ইসলামের সৌন্দর্য

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:১৯:৩১ সকাল

মদীনার বাজার। পড়ন্ত বিকেলে একজন খদ্দের এসে দাড়ালেন একজন সাহাবার দোকানে। একটা পণ্যের দাম শুনে কিনতে সম্মত হলেন ক্রেতা। কিন্তু তাকে আশ্চর্য করে দিয়ে সাহাবা দূরের আরেকটি দোকান দেখিয়ে বললেন পণ্যটি সেখান থেকে কিনতে। দাম একই, জিনিসও একই।

আপনি যদি ব্যবসায়েরছাত্র হন তাহলে লাফিয়ে উঠে বলবেন এই জন্যই ইহুদিরা সারা দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করে; মুসলিমরা ব্যবসা বুঝেই না। খদ্দের মানে হাতের লক্ষী। হাতের লক্ষী কেউ পায়ে ঠেলে? আপনি যদি ঝানু ব্যবসায়ী হন তাহলে বলবেন দুই ক্ষেত্রে খদ্দেরকে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে পাঠানো যায়: যদি ক্রেতা বেশি খুঁতখুঁতে হয় আর যদি ক্রেতা ঠিক যা চাইছে সেটা আমার কাছে না থাকে। কিন্তু এছাড়া ক্রেতাকে ফিরিয়ে দেওয়া মানে ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলা।

যাহোক, আমাদের ঘটনার ক্রেতাও হয়ত এসব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে গেলেন অন্য দোকানটায়। পণ্যটা কিনে ফেরতআসলেন প্রথম দোকানে। সাহাবা তখন অন্য আরেকজন খদ্দেরের সাথে কথা বলছেন। এটাই আল্লাহর বিধান—যত টাকার বিক্রি হওয়ার কথা ছিল, তত টাকার বিক্রি হবেই। এটা আল্লাহর দেওয়া রিযক্‌। যা আসার কথা ছিলো তা আসবেই। মাঝখান থেকে আমাদের পরীক্ষা হবে—সেই রিযক্‌ টাপেতে গিয়ে আমরা কী হালালে সন্তুষ্ট থাকলাম নাকি হারামের ডুবে গেলাম।

সাহাবা জিজ্ঞেস করলেন ক্রেতাকে, ‘পাওনি তোমার জিনিস?’

– পেয়েছি, কিন্তু আমি অন্য একটা জিনিসের জন্য এসেছি।

– কী?

– তুমি যার কাছে আমাকে পাঠিয়েছিলে সে আমারই ধর্মের মানুষ—ইহুদি। আমরা তোমাদেরপছন্দ করি না। কিন্তু তুমি একজন ব্যবসায়ী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছে আমাকে পাঠালে,মুসলিম হয়ে একজন ইহুদিকে ব্যবসার সুযোগ করে দিলে? কেন?

– কারণ আল্লাহ আমাকে আজকের মত যথেষ্ট রিযক্‌ দিয়েছেন। আর ও বেচারা সকাল থেকে বসে আছে–আজ কোন বিক্রিই হয়নি ওর। তারও তো পরিবার আছে। একজন খদ্দের পেলেও তার ন্যুনতম চাহিদাটুকু হয়ত মিটবে।

ক্রেতাটি হতবাক হয়ে ভাবল—যে ধর্ম মানুষের কল্যাণের কথা এভাবে মানুষকে ভাবতে শেখায় সেটা সত্য বই মিথ্যা হতে পারে না। প ণ্যকিনতে এসে ইহুদি ব্যক্তিটি জান্নাত কিনে নিয়ে চলে গেল।

ইসলাম কিন্তু এভাবেই পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে না, জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে।

সাহাবারা হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের ছাত্র ছিলেন না, তারা রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাসজিদে নববীর ছাত্র ছিলেন। তাদের অভিধানে মনোপলি, কম্পিটিটর, গ্রোথ কার্ভের মতো কঠিন সব ধারণা ছিলোনা। তারা এই পৃথিবীতে আল্লাহর দেওয়া রিযক্‌ তারা বান্দাদের সাথে ভাগ করে নিতেন। তারা দু’হাত উপুড় করে মানুষকে দিতেন, কারো কাছে ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে হাত পেতে ভিক্ষে মাঙতেন না। শোষণ-লুন্ঠন-প্রবঞ্চনা-প্রপঞ্চনা তো দূরের কথা।

এই ইসলাম মানা, একে সমাজে পুর্নপ্রতিষ্ঠা করে ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা যদি মধ্যযুগে প্রত্যাবর্তন হয়, তেরশ বছর পিছু হাঁটা হয়তাহলে মন্দ কী? যারা এই যুগের মাৎসন্যায় থেকে ছিঁটে-ফোটা ভাগ পেয়ে সুখে আছে বলে ভাবছে তাদের জন্য ইসলাম কষ্টকর হবে। কিন্তু ইসলামী শরিয়াহ মেনে নেওয়াতে দেশের সিংহভাগমানুষের জন্য মঙ্গলকর। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললাম কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠের মঙ্গল চাইলাম না এটা কী মুনাফিকি নয়? ইসলামী শরিয়াহ বাঘের গুহা নয়—সাম্যতা আর ন্যায়বিচারের বিধান। ইসলাম মেনে ব্যবসা করলে সবাই উপকৃত হবে। ইসলামি আইনে বিচারকরলে মানুষ ইনসাফ পাবে। ইসলাম অনুযায়ী দেশ চালালে কেউ আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে না পারলেও সবার ঘরে খাবার থাকবে। অন্তত ক্ষুধার জ্বালায় কাউকে আত্মহত্যা করতে হবে না।ইসলামের আগমনে কলাগাছওয়ালারা বেজার হবে। ইসলাম ঠেকাতে তারা আমাদের ভুল বোঝাবে—কিন্তু আমাদের কল্যাণের জন্যই আমাদের চোখ খোলা দরকার। ইসলাম সম্পর্কে জানা দরকার। ইসলাম মেনে নেওয়া দরকার।

আল্লাহ ক্ষুধা-তৃষ্ণার উর্ধ্বে। পাথরের দেবতার মতো তিনি ভোগ চান না। মানুষ কাজ করে তাকে খাওয়াবে সে সুযোগই নেই। আল্লাহচান মানুষ যেন পৃথিবীতে ভালো থাকে। সেজন্যই ইসলামী শরিয়াহ তাদের কাছে পাঠিয়েছেন।আমরা এই সহজ সত্যটা যত তাড়াতাড়ি বুঝব ততই মঙ্গল।

সংগ্রীহিত

বিষয়: বিবিধ

১৩২৩ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

278849
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:২৪
ওরিয়ন ১ লিখেছেন :
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৩
222867
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
278853
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১০:৪৩
কাহাফ লিখেছেন :
অসাধারণ নান্দনিকতায় ইসলামের অনুপম বৈশিষ্ট তুলে ধরায় অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহু খাইরান জানাই......।
ইসলামের মহান সৌন্দর্য্যে আল্লাহ আমাদের সৌন্দর্যায়িত করুন এই কামনা! Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৪
222869
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমিন
278858
২৮ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ১১:০৮
ফখরুল লিখেছেন : ইসলাম (কোরআন) এসেছে মানোব জাতির ভাগ্য করতে প্রসন্ন।
ছেড়ে দিয়ে ইসলাম (কোরআন) সেই জাতি হল আজ অসহায় নিঃস্ব বিপন্ন।
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৪
222870
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইসলাম (কোরআন) এসেছে মানোব জাতির ভাগ্য করতে প্রসন্ন।
ছেড়ে দিয়ে ইসলাম (কোরআন) সেই জাতি হল আজ অসহায় নিঃস্ব বিপন্ন।
278923
২৮ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:০৩
আফরা লিখেছেন : ইসলাম কিন্তু এভাবেই পৃথিবীতে ছড়িয়েছে। তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে না, জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে ।

সঠিক কথা ..........।
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৬
222871
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অন্যরা কিতাব দেখতে পায়না, তারা আগে ব্যক্তিকে দেখে,তারপর তার মেথড বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু মুসলিম নেতিয়ে যাচ্ছে কিছু শয়তানের প্ররোচনায়। শয়তানরাই মুসলিমদের শাসক হয়ে বসে আছে। ইন্সটিটিউশনের মাধ্যমে কুফর শেখাচ্ছে,পয়জন পুশ করছে
278928
২৮ অক্টোবর ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোস্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মানুষের মধ্যে অতি মুনাফার লোভই সৃষ্টি করে পরস্পর প্রতিদন্বিতার। আর সেটাই বাজার কে করে তুলে অতিমুল্যায়িত। তথাকথিত বিজনেস স্কুল গুলিতে শুধুমাত্র লাভের পদ্ধতি পড়ান হয়। পড়ান হয়না নৈতিকতা।
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৭
222873
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমি অবাক হই কিভাবে মানুষেরা ওদের ফাউল বিজনেসকে স্ট্যাডী করে। কোনো নৈতিকতা ছাড়াই পড়াশুনা করানো হচ্ছে
278972
২৮ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:২৯
ইবনে হাসেম লিখেছেন : ইসলামের সৌন্দর্য্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবেনা। তবে যেটার অভাব সেটা হলো আমাদের নিজেদের অন্তরে ইসলামের সৌন্দর্য্য ততোটুকু এখনো প্রতিষ্ঠা পায়নি যা পেলে একটা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের প্রয়োজনীয় জনশক্তি রেডি হতে পারে। আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইছি।
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ১২:২৮
222874
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমিন
279134
২৯ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০৩:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : রসুল নেই আছে নায়েবে রসুল, তাের পাঠশালাও আছে তবে রসুলের সিলেবাসে তারা ভেজাল মিশিয়ে ফেলেছে৷ তাই ছাত্রতেও ভেজাল হয়েছে৷ আগে পাঠশালা গুলো সংষ্কার করতে হবে৷ ধন্যবাদ৷
279160
২৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৬:০৭
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : কোথা সে মুসলমান? Day Dreaming
২৯ অক্টোবর ২০১৪ সকাল ০৮:৩৫
222912
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম এখন তাদের টর্চ দিয়ে খুজতে হয়
279355
২৯ অক্টোবর ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৪
আনিস১৩ লিখেছেন : Thoughtful sharing. It will encourage us.
৩০ অক্টোবর ২০১৪ রাত ০১:০৯
223228
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File