে গেছে। দুঃখ পেলেও নরম লাউ'ই কিনলাম।আরও কিছু প্রকার ফলফলাদী,সব্জী কিনলাম। আরেক স্টোর থেকে আরও কিছু রন্ধন সামগ্রী কিনলাম। উদ্দশ্য বারবিকিউ ও স্টেক করা। সেদিন একবার করে ভাল ফল পেয়েছি।
এবার হালাল স্টোর থেকে গরুর মাংস কিনলাম। এদের মাংসের মান খুব ভাল। মুসলিম-অমুসলিম সকলেই এটা কিনে। সাধারণ মাংসে পানির পরিমান বেশী থাকে। এছাড়া তাতে চর্বী থাকে প্রচুর। সম্ভবত পশু হত্যায় ভেতরের রক্তসমূহ সঠিকভাবে বের না করে দেওয়ার কারনে মাংসে জ্বলীয় অংশের পরিমান বেশী থাকে। কিন্তু এখানে মাংস থাকে টাইট এবং বেশ শুকনো ধরনের। তবে এরা দাম বাড়িয়েছে প্রতি পাউন্ডে ১.৫ ডলার,যা আসলেই অনেক। প্রতি কেজী এখন ১৪ ডলার দাম পড়ছে,যা আমার কাছে বেশীই মনে হয়,অবশ্য উপায় নেই।
বাসায় এসে গরুর মাংস রান্না করলাম। কিমা গরুর মাংসের সাথে আলু এবং টমেটো সস ,মশলা মিশিয়ে এক জিনিস বানালাম। এবার বার্গার বানিয়ে খাব। লাউও রান্না করলাম। খেলাম বেশ। তারপরও মনে হচ্ছে আরও খাই.....ওদিকে সেদিনকার বানানো রসগোল্লাসমূহ রয়েছে। মনে পড়ে গেল। যাই এক পিছ মুখে দিয়ে আসি, নইলে আবার মানুষ মন্দ বলবে.............
জিজ্ঞেস করলেন আমি কোন দেশের
বিষয়: বিবিধ
১২৬৮ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নরম লাউ এর খবর কি ? সিদ্ধ হয়েছিল তো ঠিকমত ?
আপনি আর কি কি রান্না করতে পারেন? খাওয়া যায় তো?
গরুর গোস্তের কেজি তো ভাই এই দেশেই ৪২০ টাকা। লাউ দিয়ে গরুর গোস্ত রানতে পারেন বেশ মজা হয়। গোস্তের কিমায় আলু আর পনির দিয়ে মশলা দিয়ে রান্না করুন। পাউরুটির সাথে খাইতে খুব মজা! জিরো খাদ্যটার বিবরন দিলেন না ভাই!!
মাংশ না। সেমন মাছ। প্রথম মাছের ফিলেট
গুলো ছোট ছোট করে কেটে। হলুদ, মরিচ,আদা,মেখে তেলে ভেজে রাখলাম। পরে
পেয়াজ ভেজে, বেলাইন করে,তেতুল মিশিয়ে সস বানালাম। সাথে ভাজা জিরা,অন্যান্য মশল্লা দিলাম, সাথে সুগার দিলাম। টক, ঝাল,মিষ্ট সস হলো। পরে মাছের টুকরা গুলো সসে এড করে,চুলায় রাখলাম। শেষে চুলা থেকে নামিয়ে ভাজা জিরা দিলাম। খারাপ হয়নি। হূট করে এই রান্না করলাম। কেমন হলো জানাবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন