===== লিসা ====

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১২:০৬:৪৬ দুপুর



একটি বিশাল তেল কোম্পানীর পদস্ত প্রকৌশলী হিসেবে ডেভিড ইরাক গমন করেন আশির দশকের মাঝামাঝি। নতুন দেশ,ভিন্ন সাষ্কৃতি হঠাৎ মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। আগা-গোড়া ভদ্রলোক ডেভিড ধীরে ধীরে মুসলিমদের সাংষ্কৃতি বুঝে ফেলে এবং তাদের সাথে মিশতে তার তেমন সমস্যা হয়না। কলিগদের অনেকে বিবাহিত এবং স্বপরিবারে বসবাস করছে। তার নিজেরও বয়স হয়েছে বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধী করে সে।

সেসময় ইন্টারনেট না থাকাতে অস্ট্রেলিয়ার গার্লফ্রেন্ডের সাথে তার খুব একটা যোগাযোগ হতনা। প্রথম দিকে টেলিফোনে বেশ কথা হত,পরে আস্তে আস্তে কথা বলার সময় সংক্ষিপ্ত হতে থাকে। এ নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ ছিলনা। তবে একদা তারা চুটিয়ে প্রেম করেছে।

একই ডিপার্টমেন্টে কর্মরত ইরাকী মেয়ে সাবিনা নিজেকে বেশ স্মার্ট হিসেবেই উপস্থাপিত করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও সে তার পোষাক বা মানুসিকতায় মুসলিমদের আদর্শ লালন না করায় ডেভিড বেশ কৌতুহলী হয়ে ওঠে। একদিন লাঞ্চে উভয়ে টেবিলে সামনাসামনি বসে টুকটাক দু একটি কথা বলে। কিছুদিন পর উভয়ের লাঞ্চ টাইম বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠল। উভয়ে উভয়ের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত হল। ডেভিড জানতে পারল সাবিনা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও চিন্তা চেতনায় নাস্তিক। ডেভিড স্রষ্টা সংক্রান্ত বিষয়ে তেমন চিন্তা ভাবনা করেনি তবে পারিবারিকভাবে ক্যাথলিক। জীবনে কখনই চার্চে গমন করেনি,তবে স্রষ্টা একজন আছে সে ব্যাপারে তার দ্বীমত নেই। আবার কেউ যদি যুক্তি খাটিয়ে স্রষ্টাকে ভ্যানিশ করে দেয় তাতেও তার কিছু এসে যায় না। ফলে সাবিনার নাস্তিকতা তার ভেতর কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেনা।

দিন যায়,মাস যায় তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। বিষয়টি ডেভিড তার প্রেমিকাকে টেলিফোনে জানায় এবং তার প্রেমিকা তাকে শুভকামনা জানায়। ডেভিড অস্ট্রেলিয়ার প্রেমিকাকে ভুলে সাবিনার প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং বিয়ের সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। একসময় সাবিনা তার পরিবারের অমতে বিয়ে করে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে থাকে।

উভয়ের চাকুরী জীবন ও পারিবারিক জীবন প্রতিবন্দকতা ছাড়াই চলতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের ঘরে আসে একটি সুশ্রী কন্যা সন্তান । সে ইরাকের আবহাওয়া কয়েক বছর লালিত পালিত হওয়ার পর স্বপরিবারে তারা অস্ট্রেলিয়া চলে আসে। এখানেই তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে।

