আপনার পিতা-মাতাকে খুশী রাখুন
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ জানুয়ারি, ২০১৫, ১১:১৮:৪৩ সকাল
আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সংখ্যা মাত্র কয়েকজন। বহু লোকের সাথে আমার সুসম্পর্ক আছে কিন্তু আমি মাত্র কয়েকজনের সাথে শেয়ার করতে পছন্দ করি। আর যে কয়টা বন্ধু অন্তরঙ্গ তারা ব্যপক ঈমানদার। মজার ব্যপার হল এদের কেউ ই পূর্বে সুবিধার ছিলনা। অনেক পরে এসে এরা ইসলামকে বুঝতে পেরে সে অনুযায়ী চলার চেষ্টা করেছে। আমি যখন এদের সাথে কথা বলি,আমার অন্তর প্রশান্ত হয়।
আজ একজনের সাথে কথা হল প্রায় দেড় ঘন্টা। আমি এক মাসে মোবাইলে যত কথা বলি তার সম্মিলিত সময়ও এক ঘন্টা হবেনা। আমার এই বন্ধুর পিতা বাংলাদেশের সেরা ধনীদের একজন। কিন্তু এই বন্ধু অতি সাধারণ জীবনযাপন করে। পিতার বিত্ত এবংকিছু অহংকার একসময় তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করে। কিন্তু সময়ের ফেরে আজ তার পিতা প্রায় অসহায়,অন্য সন্তানরা সম্পদের নেশায় বুদ। ....তাকে বেশ কিছু হাদীস শ্মরণ করিয়ে দিলাম,সে খানিক আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ল। আমাকে অনুরোধ করল তার পিতাকে ফোন করতে। তার পিতা আমাকে বেশ পছন্দ করে। কিন্তু তিনি আসলে সকল সাপোর্ট তার সন্তানদের কাছ থেকে পেতে চান,এটাই স্বাভাবিক। সে তার পিতার সাথে সুসম্পর্ক রাখার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দূরত্বকে অনেক খানি কমিয়ে এনেছে। তার মায়ের সাথে অবশ্য তার সুসম্পর্ক বরাবরই। এই ব্যাপারটিই আসলে ভাবার মত। সাধারনত সন্তানদের সাথে মায়ের সম্পর্কের দূরত্ব তৈরী হয়না।
আজ পিতা-মাতা নিয়ে অনেক কথা বলে তাকে উপদেশ দিলাম ,এমনকি জুতায় গু মাখিয়ে তাকে পেটাতে চাইলামও,কিন্তু পরক্ষনেই ভেবে দেখলাম আমি আমার মায়ের সাথেও তো দূরত্ব তৈরী করেছি। মাসে ১/২ বার ফোনের চাইতেও তো সে বেশী কিছু আশা করে। ভাবলাম জুতো কেবল তার একারই পাওনা নয়। .ঈমানের তেজ জেগে উঠল,মাকে ফোন করলাম। ...তার প্রথম কথা হল-তোর রান্নাবান্না,খাওয়া দাওয়া কিরকম চলছে ?
নাহ, আর পারা গেল না। আমার খাওয়ার ব্যাপারটা পুরো জগৎ কেন যে জানলো ! অবশ্য এটা তার সর্ব প্রথম জানা। আমার আব্বা ব্যপক বাজার সওদা করত এবং কোন তরকারীর সাথে কোন মাছ জমে ভাল,সেটা তার চাইতে বোধহয় আর কেউ জানত না। সেসব তিনি মাকে বুঝিয়ে দিতেন। আমাদের দায়িত্ব ছিল খাওয়া। আমার এই জিহবা তৈরীর পেছনে আমার আব্বার অবদান বেশী। কিন্তু খাওয়া নিয়ে খোটা দিলে আমার লাগে না। বললাম-আপাতত খাওয়াটাই চলছে। কোন তরকারী কিভাবে রান্না করতে হয়,সেটা আমার মা শিখিয়ে দেয়,তবে তার মত আমারটা হয়না। আমি অবশ্য খারাপ করিনা। আর মার সাথে কথা কি নিয়ে বলব এটাও এক সমস্যা। অনেকদিন কথা না বলার কারনে অনেক কিছু মনেও থাকেনা। তবে দূর থেকে আমি তার খবর রাখি। তার সুবিধা অসুবিধা অন্যের মাধ্যমে দেখভাল করার চেষ্টা করি। আর আমার মা অতিরিক্ত ভাগ্যবান যে,তার সকল সন্তানই তাকে মারাত্মক ভালবাসে। অামি তার জন্যে দোয়া করি সর্বদা। আল্লাহ তাকে যেন সকল সময়ে শান্তিতে রাখেন।
পিতা-মাতা সংক্রান্ত হাদীস সম্ভবত এখানকার সকলেরই জানা আছে। একটা হাদীস মনে পড়ছে পিতার ব্যাপারে-এক লোক রসূল(সাঃ)এর কাছে তার পিতার ব্যাপারে অভিযোগ করে বলেছিল,তিনি টাকা ধার নিয়ে পরিশোদ করছেন না। জবাবে রসূল(সাঃ) বলেছিলেন-তুমিসহ তোমার সকল সম্পদের মালিক তোমার পিতা....এটি বুখারী অথবা মুসলিম শরীফের হাদীস।
ইসলাম মাকে কেমন মর্যাদা দিয়েছে তা বলার প্রয়োজন নেই। ডঃ জাকির নায়েকের ভাষায় ইসলাম মাকে গোল্ড মেডেল,সিলভার এবং তাম্র পদকটিও দিয়েছে এবং পিতাকে দিয়েছে একটি শান্তনা পুরষ্কার। ....
