"""রিয়া""""
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:১২:৫৯ সকাল
রিয়া মানে যে গোপন অহংকার,যা মনের গহিনে লুকিয়ে থাকে-সেটা ব্লগের সাথে যুক্ত অধিকাংশ লোকই অবগত বলে আমার বিশ্বাস। বিষয়টি মাঝে মাঝে বাস্তবে দেখী ,সেটাই মেয়ার করছি।
রসূল(সাঃ)রিয়া সম্পর্কে বলেন-এটি হল অন্ধকার রাতে কালো পাথরের উপর চলমান কালো পিপড়ার মত।-সম্ভবত বুখারী
অহংকার নিয়ে আরেকটি হাদীস মনে পড়ছে-"অহংকার মানুষের নেক আমলকে সেভাবে ধ্বংস করে দেয়,যেভাবে আগুন শুকনো খড়-কুটোকে পুড়িয়ে ধ্বংস করে। -বুখারী
অহংকার নিয়ে লিখলে লেখা অনেক দর্ঘ হতে বাধ্য,কারন এর ভেতর অনেকগুলি স্তর রয়েছে। অবাক হবেন একটি বিষয় চিন্তা করে যে- অহংকার একটি শিরক।
এটা শিরক একারনে যে- এখানে আল্লাহর উপর আস্থার স্থলে নিজের যোগ্যতার উপর আস্থা তৈরী হয়। এর প্রকারভেদ রয়েছে। াবস্থার তারতম্য হয়। কারো ক্ষেত্রে এটি বেশী এবং কম হতে পারে। কিন্তু এর সকল অবস্থাই বিপজ্জনক। অহংকার হল আমিত্ব। আমিত্বকে খতম না করতে পারলে বা দমিয়ে রাখতে না পারলে নিজের আমলের পরিনাম= ০০ হয়ে যেতে পারে। কারন ইবাদতসমূহ আল্লাহর স্থলে নিজের জন্যে পালনীয় হয়েছে বলে প্রতিয়মান হতে পারে।
প্রকাশ্য অহংকার সম্পর্কে আমরা বেশী অবগত,আর এটি শিরক। আমরা যদি অহংকারের কারন অনুসন্ধান করি,তাহলে এখানে এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারব। রিয়া বা গোপন অহংকারও একই শ্রেণীর। পার্থক্য এই যে-এটি অন্যের চোখে অনেক সময় ধরা পড়েনা্ । এটি ভেতর থেকে একজন মানুষকে শেষ করে দেয়।
আমি বিষয়টি ছোট করতে চাইলেও এটি লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আজকের বিষয় ছিল ভিন্ন। একটি ঘটনা শেয়ার করার ইচ্ছা ছিল। দুই বন্ধু সেজে গুজে কোথাও দাওয়াতে যাচ্ছিল। একজন অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশী সেজেছিল,তাতে তাকে অনেক বেশী স্মার্ট লাগছিল হয়ত। এমনি সময়ে বন্ধু বলে বসল-কর্মস্থলে সবাই তাকে পছন্দ করে এবং তার পোষাকের প্রশংসা করে।
অন্য জন জানতে চাইলো মহিলা কলিগ আছে কিনা। জবাব-হ্যা। শুরু হয়ে গেল অন্তরের জ্বলন-পীড়ন। নানান চিন্তায় বন্ধু বিধ্বস্ত। বন্ধুটি আরও বলল-মেয়েরা তাকে পছন্দ করে। কিছু উদাহরণও দিল।
অপর বন্ধুর মধ্যে হিংসা জন্ম নিল এভাবে যে- মেয়েরা তার দিকে না তাকিয়ে কেন ওর দিকে তাকাবে ? কেন তার সাথে বেশী মেয়ে কথা বলবে ? ইত্যাদী। এর থেকে চিন্তাগত অনেক ডালপালা বিস্তার লাভ করল এবং সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল গোপনে।
গত কয়েক দিনে উক্ত বন্ধু তাকে যেসব গোপন কথা বলেছে এবং তার যত দোষের কথা সে জানে, সেটাই সে কৌশরে অন্যের কাছে প্রচার করতে থাকল। এরপর একটি সুবিধাজনক দোষ তার কর্মস্থলে ছড়িয়ে দিল। এভাবে সে তাকে খানিকটা হেয় প্রতিপন্ন করতে সক্ষম হল,যদিও তাদের বন্ধত্বের ইতি হয়েছে এর উপর ভিত্তি করে।
এই উদাহরণটা অতি সাধারণ পাশ্চাত্য ঘটনা। কিন্তু এখানে আমাদের জন্য শিক্ষনীয় কিছু আছে।আমি অন্য ানেক উদাহরণ দিতে পারতাম কিন্তু সদ্য ঘটিত বলে এটা জানালাম।
এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল- আপনার সামনে অন্যেরা আপনার বন্ধুর কোনো বিষয়ে প্রশংসা করলে আপনার জ্বলে কি না ? উত্তর নিজের মনে কাছে পাবেন। অথবা পূর্বের কোনো ঘটনা বিশ্লেষণ করেন। উত্তর যদি হ্যা হয়, তবে ঘটনা খারাপ। এটি রিয়া এবং এটি মারাত্মক।
আপনার বন্ধু তার কোনো ভাল বিষয়,যেটাকে মানুষ বাহবা দিয়েছে আপনার সামনে সেটা প্রকাশ করলে বা গল্প করলে,আপনিও আপনার ভাল কোনো বিষয় বা সমজাতীয় বিষয়টি প্রকাম করতে উদগ্রীব হন কি না ?
উত্তর যদি হ্যা হয়, তবে খবর খারাপ। রিয়া ভেতরে ফালাফালি করছে।
আপনার সাথে একজন মানুষের সম্পর্ক ভাল নয়, কিন্তু সে লোকটি খারাপ নয়,সাধারণ মানুষ(ভাল-মন্দ মিলে)। এই লোকটির কোনো খারাপ সংবাদ শুনলে আপনার মন আনন্দে লাফিয়ে ওঠে কি না ?
উত্তর হ্যা হলে খবর খারাপ্ । রিয়া ভেতরে একটি ঝামেলা পাকাচ্ছে।
উক্ত লোকটি(যার সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ কিন্তু একজন মোটামুটি ভাল লোক)। তার কোনো শুভ সংবাদ শুনলে আপনার খারাপ লাগে কি না ?
উত্তর হ্যা হলে খবর আছে !!
আপনার সাথে সম্পর্কিত লোকসমূহ,বন্ধু,আত্মীয়,প্রতিবেশী -এদের কোনো শুভ সংবাদে আপনার খারাপ লাগে কি না ? এটা মনে হয় কি না,যে এইটা কেন আমার ঘটলো না?
উত্তর হ্যা হলে সাবধান হউন !
আরও বহু বিষয় রয়েছে,কিন্তু যা বললাম তা অতি সাধারণ বিষয়। এটি আমাদের ক্ষেত্রে অহরহ বিভিন্নভাবে ঘটে। এবং আমার ধারনা অধিকাংশের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক অনুবূতির সৃষ্টি করে,আর অল্প লোকের খেত্রে এটি মোটামুটি একই অনুভূতি সৃষ্টি করে অথবা কম মাত্রায় খারাপ অনুভূতির সৃষ্টি করে কিন্তু তারা তা নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেন।
উপরোক্ত রিয়া আল্লাহর সৃষ্টি করা একটি বৈশিষ্ট্য। এটি আমরা শেষ করতে পারব না। কিন্তু এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব। আল্লাহর রাহে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আল্লাহ উক্ত ব্যক্তিকে এমন স্তরে পৌছে দেন যেখানে শুধুই সফলতা। এটির নিয়ন্ত্রণ হলে অন্যরা অবর্ণনীয়বাবে লাভবান হয়। কোনো সমাজের লোকেরা এটার চর্চা করলে সে সমাজের মানুষেরা একে অপরের জন্যে মারাত্মক কল্যানকামী হয়। কিন্তু এখান থেকে লাভবান হতে হলে বিষয়টি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঘটাতে হবে। বা রিয়াকে আল্রাহর উদ্দেশ্যে দমন করতে হবে। নইলে প্রচলিত আইনে রিয়া সংক্রান্ত বিচার সম্ভব নয়। আর ভেতরে জ্বলতে থাকা এই অহংকার পরিবার,সমাজ,বন্ধুত্ব,ভালবাসার বন্ধন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে বা ধ্বংস করে অথবা বন্ধনকে একেবারে ঠুনকো করে তোলে। গোটা পাশ্চাত্যের সমাজ ভেতরে ভেতরে এটাতে আক্রান্ত কিন্তু তারা এটা অধিকাংশ সময়ই বুঝতে পারে না্ । এদের াইনের প্রয়োগ হয় এবং অর্তনৈতিক স্বাচ্ছন্দের কারনে অনেক অপরাধের ক্ষেত্র তৈরী হয়না। তাই এরা এখনও একটা গতি নিয়ে চলে যাচ্ছে। এদের পারষ্পরিক সম্পর্কের স্কেল নীচে নামার একটি কারন এই রিয়া বা গোপন অহংকার। এটি সঠিক সময়েই শুধু চোখে পড়ে,অন্য সময়ে এটা বোঝা যায় না।
যে কোনো সমাজের জন্যে রিয়া একটি ভয়াবহ ব্যাপার। আপনার জন্যে একটি ব্লগীয় পরিক্ষা দিলাম, চেক করে দেখতে পারেন। এটা প্রকাশ করার দরকার নেই। নিজের ভেতর রেখে দমন করুন।
জন্মগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। আপনার কোনো কাজের প্রশংসা একজন পুরুষ করলে ভাল লাগবে,নারী করলেও ভাল লাগবে। কিন্তু কোনো নারী কোনো পুরুষের প্রশংসা করলে সে ভাল লাগার অনুভূতি ভিন্ন মাত্রার।
প্রশ্ন হল: আপনার কোনো লেখায় যেসকল মেয়েরা সুন্দর মন্তব্য করে, আপনি কি চান সেসকল মেয়েরা অন্যের লেখাতেও একই রকম সুন্দর মন্তুব্য করুক ? অথবা আপনি যখন দেখেন একই মেয়ে,যে আপনার লেখাতে সুন্দর মন্তব্য করেছে এবং আপনার ভাল লেগেছে। পরক্ষনেই যখন দেখেন-সেই মেয়েটি/মেয়েগুলি অন্যের কোনো লেখায় সুন্দর মন্তব্য করেছে, তখন আপনার ভেতরে জ্বলে কি না ???(এটি বিপরীতভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য)
সমাধান : আমাদের অহংকার রয়েছে। এটি ক্ষেত্র বিশেষে জ্বলে ওঠে। যদি কেই বলে তার রিয়া নেই, তাহলে সে অহংকারী ও মিথ্যাবাদী। বিশাল সংখ্যক হাদীস রয়েছে এসব ব্যাপারে। পড়তে পারেন। কিন্তু আমি যে টা বলতে চাই,সেটা হল-ভেতরের অহংকার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করবে। আর তখনই আমাদের সতর্ক হতে হবে। আল্লাহ অতি মহান ও দয়ালু তিনি এই অবস্থার জন্যে পাপ লিপিবদ্দ করেন না। বরং সেটা প্রকাশিত হয়ে পড়লে তার মাত্রা অনুযায়ী পাপ লিপিবদ্ধ করেন। তবে ভেতরের ওই বিষয়টি সকল প্রকার নেক আমলের উপর ব্যপক প্রভাব বিস্তার করে এবং তা অন্ত:সারশুন্য করে ফেলে। আখিরাতে অনেককে আল্লাহ বললেন-তুমি আমার জন্যে ইবাদত করোনি বরং নিজের সন্তুষ্টির জন্যে করেছো,এখন আমার কাছে কোনো পাওনা নেই.....
তাই রিয়া থেকে সাবধান। ভেতরের অনুভূতির দিকে খেয়াল রাখতে হবে,আর সঙ্গে সঙ্গে সেটার মাথায় কিক করতে হবে। কষ্ট হলেও নিজেকে চেপে রাখতে হবে। এতে লাভ আছে। দুনিয়াতেও দেখবেন আপনার পাশে মানুষ স্বাচ্ছন্দবোধ করছে,আপনাকে নিরাপদ বন্ধু ভাবছে,আপনাকে সম্মান করছে,বিশ্বাস করছে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত একটি সম্মান। আর আখিরাত তো রয়েছেই।
শেষ কথা: রসূল(সাঃ) সামনাসামনি কারো প্রশংসা করতে নিষেধ করেছেন। একজন এমন করাতে তিনি বলেছিলেন-তুমি তো তাকে হত্যা করলে........
তবে একজন ব্লগার যখন ান্যের লেখায় প্রশংসা করে তখন সে লেকক নতুনবাবে লেখায় উৎসাহ পায়। তাই আমরা ান্যের প্রশংসা করব তার সুন্দর রেখনীর জন্যে। যাতে পরবতৃীতে আমরা ভাল লেখা বেশী পেতে পারি। কিন্তু স্বশরীরে থাকা কারো সামনে তার উচ্চসিত প্রশংসা করা নিষেধ। এতে তার ভেতরের অহংকারকে উসকে দেওয়া হয়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার পথে চলার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে হেফাজত করুন।
**ইউরোপ-আমেরিকায় যারা বসবাস করেন, তারা যদি এদের অবস্থাসমূহ গভীরভাবে াবলোকন করেন এবং ইসলাম স্ট্যাডী করেন,তাহলে ঈমান মজবুত হওয়ার কথা। ভুল এবং সংশোধন দুটোই কাছ থেকে বোঝা যায় এখানে।
আমার লেখায় ভুল হলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ব্লগারদের আঘাত লাগলে ক্ষমা চাচ্ছি।
বিষয়: বিবিধ
১৪১১ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একান্ত প্রয়োজনীয় উপকারী একটা পোস্ট, অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকাল্লাহ আপনাকে....।
অহংকার আল্লাহর জন্যেই খাস,একে স্বীয় চাদর বলে অবহিত করছেন পরাক্রমশালী আল্লাহ।তবে অহংকারের মাত্রাগত প্রকার রয়েছে।
আর 'রিয়া' হচ্ছে লোক দেখানো ভালো কাজ। অর্থাৎ অন্যে ভালো মনে করবে এমন নিয়তে পুণ্যের কাজ করাই হল রিয়া।
শিরোনামের সাথে উপস্হাপনার মিল কষ্ট করে পেতে হয়।
'অহংকার' শিরোনাম হলেই ভালো হতো। বেয়াদবী মাফ চাইছি শ্রদ্ধেয় দ্য স্লেভ........।
এক স্থানে বলেছি--আল্লাহ বলবেন,তুমি যা করেছো তোমার জন্যেই করেছে। আচ আমার কাছে পাওনা নেই। ...এখানে লোক দেখানো বা লোকের জন্যে বা নিজের সন্তুষ্টির জন্যে আমল হয়েছে। সেটাই উপস্থাপন করেছি। আর আমি বিস্তারিত বর্ণনায় যায়নি। শুধু একটি সাইড বর্ণনা করেছি।
কেহ লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দশ্যে “ইবাদত” করলে সেটাকে “রিয়া” বলা হয় ।
হযরত মুহম্মদ ইবনে লবীদ (রা থেকে বর্নিত । রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বলেন “আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি । সাহাবীরা বললেন – ইয়া রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) ছোট শিরক কি ? রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) বললেন , তা হোলো “রিয়া” বা “লোক দেখানো ইবাদত” । যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন , সেদিন রিয়াকারদের বলবেন, যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের নিটক যাও । দেখো তাদের নিকট কোনো পুরস্কার পাও কিনা ।
[মুসনাদে আহমদ]
তবে আপনার লেখাটা আমার মনে হয়েছে রিয়ার ক্যাটাগরিতে পড়ে না । পড়ে অহংকার । সেটা ও খারাপ ।
তবে লিখা ভাল হয়েছে ।ধন্যবাদ
আমি লিখাটি বুঝতে পেরেছি আলহামদুলিল্লাহ! জাযাকাললাহু খাইর!
নারী বা পুরুষ মোম এবং আগুন থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকুন!
চমতকার লিখেছেন।
পশ্চিমা জগতে "এটা"কে বরং বিশাল গুন হিসেবে ধরা হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন