দাস-দাসীর সম্মান

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৩ আগস্ট, ২০১৪, ১১:১৮:৫৭ রাত



বিশ্বে সামাজিক নিয়মনীতি ও শাসনব্যবস্থাসমূহের মধ্য থেকে একটি শাসননীতিও পাওয়া যায়নি, যা ইসলাম যেমন করে আচরণ করেছে, তার মত করে দাস-দাসীর সাথে মানবতাসুলভ সম্মানজনক আচার-আচরণ করেছে।

যখন ইসলাম এসেছে, তখন তার আগমন ঘটেছে মানুষের জাতিভেদ ও বর্ণবৈষম্য এবং তাদের শ্রেণী, অবস্থা . ও আসল বা শিকড়ের ভিন্নতা বা বৈপরীত্য দূর করার জন্য; আর তাদের জন্য একই মূল, উৎপত্তিস্থল ও প্রত্যাবর্তনস্থলের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।

তার আগমন হয়েছে এই কথা বলার জন্য :

“হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশি তাকওয়াসম্পন্ন।”-(সূরা আল-হুজরাত: ১৩)

ইসলাম এসেছে রিসালাতের অধিকারী মুহাম্মদ(সাঃ)এর ভাষায় এই কথা পরিষ্কার করার জন্য যে, গোলামের উপর মনিবের, কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের এবং অনারবের উপর আরবের তাকওয়ার মানদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। ইমাম মুসলিম ও তাবারী র. বিদায় হাজ্জে মিনাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে যাঁরা শুনেছেন, তাঁদের থেকে বর্ণনা করেন, তিনি মানুষের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়ে বলেন:

“তোমরা আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি; আর তাকওয়ার (আল্লাহকে ভয় করার) মানদণ্ড ব্যতীত অনারবের উপর আরবের, আরবের উপর অনারবের, শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের এবং কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।”

এসব বক্তব্য থেকে পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইসলামী শাসনব্যবস্থার ছায়াতলে দাস-দাসী হলো এমন এক সৃষ্ট জীব, যার জন্য সম্মান পাওয়ার ও বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে অপর যে কোনো মানুষের মত সমানভাবে; সুতরাং যখন তার জাতীয়তা ও মান-মর্যদা সমুন্নত হয়েছে, তখন তার মাঝে এবং অন্য কোনো মানুষের মাঝে তাকওয়া ও সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

ইসলাম দাস-দাসী ও অপর যে কোনো মানুষের মধ্যে যাবতীয় অধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে সমতা বিধান করেছে, তবে কিছু কিছু বিশেষ অবস্থা থেকে দাস-দাসীকে তার উপর অর্পিত দায়িত্বের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কারণে ইসলাম অব্যাহতি দান করেছে; যেমন জুম‘আর সালাত ও হাজ্জের বাধ্যবাধকতা অব্যাহতি দান।

আর ইসলাম গোলামদের জন্য যে সমতা দান করেছে, তার নীতি নির্ধারণের উপর ভিত্তি করে (বলা যায়):

- ইসলাম তাদের জন্য সাধারণ শাস্তি ও শরী‘য়ত নির্ধারিত শাস্তিসমূহের ক্ষেত্রে সমতার নীতি নির্ধারণ করেছে; ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও তিরমিযী র. বর্ণনা করেছেন, সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“যে ব্যক্তি তার গোলামকে হত্যা করবে, আমরা তাকে হত্যা করব; আর যে ব্যক্তি তার গোলামের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন করবে, আমরা তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন করব; আর যে ব্যক্তি তার গোলামকে খোজা করবে, আমরা তাকে খোজা করব।” [বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ ও তিরমিযী ]

এমন কি জেনে রাখা দরকার যে, ইসলাম গোলামদের ব্যাপারে শরী‘য়ত নির্ধারিত শাস্তিকে হালকা করে দিয়েছে; ফলে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও মানবিক দিক বিবেচনা করে গোলামের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে স্বাধীন ব্যক্তির শাস্তির অর্ধেক।

- ইসলাম গোলামদের জন্য ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অর্থবহ ও অতি উৎকৃষ্ট ধরনের নীতি নির্ধারণ করেছে; সুতরাং তারা মনিবদের সাথে পরস্পর ভাই ভাই, একে অপরকে মহব্বতকারী ও পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। ইমাম বুখারী র. বিশুদ্ধ ও ধারাবাহিক সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:

“তোমাদের দাসরা তোমাদেরই ভাই; আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায় তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়। আর তাদের উপর এমন কোনো কাজ চাপিয়ে দিও না, যা করার সামর্থ্য তাদের নেই। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরাও তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।” [ বুখারী ]

- ইসলাম দাস-দাসীর জন্য পরকালীন সাওয়াবের নীতি নির্ধারণ করেছে; সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা স্বাধীন ব্যক্তিদের জন্য যে জান্নাত ও স্থায়ী নিয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন, তারাও স্বাধীন ব্যক্তিদের মত তার অধিকারী হতে পারবে, যদি তারা ঈমানের উপর অটল থাকতে পারে এবং সৎ কাজ করে; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

“আর যে পুরুষ কিংবা নারী মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে তবে তারা প্রবেশ করবে জান্নাতে, সেখানে তাদেরকে দেওয়া হবে অগণিত রিযিক।” (সূরা গাফের: ৪০)

আর আয়াতের মধ্যকার শব্দগুলো ব্যাপক অর্থে সকল পুরুষ ও নারীর জন্য, চাই তারা গোলাম হউক অথবা স্বাধীন ব্যক্তি হউক, দরিদ্র হউক অথবা সম্পদশালী হউক।

- ইসলাম দাস-দাসীর জন্য মানবিক মর্যাদা দানের নীতি নির্ধারণ করেছে; সুতরাং মানুষের মূল ইউনিট (একক) হিসেবে তারা স্বাধীন ব্যক্তিদের মত; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

“আর তোমাদের মধ্যে কারো মুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; ...।” (সূরা আন-নিসা: ২৫)

আর আয়াতটি যে ব্যক্তি স্বাধীনা ঈমানদার নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সেই ব্যক্তির জন্য মুমিন দাসীকে বিয়ে করার বৈধতা দানের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে; আর আয়াতটি স্বীকৃতি দিয়েছে যে, স্বাধীন নারী ও দাসীগণের সাথে আযাদ পুরুষ ও গোলামদের মধ্য থেকে যাদের বিয়ে হবে, তারা একে অপরের অংশ এবং তাদের মধ্যে বংশের মূল শিকড়, উৎপত্তিস্থল ও প্রত্যাবর্তনস্থল এক হওয়ার ব্যাপারে কোনো পার্থক্য নেই।

আর এসব নীতিমালা, যাকে ইসলাম দাস-দাসীদের জন্য তাদের মধ্যে ও মনিবদের মধ্যে ইসলাম কর্তৃক পরিপূর্ণ মানবিক সমতার চিন্তাধারা ও দর্শন স্থির করার উপর স্পষ্ট দলিল হিসেবে নির্ধারণ করেছে; আর এগুলো প্রকৃতপক্ষে পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী নীতিমালা, যেগুলোর ধারে কাছেও মানব রচিত কোনো নিয়মকানুন ও বিশ্ব শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে কখনও পৌঁছতে পারেনি, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এই কথা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত যে, ইসলাম হচ্ছে বাস্তববাদী জীবনব্যবস্থা ... ঐ সময় পর্যন্ত, যখন আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবী ও তার উপর যারা থাকবে তাদের উত্তরাধিকারী হবেন।



ইসলাম দাস-দাসীর সাথে ভাল আচরণ করার ব্যাপারে শিক্ষামূলক সিলেবাস ও ইসলামী উপদেশমালা প্রণয়ন করেছে, যাকে নিয়ে মুসলিম প্রজন্মসমূহ ঐতিহাসিক সময়কাল ধরে গর্ব-অহঙ্কার করে:


-*** ঐসব উপদেশমালা থেকে অন্যতম একটি হল, মনিব তাকে ঐ খাবার থেকে খাওয়াবে, যা থেকে সে নিজে খায় এবং সে তাকে তা-ই পরাবে, যা সে পরিধান করে। কিছুক্ষণ পূর্বে আমরা হাদিস উল্লেখ করেছি, (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন):

“সুতরাং যার ভাই তার অধীনে থাকবে, সে যেন তাকে নিজে যা খায়, তাকে তা-ই খাওয়ায় এবং নিজে যা পরে, তাকে তা-ই পরায়।” [ বুখারী ]

- *** ঐসব উপদেশমালার অন্যতম আরেকটি হল, মনিব তার উপর এমন কোনো কাজ চাপিয়ে দিবে না, যা করার সামর্থ্য তার নেই। পূর্বে আমরা এই হাদিসটিও উল্লেখ করেছি (নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন):

“আর তাদের উপর এমন কোনো কাজ চাপিয়ে দিও না, যা করার সামর্থ্য তাদের নেই। যদি এমন কষ্টকর কাজ করতে দাও, তাহলে তোমরা তাদের সে কাজে সাহায্য করবে।” [ বুখারী ]

- *** আর ঐসব উপদেশমালার অন্যতম আরেকটি হল, দাস-দাসীকে এমনভাবে সম্বোধন করা, যাতে সে অনুভব করে যে, সে তার পরিবার-পরিজন ও আপনজনদের মধ্যেই আছে: বিশুদ্ধ হাদিসের ভাষ্য, যা বলে:

“তোমদের কেউ যেন না বলে: এটা আমার দাস এবং এটা আমার দাসী; বরং সে যেন বলে: আমার যুবক ও আমার যুবতী।”

- *** আর ঐসব নির্দেশাবলীর মধ্য থেকে অন্যতম আরেকটি হল, তাদের মধ্যে থেকে কেউ গোলাম ও দাসীদের কাউকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলে, তার বিয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

“আর তোমাদের মধ্যে কারো মুক্ত ঈমানদার নারী বিয়ের সামর্থ্য না থাকলে তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত ঈমানদার দাসী বিয়ে করবে; আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তোমরা একে অপরের সমান; কাজেই তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দেবে ন্যায়সংগতভাবে। ...।” (সূরা আন-নিসা: ২৫)

-*** আর এই নিয়মনীতি ও নির্দেশাবলীর মধ্যে আরেকটি হল, তার সাথে এমন আচরণ করা, যেমনিভাবে কোনো মুসলিম তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেন করে। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

“আর পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দুর-প্রতিবেশী, সংগী-সাথী, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহংকারীকে।” (সূরা আন-নিসা: ৩৬)

-*** আর এই নিয়মনীতি ও নির্দেশাবলীর মধ্যে অন্যতম আরেকটি হল, দাসত্ব মোচনে কার্যকরী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা; অচিরেই সামনের আলোচনায় এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ আসছে ইনশাআল্লাহ।

* * *

- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু সংখ্যক গোলাম এবং কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় কিছু স্বাধীন ব্যক্তির মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন:

তিনি বিলাল ইবন রাবাহ রা. ও খালিদ ইবন রুওয়াইহা আল-খাস‘আমী রা. এর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন।

আরও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করে দিয়েছেন যায়েদ ইবন হারেসা রা. ও তাঁর চাচা হামযা ইবন আবদিল মুত্তালিব রা. এর মাঝে।

তিনি যায়েদ রা. ও আবূ বকর সিদ্দিক রা. এর মধ্যেও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিয়েছিলেন ...।

এসব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রকৃত অর্থে রক্তের বন্ধন ও বংশের সম্পর্কের মত ছিল এবং তা মিরাসের (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ) মধ্যে শামিল করার পর্যায়ে উপনিত হয়েছিল।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতটুকুতেই তুষ্ট হননি ...

- বরং তিনি তাঁর ফুফুর কন্যা (ফুফাতো বোন) যয়নব বিনতে জাহাস রা. কে তাঁর গোলাম যায়েদ ইবন হারেসা রা. এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন !!

আর বিয়ের প্রসঙ্গটি খুবই সংবেদনশীল, বিশেষ করে নারীর পক্ষ থেকে; কেননা, সে তার চেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি হয়, কিন্তু তার স্বামী তার চেয়ে বংশগত ও সম্পদের দিক থেকে নীচু মানের হওয়াটাকে সে মেনে নেয় না ...; আর সে অনুভব করে যে, এটা তার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে এবং তার গৌরবকে নীচু বা খাট করে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য ছিল এসব কিছুর চেয়ে আরও অধিক উচ্চাঙ্গের তাৎপর্যপূর্ণ; আর তা হলো দাসী-দাসীকে ঐ গর্ত থেকে উঠিয়ে আরবের কুরাইশ বংশের নেতৃবৃন্দের চেয়েও উচ্চমানে নিয়ে আসা, যেই গর্তে অত্যাচারী মানবগোষ্ঠী তাকে ঠেলে দিয়েছে; বরং তার লক্ষ্য ছিল জাহেলী সমাজ থেকে জাহেলী জাতীয়তাবাদ বা স্বজনপ্রীতির মূলোৎপাটন করা এবং আরব জাতি থেকে বংশ নিয়ে অহংকার করার মত পচন বা ক্ষত দূর করা।

আর নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতটুকুতেই তুষ্ট হননি ...

- বরং তিনি ‘মূতার যুদ্ধে’ তাঁর গোলাম যায়েদকে রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেনাবাহিনীর সামনে প্রেরণ করেছিলেন, যেই বাহিনীতে ছিলেন আনসার ও কুরাইশ নেতৃবৃন্দ মুহাজিরগণ; আর তিনি তার (যায়েদের) পুত্র ‘উসামা ইবন যায়েদ’ কে সেনাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আর তার নেতৃত্বের অধীনে ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই উজির (মন্ত্রী) ও তাঁর পরবর্তী কালের দুই খলিফা আবূ বকর ও ওমর রা.। সুতরাং তিনি এর দ্বারা গোলামকে শুধু মানবিক সমতাই দান করেননি, বরং তাকে স্বাধীন ব্যক্তিদের উপর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকার দান করেছেন; আর এই ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীর বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে, যে প্রসঙ্গে ইমাম বুখারী র. ধারাবাহিক বিশুদ্ধ সনদে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন:

“যদি তোমাদের উপর এরূপ কোনো হাবশী দাসকেও শাসক নিযুক্ত করা হয়, যার মাথাটি কিসমিসের মত, তবুও তোমরা তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর (যতক্ষণ সে তোমাদের মাঝে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলার কিতাবের বিধান প্রতিষ্ঠিত রাখে)।” [বুখারী]

সুতরাং এর দ্বারা তিনি গোলামদেরকে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) সকল উচ্চপদের অধিকার দান করেছেন, আর তা হলো মুসলিমগণের খিলাফত, যতক্ষণ সে তার জন্য যোগ্য ও লাগসই হবে। ... আর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. খলিফা নিয়োগ করার সময় বলেন:

“আবূ হুযায়ফা’র গোলাম সালেম যদি জীবিত থাকত, তাহলে আমি তাকে শাসক নিয়োগ করতাম।” সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নীতি প্রণয়ন করেছেন, ওমর রা. ঠিক নেই নীতির উপরই পরিভ্রমণ করেন !! ...

আর কোনো সন্দেহ নেই যে, ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরবর্তীতে তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীনের পক্ষ থেকে এই হস্তক্ষেপের কল্যাণে তা দাস-দাসীদের মান-মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে, বংশগত গৌরবের দাবিকে মূলোৎপাটন করেছে এবং তা পদসমূহকে তাদের বংশগত অথবা জাতিগত অথবা বর্ণগত দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে যোগ্যতার বিচারে শক্তিশালী ব্যক্তিদের সাথে সম্পৃক্ত করেছে ...। আর এই বিষয়টিকে আরও বেশি মজবুত ও সুদৃঢ় করে যখন মুনাফিকদের কেউ কেউ ‘উসামা ইবন যায়েদ’ –এর নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

“তারা যদি উসামার নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে থাকে, তাহলে তারা ইতিপূর্বে তাঁর পিতার নেতৃত্বকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল; আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই উসামা নেতৃত্বের উপযুক্ত, যেমনিভাবে তাঁর পিতাও তার উপযুক্ত।”

* * *

আর এসব নীতিমালা, নির্দেশাবলী ও নমুনাসমূহ, যা দাস-দাসীর সাথে আচার ব্যবহার, তাকে সম্মান দান ও তার প্রতি ইহসানের ... ব্যাপারে ইসলাম প্রবর্তন করেছে, তার উদ্দেশ্য ছিল- যেমনটি খুব শীঘ্রই দাস-দাসী মুক্ত করার পয়েন্টে আসবে— দাস-দাসীর ব্যাপারে ঘোষণা করা যে, নিশ্চয়ই সে অস্তিত্বসম্পন্ন, সম্মান ও মানবতার অধিকারী মানুষ ... এমনকি যখন সে তার বিদ্যমান অস্তিত্ব থেকে অনুভব করবে যে, নিশ্চয়ই তার সম্মান পাওয়ার ও বেঁচে থাকার অধিকার আছে, তখন সে তার স্বাধীনতা দাবি করবে, বরং সে দাসত্ব ও গোলামী থেকে স্বাধীনতা অর্জন করা পর্যন্ত স্বাধীনতা লাভের পথে পথ চলবে, এমনকি চেষ্টার শেষ ধাপে গিয়ে স্বাধীন ব্যক্তিদের একজন হয়ে যাবে !!

ইসলামের আগে ও পরে অপরাপর জাতিসমূহের মধ্যে দাস-দাসীর সাথে স্বৈরাচার যালেমগণ কর্তৃক আচার-ব্যবহারের মধ্যে এই বিষয়গুলো কোথায়, যেখানে তারা দাস-দাসীকে মর্যাদাবান ও সৌভাগ্যবান জাতি ভিন্ন অন্য কোনো জাতি বলে বিবেচনা করত ... বরং তার প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে গোলামী ও দাসত্ব করার জন্য; আর শরীফ অথবা মনিব অথবা ধনী ব্যক্তির জন্য বশীভূত হয়ে থাকার জন্য? !!

আর সেখান থেকেই তাদের অন্তরসমূহ কখনও তাকে হত্যা করাকে, শাস্তি দেওয়াকে, তাকে আগুন দ্বারা সেক দেওয়াকে এবং তাকে অতি কষ্টকর ও নোংরা কাজে বাধ্য করাকে অপরাধ বা পাপ মনে করে না !!

চলমান---------------

বিষয়: বিবিধ

১৮১১ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

250594
০৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:২৯
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : সুন্দর ও উপকারী আলোচনা, চালিয়ে যান।
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
194876
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Good Luck Good Luck
250598
০৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৩৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : বাহ! স্লেভ-তো আসলেই সুন্দর লিখে যাচ্ছে ...
এখানেও যায়েদ এবং যায়েদ-পুত্র উসামার ব্যাপারটা দেখার মতো হয়েছে ...
বিষয়গুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ...
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
194877
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
250605
০৩ আগস্ট ২০১৪ রাত ১১:৫৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্নাঙ্গদের ইতিহাস পড়লে ভালভাবেই বুঝা যায় গনতন্ত্র,মানবাধিকার এ ধ্বজ্জাধারিরা আসলে কি ছিল? দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৃষ্নাঙ্গদের বিমান বাহিনিতে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হলে এই সংক্রান্ত পরিষদ বৈজ্ঞানিক! গবেষনার মাধ্যমে প্রমান করে যে বিমান এর মত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষ্নাঙ্গরা অক্ষম! কিন্তু যুদ্ধের ঠেলায় শেষ পর্যন্ত কিছু কৃষ্নাঙ্গ পাইলট নেয়া হয়। "তুসকাজি এয়ারম্যান" বলে পরিচিত এই কৃষ্নাঙ্গদের নিয়ে তৈরি ইউনিট দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধে সবচেয়ে সফল পাঁচটি বিমান ইউনিট এর একটি।
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৩৭
194878
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সত্য বলেছেন
250612
০৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:০৮
আফরা লিখেছেন : চলতে থাকুক সাথে আছি ।
০৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৩৭
194879
দ্য স্লেভ লিখেছেন : চলিতেছে Happy
250697
০৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
০৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫৮
195196
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদGood Luck Good Luck Good Luck Good Luck
250847
০৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৫৪
সত্যলিখন লিখেছেন :
০৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫৯
195197
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদHappy Happy
251079
০৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:১৪
শেখের পোলা লিখেছেন : সেই ইসলামের আজ বড়ই দুরবস্থা৷ কারণ মুসলীম আজ ইসলাম থেকে সরে গেছে৷ চলুন আবার প্রবেশ করি৷ ধন্যবাদ৷
০৫ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৯:৪০
195291
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ যেন আমাদের কবুল করেন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File