আমেরিকান চোর
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৪, ১১:০৭:১৭ রাত
ঘর গোছগাছ করলাম আজ। ভাবছেন আমি বড়ই সাংসারিক,আসলে তা না। মাত্র ১০ মাস পর বা আমেরিকাতে আসার পর এটাই প্রথমবারের মত ঘর গোছানো। বেশ চকচকে করে ফেলেছি। আমি যখন কাজ ধরি,সেটা শেষ না করে ক্ষ্যান্ত হইনা কিন্তু ধরতে ধরতেই সময় লেগে যায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আমি পছন্দ করি,সেটা উপলব্ধী করলাম। এখন ভাল লাগছে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। তখন আবারও একটি সাহসী উদ্যোগ নিতে হবে।
যাইহোক কাজের কথায় আসি। এটা ডিসেম্বর মাস। খ্রিষ্টানদের বড় দিন উপলক্ষ্যে চারিদিকে মূল্যগ্রাসের হিড়িক পড়েছে। এটা শুরু হয় ব্লাক ফ্রাইডে দিয়ে। নভেম্বরের ৪র্থ বা শেষ বৃহস্পতিবারের রাত থেকে এটি পরদিন পর্যন্ত চলে। এসময় সস্তায় পন্য কেনার জন্যে স্টোরগুলোতে মানুষ হাতাহাতিও করে। অনেককে ভিড়ের চাপে হাসপাতালে নিতে হয়। কাঙ্খিত পন্যটি সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে দেখলে অনেক আমেরিকানের মাথা ঠিক থাকে না। এই মূল্যহ্রাস চলে ডিসেম্বর জুড়েই।
গতকাল একটি বড় ইলেট্রনিক স্টোরে গেলাম। এটা বিশাল ধরনের। দুনিয়ার সকল ভাল ব্রান্ডের জিনিসপত্র এখানে আছে। ইদানিং মানুষ ৮০ইঞ্চি টিভি কিনছে। প্রযুক্তির প্রতিযোগীতায় দাম সস্তা। টিভির দাম বাংলাদেশের দামের তুলনায় সম্ভবত অর্ধেক,কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫ ভাগের এক ভাগ। এ্যাপলের জিনিসের দাম সর্বত্রই চড়া। তবে এদের পণ্য বোধহয় সকলেরই পছন্দ হবে। এখানে ওয়ারেন্টি আলাদাভাবে পয়সা দিয়ে কিনতে হয়,তবে সেটা একেবারে জাতের ওয়ারেন্টী। হাত থেকে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে গেলেও নতুন আরেকটি পাওয়া যায়। ৯০ দিন পর্যন্ত পণ্য ফেরত দেওয়া যায়,কোনো কোনো ক্ষেত্রে সময়ের তারতম্য হয়। এখানে কেনাকাটায় ঝামেলা নেই। তারপরও কিছু ঝামেলা তো থাকেই। আর সেটার অন্যতম একটি হল চুরী।
কয়েক বছর আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম ইংল্যান্ডে প্রতি বছর ২হাজার কোটি ডলারের পন্য চুরী হয় স্টোর থেকে। আর এর মধ্যে বেশী চুরী হয় রেজর। আমেরিকাতে কোনটা বেশী চুরী হয় তা জানিনা কিন্তু চুরী এখানে বেশ হয়।
গতকাল একটি চুরী দেখলাম। আমি একটা জিনিস কিনে স্টোর থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম স্টোরের একজন কর্মী মনিটরের উপর চোখ রেখে আরেকজনকে ডাকল। কারন চোরকে দেখা যাচ্ছে,কৌতুহলী হয়ে দেখলাম। ভদ্রলোকটি একটি জিনিস পকেটে ঢুকালো। ক্যামেরাগুলো সত্যিই আধুনিক। নির্দিষ্ট স্থানে থাকা ক্যামেরা সিলেক্ট করে জয়স্টিক দিয়ে ঘুরিয়ে ,জুম করে বিভিন্নভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষন করা যায়। লোকটার উপর নজর দিল তারা। এরপর দেখলাম সে একজনের সাথে কথা বলতে বলতে আলগোছে কিছু একটা পকেটে ঢুকালো।
এখানে স্টোরগুলো দামী জিনিসে ঠাসা থাকে এবং কোনো গার্ড থাকেনা। ফলে দামী জিনিসগুলো মেরে দেওয়া অনেকসময় সহজ। তবে সহজ কাজটি করতে গিয়ে অনেকে জটিলতার সৃষ্টি করে। তবে বিধান হল চোর যত কিছুই চুরী করুক,তার গায়ে হাত দেওয়া যাবেনা। এটা ছোট স্টোর বা দোকানের ক্ষেত্রে তেমন প্রযোজ্য হয়না। কারন অনেক সময় দেখা গেছে চোর,ডাকাতদেরকে দোকানদার তাড়া করেছে বা আঘাত করেছে। বড় কোম্পানীর পলিসি আলাদা। সামান্য এক চোর ধরতে হুলুস্থু কান্ড কাস্টমারের উপর বিরপ প্রভাব ফেলে,তাই তারা কিছু ভদ্র নীতিতে চলে।
কয়েকমাস আগে এক পরিচিত বুড়ির সাথে দেখা হল। তিনি বললেন আমি স্টোরে চুরি করতে দেখে এক লোককে থামালাম এবং ম্যানেজারকে ডাকলাম। কিন্তু ম্যানেজার এসে লোকটাকে কিছুই বলল না বরং আমাকে এরকম কাজ করতে নিষেধ করল। এবং আমাকে এই স্টোরে এসে কেনাকাটা করতে নিষেধ করল। অনেকের নীতি হল-চোর কিছু নিয়ে চলে গেলে কিছুই করার নেই। অথবা যারা একাধিক পণ্য কিনে তার সাথে কৌশলে বাড়তি একটি পন্য নিয়ে তার দাম পরিশোধ না করে চলে যায়,তাদের ক্ষেত্রেও কিছু মনে করা হয়না। বুঝতেপারলে অবশ্য কৌশলে ভদ্রভাবে মনে করিয়ে দেয় যে-আপনি বোদহয় ওটার কথা ভুলে গেছেন।...ইত্যাদী..
যাইহোক লোকটির চুরীর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর পুলিশকে জানালো। পুলিশ মোটামুটি আশপাশেই থাকে। এরপর স্টোরের সকল দরজা বন্ধ করে দিল,যাতে লোকটি বের হতে না পারে। কারন এরা উক্ত ব্যক্তিকে কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। গায়ে হাত দিলে উল্টো কেইস খাওয়ার সম্ভাবনা। পুলিশ এসে তাকে সকলের সামনে থেকে খুব ভদ্রভাবে ডেকে নিয়ে যাবে। ভিন্ন কক্ষে নিয়ে হাতকড়া পরিয়ে শরীর তল্লাশী করবে।
অত্যন্ত ভদ্রভাবে আচরণ করবে এবং নীচু স্বরে হাসিমুখে কথা বলবে। এই বিষয়ে একটি নোট লিখে নিজের সাথে থাকা ওয়ারলেস কম্পিউটারের মাধ্যমে কন্ট্রোল রুমে বা কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য প্রদান করবে এবং আসামীর থেকে একটি সই নিবে। সম্ভবত কথোপকথন রেকর্ডও করে। এরপর বিচারকের কাছে উপস্থিত হয়ে এসব উপস্থাপন করলে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস জেল হতে পারে।
শাস্তির পরিমান কম হলেও,ক্ষতি হচ্ছে। কারো ব্যাপারে এমন রিপোর্ট থাকলে আমেরিকাতে চাকুরী পাওয়া কষ্টকর। আর এখানে ড্রাইীভং লাইসেন্স,পাসপোর্ট নং,মোবাইল,আইডি,নাম ইত্যাদীর মাধ্যমে কারো ব্যাপারে সকল রেকর্ড দ্রুত পাওয়া সম্ভব। কিন্তু তারপরও মানুষ চুরী করে এবং চুরীর পরিমান বিশাল। চোরদের বেশীরভাগই ভদ্রচোর।
বিষয়: বিবিধ
১৫৫০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে আমেরিকান পুলিশ কৃষ্নাঙ্গদের ক্ষেত্রে এত ভদ্র মনে হয় না। পর পর মিসিসিপি ও নিউইয়র্ক এ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি তাই বলছে।
Top Ten Most Stolen Items In USA:
Meat/Filet Mignon
Expensive liquor
Electric Tools and DIY Tools
Gadgets
Razor Blades
Deodorants
Expensive Clothing
Let's Rock Elmo
Women's Fragrances
Shoes
চোর ও চুরি বিষয়ে আমেরিকানদের ভূমিকা ও কার্য্যকলাপ জানলাম! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!!
জিনিস কিনে ফেরত নেয়ার এই ঘটনাগুলো বেশি ঘটে Walmart এ। ভদ্রবেশী এমন চোরদের অনেক দেখেছি। যাদের কপাল খারাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
ভালো লাগলো,ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন