প্রবাসের প্রথম ঈদ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জুলাই, ২০১৪, ০৮:৩৪:২৬ সকাল
প্রবাসের ঈদ প্রবাসের মতই,এটা তো সবাই বলবে। কিন্তু এর ভেতর থেকে আনন্দ লুটে নেওয়াই সুখী মানুষের কাজ,আর যারা মুমিন হতে চায় তাদের জন্যে এটাই কর্তব্য। পরকে আপন করে ভাই এর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাই কর্তব্য হওয়া উচিত।
যাইহোক কাজটি আমার পক্ষে এখনও করে ওঠা সম্ভব হয়নি। কারন আমি কমিউনিটির থেকে দূরে। কিন্তু ঈদ চলে আসল আর কিছু করব না,তা তো হয়না। অনেকদিন ধরে যাদের সাথে যোগাযোগ ছিলনা,তাদেরকে ফোন দিলাম্ । আমি আমার সকল ধরনের বন্ধুদের মনে রাখি,এমনকি তারা ভুলে গেলেও।
সেদিন মাসুদকে ফোন করলাম। সে আমার স্কুলের বন্ধু এবং এলাকারও বন্ধু। একসময় তার আর বেশীদূর আগানো সম্ভব হয়নি নানামুখী কারনে। সে ছোট দোকান দিয়েছিল,এরপর চা,পুরি,সিংগাড়ার দোকান দিল কিন্তু কোথাও সে থিতু হতে পারত না। এসএসসি পরিক্ষার আগেই বিয়ে করে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। সংসার চালাতে নানান ধরনের কাজকর্ম করেছে। যা কিছুই করুক না কেন, তার সাথে আমি কখনই দূরত্ব তৈরী করিনি। কিন্তু তার মোবাইল নাম্বার পরিবর্তনের কারনে ৭/৮মাস যোগাযোগ ছিলনা।
সেদিন রাতে একজনের কাছ থেকে ওর নাম্বার নিয়ে ফোন করলাম। ওর স্ত্রী ফোন ধরে বলল,সে ঘুমাচ্ছে। ভাবলাম সারাদিন নিজের মাংসের দোকানে কাজ করে ক্লান্ত। এখন কথা বলা ঠিক হবেনা। কিন্তু তার স্ত্রী যখন জানতে পারল আমি ফোন করেছি,তখন আমাকে লাইনে রেখে তাড়াহুড়ো করে বলল--আরে ওঠো...স্লেভ ভাই ফোন করেছে।......অপরাধবোধে ভুগলাম,তার কাচা ঘুম ভাঙানোর কারনে। অথচ এক বছর আগের ঘটনা, ৩/৪ বছর পর আমার এক পাইলট বন্ধুর মোবাইল নাম্বার যখন পেলাম,দিনের বেলায় ফোন করলাম। তার মা ফোন ধরে বলল-সে দুবাই থেকে সকালে ল্যান্ড করেছে,এখন ঘুমাচ্ছে। তার মায়ের কথায় বুঝলাম যত গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন,তাকে ঘুম থেকে ডাকার প্রশ্নই ওঠেনা।...আমি আর আগে বাড়িনি...পরে অবশ্য দেখা হয়েছে।
অথচ আমার এই গরিব বন্ধুর স্ত্রী স্বপ্ল শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও অতিরিক্ত মূল্যায় করল।(আমি পূর্বের পাইলট বন্ধুর মায়ের ব্যাপারে অভিযোগ করছি না,দুটো ভিন্ন চিত্র)। আমার বন্ধু ঘুম বাদ দিয়ে আমার সাথে কথা বলল। এবং শেষে তার কাছে দোয়া চাইলাম্ ,মনে হল আমি তাকে সম্মান করেছি বা মূল্যায়ন করেছি,এটাই তার কাছে মূখ্য। অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমার জন্যে দুয়া করল। সে হয়ত আশা করেনি,সুদূর আমেরিকা থেকে তার মত সস্তা,গরিব বন্ধুকে আমি মনে করব। অথচ সে জানেনা, সেই আমার কাছে অনেক দামী বন্ধুর থেকে অনেক উপরে অবস্থান করে। এসব বন্ধুদের সাথে কথা বললে আত্মা প্রশান্ত হয়। কিছু বন্ধু আছে,তারা আলিশান,শাহানশাহ স্টাইলে চলে। ব্যপক অর্থের মালিক, কোথায় পরবর্তী ইনভেস্ট হচ্ছে এসব প্যাচালও থাকে। এদের থেকে আমি দূরে থাকি। এদের সাথে কথা বললে আত্মা পানি খাব,পানি খাব করে।
যাইহোক বেশ কিছু বন্ধুকে ফোন করলাম। মনে শান্তি লাগল। পোষাক কি পরব,তা ঈদের পূর্ব রাতেই সেট করলাম। হঠাৎ মনে হল-নামাজের পর সেখানে বহু লোক বহু রকমের খাবার টেবিলে রাখবে ,সকলে মিলে খাবে, আমি কি কিছু খাওয়াব না ? নাকি সারাজীবন খেয়েই যাব !!
ফ্রিজে একটা বড় সাইজ তরমুজ ছিল। গভীর রাতে সেটাই সুন্দর করে কেটে একটা বড় বক্সে রাখলাম। সকালে একজনের গাড়িতে ইদগাহে পৌছলাম। আজ একটি পার্কে নামাজ আদায় হবে। সকলে মাঠের যে অংশে গাছের ছায়া সেখানে গিয়ে বসল,অখচ সেটা ছিল হুযুরের মাইক্রোফোনের থেকে ৩০ ডিগ্রী এঙ্গেলে। খানিক পর হুযুর এসে সকলকে তার সামনা সামনি এসে বসতে ানুরোধ করাতে পেছন থেকে একচন প্রতিবাদী হয়ে উঠল,এবং বলল-হুযুর তার মাইকটা এদিকে সরিয়ে আনছে না কেন, তাহলে তো আমাদের ওপাশে সরা লাগেনা ! পেছনে তাকিয়ে গর্ব (!) অনুভব করলাম। বাঙ্গালী প্রতিবাদী তার প্রমান রাখতেই হবে,যেভাবেই হোক না কেন। অবশ্য তার কথায় কেউ পাত্তা দেয়নি। সকলে মাইকের সামনা সামনি সরে আসল,আমিও,এটাই ভদ্রতা,এটাই নিয়ম।
নামাজ শুরু হল। ১২ তাকবীরে শেষ হল এবং পরে খুৎবা হল।হুজুরের বক্তব্যের একটা অংশ ছিল এমন যে, আল্লাহ আমাদের ইবাদাত কবুল করছেন বা তাতে খুশী হচ্ছেন এর একটা সিমটম হল, বান্দা ইবাদত বা আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনো কাজ করার পর তার অন্তরে প্রশান্তি আসবে,সৎ কাজে নিজেকে আরও বেশী সম্পৃক্ত করতে ইচ্ছা হবে,তার অবস্থার উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হবে।......ভাল লাগল।
নামাজ শেষে দেখলাম পুরুষ এবং মহিলাদের আলাদা শেডে ব্যপক খাবারের আয়োজন। চিন্তা করলাম,এরমধ্যে আমার সস্তা তরমুজের কোনো বেইল আছে কিনা । তারপরও তরমুজের বক্সটি সেখানে নিয়ে রাখলাম্। অবাক হয়ে দেখলাম, কয়েক মিনিটের মধ্যে তরমুজ উধাও্। তখন মনে হল,হায় ! কেন যে আরও বেশী করে আনলাম না !
নানান রকমের খাবারের মধ্য থেকে পছন্দেরগুলো বেছে নেওয়ার পর দেখলাম শেডের দুপাশে পুরুষদের দুটি লাইন দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে খাবার নেওয়া জন্যে। মনে মনে বললাম...ওরে মন তুই হাভাতেই রয়ে গেলি !! এত বড় লাইন তুই না দেখেই সবার আগে চলে গেলি !!!
তখন আর কিছু করার নেই। খেতে থাকলাম। পাকিস্থানী বিরিয়ানী,আরবের নানান খাবার,মিস্টি মিঠাই...চালালাম।কিন্তু শেষে এক ভদ্রলোক,মানে ভদ্র ভাই, মানে মহা ভদ্র ব্রাদার...হাতে করে একটা বড় বক্স নিয়ে এসে বলল-এটা খুব দারুন, টেস্ট করুন।
আমি তাকিয়ে দেখলাম বাকলাভা !! ওরে !! একি !! এই ভাইকে তো কাধে নিয়ে দৌড়াব !! বললাম -এ তো আমার চরম পছন্দের জিনিস। এক পিছ নিলাম কিন্তু হাতে তিন পিছ কিভাবে জানি উঠে আসল। ফিনিম করে আড় চোখে দেখে নিলাম কেউ হামলে পড়ছে কিনা। নাহ অন্যরা আমার মত না। আমিও আস্কারা পেয়ে চালাতে লাগলাম।
এবার পাকিস্থানী এক ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম। তিন সন্তানের জনক,খুবই অমায়িক। মসজিদের বহু মুসল্লি আমার সাথে হাত,বুক মিলালো। আরবের কিছু ভাই পরিচিত হল, এরা ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়ন করছে। মসজিদ কমিটির অনুরোধে আজ এদের সকল ক্লাশ স্থগিত করেছে ইউনিভার্সিটি্ । পরে এগুলো তারা আলাদাভাবে নিবে মুসলিমদের জন্যে।
ঈমাম সাহেব আমাকে বুকের সাথে অনেকক্ষণ আটকে রেখে ভাল মন্দ খবরাখবর নিতে থাকলেন।আমিও তার খবর নিলাম। ঈমাম হলেন ইউসুফ ভাই, অত্যন্ত সুদর্শন যুবক। খক্তিশালী অবয়ব দেখে মনে হয় হলিউড হিরো,কিন্তু আকিদার দিক দিয়ে মনে হয় অপ্রতিদ্বন্দী। হঠাৎ আমার বাকলাভার কথা মনে হল। ঈমাম সাহেবকে ছেড়ে(মানে স্বাভাবিক ভাবেই ছেড়েছি,এমন না যে তাকে ফেলে দৌড় দিয়েছিলাম !) শেডের দিকে গেলাম। তখনও দুই পিছ ছিল, নিছক দয়ার শরীর,তাই অন্যের জন্যে এক পিছ রেখে দিলাম।
খানিক হাটাহাটি,অন্যদের সাথে কথা বলে চলে আসলাম। রাতে একটা বড় সাইজের চিজ-কেক কিনে নিজে নিজে সেলিব্রেট করার পরিকল্পনা আছে। আমেরিকার এই চিজ-কেকটা আমার দারুন লাগে।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৪ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাকলাভা এবং চিজ-কেক ,আমারও পছন্দের।
আগে খেতাম, এখনও মাঝে মধ্যে খাই। খুব বেশী ক্যালরি বিধায়। এখানে সবাই কম বেশী রান্না করতে পারে। আপনি আগ থেকেই পটু ছিলেন। আপনার মিষ্টি বানানোর গল্প শুনে,আমি চেষ্টা করেছিলাম। সেটা ভাল হয়নি। আপনি চাইলে
ফোন নাম্বার দিতে পারেন। আমিও দিতে পারি।
০ কেন , ঈদের দিনে কি এ দেশে সরকারী ছুটি থাকে না ! বাংলাদেশে তো খৃষ্টানদের বড়দিনে সরকারী ছুটি থাকে !
আমাদের এখানে তো সব ধর্মের বিশেষ দিন গুলোতে ছুটি থাকে ! তাহলে আমরা বাংলাদেশীরা কি সংখ্যা লঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিশেষ ধর্মীয় দিন গুলোতে ছুটি দিয়ে ঠিক করছি না ?
আর আপনি তিন পিচ বাকলাভা খেয়েছেন !!!
জীবনে একবার একটু টেষ্ট করার জন্য মুখে দিয়েছিলাম জীবনে আর কখনো এটার কাছেও যাব না ।
মিষ্টি আমি মুটেও খাই না ।
ঠিক, নীচের তলার লোক উপরের তলার লোকেদের কদর করে। কিন্তু আমি উপরের তলার লোক নই। আমি যখন কারো সাথে মিশি তখন তার মত করেই মিশি। কখনই এমন ভাব নেইনা যাতে সে ভাবতে পারে আমি ব্যতিক্রম।
মিস্টি না খাওয়াই ভাল। আমি এটা এড়িয়ে চলি। আপনি মাংস খান না,ফলে আপনার জন্যে ডিম,ডাল ভাল। মাছ অনেক বেশী ভাল,যে কোনো মাংসের চাইতে। যতটুকু ভাত খাবেন,তরকারী খাবেন তার দ্বিগুন। টক ফল খাবেন। তাহলে সুস্থ্য থাকবেন ১২ মাস ইনশাআল্লাহ
ব্যাপক হিউমারাস লেখা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন