ওয়ানঅনতা একটি ভয়ঙ্কর সুন্দর জলপ্রপাত !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৯:২৮:২৫ সকাল
ইদানিং ঘোরাঘুরি হলেও লেখালিখি হচ্ছে না্ । কারন কর্মস্থল থেকে ব্যপক ডাকাডাকি করছে। গতকাল শুক্রবার কর্ভালিসের সালমান ফার্সি ইসলামিক সেন্টারের মসজিদে গিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল নামাজ শেষে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে দুটো ভালমন্দ খাব। কিন্তু ফোন আসল,অনুরোধ করলো কর্মে আসার জন্যে। এমন সবিনয় অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতাম যদি পুরোনো লোক হতাম। কিন্তু নতুন বিধায় না করতে পারলাম না। ফলে নামাজ পড়েই কাজের জন্যে বেরিয়ে পড়লাম, অবশ্য ইন্ডিয়ান স্টোর থেকে ১২ পাউন্ড ডাল,সব্জী,কাচা আম ইত্যাদী কিনলাম। এদের সবজীর দাম ব্যপক বেশী,তারপরও ঝিঙ্গা,লাউ,পটল,চিচিঙ্গা এসব অন্য কোথাও পাওয়া যাবেনা বলে কিনতে হল। গতকাল একটি মাঝারি সাইজের মিস্টি কুমড়ার অর্ধেক রান্না করে পুরোটাই খেয়ে ফেলেছি, রান্নার হাত বেশ ! যাক সে কথা...আজকের কথায় আসি।
ড্রাইভিং করলাম ৩ দিন,আর আজ হাইওয়েতে ড্রাইভিং করতে চাইলে আমার বন্ধু বাধা দিল। গাড়িতে ফুল ট্যাঙ্কি তেল ভরে দেওয়ার পর নিজেই আমাকে ড্রাইভং করতে বলল। হাইওয়ে ৫ থেকে হাইওয়ে ২০৫,তারপর হাইওয়ে ৮৪ ধরে মাল্টনোমাহ ফলস পার হয়ে হর্স টেল জরপ্রপাতে আসলাম। এটা রাস্তার পাসেই,দেখতে ভাল কিন্তু পরেরটার মত অপরূপ নয়। আমি হাইওয়েতে দারুন ড্রাইভ করেছি এবং পাহাড়ী আকাবাকা রাস্তায়ও দারুন করেছি। নিজেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ,নিজেই নিজের পিঠ চাপড়ে দিলাম।
(হর্সটেল জলপ্রপাত)
গতকাল রাতে গুগলে ওয়ানঅনতা ফলসের ছবি দেখে ব্যপক পছন্দ হল। সিদ্ধান্ত ডাকা হল। আর আজ এখানে এসে বুঝলাম সিদ্ধান্ত ছিল দারুন। তবে সৌন্দর্য দেখতে ভেতরে ঢুকতে হবে এবং সেটা কঠিন।
পায়ে বিশেষ ধরনের কেডস পরেছিলাম যাতে পাথরের উপর পিছলে না যাই। মোটামুটি ভারী একটা ব্যাকপ্যাক নিয়ে রওনা হলাম। শুরুতে বিশাল গাছের গুড়ির সমাহার। বহুকাল আগের পুরোনো মরা গাছ চলমান ঝর্ণার উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে মুখ থুবড়ে বসে আছে বা শুয়ে আছে। তার উপর দিয়ে সতর্কতার সাথে এগিয়ে চললাম উৎস্যের দিকে।নেচে ছোট বড় পাথর খন্ড।
খানিক পর দেখলাম চলমান পানির ধারা উপেক্ষা করা যাবেনা। আমি পোর্টল্যান্ড যাব,তাই কেডস ভেজাতে চাইলাম না্ । হেলথ ইন্সুরেন্স পেতে এখনও ২৫০ ঘন্টা কাজ করতে হবে, তাই এখন সমস্যায় জড়াতে চাইনা। অবশ্য ঝুকি প্রতিনিয়তই নেই।
অনেকদিন খালি পায়ে হাটা হয়না। ছোট ঝোট ধারালো পাথরের উপর দিয়ে হাটতে কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল পায়ের নীচে ফেটে যাচ্ছে। তারপরও চললাম্ পানি ঠান্ডা। হাটুর উপরে পানি নিয়ে চলে গেলাম পাহাড়ের একটি খাজে। এখানে বুক সমান পানি ঠেলে যেতে হবে। আরেকটা রাস্তা আছে খাড়া পাহাড়ের পিচ্ছিল বিপজ্জনক ঢাল ধরে এগুনো্ । চিন্তায় পড়লাম। জামা কাপুড় ভেজাতে চাইলাম না। এদিকটাতে পিছলে পড়লে অবশ্য পানিতে পড়তে হবে, এতে আহত হওয়ার সম্ভাবনা কম,তবে বেকায়দায় পড়লে হাত পা ভাংচুর হওয়া ব্যাপার না।
আমি কঠিন পাথরের উপর গুটি গুটি পায়ে ব্যালান্স করে এগিয়ে চললাম। একস্থানে হাটু পর্যন্ত ভিজলেও পার হয়ে গেলাম। পায়ের পাতা যেন ফেটে যাচ্ছে। খুবই ধারালো পাথর। ঠান্ডা পানিতেও সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু এগিয়ে চললাম্।
সামনে দেখলাম সেই অপরূপ সুন্দর জলপ্রপাত। স্বশব্দে পাথরের উপর আছড়ে পড়ছে জলধারা। এখানে একটি পুকুরের মত স্থান তৈরী হয়েছে। অনেকে এখানে সাতার কাটে এবং লাফ দেয়। পরের বার আমিও এখানে সাতার কাটব ভাবছি। অসাধারণ সুন্দর স্থান।
ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা হল। তারা ৭/৮জন ছিল। তাদের মধ্যে হিজাব পরা এক জাপানিজ মেয়েকে দেখে মনে হল এরা সকলে মুসলিম। সাহস করে এক ছেলেকে সালাম দিলাম এবং পরিচিত হলাম। এরা সৌদী-আরব থেকে এসেছে,অথচ এদের সাথে আসা দুজন মেয়ে টাইট জামা-প্যান্ট পরে এসেছে। " মক্কার লোক হজ্জ পায় না" কথাটা এখানে প্রযোজ্য মনে হল।
একঘন্টা এখানে থেকে ঠান্ডা করতে লাগল,যদিও আজকের তাপমাত্রা বাইরে প্রায় ৮০ ডিগ্রী ফারেনহাইট। খুব ঠান্ডা হাওয়া পানির ঝাপটার সাথে গায়ে এসে কাপন ধরালো। ফিরতি পথ ধরলাম।
পোর্টল্যান্ডের হালাল স্টোর থেকে ১০কেজী গরুর মাংস এবং কিছু কলিজা কিনলাম্। আবার কবে আসা হয় জানিনা। কুরবানী ঈদে মসজিদের লোকদেরকে ভূনা কিচুড়ী এবং গরুর মাংসের ভূনা খাওয়াব নিয়ত করেছি। নিজে নিজে অনেক খেলাম,এবার অন্যকে খাওয়ানোর পালা।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ২৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমার কাছে ভালমন্দ মানে হল আমার প্রিয় খাবার তা আপনি কেমন আছেন ?
ছবি এবং কাহিনি দুইটাই খুব ভাল লাগল। সেই সাথে তরকারির বিবরন।
ভ্রমন কাহিনী ভাল লাগল৷ ধন্যবাদ৷
ঐযে উপরের ছবি গুলোর মত মনে হবে সুন্দর ।
কেউ সাহায্য করলে সুবিধা হত
খাওয়া নেই তো সবি মিছে। আজ প্রথমবারের মত এক বাঙ্গালির দেখা পেলাম। বিশাল ধনী লোক্ দাওয়াত করে ানেক খাওয়ালো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন