মানত করার ব্যাপারে যা জানলাম
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:১৬:৫০ সকাল
মানত করা যাবে?
এক. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানত করতে নিষেধ করেছেন। অতএব মানত করা ঠিক নয়। আমরা অনেকে বিপদ-আপদে পড়ে মানত করি, আর মনে করি এটা সওয়াবের কাজ। আল্লাহ খুশী হবেন। কিন্তু আসলে তা সওয়াবের কাজ নয়। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) যা করতে নিষেধ করেছেন তাতে আল্লাহ খুশী হবেন না। এবং এতে কোনো সওয়াবও হয় না। তাই আমাদের উচিত হবে কোনো অবস্থায় মানত না করা। অবশ্য মানত করে ফেললে তা পালন করতেই হবে কারণ মানত করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
১. আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সাঃ) আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, মানত কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে মাল খসায়।
সহিহ মুসলিমঃ ৪৩২৭, মুসনাদে আহমাদ।
২. আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমরা মানত করবে না। কেননা মানত তাকদীরের কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। এটা শুধু কৃপণ ব্যক্তি থেকে সম্পদ খসায়।
সহিহ বুখারি, মুসলিমঃ ৪৩২৯, সহিহ সুনানে আত-তিরমিজি, সহিহ সুনানে নাসায়ি।
৩. সাহাবী আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, যেই বস্তু মহান আল্লাহ আদম সন্তানের জন্য নির্ধারণ করেননি মানত সেটি তার নিকটবর্তী করে না। বরং তাকদীরে যা আছে মানত সেটাই নিয়ে আসে। এর মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয় যা সে খরচ করতে চায়নি।
সহিহ মুসলিমঃ ৪৩৩১।
দুই. মানত করার মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়। এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বুঝিয়েছেন, মানত করা একটি অনর্থক কাজ। সাধারণত কৃপণ স্বভাবের লোকেরা মানত করে থাকে। তারা সুস্থ ও নিরাপদ থাকা কালে দানসদকা করে না। কিন্তু বিপদে পড়লে আল্লাহর পথে খরচ বা দান সদকা করার বড় বড় মানত করে।
তিন. তাকদীরে যা লেখা আছে তা হবেই। মানত করার মাধ্যমে তাকদীরের লেখা পরিবর্তন করা যায় না। তাকদীরের প্রতি যাদের যথাযথ ঈমান নেই সাধারণত তারাই মানত করে থাকে।
চার. মানত করা হোক বা না হোক। ফলাফল একই হবে। তাকদীরে যা লেখা আছে সেটাই আসবে অবধারিতভাবে।
পাঁচ. আলোচিত সবগুলো হাদীসই মানত না করার জন্য মুসলিমদেরকে নিরোৎসাহিত ও নিষেধ করেছে। বলেছে, এটি কোনো ফল বয়ে আনে না বরং শুধু কৃপণের সম্পদ খরচ করায়।
এ সকল বিষয় জানার পর কোনো মুসলিমের পক্ষে কোনো প্রকার মানত করা উচিত নয়।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, যে কাজটি করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, আমরা সেটাকে সুন্নাত মনে করি।
বিঃদ্রঃ অনেক হুজুর মাওলানা বলে অমুক জায়গায় মানত করলে অমুক কাজটা হয়ে যাবে। এই ব্যক্তি হচ্ছে জাহেল, মূর্খ। এর কোনো কথা শোনা যাবেনা – এর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে।
আর মাজার বা পীরের নামে কোনো কিছু মানত করা শিরক। কারণ, এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে অলী আওলিয়াদের সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকে । আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো ইবাদত করলে সেটা শিরক।
সংগৃহীত
বি:দ্র: উপরোক্ত বিষয় থেকে আমার যা ধারনা হয়েছে তা হল,মানত হারাম নয় যদি তা সঠিক ভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু এটি করতে নিষেধ করা হয়েছে। আর মানত করে ফেললে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব।
বিষয়: বিবিধ
৩০৩৫ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মানত করার নামে আসলে পির ব্যবসাই বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
তবে কেউ যদি এই মানত করে যে দেখা হইলে আমাকে খাওয়াবে সে ক্ষেত্রে মনে হয় কোন নিষেধ নাই!!
সুন্দর প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরলেন!
জাযাকল্লাহু খাইরান আপনাকে!
মান্নত হারাম না হলেও তা থেকে বিরত থাকাই তো ভাল!
তাকদিরের বিষয়টা গভীর সাগরের মতই,যার তল খুজে পাওয়া যায় না!
এ বিষয়ে কলম ধরবেন আশা করি!!
উদাহরন দিচ্ছি:
আপনি মনে মনে আপনার উক্ত বিষয়টি আশা করুন এবং আল্লাহর কাছে চান। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে রোজা রাখুন। এটি সবে সর্বোত্তম। আর যদি কন্ডিশন এপ্লাই করেন যে-ইয়া আল্লাহ আমাকে সেটা দান করুন,আমি এতগুলো রোজা রাখব। তাহলে বিষয়টা ভিন্ন রকম হয়ে যায়।
জাজাকাল্লাহ হুজুর ।
হুজুর যদি এরকম মানত করি আমি পরিক্ষায় ভাল রেজাল্ড করি তাহলে ৫০০/১০০০ টাকা মসজিদে বা গরীবকে দিব বা কয়েকদিন রোজা রাখব ,এরকম কি করা যাবে হুজুর ?
উদাহরন দিচ্ছি:
আপনি মনে মনে আপনার উক্ত বিষয়টি আশা করুন এবং আল্লাহর কাছে চান। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে রোজা রাখুন। এটি সবে সর্বোত্তম। আর যদি কন্ডিশন এপ্লাই করেন যে-ইয়া আল্লাহ আমাকে সেটা দান করুন,আমি এতগুলো রোজা রাখব। তাহলে বিষয়টা ভিন্ন রকম হয়ে যায়। এটি নিজের উপর বোঝা চাপানোর নামান্তর।
লক্ষ্য করুন: আপনি কন্ডিশন এপ্লাই করছেন। যদি এটা হয়,তবে সেটা দিব। ....আল্লাহ আমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি পূর্বেই আমাদের সকল বরাদ্দ ঠিক করে দিয়েছেন্ । আমরা আমাদের জন্যে বরাদ্দটুকু কমাতে বা বাড়াতে পারিনা। এগিয়ে-পিছিয়েও নিতে পারি না।
উত্তম হবে যদি আপনি আল্লাহর কাছে কিছু চান এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সম্পুর্ণ সন্তুষ্ট চিত্তে দান সদকা করেন,অন্য ইবাদত করেন। আর সেই ব্যক্তি অতি উত্তম যে মনে মনে এটাও বলে- ইয়া আল্লাহ যা চাচ্ছি তা আমার জন্যে যেন কল্যানকর হয়। আর যদি আপনি সেটা নাও দেন, তবুও আমি আপনার উপর সন্তুষ্ট সর্বদা।
বুঝেছেন ?....একদা ক্রিকেট টিমকে জেতানোর জন্যে নফল নামাজ মানত করতাম...
একদা আমিও ক্রিকেট টীমের জন্য হাজারো মানত করেছি। নামায, রোজা, সাদাকা কোনকিছুই বাদ যায়নি! আমার শিশুবেলার একজন সঙ্গী ছিলো জেনে খুবই ভালো লাগলো।
আর ব্যাখ্যা বা মাসআলা হলো যদি কেউ না জেনে করে থাকে অর্থাৎ তার কাছে সঠিক জ্ঞান না থাকে এমতাবস্থায় সে সৎ নিয়তে করে ফেলেছে তা পূর্ণ করবে। কোন অসৎ নিয়তে করা মানত(যেমন অমুকের এই ক্ষতি হোক বা অমুক যেন এই কাজটা করতে না পারে ইত্যাদী) বা স্পষ্ট শিরক(মাজার বা পীর কেন্দ্রিক মানত। আরেক রকম কথাও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন অনেকেই বলে থাকে আল্লাহ তুমি যদি এই কাজে সফল করে দাও একদম তাকওয়াবান হয়ে যাবো। বা বলা হয়ে থাকে যে এই বিপদে কেন ফেললে! তুমি সত্য হলে অবশ্যই উদ্ধার করবে! না উদ্ধার করলে আর জীবনেও তোমার বন্দেগী করবোনা! ইত্যাদী।) বা অধিকার খর্ব হয়(নিজেকে কষ্ট দেয়া। কারন শরীরের হক আছে। বা আল্লাহ উদ্ধার না করলে শিশুকে খাওয়াবো না, বা স্বামীর সাথে থাকবোনা ইত্যাদী ) এমন মানত বা শপথ কোনটাই কোনভাবেই পূর্ন করা যাবেনা।
২য় কথা,, মানত করাই যাবেনা। তার সঠিক আর বেঠিকভাব তো পরে আসবে। কারন এটা আল্লাহর সাথে নাফরমানীর পর্যায়ে পড়ে যায়। কারন, আল্লাহকে কোন শর্ত দেয়া যাবেনা। এবং হতাশা, অকৃতজ্ঞতা ছাড়া নিষ্ঠসহকারে চাইতে হবে। মানতে তা হয়না। ফকীহরা একমত।
বিষয়টা আরো আলোচনার দাবী রাখে। বাট এটুকু বেসিক।
আরেকটা কথা,,জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য এবং সঠিক ইলম লাভের জন্য দোয়া চাইতে হয়।(আপনি চাইলে একসময় দোয়াগুলো আপনাকে দিয়ে আমিও ফাউ কিছু সাওয়াব হাতিয়ে নিতে পারি) তাহলেই আল্লাহ সাহায্য করেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন