আমেরিকানদের দাড়ী এবং সন্তান প্রীতি !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:৪৩:০১ সকাল
স্পষ্ট মনে আছে দেশে যখন বাংলাভাই বা জেএমবি শব্দটা বিভিষিকার মত ছড়িয়ে পড়েছিল মিডিয়ার কল্যানে, তখন দাড়ি আছে এমন বহু যুবককে ক্লিন শেভ করতে দেখেছি। প্রবিনরাও দাড়ির সাইজ ছোট করেছে। পরবর্তী সময়ে এই বিষয়গুলো ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। দাড়ি,টুপির সাথে সাথে ক্লিন শেভড লোকেরাও সরকারী-বেসরকারী রোষানলে,কোপানলে,অটোমেটিক নলে পতিত হয়েছে। এখন অবস্থা এমন যে, ইসলামের পারফিউম স্প্রে করলেও উপরোক্ত নলে পতিত হতে হচ্ছে। পূর্বে যারা ভয়ে দাড়ি শেভ করেছিল বা লম্বা পাঞ্জাবীর বদলে শার্ট গায়ে দিয়েছিল, তারা এখন ধুতি-পাঞ্জাবীর কথা ভাবছে কিনা জানা নেই। ৯০% মুসলিমের দেশে ইসলাম টেকনিক্যালী বিতাড়িত ছিল আর এখন মোটামুটি প্রকাশ্যেই বিতাড়িত।
কিন্তু ধাক্কা খেয়েছিলাম আমেরিকা এসে। যেদিকে তাকাই দাড়িধারী লোক,যুবক। তাও অনেকে আবার গোফ শেভ করেছে। তবে কি জঙ্গীরা সব এখানে আশ্রয় নিল ! ব্যপক ধাক্কা খেলাম।
ভাবতে থাকলাম এরা কি মুসলিম ? চেহারা সুরত তো একেবারে সেরকমই ! পরে বুঝলাম না,এরা মুসলিম নয় কিন্তু স্টাইল হিসেবে এরা দাড়ি পছন্দ করে। আর এদের স্ত্রী বা গার্লফ্রেন্ডরাও এটা পছন্দ করে। স্টাইল হিসেবে এদেশের তরুন-যুবকরা ব্যপক হারে দাড়ি রাখে,রাখছে।
আমি অনুধাবন করলাম, তাহলে দাড়ি রাখা খ্যাত মার্কা কাজ নয় এদের কাছে। যেখানে ৯০% মুসলিমের দেশে দাড়ি রাখা মানে অনগ্রসরতার প্রতিক,পশ্চাৎপদতার প্রতিক এবং যে কোনো সময়ে গ্রেফতার হওয়ার সংকেত, সেখানে আমাদের দেশের স্মার্ট( !!??)দের চোখে অনুকরনীয় দেশটি আমেরিকার জনগণ কিনা এতটা অনগ্রসর খ্যাত (!!)
ধাক্কা খেলাম চিন্তার জগত থেকে। ভাবতে থাকলাম দেশের বেশীরভাগ নারীই পুরুষকে দাড়ি শুন্য দেখতে চায়,পুরুষরাও তাই, তবে কি এটা সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন ? নাকি কোনো পরোক্ষ চাপে নতি স্বীকার ? কে শেখালো যে দাড়ি রাখা সেকেলে বিষয় এবং স্মার্টনেসের বিপরীত ?? তাদের স্টাররাই তো লম্বা লম্বা দাড়ি রেখে আইকনিক স্মার্ট হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে ! তাহলে এদেরকে কে শেখালো এ জিনিস ???
আরও একটি ধাক্কা খেয়েছি আমেরিকানদের অধিক সন্তানপ্রীতির বিষয়টি দেখে। আরও অবাক হয়েছি বিশাল সংখ্যক নারী-পুরুষ যৌবনে পদার্পন করেই বিয়ে করার কারনে। হাটে মাঠে রাস্তাঘাটে কচিকাচার মেলা। কখনও কখনও দেখী এক মা তার ৫/৬টা বাচ্চাকে সাথে নিয়ে শপিংয়ে এসেছে। হাতে একটা,কোলে একটা,শপিংকার্টে একটা,পেটে একটা,কয়েকটা এদিক সেদিক দৌড়ঝাপ করছে। যার একটা আছে,সে কখনও কখনও কয়েকটা বাচ্চা দত্তকও নিচ্ছে । ১৫/১৬ বছর বয়সীরা মা হয়েছে,এমন ঘটনা অহরহ দেখা যায়। হালাল উপায়ে হোক না হো অধিক বাচ্চার মা হওয়াটাই এদের নেশা,সম্মান,স্মার্টনেস,স্টাইল ইত্যাদী ।
আমাদের অনুসরনীয় বা কারো কারো ক্ষেত্রে কিবলা দেশটির অবস্থা যেখানে এরকম, সেখানে আমাদের অবস্থা এরকম কেন ?? -"ছেলে হোক,মেয়ে হোক দুটিই যথেষ্ট,একটি হলে ভাল হয়" , আরেক স্থানে দেখলাম এক বিশাল বিলবোর্ডে হাস্যোজ্জল এক মহিলাকে দেখা যাচ্চে যার কাছে কোনো বাচ্চাই নেই। মানে তার একটিও ঝামেলা(!!) নেই। উৎসাহিত করা হচ্ছে পার্মানেন্ট বন্ধ্যাত্বে।
কাহিনী কি ?? তবে কি আমাদের শাসক কারো যোগসাজসে আমাদেরকে প্রতারিত করছে এবং ভুল বিষয়টিকে সত্য হিসেবে প্রচার করে প্রতিষ্ঠিত করছে !! এর বাইরে আর কোনো চিন্তা খুজে পাওয়া গেল না।
একটি জাতিকে ধ্বং করতে সব সময় বোম মারা লাগে না, বরং কাওকে বোম মেরে ধ্বংস করার পদ্ধতি বেশীরভাগ সময়ই কার্যকর নয়। কিন্তু উক্ত জাতির মস্তিষ্ককে নিজেদের মত করে চালিত করে শতভাগ গ্যারান্টিসহকারে ধ্বংস করার সম্ভব। চিন্তার পরিবর্তন করে ,ভিন্ন বিষয়য়াবলীকে আইডল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে একটি জাতিকে পুতুল নাচের মত করে নাচানো যায়। বধীর ও অজ্ঞ জনতা অবশ্য পুতুল হয়ে বসে থাকতেই পছন্দ করে।
তবে যারা চিন্তাশীল,যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চায়, যারা তার জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারে,তারা অবশ্যই পুতুল হতে চাইবে না। তারা তাদের শুরুর দিকে তাকাবে, ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করবে,তবে সে তার জন্যে মনোনিত বিশুদ্ধ বিষয়াবলী খুজে পাবে। সে এটার ভিত্তিতেই সব কিছু পরিচালনা করার চেষ্টা করবে। সেটি হল তার স্রষ্টা কর্তৃক প্রদত্ত ব্যবস্থাপনা এবং এটিই নির্ভূল,যেহেতু তা তার স্রষ্টা প্রদত্ত। এটি বুঝতে পারাই স্মার্টনেস। এটি প্রতিষ্ঠিত করতে আত্মনিয়োগ করার নামই আল্ট্রা মডার্ণ। সুতরাং অরিজিন্যাল ক্ষেতুকে দেখে স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা না করে, মস্তিষ্ককে ব্যবহার করে স্রষ্টাকে চিনে তার বিধান নিয়ে স্মার্টেস্ট হওয়ার মধ্যেই সকল কল্যান নিহিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"তবে যারা চিন্তাশীল,যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চায়, যারা তার জীবনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট বুঝতে পারে,তারা অবশ্যই পুতুল হতে চাইবে না। তারা তাদের শুরুর দিকে তাকাবে, ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করবে,তবে সে তার জন্যে মনোনিত বিশুদ্ধ বিষয়াবলী খুজে পাবে। " আমাদের সাড়ে ষোল কোটি জনগণের ভিতরে কত পার্সেন্ট এই চিন্তাশীলদের দলে পড়ে? আমরা যারা ব্লগ কিংবা অন্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে কিছু হলেও জড়িত রয়েছি, তারা এবং বিচ্ছিন্নভাবে রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এবং তথাকথিত সুশীল সমাজের কিয়দংশ এই ব্যাপারগুলি নিয়ে চিনাত করলেও, 'বাকী জনগণ' যাদের হৃদয়ে 'নাই নাই বোধ' এবং এ থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টায় নিরন্তর সংগ্রাম চলছে, তাদের পক্ষে কি এই চিন্তা আসাটা আদৌ সম্ভব? আর দেশের সকল চিন্তাভাবনার কাজটি 'মধ্যবিত্ত শ্রেনী' করে আসছে। তারা যদি এই বিশাল নিম্নবিত্তের কথা চিন্তা করে তাদের পক্ষে চিন্তা-ভাবনাগুলোকে কাযে লাগায়, তবে কিছু আশা করা যায়। কিন্তু সেটি কখনো সম্ভব নয়, এই শ্রেনীগুলোর ভিতরকার আন্ত-শ্রেনী দ্বন্দ্ব কখনোই একে অন্যের জন্য চিন্তার সুযোগটি রাখবে না।
খুব সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে লিখবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভুল্ভাল কিছু মন্তব্য করে বসেছি হয়তো। শুভেচ্ছা রইলো।
দাড়ি থাকায় আমার বিয়েতে নাকি অনেক সমস্যা হয়েছে বলে আমার আম্মার মতামত!
আসলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এতবেশি আমাদের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে যে আমরা এটি নিয়ে চিন্তাও করছিনা। আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন এর নামে মুল উদ্দেশ্য বিলাসিতা ও ভোগবাদ এর বৃদ্ধি।
চমৎকার বক্তব্য ও সাবলীল বিশ্লেষনে লিখাটি বাস্তবতাকেই ফুটিয়ে তুলেছে! শুকরিয়া ভাই সুন্দর লিখাটি উপহার দিবার জন্য!
মন্তব্য করতে লগইন করুন