জ্বালানীর ব্যবসা বাটপারদের হাতে

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১০:৫৪:৩০ সকাল



তথ্য-ভিত্তিক লেখা সাধারণত মানুষ পছন্দ করেনা। গল্প গুজব বেশ পছন্দ করে। আর ফান পোস্ট হলে তো কথাই নেই। আমাদের ব্রেইন চাপ নিতে চায় না। এজন্যে ফুরফুরে মেজাজের বিষয়গুলো পছন্দ করে বেশী। .....আজ সাধারণ দু একটি কথা বলতে চাচ্ছি।

বিশ্বজুড়ে যারা জ্বালানীর ব্যবসা করে তাদের মত বাটপার ইহজগতে নেই। বড় বড় এবং বিশ্ববিখ্যাত যেসব কোম্পানীকে আমরা চিনি এদের কেউ ই খনির মালিক নয়,অথচ এরাই এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।

মরা গ্রুপগুলোর কথা না বলাই ভাল। বিশ্ব সেরা গ্রুপগুলো ব্যপক লবী নীতিতে বিশ্বাসী। এরা সকল সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রাখে। ইউরোপ-আমেরিকার এসব গ্রুপগুলো ব্যপক পয়সা খরচ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোরঞ্জন করে। লবী তৈরী করে,মন্ত্রী,এমপি,সিনেটর তৈরী করে। এদের ম্যানেজ করে ২য়/৩য় শ্রেনীর দেশগুলোরে সরকারের মাধ্যমে সেখানে বীরদর্পে প্রবেশ করে। এরপর সেসব সরকারের বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে হাত করে সে দেশের খনিজ সম্পদ রক্ষনাবেক্ষন,নির্দিষ্ট মেয়াদে লিজ,মালিকানাস্বত্ত লাভ,শেয়ার লাভ করা,পরিচালনা ইত্যাদী প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্বখ্যাত স্টক মার্কেটে এরা শেয়ার ছাড়ে। কখনও কখনও খনি খুজে না পেলেও তাদের শেয়ার ব্যপক দামে বিক্রী হয়। সম্পদের খবর নেই, ওদিকে কাগজ বেচা-কেনার হিড়িক......

যদিও মাটির নীচে থাকা সম্পদের দাম বাড়েনা বা অবস্থার পরিবর্তনও হয়না তবুও এরা বিভিন্ন কৃত্তিম অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দেয়। এক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে।

এর মত লাভ আর নেই,যে মাটির নীচে থাকা জিনিস তুলছে আর বেশী দাম বাড়িয়ে বিক্রী করছে। সম্পদটি একেবারে র ম্যাটেরিয়ালস হওয়ায় তার উপর তাদের বাড়তি খরচ হয়না বললেই চলে। কিছু সংখ্যক গ্রুপই বিশ্বব্যপী খনিজ সম্পদগুলো এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ করে।....এই বিষয়ে আলোচনা নয়...

আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হল সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জ্বালানীর দাম বাগানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এবং এটা হয়ত বাড়বে। জ্বালানীর দাম নাকি আর্ন্তজাতিক বাজারের সাথে সম্ন্বয় করে বাড়ানো হবে। আর্ন্তজাতিক বাজারটা কোনদিকে সেটা জানবার ইচ্ছা হয়।

তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় বাড়ে এবং সকল পন্যের দাম বাড়ে এটা জানা কথা। সেটাই হবে কিছুদিন পর। কিন্তু আপনাদেরকে এই নাটকের বাস্তবতার কথা বলছি শুনুন।

আজ ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ। আমেরিকাতে পেট্রোলের দাম স্থান ভেদে এবং কোম্পানী ভেদে প্রতি গ্যালন ২.২৫ -২.৬৫ ডলার। অর্থাৎ বাংলা টাকায় ৩.৮ লিটারের দাম ২০০টাকার কম। কোথাও প্রতি লিটার প্রেট্রোল পড়ে ৪০ টাকার মত।

আমেরিকা সৌদীআরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে তেল কেনে। বাংলাদেশও মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল কেনে। এবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে।

আমেরিকার প্রেট্রোল স্টেশনগুলো প্রতি কর্মচারীকে বেতন দেয় ১ ঘন্টায় ১০ ডলার থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত। একই রকমের বাংলাদেশে একজন কর্মচারী ঘন্টায় ১ ডলার পায় বলে মনে হয়না। এত টাকা বেতন দিয়েও আমেরিকাতে পেট্রোলের দাম লিটার ৪০/৫০ টাকা। আর মারাত্মক কম বেতন দিয়ে,অতি কম পরিবহন ব্যয় করে এবং একই স্থান থেকে জ্বালানী আমদানী করে প্রতি লিটার পেট্রোল বাংলাদেশে বিক্রী হচ্ছে ৯৫ টাকা। এরপর আবারও তার দাম বাড়ানোর মানে কি ? আর তাহলে দেশী কোম্পানীগুলো কতবড় যালিম ,ভেবে দেখেছেন ?? সরকার এদের সাথে বৈঠক করে দাম বাড়ায় !!

বিদেশী কোম্পানীগুলো আমাদের লোকাল কোম্পানীর কাছে বেশী দামে তেল বিক্রী করে এটাই হয়ত অনেকে বলবে।

এবার দেখুন আরেকটি হিসেব। বাংলাদেশের প্রেট্রোবাংলা খনী থেকে তেল,গ্যাস তুলতে সক্ষম এবং তারা তা করেও থাকে কিন্তু তারা কম পয়সার এসব উত্তেলন করলেও ৪/৫গুন বেশী পয়সা দিয়ে সরকার বিদেশী কোম্পানী দিয়ে কাজ করায়। পেট্রোবাংলাদে কাজ দেয়না অথবা ছোট কাজ দেয়। আর পেট্রোবাংলাও তেল/গ্যাস তুলে জনগনের কথা ভেবে বাজারজাত করেনা। ....কেউ তার নিজের জবাবদিহিতার আওতায় এনে দাম নির্ধারণ করেছি। বরং বিভিন্ন অজুহাতে নিজেকে যালিম প্রমানেই তৎপর দেখা গেছে। মুনাফিকরা যে কাফিরের চাইতেও নিকৃষ্ট সেটাই বার বার প্রমানিত হয়।

যদি জনবল,মেশিনারিজ না থাকে তাহলে এ খাতে জনবল বাড়াও, মেশিনারিজ কিনে আনো। এটাই তো সমাধান। হাজার হাজার কোটি টাকা বাজে খরচ করলেও এরা এই প্রযুক্তির পেছনে ব্যয় করেনা। এরা কোনো ইউনিভার্সিটতে আমাদের দেশের প্রাপ্ত সম্পদ উত্তেলন,বন্টান,প্রয়োগ এসব বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি। যারা বিদেশ থেকে এসব শিখেছে বা এদেশেই এ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করে তাদের সমন্বয়েও এরা এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় না।......লক্ষ লক্ষ লোককে বিদেশে দৈহিক পরিশ্রম করতে পাঠায়,অথচ এসব ইঞ্জনিয়ারিং বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ নিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরীর প্রয়োজন অনুভব করেনা। সে লক্ষ্যে বাইরে শিক্ষার জন্যেও পাঠায় না। সেটা থাকলেও ব্যবহার করেনা।

এরা মাটির নীচের সম্পদকে অন্যের কাছে সস্তায় ইজারা দেয় বা খনি বিক্রী করে দেয়। এরপর বিদেশী কোম্পানী শুধু পরামর্শ বাবদ বড় অংশ নিয়ে যায়,এরপর চুক্তি অনুযায়ী সম্পদের বড় ভাগ তারা নেয়,ছোট ভাগ বাংলাদেশ পায়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দাম বাড়ায় ঘুষ খেয়ে। তারপর জনগনের ট্যাক্সের টাকায় বিদেশ থেকে বেশী দামে আমদানি করে আবার।....অভিযোগ আছে ওভার ইনভয়েজিংএর মাধ্যমে অর্থ পাচার করে। সেই টাকা বিদেশের ব্যাংকে রেখে উপভোগ করে...

বি.এন.পি এবং আওয়ীমলীগ উভয়ই একই জাত,উভয়ই একই কাজ করেছে। এদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে-একজন পিতার কথা বলে কাজ করে,আরেকজন স্বামীর কথা বলে কাজ করে। আচরণগত,আদর্শগত কোনো পার্থক্য নেই।

জনগণ তাদের নিয়তি হিসেবে এদেরকে পছন্দ করেছে,অতএব জুলুম তো উপভোগ করতেই হবে। যে বাশ তারা নিজ হাতে নিয়েছে সে বাশ উপভোগ করতে তাদের আপত্তি থাকার কথা নয়।

সম্ভবত: সূরা রাদের ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন-যে জাতি তার নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেনা,আল্লাহ সেই জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।"

বিষয়: বিবিধ

১০৮৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

294163
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
বাংলাদেশে যেস্ব বিদেশি কোম্পানি গ্যাস উত্তোলন করে তাদের সবগুলিই দেশিয় সাব-কন্ট্রাক কোম্পানি দিয়ে কাজ করায়। দক্ষতা থাকা সত্বেয় অভিজ্ঞতা বা অন্য কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে তথাকথিত আন্তর্জাতিক টেন্ডার এর নামে এদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়না। কেবল সেফটি ও এনভায়রনমেন্ট ছাড়া বাকি বিষয়গুলিতে দেশিয় প্রতিষ্ঠানগুরি বেশ দক্ষ। সেফটির বিষয়টিও স্রেফ মানসিকতার ব্যাপার। বিদেশি কোম্পানি কাউকে কোনভাবেই দৈনিক ৮-১০ ঘন্টা বা সপ্তাহে ৫০ ঘন্টা বেশি কাজ করতেই দেয়না অন্যদিকে দেশি কোম্পানিগুলি ১৪-১৫ ঘন্টা কাজ করান কে ক্রেডিট বলে মনে করে!!!
আর জ্বালানির দাম বৃদ্ধি নিয়ে কি আর বলা যায়!!
প্রতিদিন টেলিভিশনগুলিতে বিশ্ববাজারে ক্রুড এর দাম হ্রাস নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে আর আমাদের শুনতে হচ্ছে বিশ্ববাজারে নাকি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে!!
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৪৪
237727
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জুতাপেটা করা উচিৎ ওদের। আমেরিকা ৪০টাকা লিটারে খুচরা তেল বেচতে পারলে ওরা পারে না ক্যান? ওরা কত টাকায় আসলে তেল কেনে সেইটা কি কেউ জানে ? ওরা হাজার হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে তেল থেকে। এরপরও দাম বাড়ায়।
294227
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৪:১৯
আফরা লিখেছেন : আমি আদার ব্যাপারি জাহাজের খবরের দরকার নাই ।
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩৭
237981
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আদার পরিমান বেশী হলে জাহাজও কেনা যায়....Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
294349
১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৫১
শেখের পোলা লিখেছেন : "বি.এন.পি এবং আওয়ীমলীগ উভয়ই একই জাত,উভয়ই একই কাজ করেছে। এদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে এই যে-একজন পিতার কথা বলে কাজ করে,আরেকজন স্বামীর কথা বলে কাজ করে। আচরণগত,আদর্শগত কোনো পার্থক্য নেই।" দুইশো ভাগ একমত৷
১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
237982
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy Happy Happy Happy Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File