সকলের জানা হাদীসটি আরেকবার শেয়ার করছি- মিম্বরের প্রথম ধাপে উঠে রসূল(সাৎ) বললেন-সে ধ্বংস হোক,,,,৩ বার বললেন তিনটি ধাপে.....জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর দিলেন এই তিনটির। এরমধ্যে একটি ছিল-ফেরেশতা জিব্রাঈল বললেন-যারা তাদের পিতা,মাতা উভয়কে অথবা যে কোনো একজনকে পেল কিন্তু জান্নাত লাভ করতে পারল না,তারা ধংসহোক।-আমি বললাম আমিন !....এটা বুখারী
পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি- এটা সম্ভবত বুখারী।
শেষ কথা হল, পিতা-মাতা জীবিত থাকলে সর্বদা সুআচরণ করে তাদেরকে খুশী রাখুন,নইলে খবর আছে। তারা জীবিত না থাকলে তাদের জন্যে দোয়া করুন। তারা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে অংশ পাবেন। মানুষকে তাদের সন্তানের নেক আমলের কারনে আল্লাহ সম্মানিত করবেন। আসুন আমরা আমাদের পিতা-মাতার জন্যে দোয়া করি,আল কুরআনে আল্লাহ এই দোয়া শিখিয়েছেন-
রাব্বীর হামহুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা...
আমার পিতা কঠোর স্বভাবের হওয়ার কারনে তার সাথে দূরত্ব ছিল,কিন্তু তাকে আমি দূর থেকে ভালবাসতাম। আজ তাকে আমার মনে পড়ছে। আমি মত্যুর অব্যবহিত পূর্বেও তাকে সেবা করতে পারিনি। আমার মাকে আমি অত্যধিক ভালবাসি,কিন্তু আমি কাছে গিয়ে আচরণ করতে পারিনা। আমার ভালবাসার প্রকাশ ভিন্ন। আমি দূরত্ব রাখি একারনেও যে-আমার প্রতি তার অতিরিক্ত ভালবাসা আমাকে দূর্বল করে দিতে পারে এবং তাকে চরম আকাঙ্খিত করে তুলতে পারে। যার কারনে দূরে থাকা আমার জন্যে কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। আমি ভালবাসার এমন একটি ভারসাম্য তৈরী করে চলি যাতে আমাকে কম কষ্ট পেতে হয়। আল্লাহ আপনাদের সকলের পিতা-মাতাকে শান্তিতে রাখুন সর্ব সময়ে।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৩ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বিয়ের পর টের পাবেন মায়ের দরকার কি?
রাতের দশটা বাজে হঠাৎ পেয়ে যাওয়া তাজা কই মাছ আনবেন আর এগারটা বাজে সেই কই এর ফ্রাই দিয়ে ভাত খাবেন মা থাকলে। আর আজকে আমি সকাল দশটা বাজে তাজা কই কাটিয়ে আনলাম কিন্তু বউ না রেঁধে বলল যে সকালে ফ্রিজ থেকে মুরগি বের করা হযে গিয়েছে!
৬ বছর কেটে গেল
এখনও তাজা মাছ খাইনি!
সুমাইয়া হাবিবা!
খাওয়ার বিষয়টা ইনিয়ে বিনিয়ে আপনার পোস্টে আসবেই। আমিও অবশ্য খুউব ভোজনরসিক। পরিমাণে কম খাই, তবে বেশ চুজি। যেমন ধরুণ - চিংড়ি টমেটোর চচ্চড়ি, চিকেন কোরমা, লাউ দিয়ে শিংমাছ আর শিমবিচি, মেজবানী গরুর গোশত, হাঁসের গোশতের রেজালা, চিতল মাছ, দেশি কৈ মাছ, কোরাল মাছ, লতি দিয়ে ইলিশ মাছ রান্না, ইলিশ ভাজা, ইলিশ দিয়ে মুগডাল, বাইন মাছ ফ্রাই, ইলিশ দিয়ে বেগুন, ফ্রাইড রাইস উইথ চিকেন, দেশি রুই এর তরকারী..........আরো কত কি!
আপনার সাথে মিলে কি?
আল্লাহ আপনাদের সকলের পিতা-মাতাকে শান্তিতে রাখুন সর্ব সময়ে। আমীন ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন