মেরী'স পিক (ছবি আছে)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:৪৪:৫৬ সকাল
সেদিন গেলাম আমার প্রিয় অলামেট রিভারে। হায় আল্লাহ ! একি হাল। যে সুন্দর সবুজ ঘাসপূর্ণ নদীর পাড়ে বসতাম তা কমপক্ষে ১০ ফুট পানির নীচে। নদী দু পাশ প্লাবিত করে রুদ্রশ্বাসে এগিয়ে চলেছে। এমনিই এটা খরস্রোতা নদী,তারউপর বৃষ্টির প্রকোপ। ফলে আশপাশের অনেক পার্ক এখন পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে সমস্যা হচ্ছেনা। পানি উপরে ওঠার একটা মাত্রা আছে, নদীটা অতটা অভদ্র নয়। তবে নদীর এই ভয়াল রূপ দেখতে খারাপ না।
এক পরিচিত বয়ষ্ক ভদ্র মহিলা সেদিন হঠাৎ আমাকে জিেজ্ঞেস করল-তুমি কি ইসলামিক ? আমি বললাম -জি, আমি মুসলিম। স্বভাবিক কথা বলে বিদায় হলাম। কয়েকদিন পর আবার দেখা হল। তিনি প্রথমেই আমাকে বললেন- নমস্তে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম ! বললাম-মুসলিমরা বলে-আস সালামুআলাইকুম, নমস্তে নয়। তিনি বার কয়েক চেষ্টা করলেন এটা উচ্চারনের,কিন্তু একেবারে ভজঘট পাকিয়ে ফেললেন। বিদায় হলাম। এরকম কিছু ঘটনা কখনও কখনও ঘটে।
এবার আজকের বিষয়ে আসি। অনেকদিন পর শুক্রবারে ছুটি পেলাম। প্রথম পরিকল্পনা মসজিদে গিয়ে জুম্মা নামাজ আদায়। গত রাতে পূর্বের সেই বৃদ্ধার সাথে কথা হয়েছিল। তিনি আজ সকালে তার ইয়ার্ডের ঘাস কেটে দেওয়ার অনুরোধ করলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যপক ঠান্ডা পড়ছে। ওরেগনে জানুয়ারী,ফেব্রুয়ারী মাসই প্রকৃত শীতকাল। আকাশ মেঘলা বা বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা একটু বেশী হয়,আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে রাতে তাপমাত্রা -৭ পর্যন্ত নেমে যায়,যা সকাল পর্যন্ত থাকে।
সকালে সূর্য ওঠে প্রায় আটটার সময়। আমি ১০টায় বুড়ির বাড়িতে গেলাম। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই লনমোয়ারে ঘাস কাটা শেষ করলাম। পাশের ছোট্ট তরকারী ক্ষেতে দেখলাম কিছু মূলো রয়েছে। সেগুলো তুলে নিলাম, এতে এক সাঝ হয়ে যাবে। বুড়ি নানান রকম তরকারী,ফুল,গাছ দিয়ে বাড়ির আশপাশ সজ্জিত রাখে। উনি আমাকে ২০ ডলার দিলেন,এতে আজ লাঞ্চটা দারুন হবে।
মসজিদে চলে গেলাম। অনেকদিন পর মসজিদে এসে খুব দারুন লাগল। মসজিদের একজন খাদেম সুঠাম দেহের অধিকারী বিশাল ব্যক্তিত্বের এক ইসলাম প্রচারকের আগমনের বার্তা ঘোষনা করলেন। নামাজ শেষে দেখলাম একে একে প্রায় সকল মুসল্লি তার সাথে করমর্দনের জন্যে উদগ্রীব। আমি দূর থেকে দেখে মনে করলাম,আজ এই লোকটির সাথে কোলাকুলি না করলে জীবনই বৃথা হয়ে যাবে। দৌড়ে গিয়ে জনাবকে জড়িয়ে ধরলাম এবং তিনিও সালাম দিয়ে আমাকে বেশ খানিকক্ষন আলিঙ্গনাবদ্ধ রাখলেন। বিষয়টি আমাকে মানুষিকভাবে শান্তি প্রদান করল। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম তিনি কে? জবাবে বললেন একজন বিখ্যাত দ্বীন প্রচারক। কিন্তু এতে আমি কিছু বুঝলাম না, বোঝার চেষ্টাও করলাম না। মসজিদের বাইরে বেশকিছু বাঙ্গালী ভাইকে পেলাম। তারা আমাকে আরও কিছু লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভাল লাগল। এরপরই ক্ষুধা লাগল।
আসলে এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খাব বলে সকালে তেমন কিছুই খাইনি। চললাম সেখানে। শুক্রবারে এখানে বেশ ভিড় হয়। এখানে মাত্র ১০ ডলারে অন্তত ২৫ রকম খাবার খাওয়া যায় বুফেতে। আমি ভেজিটেবল রাইস,ভেজিটেবল ফ্রাই আর খাসির মাংস এই তিনটার ভক্ত। এমন ভাবে টানলাম যে পানি /পানীয় খাওয়ার মত কোনো স্থান বাকী থাকল না।
এবার গন্তব্য মেরী'স পিক। এটি কর্ভালিস থেকে নিউপোর্টের দিকে যেতে হাতের বায়ে থাকা মনোরম পাহাড়শ্রেণী। আজ রোৗদ্রজ্জ্বল দিন। তাপমাত্রা বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় ৪/৫ডিগ্রী। সুন্দর স্বর্পীল রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। রাস্তার দুপাশে পাহাড়ী বনভূমী । বৃক্ষগুলো সোজা আকাশে উঠে গেছে। বড় বড় বৃক্ষে শ্যাওলা জমে এক অদ্ভুত সুন্দর এবং আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। রাস্তাগুলো অত্যন্ত নিখূঁত সুন্দরভাবে তৈরী। খানিকক্ষন পর রাস্তা উপরে উঠতে শুরু করল। একেঁ বেকে রাস্তা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে চলেছে।
খানিক পর দেখলাম বরফাবৃত রাস্তা শুরু হয়েছে। পাহাড়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তুষারপাত হচ্ছে। এসব রাস্তা বেশ বিপজ্জনক হয়,তাই ড্রাইভারদেরকে খুব সাবধানী হতে হয়। রাস্তার একপাশে গভীর খাদ,তবে সেদিকে হাজার হাজার বিশাল আকৃতির গাছ ঢাল ধরে দাড়িয়ে আছে। এসব গাছ কখনও কাটা হয়না কারন তা রাস্তার সুরক্ষা দেয়। কোনো কোনো পাহাড়ের গাছ কেটে সেখানে নতুন গাছ রোপন করা হয়। রাস্তার বরফ অনেকটাই হলে গেছে এবং গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।
হঠাৎ দেখলাম রাস্তার পাশে একটি দারুন ঝর্না। এক কথায় অসাধারন । থামলাম,দেখলাম। তুষার গলে পানি হয়ে নীচে নেমে আসছে। পাহাড়ের গায়ে বরফ জমে আছে। আবারও চলতে শুরু করলাম। উপরে আরও উপরের দিকে চলেছি। এদিকে বররে পরিমান বেশী।
চলে আসলাম পাহাড়ের মাথায় । উচ্চতা ৪০৯৭ ফুট। যেদিকে তাকাই সেদিকে সাদা তুষারের স্তুপ। বেশকিছু লোকজন এসেছে আইস স্কী করতে। পাহাড়ের একটি বিস্তৃত অংশ রয়েছে যেখানে বরফ জমে দীর্ঘ ঢালু প্রান্তরের সৃষ্টি করেছে। এরা সেখানে বিরাট গতি নিয়ে নীচে নেমে আসছে। আমি হাইকিং কেডস পড়ে এসেছি। উপরের দিকে দিলাম দৌড়। এখানে উপরে উঠে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। সেদিক ধরে এগিয়ে চললাম। চারিদিকে বরফে ঢাকা এবং পাহাড়ের ঢালে বিশাল বিশাল গাছের সারি।
অন্তত মাইল খানেক হাটার পর পাহাড়ের একেবারে মাথায় পৌছলাম। এখান থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে এমনভাবে মুগ্ধ হলাম যা আমার জীবনে আর কখনই ঘটেনি। আমি কখনই এমন দৃশ্য দেখিনি। আমি দেখলাম নীচে বহুদূর বিস্তৃত পাহাড়ের সারি। অনেক দূরে বরফাবৃত কিছু বিখ্যাত পর্বতচূড়া দেখা যাচ্ছে। আমার থেকে কয়েকশত ফুট নীচ দিয়ে মেঘ ছুটে চলেছে সমতলের দিকে। মনে হচ্ছিল আকাশের অনেক উপরে উঠে গেছি। আমি আরও কয়েকবার উচু পাহাড়ে উঠেছি কিন্তু আজকের মত অভিজ্ঞতা হয়নি। এ এক অনন্ন সাধারণ দৃশ্য।
পাহাড়ের কোথাও কোথাও বরফ জমেনি আর কোথাও কোথাও বিশাল বরফের স্তুপ। পাহাড়ী ঢালে শুভ্র বরফ,পাহাড়ী বনভূমী অপরূপ রূপের সৃষ্টি করেছে,অপরদিকে রৌদ্রজ্জল দিনে সবুজ পাহাড়শ্রেণীর উপর দিয়ে সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে। এ দৃশ্য সহ্য করতে পারলাম না,তবে তাকিয়েই থাকলাম। বার বার আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকলাম। এক অসহ্য সুন্দর প্রকৃতি বানিয়েছেন তিনি। জানিনা জান্নাত কত সুন্দর ! মোবাইল দিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে দেখলাম মেমোরী ফুল,পচা মোবাইলটা দিয়ে ছবি উঠালাম। মনে হচ্ছিল এ দৃশ্য তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে বোধ হয়। দুচোখ ভরে দেখতে থাকলাম। এমন সুন্দর পাহাড় আর একে কেন্দ্র করে প্রকৃতির রূপের খেলা দেখার ভাগ্য অনেকের হয়না্ । সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম !
দেখা শেষ এবার নেচের দিকে দিলাম দৌড়। বরফের রাস্তা ধরে দ্যেড়ে নীচে আসলাম। মরোক্কোর রেস্টুরেন্ট থেকে বাকলাভা নামক বিখ্যাত পেটিস জাতীয় মিষ্টান্ন কিনেছিলাম,সেটা সাফাই করলাম। এ এক দারুন জিনিস।
(বাকলাভা)
বিষয়: বিবিধ
৩১৫১ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে ছবি ও বর্ণনা সব ভাল্লো হয়েছে ।ধন্যবাদ এক বুক ।।!
এই রকম কাজ কেমন পাওয়া যায় ভাই? সপ্তায় ১০০ ডলারে চলা যাবে?
ছবি গুলির জন্য অসংথ্য ধন্যবাদ। কিন্তু মনে হয় সুন্দর ঝর্নাটা দেথতে গিয়ে আপনি মিস করছেন ছবি তুলতে!
মেঘের এই দৃশ্য দেখার সাধ অনেক দিনের।
বাকলাভা তো শুনেছিলাম টারকিশ মিষ্টি।
ছোট প্লটের ঘাস কাটলে মিনিমাম ৩৫ ডলার।
বাকলাভা স্বাদ আলাদ। এখন আমেরিকার যে কোন গ্রসারী ষ্টোরে পাওয়া যায়। ভাগ্য খারাপ
আপনার সাথে ঘুরতে পারলাম না।
এখন যে বাকলাভা দেখে আমার এক দৌড়ে চলে আসতে ইচ্ছা করছে তার কি হবে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন