বাঁশের চাইতে যখন কঞ্চি মোটা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:৫৫:৪৩ রাত
ঢাকায় থাকতে প্রতি ইংরেজী নিউ ইয়ারে বাসার ছাদে ৫ মিনিটের জন্যে হলেও উঠতাম। দেখতাম কিছু বাড়ির ছাদ থেকে আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছে। যদিও এই নাইট পালন করিনি কিন্তু মানুষ কি করছে তা দেখার কৌতুহল ছিল। আমার জানা মতে ঢাকাই একমাত্র শহর(অন্য কোথাও এটা ঘটলে ঘটতে পারে) যেখানে ৩১শে ডিসেম্বর রাতে পুলিশ মানুষের চলাচল পর্যন্ত বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত করে। গুলশান,বনানী,বারীধারায় অতিরিক্ত পুলিশ থাকে এবং রাত ১০/১১ টার পর রাস্তায় গাড়ি চালাতে নিষেধ করে এসব এলাকায়। ছাদ থেকে দেখতাম রাস্তা ফাকা। মাঝে মধ্যে দু একটা কার দেখা যেত,তখন ভাবতাম সেগুলো কোনো প্রভাবশারীর গাড়ি হবে,যাদেরকে পুলিশ আটকায় না।
কিন্তু তারপরও পত্রিকায় দেখেছি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মাতলামি হয়েছে। মারামারি,খুনোখুনি,ইভটিজিং,নারীদের সম্মানহানী ইত্যাদী হেয়েছে। বদ্ধ ঘরে,হোটেলে,বিভিন্ন ক্লাবে ডিজে পার্টি বা নেশাখোর পার্টি,নাচানাচি পার্টি,মাতলামি পার্টি,নারী-পুরুষের অবাধ আচরনের পার্টি,নানামুখী ফুর্তি পার্টি ইত্যাদী হয়েছে এবং আরও জোরেসোরে হচ্ছে। এই ঘটনাগুলি রাস্তায় ঘটানো মানা আছে কিন্তু অন্দরমহলে সরকারী কোনো নিষেধ নেই। যতদূর জানি দেশের উচ্চ মহলের লোকেরাই এই রাতে বিভিন্ন ক্লাবে,তারকা হোটেলে ফুর্তি করে। ফলে খুবই স্বাভাবিক যে বিধিনিষেধ ঘটনার উপর থাকবে না, বরং তা থাকবে ঘটনার স্থানের উপর। আরও সহজভাবে বললে এসব দীবসের অধিকাংশ বিনোদন উচ্চ বিত্তের জন্যেই নির্দিষ্ট,তবে মধ্যবিত্ত শ্রেনীও এই জ্বরে এখন ব্যপক আক্রান্ত হচ্ছে। মূলত: এই বিষয়গুলো ব্যপকভাবে ঘটছে এক বা দেড় দশক ধরে।
প্রশ্ন হল এরা যাদেরকে অনুসরণ করে এসব দীবস পালন করছে,তাদের অবস্থা কি ?
এ বিষয়ে পূর্বে যা ধারনা ছিল তা এখন বাস্তবে কিছুটা প্রত্যক্ষ করছি। পাশ্চাত্যের দেশগুলো যা কিছু পালন করে,তা অন্তর থেকেই করে। এটা তাদের সাষ্কৃতির অংশ হিসেবেই করে,অঘটনও ঘটায়। ৩১ ডিসেম্বর রাতে অনেকে মাতাল হয়ে গাড়ি চালিয়ে দূর্ঘটনা ঘটায় । গত রাতে কলাম্বিয়া হাইওয়েতে এক মহিলা মারা গেছে এভাবে। তার গাড়ি নদীতে পড়েছিল এবং আঘাত পাওয়ার পর যদিওবা বেচে ছিল কিন্তু হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রার পানির নীচে বেছে থাকেনি। ওদিকে কানাডার ক্যাল্গেরী থেকে এক বন্ধু জানালো তার বাড়ির সামনে এক দল সন্ত্রাসী গোলাগুলি করেছে ,এক জন মরেছে,কয়েকজন আহত। এরকম কিছু ঘটনা বাদ দিলে বলতে হয় এদের সাংষ্কৃতি ঘরের মধ্যেই কেটেছে।
নিউইয়র্কের টাইম স্কয়ারে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়ে আতশবাজি পোড়ানো দেখেছে এবং আনন্দে উল্লাস করেছে। কিন্তু এসকল উজ্জাপনে ইভটিজিং সত্যিই চোখে পড়েনা। এরা এদের বিশ্বাস অনুযায়ী মোটামুটি নিয়মানুবর্তিতার সাথে এসব উৎসব পালন করে। সিডনীতে ২০১৩ সালে লক্ষ জনতার মাঝে আতশবাজি পোড়ানো উৎসব দেখেছি,সেখানে কোনো অঘটন দেখিনি,পত্রিকাতেও পড়িনি। আমেরিকাতে বেশীরভাগ লোকই টিভিতে এসব দেখেছে,অনেকে ঘুমিয়েছে। অল্প কিছু এলাকায় আতশবাজি পোড়ানো হয়েছে। বাইরের এ্যাকটিভিটি তেমন দেখা যায়না,তবে ক্লাবে,ঘরে পার্টি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে ৩১ডিসেম্বর রাতে যা দেখা যায়,তা দেখে মনে হয় যাদের কাছ থেকে এরা শিখেছে,তাদের চাইতে এরা এক কাঠি সরেশ।
প্রত্যেকটা পাবলিক ইউনিভার্সিটি,অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছেলে-মেয়েরা রাস্তায় বা ক্যাম্পাসে ব্যপক বেহায়াপনায় লিপ্ত হয়। ইভটিজিং এমনকি ধর্ষনের মত ঘটনা ঘটে। প্রকাশ্যে মাদক গ্রহন,মাতলামি,অতিরিক্ত বেয়াদবীমূলক এবং হিংস্র আচরণ প্রত্যক্ষ করা যায়। এই দিনকে কেন্দ্র করে নানামুখী উৎসব আয়োজন করা হয়। এটা চলে জানুয়ারীর কয়েকদিন ধরে। এছাড়া মোবাইলে ফোন করে ও মেসেজ লিখে ব্যপকহারে শুভেচ্ছা বিনিময় চলে।
সবকিছু দেখে মনে হয় ইংরেজী নববর্ষ ইংরেজদের নয় বা ইউরোপ আমেরিকানদের নয়,বরং এটা বাঙ্গালীর। চিন্তাশুন্য সমাজই পারে এভাবে অন্ধভাবে অন্য জাতিকে অনুসরণ করে বেহায়াপনায় ছাপিয়ে যেতে। আমার বিশ্বাস ৩১শে ডেসেম্বর রাতে ঢাকাতে যত মাদকদ্রব্য বিক্রী হয়েছে,সারা আমেরিকাতে তা হয়নি। হাজার হাজার মাদক ব্যবসায়ী,লক্ষ লক্ষ এজেন্ট পুরো বাংলাদেশকে নেশার দেশে পরিনত করেছে। আর এরকম কিছু দীবসকে কেন্দ্র করে তারা যুবক- তরুনদেরকে ধ্বংস করছে। যারা মাদক ব্যবসায়ী তাদেরই একটি অংশ সমাজের পরিচালক। ফলে এটা চলতেই থাকবে,যতক্ষন না এরা এদের চিন্তার পরিবর্তন করছে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরনে কোনো কল্যান নেই,তা জানার পরও এরা তা পালন করে। এ জন্যেই একটি আদর্শ জাতির পরিচালনায় একটি আদর্শ শাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়,যা একটি আদর্শের ভিত্তিতে জাতি গঠন ও পরিচালনা করে। বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক আচরণ কোনো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেনা এবং তাকে সামনেও অগ্রসর হতে দেয়না।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৮ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দেখেছে এবং আনন্দে উল্লাস করেছে। কিন্তু এসকল উজ্জাপনে ইভটিজিং সত্যিই চোখে পড়েনা--- সত্য কথা তবে একটুখানি দ্বীমত আছে কারন এখানে ইভটিজিং প্রয়োজন পড়ে না ইউরোপের ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এতবেশী অসভ্য এদের চাওয়ার আগেই পাওয়া যায় ।
আমার বিশ্বাস ৩১শে ডেসেম্বর রাতে ঢাকাতে যত মাদকদ্রব্য বিক্রী হয়েছে,সারা আমেরিকাতে তা হয়নি। এখানেও একটুখানি কিন্তু আছে ইউরোপের অনেক দেশেই এই দিনে এসব ফ্রীতে পাওয়া যায় কিনতে হয় না । তবে আমি আমেরিকার কথা জানি না ।
ধন্যবাদ ।
আমাদের ভালো-মন্দ বোঝার বোধ অবশ্যই আছে! তবে সেটা স্বীকার করা আর অনুধাবন করা নিজস্ব ব্যাপার।
পাশ্চাত্যের কোন বিষয় আমরা গ্রহণ করব আর কোন বিষয় বর্জণ করব তা আমাদের বিবেকই বলে দেবে।
ধন্যবাদ
১২ হাত কাঁকুড়ের যেমন ১৩ হাত বিচি হয় , তেমনি বাঙ্গালীর সংষ্কৃতিতেও আছে ১২ মাসে ১৩ পার্বন ।
বাংলাদেশীরা অনুকরন প্রিয় । কোন কোন ক্ষেত্রে তার গুরুকেও ছাড়িয়ে যায় , তবে সেটা নেগেটিভ সেন্সে।
তবে আমাদের দেশে সবাই যেকোন নেশায় আক্রান্ত । মা সমাজ জলসা নেশআয় ।বাবা সমাজ সম্পদ/টাকা নেশায় ।যুবক-যুবতী সমাজ কান্সুখ (ফোন) নেশায় ।শাশক সমাজ গদির নেশায় ।হেফাজত সমাজ ঘুমের নেশায় ।জামায়াত সমাজ বাঁচার নেশায় .।.।.।.।
এই ভাবে মিডিয়ার কল্যানে আমরা বিদেশি সংস্কৃতির অপ অংশটুক ই শুধু নিচ্ছি। আমারা মনে করছি অন্ধ অনুকরনই সংস্কৃতিবান হওয়া।
ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
এমনই ক্ষুরধার লেখনীর প্রয়োজন আজ। হাতুড়ী মেরেও যদি আমাদের শূন্য মস্তিষ্কে কিছু চিন্তা ঢুকানো যায়!
অভিনন্দন এই অসাধারন প্রবন্ধটি লেখার জন্য
মন্তব্য করতে লগইন করুন