অস্ট্রেলিয়াতে ডেভিডের পূর্বের প্রেমিকা তার সাথে নিয়মিত দেখা করতে থাকে এবং তাকে নিয়ে ডেভিড ডিনার করা,ঘুরতে যাওয়া,শপিংয়ে যাওয়া ইত্যাদী করতে থাকে। যেহেতু তাদের সাষ্কৃতি এটাকে সমর্থন করে তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে তারা একাজগুলি করতে থাকে। পাশাপাশি ডেভিড পরিবারের সাথেও সুন্দর সময় অতিবাহিত করতে থাকে। পরিবার তার কাছে আগে,তবে সাবেক প্রেমিকাও তার পর নয়। উভয়টিই সে স্বভাবিকভাবে চালাতে থাকে। কিন্তু বিষয়টি সাবিনার পছন্দ হয়না। যদিও ডেভিড তাকে পছন্দ করে,কিন্তু বিষয়টি সে জানার পর থেকে কেন যেন মনে হতে থাকে তার ভালবাসায় ভাগাভাগি হচ্ছে এবং তাকে কোনোভাবে ঠকানো হচ্ছে। ডেভিড তার প্রেমিকার সকল বিষয় স্ত্রীর সাথে শেয়ার করে। তাকে সে প্রেমিকা নয় বরং একজন ভাল বন্ধু ভাবে এমনটাই বলে। কিন্তু সাবিনার এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। সে নাস্তীক হলেও অন্য একটি সাংষ্কৃতির মধ্যে লালিত হয়েছে। ফলে তার পারিবার,সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েও ভেতরে এক ধরনের আবেগ রয়ে গেছে। তার পারিবারিক চিন্তা,বিষয় বিশ্লেষনের ধারা সবকিছুর মধ্যেই পূর্বের সমাজের আদর্শিক প্রভাব কিছুটা রয়ে গেছে। এবং সে এটাকে বিলিন করতে পারেনা। ফলে তার স্বামী যতই স্বচ্ছতার সাথে তার সাবেক প্রেমিকার বিষয় উপস্থাপন করতে থাকে,সাবিনা ততই সন্দেহের মধ্যে পড়তে থাকে। এবং এক পর্যায়ে তার ভেতর ক্রোধের জন্ম হয়।

শিঘ্রই বিষয়টি তাদের মানুষিক অশান্তির কারন হয়ে ওঠে। এক সময় ব্যপক বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে এবং সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে উপনিত হয়। মামলা কোর্টে চলে যায়। তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সাবিনা তার সন্তানকে ফেলে নিজ দেশ ইরাকে ফিরে যায়। সেখানে সে কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করে তার মত জীবন যাপন করতে থাকে।

এই ঘটনায় ডেভিডের সাবেক প্রেমিকা তার আরও কাছাকাছি চলে আসে্ । যদিও তারা শুধুমাত্র বন্ধুই ছিল কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতি তাদেরকে একে অন্যের বেশী কাছাকাছি নিয়ে আসে্ । ডেভিড পুরোনো প্রেমকে রিনিউ করতে সক্ষম হয়। কিন্তু সমস্যা বাধে তার ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে। ডেভিডের প্রেমিকার পছন্দ নয় তার মেয়েকে। সে চায়- তার আর ডেভিডের মধ্যে যেন অন্য কেউ না থাকে। ডেভিড প্রেমিকার প্রতি নিবেদীতপ্রাণ। তারা আলাদা হয়ে সময় উপভোগ করতে চায়। ডেভিড তার প্রেমকে একান্তে উপভোগ করাকেই নিজের জন্যে স্থির করে। তাছাড়া তার চাকুরী জীবন ছোট্ট এই মেয়েকে লালন পালন করার পক্ষে যথেষ্ট অন্তরায়। ডেভিড কন্যা লিসাকে আশ্রমে দিয়ে আসা হয়। সেখানে সে লালিত হতে থাকে।

ডেভিড প্রতি রবীবার তার কন্যাকে দেখতে যেত। সেদিন লিসা সকাল থেকেই বিভিন্ন পরিকল্পনা করত তার পিতার সাথে কি কি বিষয়ে গল্প করবে। পূর্বের সপ্তাহে কি কি বলতে ভুলে গেছে সেটাও সে নির্দিষ্ট করে রাখে। বিদায়ের সময় পিতার জন্যে একটি ছোট গিফট বক্স সে প্রস্তুত করে রাখে। সেখানে কিছু চকলেট,পি-নাট,ক্যান্ডী আর একটা হাতে লেখা চিঠি থাকে্ । সেসব চিঠিতে সে তার বাবাকে কতটা ভালবাসে সেটা জানায়। পিতাও তার জন্যে কিছু উপহার সামগ্রী নিয়ে যায়। ঘন্টা খানেক গল্প করে পিতা বিদায় গ্রহন করে। এই এক ঘন্টা সময়ের জন্যে লিসা সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে এবং পিতাকে নিয়ে নানান পরিকল্পনায় মেতে ওঠে। কখনও কখনও তার ইচ্ছা হয় পিতার হাত ধরে লেকের ধারের সুন্দর রাস্তায় হাটতে। কখনও কল্পনা করে ব্লু মাউন্টেন যাবে,সেখানে সুন্দর সুন্দর পাহাড় আর গাছ গাছালিতে ঘেরা জঙ্গল আছে শুনেছে। আছে চমৎকার ঝর্না ,থ্রি সিস্টার পাহাড় আরও কত কি ! একটা দিন পিতার সাথে সেখানে কাটাতে পারার মত মজা আর কিছুই হতে পারেনা।

তার পিতা খুব একটা মজার নয় কিন্তু বেরসিকও নয়। কথা বলার সময় দু একটি কৌতুককর কথাও বলে। সেসব শুনতে লিসার খুব ভাল লাগে। লিসা তার পিতাকে আরও অনেক সময়ের জন্যে চায়, কিন্তু তার পিতা অনেক ব্যস্ত মানুষ। তাকে প্রত্যেকদিন অফিসে যেতে হয়,আরও কত কি !

লিসার বয়স ১১ বছর হলেও তার অনেক জ্ঞান বুদ্ধি। সে জানে পিতা তার মাকে পছন্দ করেনা,তাই পিতার সামনে কখনও মায়ের কথা উচ্চারণ করেনা,পাছে পিতা কষ্ট পেয়ে যদি তাকে দেখতে না আসে ! সপ্তাহের ওই এক ঘন্টা সে কোনোভাবেই হারাতে চায়না। প্রথম দিকে আশ্রমে থাকতে তার কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এভাবেই চলতে থাকে সময়। স্কুলে লিসা অসম্ভব মেধার স্বাক্ষর রাখে। প্রত্যেকটি রেজাল্ট তার ভাল হয়। পড়াশুনার পাশাপাশি সে ভাল ছবি আকতে পারে,সুই সুতো দিয়ে কাপুড়ের উপর নানান নক্সা তৈরী করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।তার পিতাও তার প্রশংসা করেছে। সে খুব গোছালো একটি মেয়ে।

লিসার বয়স যখন ১৩ তখন তার পিতার স্ত্রীর(প্রেমিকার) গর্ভ থেকে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। এর কিছুদিন পর থেকে তার পিতা প্রতি দুই সপ্তাহে একবার তাকে দেখতে আসে এবং কিছু দিনের মধ্যে সেটা মাসে এক বারে গিয়ে দাড়ায়। লিসার পিতা তাকে বলেছে সে অনেক ব্যস্ত এবং নতুন বাচ্চাকে অনেক সময় দিতে হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে আসা সম্ভব নয়। লিসা কখনও পিতাকে জোর করেনি, শুধু একবার বলেছিল আগামী রবীবারে আসবে,স্কুলে একটি গানের অনুষ্ঠান আছে ? জবাবে পিতা বলেছিল-আমার অন্য একটি কাজ আছে। ওহ আচ্ছা, বলে লিসা চুপ হয়ে যায়। আবার বলে- আমার ছোট্ট বোনটাকে দেখতে নিয়ে যাবে ? জবাবে পিতা বলে-আমার স্ত্রী এটা পছন্দ করেনা। সে রাতে লিসা অনেকক্ষন কেঁদে ঘুমাতে যায় কিন্তু এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলেনা। সে খুব চাপা স্বভাবের।

এক রবীবারে লিসা তার পিতার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকে কিন্তু তার পিতা আর আসেনা। সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু তার পিতার কোনো খবর নেই। সে রাতে সে ঘুমাতে পারল না। অজানা আশঙ্কায় সে শিউরে উঠতে থাকল। তার পিতার কোনো ক্ষতি হয়নি তো !

পরদিন লিসার নামে একটি চিঠি আসে। সেখানে তার পিতা লিখেছে-আমাকে চাকুরীর প্রয়োজনে নাইজেরীয়া যেতে হচ্ছে। সেখানে অনেক দিন থাকতে হবে। তুমি ভাল থেকো।

লিসার পিতা নতুন স্ত্রী,সন্তান নিয়ে নাইজেরিয়া চলে যায়। এরপর বছরের পর বছর কাটতে থাকে। কিন্তু লিসার জন্যে তার পিতার পক্ষ থেকে একটি চিঠিও আসেনা। পিতার ভবিষ্যৎ আগমন উপলক্ষ্যে লিসার গিফটের বাক্স জমতে জমতে স্তুপ হয়ে উঠতে থাকে। মাকে অনেক ছোটবেলায় হারানোর কারনে মায়ের স্মৃতি তার তেমন মনে পড়েনা,কিন্তু পিতাকে সে ভুলতে পারেনা,যদিও তার জীবনে পিতার অবদান মাত্র কিছু ঘন্টার।

কলেজে উঠে লিসা তার মেধার স্বাক্ষর রাখল। সকলের চাইতে ভাল রেজাল্ট করল সে। প্রত্যেকটা শিক্ষক তার প্রশংসা করে। লিসা অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে। সহপাঠীদের অনেকে তার পেছনে ঘুরঘুর করে বটে কিন্তু সে কারো দিকে ফিরেও তাকায় না,কাউকে পাত্তা দেয়না। এটা সে অহংকার বশে করে তা নয়,বরং ফ্রি মিক্সিং তার ভাল লাগেনা। একদিন সে তার বান্ধবীর সাথে একটি ফ্যাশন শো দেখতে যায়,আর সেখানে কিছু আয়োজকের নজরে পড়ে যায়। তাদেরই একজন বিখ্যাত মডেল তৈরী ও বিজ্ঞাপন নির্মান প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্ণধর। বিভিন্নভাবে চাপাচাপির পর লিসা র্যাম্প মডেলিং শিখতে রাজি হয়। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই লিসা তার রূপ এবং গুন দিয়ে এ জগৎ মাতিয়ে ফেলে। স্থানীয় প্রতিযোগীতায় প্রথম হবার পর সে কিছু কালের মধ্যেই মিস অস্ট্রেলিয়া এবং মিস নিউজিল্যান্ড খেতাব প্রাপ্ত হয়।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম। তার অর্থ বিত্ত,নাম যশ ব্যপক বাড়তে থাকে।

এতদিন পরও তার পিতার কাছ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। তার পিতা তাকে ঠিকানাও জানায়নি। পিতাকে সে খুজেছে কিন্তু কোনো হদীস মেলেনি। তার মাকেও সে অনেক খুজেছে কিন্তু তার ব্যাপারে সে সুনির্দিষ্ট কিছু মনে করতে পারেনা,ফলে তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ,সম্পদ,মর্যাদা থাকার পরও তার কোথাও যেন একটা বাধা ছিল। সে তার জীবন নিয়ে নানান রকম চিন্তা করত। সমাজ,মানুষের আচরণ,পারিপার্শ্বিকতা সব কিছু নিয়ে সে গভীরভাবে চিন্তাযুক্ত ছিল। এভাবে ২২টি বছর পার হয়।

*************

যে বার লিসা মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়ার জন্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করল সেটা ছিল মুসলিমদের রমজান মাস। এক সন্ধ্যার অবসরে নিজ ঘরে বসে সে টিভি দেখতে থাকে। সেখানে এক চ্যানেলে সে নারীদের মার্জিত পোষাক,এটি কেন করা উচিৎ,নারীর দেহ কেন পন্য নয়,তাকে কে সৃষ্টি করেছে,কেন সৃষ্টি করেছে,এখানে তার উদ্দেশ্য কি,তার গন্তব্য কোথায়,পৃথিবীতে তাকে কার বিধান মানতে হবে, ইত্যাদী সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার একটি বক্তৃতা শোনে। ওই সন্ধ্যায়ই তার মাথায় হঠাৎ করেই কিছু প্রশ্ন প্রবেশ করে-আমি কে ? আমি এখানে কেন ? আমার উদ্দেশ্য কি ? আমার গন্তব্য কোথায় ?

উক্ত টিভি অনুষ্ঠানে যে ইমেইল এ্যাড্রেস লেখা ছিল সে ঠিকানায় সে মেইল করে দেখা করতে চায়। ঘন্টা খানিকের মধ্যেই শেখ তাকে ফিরতি মেইল করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং পরের দিন সকালে একটি সময় নির্ধারণ করেন।

পরদিন লিসা শেইখের সাথে দেখা করেন এবং তার সারা জীবনের যত মৌলিক প্রশ্ন ছিল তা একে একে করতে থাকে। তার মনে হতে থাকে-সে যেন সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত অজ্ঞ এবং জীবন সম্পর্কে এতকাল তার কোনো জ্ঞানই ছিলনা্ । লিসার অন্ত:দৃষ্টি খুলে যায়। জীবনের সকল রহস্যের জট খুলতে থাকে্ ।

সে রাতে লিসা তার মস্তিষ্কের পুরো সক্ষমতা নিয়ে গোটা বিশ্ব সৃষ্টি এবং তার মালিককে খুজতে থাকে। এখানে তার নিজের অবস্থান কোথায় তা জানার চেষ্টা করতে থাকে। যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি সকল বিষয়ে ওয়াকিবহাল,আর নিশ্চয়ই লিসাকেও তিনি অবলোকন করছেন। লিসার মস্তিষ্কে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং তা ছড়িয়ে পড়ে সমস্ত দেহাভ্যন্তরে। ঠিক সেসময় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতার আয়োজক এবং স্থানীয় বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে ফোন কল আসে। লিসা ব্যস্ত আছি,পরে কথা বলব বলেই ফোনের লাইন কেটে দেয়।

পরদিন সকালে লিসা দুটি ফোন কল করে। দুটিই যুগান্তকরী। সে সুন্দরী প্রতিযোগীতা আয়োজনকারীদেরকে ফোন করে বলে আমার পক্ষে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীতায় গমন করা সম্ভব নয়। আমি আপনাদের প্রতিষ্ঠান এবং এ সংক্রান্ত সকল বিষয় প্রত্যাখ্যান করলাম। আপনারা অন্য কাওকে নির্বাচিত করুন। আমি আপনাদের ফোনকল পেতে চাইনা। আমি মডেলিংকে বিদায় জানালাম।

লিসা শেইখ বা স্কলারকে ফোন করে বলেন-আমি আপনার সাথে এখুনি দেখা করতে চাই। শেইখ তার নিজের একটি জরুরী কাজ বাতিল করে তাকে তৎক্ষনাত আসতে বললেন।

লিসা : আমি আল্লাহকে চিনেছি, কিন্তু তিনি কি আমাকে গ্রহন করবেন ? আমি তো পাপী !

শেখ: তিনি তো এমনই মহা পরাক্রমশালী ও দয়ালু স্রষ্টা,যিনি ক্ষমা করতেই পছন্দ করেন। বান্দা পাহাড় পরিমান পাপ নিয়ে উপস্তিত হলে তিনি পাহাড় পরিমান ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হন।

লিসা: আমি সেই একক স্রষ্টা আল্লাহর উপরই ঈমান আনলাম। আসহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ,ওয়াহদাহু লা শারিক্কালা,ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু। লিসা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল,যেন তার সারা জীবনের সমস্ত পাপ,ক্ষোভ,ব্যাথা,বেদনা সবকিছু গলে দূর হয়ে গেল।

শেখ তাকে ইসলাম শেখানোর জন্যে ভিডিও,বই এবং কয়েকজন উত্তম মুসলিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।

লিসা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে ইসলাম শিখতে লাগল। তার ছোট পোষাকের স্থলে এখন সর্বাঙ্গ ঢাকা পোষাক শোভা পাচ্ছে। প্রথমবার নিজেকে তার অনেক দামী কিছু মনে হচ্ছে, যার শরীর,চিন্তা চেতনা মোটেও সস্তা নয়। এক মহা পরাক্রমমালী স্রষ্টার অনুগত বান্দা হওয়ার মধ্যে যে অস্বাভাবিক মানুষিক শান্তি রয়েছে তা সে পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করতে থাকল। যার দিন ,রাত কাটত সেরা মডেল হওয়ার স্বপ্নে ও শিক্ষায়,অনুশীলনে, তার সমস্ত সময় কাটে ইসলাম চর্চায়। রাতারাতি সে মুসলিমদের জন্যে একটি উত্তম মডেলে পরিনত হয় এবং বহু নওমুসলিমের জন্যে আদর্শ হয়ে ওঠে।

************

ইসলাম গ্রহনের মাত্র ২ দিন পর, একদিন লিসা ঘরের ফ্লোরে পড়ে যায়। তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ডক্তার তার ব্রেইন ক্যান্সার চিশ্চিত করে। ডাক্তার জানায়- তার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ,খুব শিঘ্রই সে মারা যাবে,হয়ত কয়েক মাস টিকবে।

**********

হাসপাতাল থেকে লিসা শেইখকে চিঠি লিখে:

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ প্রিয় শেইখ। আমি ২২ বছর আল্লাহকে ভুলে ছিলাম,আমি তাকে পেলাম মাত্র দু সপ্তাহ হল। আর যখন আমি তাকে পেলাম,তখন তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন। হে শেইখ ! আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান। আমি আল্লাহর সাথে মিলিত হতে উদগ্রীব। শেইখ ! আমি সারাজীবন আমার পিতা-মাতাকে খুজেছি। আমি তাদেরকে কোথাও পাইনি। যদি আপনি তাদেরকে খুজে পান,তাহলে বলবেন তাদের কন্যা মহা ভাগ্যবান,সে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার পিতা-মাতা যেন আল্লাহকে চিনতে পারে। আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত করুন ! আমার জন্যে দোয়া করুন। আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং সম্মানিত করেন !

*** এর কয়েকদিন পর লিসা মৃত্যু বরণ করেন।

বি:দ্র: একটি সত্য ঘটনার উপর নির্ভর করে গল্পটা আজ (২৯শে ডিসেম্বর,২০১৪) লিখলাম।

বিষয়: বিবিধ

১৪৩০ বার পঠিত, ৩১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

298062
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১১
লিচু চোর ০০৭ লিখেছেন : পড়তে হবে। মনেহয় ভালই হবে !
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
241388
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহHappy
298063
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৯
হতভাগা লিখেছেন : চমতকার একটি ঘটনা শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত নসিব করুন।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
241324
নোমান২৯ লিখেছেন : আমীনPraying Praying Praying
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৫
241389
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমিন ! জাজাকাল্লাহ
298064
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৪
নোমান২৯ লিখেছেন : লিসাদের-ই ভুক্তভুগী হতে হয় ।
দীর্ঘ গল্প ।তবে খুব ভাল্লাগ্লো Happy। সময় নিয়ে পড়ে ফেল্লাম Happy।ধন্যবাদ ভাইয়া। Rose Rose
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৬
241390
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান ,ভাই
298068
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৫১
আবু জান্নাত লিখেছেন : উপন্নাস আকারে লিখলেও অনেক ভালো লাগলো, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৬
241391
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ
298074
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
নাবিলা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৭
241392
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকেHappy
298094
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:২১
পুস্পগন্ধা লিখেছেন :
গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগল, ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য Good Luck
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৭
241393
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
298132
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
এ কিউ এম ইব্রাহীম লিখেছেন : বস্তুবাদী জীবন স্রোতে কচুরীপানার মত ভাসতে ভাসতে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো লিসারা। আল্লাহ তাঁকে রহম করেছেন বলে তিনি নিজকে এবং তাঁর স্রষ্টাকে চিনতে পেরেছেন। এই লেখাটি শিক্ষনীয় হয়ে থাকুক হাজারো ভাই-বোনদের জন্য। আপনাকে ধন্যবাদ... জাযাকাল্লাহ।
Rose
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৮
241394
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বারাকাল্লাহ ফিক
298141
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৮
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ। খুব ভালো লাগলো।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৮
241395
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
298142
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনিয় বিষয়টি শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মজা লাগল এই কারনে একই ডেভিড নামে একজন অস্ট্রেলিয়ান এর সাথে দির্ঘদিন কাজ করেছি। ৫৮ বছর বয়সি ডেভিড এর স্ত্রি ছিল একজন থাই ২৫ বছর এর তরুনি। আমাদের পরিবার এর অবস্থা দেখে ডেভিড মাঝে মাঝেই তার প্রথম সন্তান এর কথা বলত যার সাথে তার ২০ বছর ধরে কোন যোগাযোগ নাই এই ইন্টারনেট এর যুগে।
৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:২৯
241396
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পাশ্চাত্যে এমনটা হরহামেশা ঘটে। এরা অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত
১০
298217
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:০২
জোনাকি লিখেছেন : আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কবুল করুন লিসার মত। সুন্দর হয়েছে যত্ন করে লিখা গল্পটা।জাযাকাল্লাহু খাইরান।
অনেকে আগে এর উপর ভিডিও দেখেছিলাম।
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২৩
241651
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ পোকা সিস্টার
১১
298231
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : গল্প অবশ্যই সুন্দর৷ আল্লাহ তাকেই হেদায়েত করেন যে চায়৷ ধন্যবাদ
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২৩
241652
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান Happy
১২
298245
৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:১৯
ঘারতেরা লিখেছেন : হৃদয় ছুয়ে যাওয়া লেখা। এমন একটি লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। মহান আল্লাহর কাছে আপনার সুস্থতা কামনা করি।
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:২৬
241654
দ্য স্লেভ লিখেছেন : দোয়ার মত বড় উপহার আর নেই। আপনার জন্যে দোয়া রইলো
১৩
298526
০১ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : সত্য ঘটনাটি পড়েছিলাম, আপনি এটিকে গল্পাকারে উপস্থাপন করে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তুললেন। অনেক অনেক ধন্যবাদ ও দু'আ রইল আপনার জন্য Rose Rose Rose Rose Rose Rose Rose Praying Praying Praying Praying
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০০
242107
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহ আপনার এবং পরিবারের উপর সর্বদা কল্যান বর্ষন করুক। আমিন
১৪
298643
০১ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০৯
আফরা লিখেছেন : কষ্টর মাঝে ও ভাল লাগল । হেদায়াত সম্পূর্ন আল্লাহর হাতে আল্লাহ এটা কখন কাকে কোন উসিলায় দিবেন আল্লাহ ই ভাল জানেন ।

অনেক ধন্যবাদ
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০১
242108
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান। ঠিক বলেছেন। এমন ঘটনা অনেকের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আল্লাহই মহান
১৫
298964
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০৩:৪৬
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : সুবহানাল্লাহ! চমৎকার ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
০৩ জানুয়ারি ২০১৫ রাত ০৯:০১
242109
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্যেGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File