মাজার পূজার ইতিবৃত্ত
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:১৩:১৬ রাত
ঠিক কবে থেকে মাজার পূজা শুরু হয় তার লিকিত ইতিহাস আমাদের জানা নেই,কিন্তু বিষয়টি অনেক পুরোনো। কোনো মহৎ মানুষকে মৃতূুর পরও শ্রদ্ধা জানাতে নিজেরা নানান রসম রেওয়াজ চালু করতে থাকে। যুগে যুগে সেসবের মধ্যে নানান পরিবর্তন এসেছে। শুরুতে যেটা চিল মানুষিক শ্রদ্ধা,পরে সেটাই নানান ডালপালা বিস্তার করে প্রকাশ্যতা পায় এবং বিশ্বাসের উপরও প্রভাব বিস্তার করে। স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সেসব মহান ব্যক্তিকেই ক্ষমতার উৎস্য অথবা স্রষ্টার ক্ষমতার অংশিদার মনে করা হতে থাকে। বংশ পরম্পরায় এগুলিই শক্তিশালী শিরকে পরিনত হয় এবং শিরকী আক্কীদার নিয়ম নীতিও প্রবর্তিত হয়।
হিন্দু ধর্মের ৫ হাজার বছরের ইতিহাসে মূর্তি পূজার বিষয়টি জানা গেলেও এর ইতিহাস আরও পুরোনো। তারাই এটি প্রথম শুরু করেনি। হযরত আদম(আঃ)এর কত বছর পর হযরত নূহ(আঃ)আগমন করেছিলেন তার তথ্য আমাদের হাতে না থাকলেও সেটি যে অনেক পূর্বে তা বোঝা যায়। সে সময়ের বিষয়ে আল কুরআন আমাদেরকে জানাচ্ছে....(একটু পরে জানাচ্ছি)। কবর পূজা,মূর্তি পূজা বিষয়টি একই। উভয় ক্ষেত্রেই কিছু ব্যক্তিকে অথবা ব্যক্তির কথিত শক্তিকে অথবা আরোপিত কল্পিত শক্তির আরাধনা করা হয়।
আনেক ইতিহাসের মধ্য থেকে চলুন আরবের দিক থেকে কিছুটা জেনে নেওয়া যাক:
খোজায়া ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী গোত্র। সকল ক্ষমতা মূলত তাদের হাতেই ছিল। পুরুষানুক্রমে তারা ক্কাবার শাসনভার গ্রহণ করে। তাদের শেষ ব্যক্তী ছিল হালিল ইবনে হাবিশ্যিয়া ইবনে সালুল ইবনে কাব ইবনে আমর ইবনে রযী’আ খূযাঈ। হালীল ইবনে হাবিশ্যিয়ার কন্যা হিরাকে বিয়ে করেন বনূ আদনানের কুসাই ইবনে কিলাব। এরপর ক্কাবা শরীফ বা মক্কার সকল কতৃত্ব চলে যায় কুসাই ইবনে কিলাবের হাতে। অর্থাৎ হযরত ইসমাঈল(আএর বংশে। ....খোজায়ীরাই প্রথম আরবে মূতৃী পূজার প্রচলন করে। এই অপকর্মের মূল হোতা ছিল তাদের অত্যন্ত প্রভাবশালী ও অগাধ সম্পদের অধিকারী নেতা আমর ইবনে লুয়াই। সে হজ্জের মৌসুমে দশ হাজার উট জবাই করত এবং মক্কাবাসীদেরকে সে আপ্যায়ন করত। তাদেরকে মধু,ছাতু,ঘি দিয়ে উপাদেয় হালুয়া তৈরী করে খাওয়াত। আরববাসীদের ওপর তার প্রভাব ছিল ব্যপক এবং তার কথাকে তারা শরিয়তের মত অনুসরন করত। আমর ইবনে লুয়াই সিরিয়া ভ্রমন করে এবং সেখানে বালকা অঞ্চলের মায়াব নামক স্থানে সে স্থানীয় আমালীক সম্প্রদায়কে মূর্তীপূজারত অবস্থায় দেখেন। তিনি তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করাতে তারা জানায় যে,মূর্তীর কাছে কিছু চাইলে তা পাওয়া যায়,এমনকি বৃষ্টির জন্যে তার কাছে প্রার্থনা করলে বৃষ্টি হয়। বিষয়টি তার ভাল লাগে এবং তিনি তাদের কাছ থেকে একটি মূর্তী নিয়ে ক্কাবাঘরে প্রতিষ্ঠা করেন।
--(ইবনে কাসীর-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,২য় খন্ড)
ইবনে ইসহাক মূর্তীপূজার প্রচলন সম্পর্কে বলেছেন যে, প্রথম দিকে ক্কাবাকে মহা পবিত্র মনে করে আরবগণ বা অন্যরা ক্কাবার স্থান থেকে ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করে কাফেলা পরিচালনা করত। উদ্দেশ্য ছিল তারা বিপদ থেকে উদ্ধার পাবে এই পবিত্র পাথরের কল্যানে। এরপর কাফেলা কোনো দূরবর্তী স্থানে গেলে আল্লাহ কল্যাণ বর্ষণ করবেন ও বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন এই আশায় এসকল পাথরের চারপাশে তাওয়াফ করা শুরু করে। তারা ভাবত –তারা ক্কাবাকেই তাওয়াফ করছে,কারণ এটি ক্কাবার পাথর। পরবর্তীতে তারা পছন্দনীয় যেকোনো পাথর পেলেই তাকে পবিত্র মনে করত এবং কল্যানের আশায় তাকে বিভিন্নভাবে সম্মান করতে শুরু করে। এভাবে যুগে যুগে বিষয়টি বিকৃত হতে হতে পুরোপুরি মূর্তীপূজায় রূপান্তরিত হয়।
ইবনে কাসীর আবু রাজা আতারদীর আস সাহীহ গ্রন্থের একটি বর্ণনা করেছেন -জাহেলী যুগে আমরা এমন ছিলাম যে,কোনো পবিত্র মনে হওয়া পাথর না পেলে আমরা মাটি দিয়ে একটু উচু স্থান তৈরী করতাম এরপর সেখানে একটি বকরী এনে দুধ দোহন করে তারপর নাজরানা পেশ করতাম। এরপর মাটির স্তুপের চারিদিকে তাওয়াফ করতাম।
তবে তারপরও ইব্রাহিম(আএর কিছু সঠিক রিতিনীতি তারা পালন করত। তারা বায়তুল্লাহ শরীফকে সম্মান করত,তাওয়াফ ও ওমরা করা,আরাফার ময়দান ও মুজদালিফায় অবস্থান করা,পশূ কুরবানীকরা, হজ্জ ও ওমরার জন্যে ইহরাম বাধা ইত্যাদী। কিনানা ও কুরাইশ গোত্র তাওয়াফের সময় উচ্চস্বরে আজকের দিনের মতই তালবিয়া পাঠ করত করত: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ! লাব্বইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা,ওয়ান নিয়ামাতা,লাকাওয়াল মূলক,লা শারিক্কালাকা....অর্থাৎ বান্দা হাজির বান্দা হাজির..বান্দা হাজির হে আল্লাহ,আপনার কোনো শরিক নেই। কিন্তু এরপর তারা অতিরিক্তউচ্চারণরণ করত: কিন্তু আপনার একটি শরিক আছে হে আল্লাহ ! তবে আপনি তার মালিক এবং তার মালিকানাধীন সবকিছুর মালিক ! এ প্রসঙ্গে সূরা ইউসুফের ১০৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন-“তারা আল্লাহকে স্বীকার করে কিন্তু আল্লাহর সত্তাবার সাথে শরীক করে”।
তারা যখন তালবিয়া পাঠ করত এবং বলত বান্দা হাজির, ইয়া আল্লাহ আপনার কোনো শরিক নেই, তখন রসূল(সা তাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলতেন,যথেষ্ট হয়েছে এবার থামো। অর্থাৎ এরপরই তারা যাতে আল্লাহর শরীক স্থাপন না করতে পারে তাই তাদেরকে থামিয়ে দিতে চেষ্টা করতেন।- -(ইবনে ইসহাক, ইবনে কাসীর বিদায়া ওয়ান নেহায়া ২য়).. সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে যে-রসূল(সাবলছেন-আমি আমর ইবনে আমীর খুযাঈকে জাহান্নামে দেখেছি সে তার নাড়িভূড়ী হেচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে”। বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনা মতে সে আরও কিছু রকমের রসম রেওয়াও চালু করেছিল। ইবনে হিশামের বর্ণনায় এসেছে-আমর ইবনে লুয়াই হুবল দেবতার মূর্তী প্রথম ককাবাগলে স্থাপন করে। তবে ইনি আমর বিন লুয়াই ছিলেন কিনা তা নিয়ে মতদ্বৈততা আছে। সেটা না হলেও এটা বলা যায় যে, খূযা’আ গোত্রই এই পাপপ্রথা চালু করেছিল।
সর্বপ্রথম মূর্তীপূজা শুরু করে হযরত নূহের(আ সম্প্রদায়। আল্লাহ তায়ালা সূরা নূহের ২৩ নং আয়াতে বলেন-এবং তারা বলেছিল-তোমরা কখনও পরিত্যাগ করোনা তোমাদের দেব-দেবীকে,পরিত্যাগ করোনা ওয়াদ,সওয়া,ইয়াগুস,ইয়ায়ুক ও নাসরকে।”
ইবনে আবাস(রাবলেন- ওয়াদ,সওয়া,ইয়াগুস,ইয়ায়ুক ও নাসর ছিল হযরত নূহ(আএর সম্প্রদায়ের সৎকর্মশীল লোক। তারা আল্লাহর বিধানকে ভালভাবে মেনেছিল এবং পরহেজগারীতে সুবিখ্যাত ছিল। কিন্তু তাদের মৃত্যুর পর মানুষ তাদের কবরে অবস্থান করতে শুরু করে এবং পরবর্তী প্রজন্ম এসব কবরে পূজার্চনা করতে শুরু করে। এবং এদের নামে মূর্তী গড়ে বিভিন্ন স্থানে তার পূজার্চনা শুরু হয়। উদ্দেশ্য ছিল এসবের মাধ্যমে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা। ইবনে ইসহাক বলেন-ওয়াদ এর মূর্তী স্থাপিত হয়েছিল দুমাতুল জান্দালে বনী কালবের কাছে,সওয়া ছিল বনী হুযায়লের উপাস্য,ইয়াগুস ছিল জারশ এলাকায় বনী আনউম ও বনী মিযহাজ গোত্রে। ইয়াউক ছিল ইয়েমেনর হামদান এলাকায়,এটির তত্ত্বাবধায়ক ছিল বনী বনী খায়ওয়ান। নাসর ছিল হিমইয়ার অঞ্চলে ,কিলা গোত্র ছিল এর উপাসক।-(ইবনে ইসহাক,ইবনে হিশাম-আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,২য় খন্ড)....................
কিতাব- সীরাত: আস সালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ! ইয়া রসূল(সাঃ)- দ্য স্লেভ
বিষয়: বিবিধ
২১৭৩ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কবর পূজা আর মুর্তি পুজায় পার্থক্য নাই। ইকবালের ভাষায়
"পিতৃকুলের সমাধি বেচিয়া খায় যারা তুমি তাদের জ্ঞাতি।
কবর ব্যবসা করিয়াও তুমি করিছ বড়াই, নাহি কি লাজ?
নিশ্চয় তুমি মুর্তি পেলেও তাহারি দোকান ফাঁদিবে আজ।"
তার এক কবিতা এরকম শুনেছি-
ইয়ে হাল তেরা জাল হে
মাকসাদ তেরা মাল হে
কিয়া আজব তেরা চালহে
লাখো কো আন্ধা কার দিয়া
পীররা ভাব ধরে গুরু গম্বীর হয়ে বসে থাকে এবং সে যে ধান্দাবাজ এটাই বলেছেন
জাযাকাল্লাহ খাইর।
ভাষ্কর্য সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে তৈরী হয়। একে পূজার নিয়তে নয়। কিন্তু যদি এটি জীবজন্তুর মূর্তি হয়,তবে এটা তৈরীর অনুমতি নেই,তা সে যেই উদ্দেশ্যে হয়ে থাকুক।
এবার আসি আপনার মন্তব্যে। শহীদ মিনার,জিয়া,মুজিব সাহেব ইত্যাদীর মাজার,সৃতিসৌধ এসবে শ্রদ্ধা জানিয়ে লোককে দেখানো হোক,আর বিশ্বাস করা হোক উক্ত বিষয় যাদের উদ্দেশ্যে তাদেরকে শ্রদ্ধা পাঠানো হচ্ছে। ....যে কারনেই এসব হোক না কেন,তা এই কারনে শিরক যে-এখানে স্রষ্টার প্রতি যেসব আস্থা ফরজ,তা উক্ত স্থানসমূহে বিলিবন্টন করা হয়ে থাকে। যে ভক্তি নিয়ে ওইসব ইট-পাথরে ফুল,শ্রদ্ধা অর্পন করা হয় সেটির মালিক ওইসব ইট পাথর নয়। ওদের হক নেই মানুষের থেকে ওইভাবে শ্রদ্ধা নেওয়ার। ফলে এ খেত্রে এটি শিরক হয়ে যাচ্ছে। আবার এটি কুফরীও,কারন এসব আক্কীদা সুন্নাহ পরিপন্থী। বরং সুন্নাহ দ্বারা পরিত্যাজ্য।
এবার আসি দেশাত্ববোধক গান নিয়ে: এটি একটি ভূখন্ড,ভাষা,গোত্র ইত্যাদী আসাবিয়াহকে অনুভূতির ক্ষেত্র হিসেবে উপস্থাপন করে। রসূল(সাঃ)এমন জাতীয়তাবাদকে জাহেলী বলেছেন,এমনকি যারা এসব নিয়ে থাকে তারা পিতার....কামড় দেয়..এমনও বলেছেন।...জাতিয়তাবাদের মত বড় শিরক এই মুহুর্তে উম্মাহর আর কিছু নেই। এই শিরকের কারনে উম্মাহ ছন্নছাড়া,নেতৃত্ব হারা,বিভক্ত,বঞ্চিত,পদদলিত। মুসলিমদের ঐক্যের অনুভূতি হল তার চিন্তা,যা উৎসারিত হয় কুরআন আর সুন্নাহ অনুযায়ী। এর মূল বক্তব্য হল বিশ্ব মুসলিম একই দেহ। কোথাও আঘাত লাগলে সারা দেহে ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে। ...অবাক কান্ড হল- যে রাজনৈতিক বর্ডার দেওয়া জাতিয়তাবাদ ছাড়া মুসলিমরা চিন্তাই করতে পারছে না,সেটা দেড়শ বছর পূর্বে ছিলই না....
আপনি অতি পরিষ্কার কনসেপ্টের লোক। জাজাকাল্লাহ
আদম আলাইহিসসালাম এর পরে নূহ আলাইহিসসালাম পর্যন্ত দশ শতাব্দীর ব্যবধান ছিল!(নবীদর কাহিনী - আসাদুল্লাহ গালিব)
নূহ আলাইহিসসালাম এর সময় থেকে শিরকের প্রচলন শুরু হয়, নূহ আলাইহিসসালাম এর কওমে ওয়াদ খুব নেককার হিসেবে পরিচিত ছিল। এ যখন মারা গেলো তাদের ভক্ত অনুসারীদের কাছ শয়তান সে এই বলে প্ররোচনা দিলো, এই লোকের মূর্তি বানিয়ে সামানে রাখলে উনাকে দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে আরো বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হবে, সবাই এই কথা মত মূর্তি বানালো, এ থেকেই শুরু হল মূর্তি পূজা!( ইবন কাসীর সূরা নূহ) মূর্তি পূজা থেকেই কবর পূজার শুরু!
আল্লাহ আমাদের শিরকের মতন কঠিন গুনাহ থেকে হিফাজত করুন! জাযাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহ আপনি সত্য তুলে ধরেছেন।
মুর্তি-মাজার দুই ধরণের লোককের আখড়া!
১: স্বার্থবাজ চালাক।যারা অন্যের মাথায় কাঠাল ভেংগে খায়।
২ঃ নির্বোধ বেকুব।যারা অল্প পরিশ্রমে বেশী ফল চায়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন