ঈদটি দারুন লাগল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ অক্টোবর, ২০১৪, ১২:১৩:৪৫ রাত
যেহেতু মুসলিম কমিউনিটির বাইরে থাকি তাই ঈদ বুঝতে পারা অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু মনের মধ্যে ঈদের আনন্দ ধ্বনিত হয়,লাফালাফি করে,তাকে তো আর থামানো যায় না। অপরিচিত মুসলিমদের সাথেও অবশ্য সেভাবে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায় না। ঈমাম সাহেবকে ফোন করে জানলাম ২০ মাইল দূরের একটি হলরুমে জামাত হবে। ওরেগনে এসময়ে বৃষ্টি হয়,তাছাড়া শীতের আগমন ঘটবে শিঘ্রই,তাই ইনডোর আয়োজন।
আগেই নিয়ত করেছিলাম রান্না করে মুসল্লিদের খাওয়াব। পোর্টল্যান্ড থেকে হালাল গরুর মাংস কিনেছিলাম,গরুর সামনের পায়ের মাংস। রসূল(সাঃ)ও সামনের পায়ের মাংস পছন্দ করতেন। এটা আমার দারুন পছন্দ।
ঈদের ১দিন আগেই আড়াই ঘন্টা সময় ধরে দারুনভাবে মাংস রান্না করলাম। কোলেস্টেরলের কথা চিন্তা করে বরাবরই অলিভওয়েল ব্যবহার করি। সূরা ত্বিনে এটার কসম খেয়েছেন আল্লাহ। সম্ভবত ত্বিন অর্থ অলিভ বা জলপাই জাতীয় ফল(ভুল হলে সংশোধন প্রত্যাশী)। এ কারনে এটার প্রতি বাড়তি টান আছে। আর আমি সর্বদা আল্লাহর কাছে রোগমুক্ত সুস্বাস্থ্য কামনা করি। গরুর মাংস রান্না সত্যিই দারুন হল।
ঈদের পূর্ব রাতে আমার বিখ্যাত ভুনা খিচুড়ী রান্না করলাম। প্রথমে অলিভ ওয়েলে পেয়াজ মোটামুটি লালচে করে ভাজলাম,তারপর কিছু ইলাচ,লবঙ্গ,হলুদ,জিরার গুড়া দিয়ে নেড়েচেড়ে একটু পানি দিলাম,এরপর ডাল ভেজে নিলাম। এটা ডুবো তেলে ভাজতে হবে। তারপর বাশমতি চাল দিয়ে ভাজতে হবে। এরপর পরিমানমত পানি দিয়ে অপেক্ষা। তেলে পরিমান বেশী হলে খিচুড়ীর ভেতর একটি দারুন আবেশ আসে। সেটা ঝরঝরেও খানিকটা হয় আবার তেরতেলেও হয়।
এবার চিন্তা করলাম দুটো আলাদাভাবে পরিবেশ করলে মানুষ আলাদাভাবে হয়ত খাবে,কারন বিভিন্ন দেশের মুসলিম সেখানে। তাই আমি খিচুড়রি সাথে দারুনভাবে মাংস মেশালাম।
ঈদের দিন ফজরের সময় এ্যালুমিনিয়াম পয়েলে তৈরী পাত্রে ভরে ঈদগাহে রওনা দেওয়ার পূর্বে তাপ দিয়ে উত্তপ্ত করে,অনুরূপ ফয়েলে মুখ বন্ধ করে দিলাম। এরপর চলে গেলাম নামাজে।
এখানে পেছনের কাতারে নারীরা এবং সামনের কাতারে পুরুষরা নামাজ পড়বে। নতুন এক ঈমাম নামাজের পর সুদীর্ঘ খুতবা দিলেন। তাতে আমার আত্মিক লাভ হলেও বৈষয়িক ক্ষতি এই হল যে,কষ্টে তৈরী খিচুড়ী ঠান্ডা হয়ে গেল। নও মুসলিমদের জন্যে অনেক নসিহৎ হল। ভাল লাগল।
অনেকে ানেক রকমের খাবার এনেছে। পাশে বসা বাঙ্গালী ভায়ের সাথে পরিচিত হলাম। এরা আমার থেকে দূরে থাকে। আমি বিভিন্ন রকমের খাবার খেলাম ব্যপক্ । বরাবরের মত সবার পূর্বেই খেলাম। আসার সময় পাঞ্জাবীর পকেটে ভরে দুটো সিদ্ধ ডিম নিয়ে আসলাম রাস্তায় খাব বলে।
এবার গন্তব্য শত মাইল দূরের ওরেগন সিটি । আজ সারাদিন ড্রাইভ করব এমনই নিয়ত। নতুন ড্রাইভার তাই মনে দারুন উত্তেজনা। এমন বিশাল রোডে ড্রাইভ করার মজা আছে। আনন্দে গতিসীমার দশ মাইল উপর দিয়ে ড্রাইভ করে পৌছলাম আবারও ওলানঅনতা ফলসে। এটা আমাকে বারবার টানে। এর মোটামুটি দূর্গম গিরিখাত আমাকে কেন জানি আনমনা করে দেয়। পাহাড়ের ছ্যাদলা ধরা অসমতল শরীর দেখে ভাল লাগে, অপক তাকিয়ে থাকি। নীচে বন্ধুর পথ,শুচালো পাথর,ঠান্ডা পানির ধারা সবই চমৎকার আকর্ষণ করে। বিশাল বিশাল পতিত গাছের কান্ডের উপর দিয়ে চলে গেলাম। এবার আর খালি পায়ে নয়, স্যান্ডেল পায়ে আছে,তাতে চলার ক্ষেত্রে একটু গতি এসেছে। সতর্কতার সাথে খাড়া পাহাড়ের খাজে পা,হাত রেখে এগুতে থাকলাম। আজ বাইরে তাপমাত্রা ৬৫ফারেনহাইট কিন্তু এখানে ৫০এর নীচে। অল্প দুয়েক জনকেই দেখলাম আসতে।
চলে গেলাম পানির পতিত হওয়ার স্থানে। একটু ঠান্ডা লাগলেও দাড়িয়ে থাকলাম্ ্ খানিক পর সকলে চলে গেল। আমি একা উপভোগ করতে থাকলাম। দারুন লাগল। বারবার পেছনে কিছুদূর হাটছি আবার উৎস্যে ফিরে যাচ্ছি,এবাবে ২ ঘন্টার বেশী কাটালাম। এখানে মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই,অবশ্য আমার মোবইলে ফোন টোন আসেনা বললেই চলে। জরুরী কারন ছাড়া মোবাইল আমার চলে না।
এবার চললাম হুড রিভার সিটি। এখান থেকে ২৫ মাইল দূরে। সেখানে কলাম্বিয়া নদীর পাশে দারুন একটি পার্ক আছে। কৃত্তিম সি-বীচ তৈরী করা হয়েছে। নদীর পানিকে বাধা দিয়ে এবং পাড়ে বালু ফেলে এটা বানানো হয়েছে। ছোট খাল তৈরী করা হয়েছে,তা বেশ দারুন। থাকলাম খানিকক্ষন।
এবার এখানকার বিশাল একটি বাঁধ দেখতে গেলাম। এখানে ব্যপক বিদ্যুত তৈরী হয়। কিন্তু এটা বিকেল ৫টায় বন্ধ হয়ে যায় দর্শনার্থিদের জন্যে। আমি ৫ মিনিট দেরী করে ফেলেছি। চলে আসলাম পাশের সরকারী মৎস্য হ্যাচারীরে। দারুন কারবার। বিশাল এলাকা,আছে বড় পার্ক,সবই সবুজ্ । বহু সংখ্যক হাইজে বিভিন্নভাবে মাছের পুনা লালন পালন করা হ,বড় মাছও আছে। কৃত্তিম স্রোত তৈরী,পানির বিভিন্ন ব্যবহার দেখে ভাল লাগল। এখান থেকে তৈরী বিভিন্ন মাছের পুনা বিভিন্ন নদীতে ছাড়া হয়। মুৎস্যজীবীরা নিয়ম মেনেই মাছ আহরণ করে,ফলে এখানে মাছের আকাল পড়েনা।
এবার একুইরয়িাম দেখলাম। এখানে বড় স্টারজন মাছ আছে যেখা ১০ ফুট লম্বা এবং সাড়ে চারশ পাউন্ড ওজন। এদের দেহে নাকি হাড় নেই, দেখে অবশ্য তা মনে হল না। স্টারজন মাছ ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয় এবং ১৬০০পাউন্ডের বেশী ওজন হতে পারে। অবাক হলাম এরকম আকৃতির মাছ দেখে। কলাম্বিয়া নদীতে এসব মাছ রয়েছে।
এবার ফেরার পালা। সত্যিই ঈদের দিনটি দারুন কাটল। কিন্তু আরও ভাল লাগত যদি কোনো মুসলিম ভাইদের সাথে বিভিন্নভাবে মজা করে দিনটি কাটাতে পারতাম। ঈদের দিনটি গেল ভ্রমনে,এটাও খারাপ নয়। আলহামদুলিল্লাহ আমি খুশী হয়েছি।
বিষয়: বিবিধ
৩৩৫৪ বার পঠিত, ৮৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ স্লেভ ভাই।
লিখাটি প্রথম থেকে কয়েকবার পড়লাম, ভালো লাগলো।
আপনার ঈদের দিনটি সুন্দর কেতেছে জেনে আলহামদুলিল্লাহ খুশী হলাম।
"রসূল(সাঃ)ও সামনের পায়ের মাংস পছন্দ করতেন। এটা আমার দারুন পছন্দ। " জেনে আনন্দিত হলাম।
আল্লাহপাক আপনাকে সবসময় ভালো রাখুন-আমীন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ঈদ মুবারক
প্রিয়জনদের থেকে যোজন যোজন দূরে হয়েও অনেক সুন্দর কেটেছে আপনার ঈদ- করুণাময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি তাই।
অনেক অনেক ধন্যবাদ-শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক আপনাকে......
আর কিকি খাবার ছিল সেটা তো বললেন না ভাই। সব কিছু খেয়ে দুইটা সিদ্ধ ডিম পকেটে আনলেন।
স্টার্জন মাছে শুনছিলাম বিখ্যাত ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়। তবে সেই ক্যাভিয়ার জানতাম নাকি শুধু কাস্পিয়ান আর ভুমধ্যসাগর এর পাওয়া যায়। জানিনা মানুষের কেন এত টাকা খরচ করে ক্যাভিয়ার খায়। একবার বিনা পয়সায় খাওয়ার সুযোগ পাইলেও দুই চামচ এর বেশি ভাল লাগে নাই!!
ঈদ মুবারক
ঈদ মুবারক ব্রাদার
ঈদ মোবারক
পকেটে চালান করা ডিম/কাবাব ইত্যাদি পরে খাওয়ার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল
ঈদের শুভেচ্ছা- কুরবানী ও ঈদ মোবারক
ত্যাগের আলোয় ব্যক্তি ও সমাজ জীবন আলোকিত হোক
সুন্দর কেটেছে দিনটি। ধন্যবাদ আপনাকে।
সুন্দর ও সাবলীল বর্নার প্রকৃতির কাছ ঘেষা ঈদ দারুন কেটেছে সেজন্য মহান রবের নিকট শুকরিয়া!
আমাদের ঈদ আলহামদুলিল্লাহ ভালো কেটেছে!
আপনার জন্য-
http://www.bdmonitor.net/blog/blogdetail/detail/1977/sadiiamuqueem/52134#.VC9sSGd_vfI
এই যে এই ফলটি-
খিচুড়রি সাথে দারুনভাবে মাংস মেশালাম - রান্নার বর্ণনা শুরু থেকেই জানান দিচ্ছে আপনি নিজের রান্নায় নিজেই কুপোকাত তবে খিচুড়ির বিরিয়ানী করার আইডিয়াটা আসলেই দারুণ!
এবাবে ২ ঘন্টার বেশী কাটালাম। এখানে মোবাইলে নেটওয়ার্ক নেই - প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে আমিও ভালোবাসি, আর মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকাটা তো বাড়তি পাওনা
এদের দেহে নাকি হাড় নেই, দেখে অবশ্য তা মনে হল না - হাড় না থাকলে দেহের আকৃতি অ্যামিবার মত হত, হাড় আছে অবশ্যই।
কিন্তু আরও ভাল লাগত যদি কোনো মুসলিম ভাইদের সাথে বিভিন্নভাবে মজা করে দিনটি কাটাতে পারতাম - আপনাকে তো বললাম ওখানে আপনার কাছাকাছি বয়সের মুসলিম ভাই আছে, আপনিই তো যোগাযোগের সময় করতে পারছেন না
খিচুড়রি বিরিয়ানী সত্যিই দারুন বিশ্বাস না হলে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান
অ্যাাঁহ! আপনার আবিষ্কার আপনি আমাকে রান্না করে খাওয়াবেন!
'এ্যালুমিনিয়াম পয়েলে তৈরী পাত্রে ভরে ঈদগাহে রওনা দেওয়ার পূর্বে তাপ দিয়ে উত্তপ্ত করে,অনুরূপ ফয়েলে মুখ বন্ধ করে দিলাম। নতুন এক ঈমাম নামাজের পর সুদীর্ঘ খুতবা দিলেন। তাতে আমার আত্মিক লাভ হলেও বৈষয়িক ক্ষতি এই হল যে,কষ্টে তৈরী খিচুড়ী ঠান্ডা হয়ে গেল।' - পরের বার হাঁড়িতে করেই নিয়ে যাবেন, এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় গরম থাকে >-
ঈদ মোবারক।
স্টিকি পোস্টে অভিনন্দন!
পড়তে পড়তে খিদে লেগে গেলো যে, . . . !!
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
ভালো লাগলো লেখাটি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন