জনাব নিজামীর ফাঁসি

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:৪৪:১২ সকাল

একজন প্রসিদ্ধ আলিমের সাথে আমাদের পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানের দাওয়াত করার জন্যে আমি তার মগবাজারের অফিসে গিয়েছিলাম। বিল্ডিংয়ের নীচ তলায় যখন পৌছলাম তখন সন্ধ্যা। সেখানে জনাব নিজামীর সাথে দেখা। তিনি তখন কেবল নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে এসেছেন।উনি মন্ত্রী হলেও বডিগার্ড ছিলনা। উনার সাথে আগে পরিচিত ছিলাম না। আমরা একসাথে কথা বলতে বলতে লিফটে উঠলাম। উনার ব্যক্তিত্ব অসাধারণ। ......কাজ সেরে ফিরে আসলাম।

৭১ এ পাকিস্থানের বিভক্তি না চাওয়া যদি রাজাকারী হয়ে থাকে তাহলে এখনকার স্বাধীনতার চেতনাধারী অনেকে রাজাকার হিসেবে গণ্য হতে পারে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি চায়নি স্বয়ং রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর,মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু তাদের এই আচরনে তাদেরকে রাজাকার বলা হয়না বরং অনেক লোক আইডল হিসেবে তাদেরকে অনুসরণ করে। তারা শ্রদ্ধারপাত্র।

৭১ সালে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে কিছু লোক সহায়তা করেছিল। কিছু লোক হত্যা,ধর্ষণ,লুটপাট,অগ্নীসংযোগে যুক্ত ছিল। তারাই যুদ্ধাপরাধী। কিন্তু এসব লোকেরা একই স্থানে আবদ্ধ থাকেনি। তারা বর্ণ পাল্টে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছে। অনেকে রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল,অনেকে রাজনীতির বাইরে ছিল। ১৯৭২ সালে সকল যুদ্ধাপরাধীর তালিকা করে বিচার করা হয়েছিল। এটা খুবই যুক্তিসংগত চিন্তা যে, ৭১ এর পরপরই অপরাধীদের শনাক্ত ও বিচার সহজ ছিল। মানুষ অপরাধীদেরকে চিনত। সাক্ষ্য প্রমান চিল তাজা।

৭৫ সাল পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা ও শনাক্ত করে বিচার করেছেন এবং অনেককে সাধারণ ক্ষমা করেছেন।

এরপর স্বাধীনতার আরেকজন বীর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলেন এবং তিনি যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে আবারও বিচারের মঞ্চ তৈরী করেননি, কারন সেটা সম্পন্ন হয়েছিল।

এরশাদ সরকারও এটা নিয়ে কিছু করেনি। মুক্তিযোদ্ধা এবং চেতনা তখনও ছিল কিন্তু এটাকে রাজনীতিকরনের মাত্রা ছিল সীমাবদ্ধ। যার কারনে এ সংক্রান্ত বিচারের বিষয় তাদের মাথায় সেভাবে ক্লিক করেনি।

এরপর খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা একের পর একে ২০০৬ পর্যন্ত এক দীর্ঘ সময় শাসন করেন দেশ। তাদের এই ১৫/১৬ বছর ,তত্ত্বাবধায়ক আর্মী শাসনের ২ বছর এবং আওয়ামী লীগের ২০০৮ এর ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছুকাল যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত বিষয় ততটা আলোচনায় আসেনি।

২০১০ সালের পর যুদ্ধাপরাধ বিষয়টি হাটে মাঠে রাস্তাঘাটে টেলিভিশন ও সকল মিডিয়াতে মহামারী আকারে ছড়িযে পড়ে। এবং যুদ্ধাপরাধী বহু স্থানে বসবাস করলেও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে তাদের অস্তিত্ব খোজা হয়। একটি আলাদা বিচার বিভাগ তৈরী করা হয় এ সংক্রান্ত বিচার চালানোর জন্যে। কিছু সংখ্যক প্রসিদ্ধ লোককে আটক করে সাক্ষ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয়। মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সামনে বিপূল সংখ্যক মিথ্যাবাদী সাক্ষী,ভুল তথ্য উপস্তাপিত হয়। পুরো সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীকে জোর জবরদস্তীমূক অবস্থানে স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। আসামী পক্ষের তথ্য প্রমানকে বিবেচনায় না এনে পুরোপুরি রাজনৈতিক বিষয়কে বিবেচনায় আনা হয়। যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অভিযোগ হয়নি তারাও আটক হয়। জোর জবরদস্তি মূলকভাবে আটকে রাখা হয়,নির্যাতন করা হয়। বিচার প্রক্রিয়াকে তামাসার বিষয় বানানো হয়। কিছু মানুষের দাবীতে বিচারের বায পরিবর্তিতও হয়।

যারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত,তারা দোষী নাকি নির্দোষ তার তথ্য আমার কাছে নেই। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে সরকারের আচরণ দেখে ানুমান করা যায় যে এখানে তথ্য-প্রমানের চাইতে রাজনৈতিক লাভ ক্ষতির হিসেব কষে বিচার চালানো হয়েছে। বিষয়গুলি সুস্পষ্টভাবে দেশবাসীর অধিকাংশের নিকট প্রতিয়মান হয়েছে। সত্য প্রকাশিত হওয়ার পরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা হয়েছে। বিষয়গুলো এমন আকার ধারন করেছিল এবং করেছে যে, চায়ের দোকানদার যিনি রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি জানেন ,তিনিও হিসেব কষে বলে দিতে পারেন কার ফাসি হবে,আর কার যাবজ্জিবন কারাদন্ড হবে। একটি দেশের শাসন প্রক্রিয়া কতটা হাস্যকর পর্যায়ে পৌছলে জনগনের সাধারণ অংশও এভাবে উপহাস করতে পারে !!!

সরকারের রাজনৈতিক আকাঙ্খার সর্বশেষ বলী হলেন জনাব নিজামী। তাকে ফাসি দেওয়া হবে, এটা কয়েক মাস আগেই মানুষ বলেছিল। হিরক রাজার দেশে সর্বদা এক নিয়ম, ফলে অনুমান সত্যই হয়ে থাকে।

কিন্তু এসবের যে রিএ্যাকশন রয়েছে তা সরকার সম্ভবত দম্ভের কারনে ভাবতে পারছে না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে শান্ত বাংলাদেশ অশান্ত হবে শিঘ্রই। সরকার ঠান্ডা মাথায় এমন একদল মানুষ তৈরী করতে চলেছে,যারা চরমভাবে বাধ্য হবে সরকারের সাথে লড়াইয়ে। সাম্প্রতিক আরব বিশ্বে যা ঘটছে বা ঘটেছে সেটাই এখানে ঘটতে যাচ্ছে। এদেশে অদূর ভবিষ্যতে রক্ষক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমেই ভিন্ন ধরনের শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে এমনটাই মনে হচ্ছে।

আল্লাহ বিশ্বব্যপী ইসলামের বিজয় দান করবেন। সম্ভবত সেটারই ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে। শাসক শোন করতে করতে,অত্যাচার নির্যাতন করতে করতে এমন একটা স্থানে পৌছবে যেখান থেকে সরাসরি পতন ঘটবে। ইতিহাসের শিক্ষা হল এই যে-ইতিহাস থেকে কেউ শিখতে চায় না। পতনের পূর্বেও তারা দম্ভ নিয়ে বসে থাকে,এরপর সবকিছু চূর্ণ বিচূর্ণ হয়।

সরকার জামায়তকে নিষিদ্ধ করবে,আরও অনেক ইসলামী দল আছে নিষিদ্ধ অথবা আবদ্ধ। আমার ধারনা এরা এক সময় এক হয়ে এক নীতিতে লড়াই করবে। কারন আপোষের কোনো রাস্তা থাকবে না এবং তারা বাস্তবতার কঠিন চরিত্র দেখার কারনে আপোষ রফা মানবে না। সে লড়াইয়ে সেইসব বিপ্লবী জনতারই জয় হবে। সেই বিষয়টিই ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মধ্যবর্তী মানুষিকতাসম্পন্ন মানুষেরা বিলিন হয়ে যাবে। সত্য এবং মিথ্যার এক ভয়াবহ লড়াই শুরু হবে। এবং সত্যের জয় হবে।

যাইহোক নিজামী সাহেবের ফাসিতে আমি মর্মাহত। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুক ! তাকে অতি উত্তম সম্মানে ভূষিত করুক। এখানে তার হারনোর কিছু নেই। তিনি যদি সত্য প্রতিষ্ঠার কাজ করে থাকেন, তবে সত্যের বিজয়ই তার বিজয়। মুমিন কখনও হতাশ হয়না। তার প্রচেষ্টাও সফলতা। কাফির এবং তাদের সহযোগীদের সকল প্রচেষ্টা এবং অর্জন সবকিছুই বৃথা এবং তাদের মনস্তাপের কারন। তাদের জন্যে কোনো শুভ সংবাদ নেই। তারা হীনমন্যতায় বসবাস করে, কাপুরুষের মত জীবন অতিবাহিত করে,মাথা নীচু করে মৃতূ্র বরণ করে এবং জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করে। কত নিকৃষ্ট তাদের জীবন !!!

বিষয়: বিবিধ

১৪০৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

279567
৩০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:১২
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : শাহাদাতে বিপ্লব বেগবান হয়।
জনাব নিজামীকে আল্লাহ আখেরাতে সম্মানজনক মর্যাদা দিবেন ইনশাল্লাহ।
আর জুডিশিয়াল কিলারদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।
279570
৩০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:২২
কাহাফ লিখেছেন :
নুহ আঃ এর যমানায় আগত শাস্তিময় প্রবল বন্যা আল্লাহ যেন আবার দেন!তাহলেই নাশুকর বান্দারা হুশে আসবে!
বর্তমান অনাচার-অবিচারের জন্য মুল দায়ী বেখবর জনতা। এরাই ভোটের সময় নির্দিষ্ট মার্কা প্রমে পাগল হয়! বাস্তব জীবনে ইসলামপন্থিদের কে ভাল মনে করলেও ঠিকই সিল মারে অন্য জায়গায়!
মাইনকার চিপায় আরো ভালো ভাবে পড়া দরকার জনতার!

আপনার'লেখনী'র বাহিরে মন্তব্যে কিছু বলে ফেল্লাম!মনে কিছু নিয়েন না!
279576
৩০ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
নেহায়েৎ লিখেছেন : আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুক ! তাকে অতি উত্তম সম্মানে ভূষিত করুক। এখানে তার হারনোর কিছু নেই। তিনি যদি সত্য প্রতিষ্ঠার কাজ করে থাকেন, তবে সত্যের বিজয়ই তার বিজয়। মুমিন কখনও হতাশ হয়না। তার প্রচেষ্টাও সফলতা। কাফির এবং তাদের সহযোগীদের সকল প্রচেষ্টা এবং অর্জন সবকিছুই বৃথা এবং তাদের মনস্তাপের কারন। তাদের জন্যে কোনো শুভ সংবাদ নেই।
279599
৩০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:১২
আনিসুর রহমান লিখেছেন : The sacrific of Mr Nizami has a great impact to eatablished the truth. But the present fasciest regime and its blind supporter in Bangladesh failed to realize that.
279601
৩০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
মোস্তাফিজুর রহমান লিখেছেন : ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি নেতার চরিত্রই এমন অমায়িক। বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমদ সাহেবের সাথে একদিন দেখা করতে গেলাম। উনার সাথে যেমন ব্যক্তিগত পরিচয় ছিলনা, অফিস্ও চিনতাম না। ফেনী থেকে ঠিকানা নিয়ে অফিসে পৌছলাম। রিসিপ্শন থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করল আপনি আগে সময় অনুমতি/ সময় নিয়েছেন?? আমি বললাম না; রিসিপ্সনিষ্ট মকবুল আহমদ সাহেব কে কল দিয়ে বলল আপনার একজন মেহমান এসেছে। উনি সরাসরি নিচে নেমে এলেন। আমার মত অপরিচত লোকের জন্য উনার নেমে আসাতে আমি হতবাক হয়ে গেলাম। স্বাভাবিক হ্ওয়ার আগেই উনি হাত বাড়িয়ে দিলেন হ্যান্ডশেক করার জন্য। যতক্ষণ না আমি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি উনি হাত ছাড়েননি। দোয়া করি আল্লাহ ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের হেফাজত করুক।
279603
৩০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : Sad Sad Sad আমিও মর্মাহত। তার রায় পূনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
279609
৩০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
মামুন লিখেছেন : ।আপনার লিখাটি পড়লাম। ধন্যবাদ।
আল্লাহপাক সব কিছু দেখছেন.... Good Luck
279703
৩০ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মিথ্যাবাদিরা হত্যা করতে পারে। কিন্তু বিচার করতে পারেনা। এটা অবিচার বলেই ইতিহাসে স্বিকৃত হয়।
279800
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
শেখের পোলা লিখেছেন : রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত এগিয়ে আসে৷ রাত গভীর হতে এখনও বাকী আছে৷
১০
279866
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:৫৮
বাজলবী লিখেছেন : জালেমের মসনদ দীর্ঘস্থায়ী নয়। জালেমদের সব চক্রান্ত নস্যাত হয়ে ইসলামী অান্দোলনই বিজয় হবে ইন শা অাল্লাহ। অাল্লাহ তাঅালা ইসলামী অান্দোলনের প্রান প্রিয় নেতাদেরকে হেফাজত করুন।অামিন।
১১
279875
৩১ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৪:৫৪
ওরিয়ন ১ লিখেছেন : স্কটল্যান্ড এর সম্প্রতি হ্যাঁ/না ভোটে যারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবং স্কটল্যান্ড এর পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাদের কে কি ইংল্যান্ড রাজাকার বানিয়ে নিয়েছে?
বড়ই সেলুকাস আমাদের এই দেশ! এখানে সব সম্ভব। জানি না এর থেকে উওরনের কোন উপায় আছে কিনা!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File