জনৈক নেতা
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২২ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৪৫:৫১ দুপুর
নেতা অসম্ভব ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জন প্রতিনিধি। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে তিন আমন্ত্রিত অতিথি। চলুন আমরা সেখান থেকে ঘুরে আসি।
এবারে আপনাদের সামনে মূল্যবান বক্তব্য রাখবেন জাতির অন্যতম কান্ডারি, সরকারী ধন ভান্ডারের ভান্ডারি,বিশিস্ট নেতা ,সমাজ সেবক,প্রখ্যাত ভাবুক,মানুষের আশা জনাব বাতাশা।
নেতা: ( উঠে দাড়িয়ে ,হাত উচু করে) ভাইসব !
......জনৈক ছাত্র: ভাই সব মানে ? এখানে আপনার সব ভাই উপস্থিত নাকি ?
নেতা: হুমম ঠিক। ...কিছু সংখ্যক ভায়েরা আমার !...
ছাত্র: ,,,,,এখানে তো শুধু ছাত্ররা নয়,ছাত্রীরাও রয়েছে !!
নেতা: .....কিছু সংখ্যক ভায়েরা এবং বোনেরা !
ছাত্র: বয়সে আমরা আপনার হাটুর কাছাকাছি, ভাই-বোন কন ক্যামনে ?
নেতা: না, মানে মুসলমান সব ভাই ভাই, এ জন্যেই বলেছি।
: এখানে তো হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টানরাও আছে !
: আরে জ্বালা, সকলেই আমার ভাই। আমি সকল ধর্মের গান গাই। আমি সকলের ধর্মে বিশ্বাসী। আমি সাম্প্রদায়িক নই....আমি সকল রঙে রঙিন।
ছাত্র: হুম , তাইলে আপনার নাম রংধনু ।
: ও্ই হালার পুত,....পুত, .....পুত, কথা বন্ধ কর ! আমি এখন বক্তৃতা করব। ..........তো তোমরা যারা পাশ করে এখানে এসেছো,তারা তো অনেক কষ্ট করেই এসেছো। পড়াশুনা যা তা নয়। এটি মূল্যবান। তা তোমরা কি সকলেই ম্যাট্রিক পাশ করেছো ? অবশ্য আমার সরকার ম্যাট্রিক পাশের জন্যে সহজ ব্যবস্থা রেখেছে। ওপেন এয়ার বিদ্যালয়......
ছাত্র: ওপেন এয়ার বিদ্যালয় মানে কি বটবৃক্ষ তলার বিদ্যা নিকেতন ?
নেতা: তোর চামড়া কিন্তু ছুলে ফেলব হারামজাদা। আমি বটগাছের কথা বলেছি ? ওইটা হল....(পাশ থেকে পি.এস বলল-স্যার ওটা হল উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়,আর এরা সকলে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে। নেতা: ও, তাইলে এরা কি পরের বছর ম্যাট্রিক পরিক্ষা দেবে ? পি.এস: না স্যার, এরা আগেই সেটা পাশ করেছে।...ওহ বুঝলাম)
আচ্ছা এটা হল আমার স্লিপ অফ টক,মানে টক স্লিপ বা কথার ভুল। ওটা হবে উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। (পাশ থেকে পি.এস: স্যার স্লিপ অব ট্যাং হবে। নেতা: ট্যাং মানে কি ? : ট্যাং মানে জিহবা। ওই বদের বদ, জিহবার ভুল হয় ? আর আমার জিহবা দিয়ে সব ভুল কথা বলি ? ভুল হয় কথার। অতএব ওটা স্লিপ অব টক। পি.এস: ঠিক আছে স্যার আপনি টক শো চালিয়ে যান)
: তো যা বলছিলাম। পড়াশুনা কিন্তু ভালভাবে মন দিয়ে করতে হবে। মাস্টাররা একটু আধটু মারবে,সেটা তারা মারতেই পারে। এটা হল শাসন করা। তারা পিতার মতই। এখন অবশ্য তোমাদের তেমন মারেনা। আমাদের সময় মাইর কারে কয় দেখেছি্ । একবার আমি ক্লাশ ফাইভে পেছনের বেঞ্চে বসে বিড়ি টানছিলাম। মাস্টার মশাই দেখে জোড়া বেত দিয়ে এমন মাইর মারল যে মনে হচ্ছিল শরীরের এদিক ওদিক দিয়ে গরম ধোয়া বের হচ্ছে। তোমরা পড়া না পারলে কিন্তু মাস্টাররা শাসন করবে। এটা মনে রাখবে।
আচ্ছা ম্যাচটা গের কোথায় ? এ্কই কেউ একজন ম্যাচ বা লাইটার দাওতো !
ছাত্র: আমরা বিড়ি খাইনা, আর খেলে ক্যাম্পাসে খাই না !
: এহ !...বিড়ি খায়না ! ইয়াবা খেতেও তো আগুন লাগে, তোমরা কি কর তা বুঝি জানি না ! লাইটার দে, নইলে লাথ্যি মেরে মাজা ভাজ করে দেব হারামজাদা। (পি.এস: স্যার এই নেন লাইটার। স্যার বিড়ি খেতে খেতেই বক্তৃতা করবেন ? : তোমার কি সমস্যা ? তুমি বিড়ি খাওনা ? চুপ থাক ব্যাটা,ছিলি তো বেকার,চাকুরি দিইছি তবুও কৃতজ্ঞতা নেই)
: আসলে জনগনকে নিয়ে চিন্তিত থাকি তো, নানান টেনশন হয়, সেসব থেকে রেহাই পেতে দু,একটা বিড়ি না ফুকলে ব্রেইন কুল হয়না। তাছাড়া ছোটবেলার অভ্যাস। তো যা বলছিলাম....
তোমরা লেখাপড়া কর,এটা ভাল। তবে শুধু যে খাতা করমেই লেখা যায় এমন নয়। লেখাকে অক্ষয় করে রাখতে হবে। কারন.....যদি কাগজে লেখ নাম,কাগজ ছিড়ে যাবে,পাথরে লেখ নাম,পাথর ক্ষয়ে যাবে,হৃদয়ে লেখ নাম,সে নাম রয়ে যাবে। ....অর্থাৎ নাম বা লেখালিখি হৃদয়েও লিখতে হবে।...
ছাত্র: জি জনাব, এখানে আপাতত লেখালিখি হৃদযেই হচ্ছে !!
: ভাল,ভাল, এটাই তো হতে হবে...এভাবেই আমরা সুখী হব, তবে সকলে সুখি হতে পারবে না...কারন...সবাই তো সুখী হতে চায়...তবু কেউ সুখী হয়,কেউ হয়না....
ছাত্র: জনাব আপনার সাইলেন্সার পাইপ দিয়ে ধোয়া বের হওয়া মানায়, গান নয়....
: তোর কিন্তু খবর আছে বলছি,বহুত বেফাস কথা বলছিস...
:আমার কি দোষ, সাইলেন্সার পাইপে গান চলে ? আপনিই কন ! তাও আবার পুড়িয়ে একেবারে কয়লা করে ফেলেছেন....
নেতা: মা কালির দিব্যি দিয়ে বলছি তোকে জখম না করে এলাকা ছাড়ব না। প্রস্তুত হ।
.....প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী সমাজ ! আমি ব্যর্থ কন্ঠে,উদ্বাস্তু আহবান জানাচ্ছি...(পি.এস: স্যার দ্ব্যর্থ কন্ঠে...উদাত্ত আহবান...)
আজকের এই সংগ্রাম চলতেই থাকবে, আমরা ভয়ে ডরিনা বীর, মন থেকে সকর হতাশা,আশা আকাঙ্খা মুছে, নিরবে নিভৃতে দেশের দিশারি জ্বালিয়ে আমরা পৃথিবীর দিকে দিকে দিকবিদিক নিরামার আলো ছড়িয়ে যাব। আমাদের কাছে ..."বেদনা মধুর হয়ে যায়...তুমি যদি দাও".... সকল বেদনাকে মধুর বানিয়ে আমরা সামনে এগিয়ে যাব। কেউ আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না। আমরা বীরের জাতি। ৭১এ আমরা হানাদারকে পরাজিত করেছিলাম্ । বাংলার জমিনে রাজাকারের ঠাই নাই। যুদ্ধাপরাধীর বিচার হবেই হবে ইনশাাাল্লাহ্ । জাতি কলঙ্কলিপ্ত হবেই....(পি.এস: স্যার লেজে গোবরে হয়ে গেছে...কলঙ্কমুক্ত হবে বলেন...) ...হ্যা ঠিক ঠিকই....দেশ থেকে খেদিয়ে,লাথিয়ে জর্জরিত করে দেব সকল সাংবাদিককে...দেশকে কলঙ্কমুক্ত করে দেব। .....
জনগন অঅমাকে এমনিতেই ভোট দেয়নি, আমার নাম মুখপোড়া বাতাশা মিয়া...পুড়িয়ে খাক করে দেব। রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়। একটা গুলি চললে ১০ গুলি চলবে।.....
ছাত্র: জনাব, আপনি কি আমাদেরকে গুলি করার কথা বলছেন ?
: সেটা আবার কখন বললাম ? শিক্ষা নিয়ে কথা বলছি, এখানে গুলির কথা আসল কেন ? তোকে কিন্তু মেরে পেলব বললাম !
: আপনি তো এইমাত্র বললেন ১০ গুলি চলবে.....
; অসম্ভব, এটা আমি বলিনি। ক্যাম্পাসে গুলি কেন চলবে ? গুলি চলবে রাস্তায়, আমি সেটা বলেছি।
: তার মানে আপনি রাস্তায় গুলি চালাতে বলেছেন ?
: তা কখন বললাম ? এই তোমরা তো দেখী সাংবাদিকদের মত মিথ্যুক...সবকটা এক রকম শয়তান। দাড়া এমন আইন বানাচ্ছি ডলা কারে কয় বুঝবি.....সব শালা হারামীর বাচ্চা্। আমাদের দেশে থাকে আবার আমাদের বিরুদ্ধে কথা কয়। এসব চইলতো ন ! ...
ছাত্র: চইলতো ন ক্যারে সাইলেন্সার পাইপ ? ওই তোরা বইয়া কি দ্যাহোচ ?...ওরে ধর, পিডাই মাইরালা.......
বি:দ্র: পুরোটাই কাল্পনিক,এর সাথে বাস্তবের কোনো চরিত্রের মিল থাকলেও থাকতে পারে,নাও থাকতে পারে,তবে কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকলে ক্ষমা প্রার্থী।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৪ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারুন দারুন দারুন স্ক্রিপ্ট। পেটে খিল ধইরা গেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন