এমন ঈদ কখনও আসেনি
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৯ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৩২:২৮ রাত
যখন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম,ঈদের আগে চাদ দেখার আনন্দে মাতোয়ারা হতাম। ঈদের আগের রাত ছিল চরম কাঙ্খিত। এরাতে অন্তত আমাদের পড়াশুনা করা লাগত না। এলাকার বাচ্চাদের সাথে হৈ-হুল্লোড় করতাম। বড়রাও ব্যপক আনন্দ করত।
ঈদের রাতে কখনও কখনও মেহেদী লাগাতাম নোখে। বড় বোনেরা বা অন্য বাড়ির অনেকে মেহেদী বাটত শিল-পাটায়। বাচ্চাদেরকে মেহেদীর বদলে গোবর দিওে বোকা বানিয়েছি,সে ছিল ভিন্ন আনন্দ।
ঈদের দিন শেষ রাতে উঠতাম। আমি অন্য বন্ধুদেরকে ডাকতাম। উঠতে না চাইলে জোর করে উঠাতাম,কানের কাছে এটা সেটা বাজাতাম তোলার জন্যে। কেউ কিছু মনে করত না।
সকলে একস্থানে জড় হয়ে হৈহুল্লোড় করতাম,গল্প করতাম এবং এদিন প্রচন্ড মজার গল্প করতাম। আনন্দ উঠে আসত ভেতর থেকে। এদিনটিকে নিয়ে থাকত মাসব্যপী নানান পরিকল্পনা।
সকলে একসাথে নদীতে যেতাম গোসল করতে। এদিনকার গোসল হত ভিন্ন আমেজে। শত শত লোক থাকত ঘাটে। প্রত্যেকে তাদের সবথেকে ভাল সাবান,শ্যাম্পু নিয়ে আসত। আমরা একাধিক বার এতে অন্যের সাবান ব্যবহার করতাম। এই গোসলেও ছিল ব্যপক আনন্দ।
*********
আমার আব্বা ছিল ভিষণ ভোজনরিসক মানুষ। ঈদ মানেই ছিল ব্যপক খাওয়া দাওয়ার আয়োজন এবং বিভিন্ন লোককে দাওয়াত করেখাওয়ানো। মা এবং কাজের মহিলারা ভোর রাত থেকেই বিভিন্ন পদের রান্না করত। নিজেদের পশু জবাই করে খেতে দেরী হবে বলে আব্বা পূর্বেই বাজার থেকে মাংস কিনে রাখত। যাতে সকালে আমরা খেতে পারি। বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী সকালে থরে থরে সাজানোর পর,আব্বা আমাদেরকে খেতে বলত এবং মন্তব্য করতে বলত। আব্বা নিজেও ভাল রান্না করত। আমরা ঈদের পাঞ্জাবী,জুতো পরে তবেই খেতাম।
এরপর আব্বা,মার পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে পয়সা নিতাম। আমি পায়ে হাত লাগিয়ে বুঝতাম আব্বার হাতে কত টাকার নোট। কথা বলতাম না। কিন্তু মুখের একটু ভাবেই আব্বা বলত-এতে চলবে ? আমি হ্যা,না কিচ্ছু বলতাম না। মা বলত-ওতে চলবে না। তখন আবারও বাড়িয়ে দিত। এবার মায়ের পায়ে হাত দিলে বলত, দাড়া জিনিস আগে নিয়ে আসি্ । মা তার কৌটা খুলে টাকা নিয়ে আসত। মা'র সাথে আমার দর কষাকষি চলত চুড়ান্ত পর্যায়ে। আমাকেই বেশী দিত। আর আব্বা যখন দেখত মায়ের থেকে তার প্রদত্ত টাকার পরিমান কম। তখন বলত-এই নে,আরও নে। আমরা সকলে ঈদের মাঠের উদ্দেশ্যে রওনা হতাম। রাস্তা দিয়ে মানুষকে দেখতাম নতুন পাঞ্জাবী,পাজামা পরে ঈদের মাঠে চলেছে। এ দৃশ্য চোখে ভাসছে।
ঈদের নামাজ শেষে একে অন্যের সাথে কোলাকুলি করতাম্ । শত শতবার কোলাকুলি হত্ । মানুষকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। আমাদের বাড়িতে খাবার খেয়ে মানুষ বরাবরই সন্তুষ্ট ছিল। আমি নানান রকম জিনিস পছন্দ করতাম খেতে।
বিকেলে বন্ধুদের বাড়িতে যেতাম,তারা আসত। একসাথে হাটাহাটি করতাম্ । নানানভাবে রসিকতা চলত। অনেকে ছিল ভিষণ মজার,তারা অন্যকে হাসাত। সে হাসি তামাশা ছিল চরম খাটি এবং আবেদন ছিল অন্তরের।
জৌলুসহীন ঈদ কখনও আমার এসেছিল কিনা সে প্রশ্নে বলতে পারি, তা কখনও ঘটেনি্ । আমার সান্নিধ্যে মানুষ কখনও দু:খী হতে পারেনা। আমি মানুষকে সদা খুশী রাখি। আর আমিও সুখী। প্রত্যেকটি ঈদ ছিল অতি আনন্দময়।
আজ ঈদের দিন,আমি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে বসে আছি। সেদিন বোন,ভাগ্নী পোষাক পাঠাতে চাইলে নিষেধ করলাম। পোষাক আমার রাখার জায়গা নেই। অন্তত পোষাকের অভাব আমার নেই। আমার যে জিনিসটি দরকার,তা আমার নেই। মায়ের সাথে কথা হয়েছে, বলেছি ভাল আছি। ফুর্তিতে আছি। রান্নাবান্না করেছি,ভাবছি কখন খাব।
মিথ্যা বলেছি। কখনও কখনও মায়েদের সাথে মিথ্যা বলতে হয়। অন্য দিন রান্না করলেও আজ করিনি। ভাল লাগছিল না। সকালে একটু পানি আর খেজুর খেয়ে ২টা পর্যন্ত কাটালাম। বাড়িতে সকলে আমার অপেক্ষায় থাকত। আজ আমার অপেক্ষায় কেউ নেই। আমারও কোনো তাড়া নেই। ঘরেই বসে অঅছি। অন্যদিন সাইকেল চালাই,আজ তাও ভাল লাগছে না। যারা গাড়িতে লিফট দিত, তারা কাজে ব্যস্ত। আমি আছি আমার মত। এমন ঈদ কখনও আমার আসেনি।
আল্লাহ যেন আমার রোজাগুলো কবুল করেন এবং আমাকে ক্ষমা করেন। তিনি যেন দুনিয়া ও আখিরাতে আমাকে সর্বদা শান্তিতে রাখেন। আমি জান্নাতুল ফিরদাউসে ঈদ করতে চাই। সেদিন আমার জন্যে জান্নাতকে অত্যন্ত মনোরমভাবে সাজানো হবে। আমি আল্লাহর নেয়ামতে ভেসে যাব,আল্লাহ আমার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। আমি আমার প্রিয় মানুষদেরকে একসাথে কাছে পাব। অত্যন্ত আনন্দঘন মুহুর্তে কেটে যাবে মুহুর্ত কিন্তু শেষ হবেনা। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি।
বিষয়: বিবিধ
১৪৯১ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঈদ মোবারক আমার পক্ষ থেকে ---
ঈদের আনন্দ একসময় ছিল অনেক মানবিক। এখন যেন হয়ে গিয়েছে যান্ত্রিক।
আপনি আপনার বাবার উপযুক্ত উত্তরাধিকারি হয়েছেন! অন্তত ভোজন রসিক হিসেবে।
ঈদের শুভেচ্ছা এত্তগুলো
আর খাবারের সময় আমার নামটা কিন্তু মনে কইরেন।
প্রবাস জীবন। আমার যখন খারাপ লাগে তখন
ইউটিউবে কনভারসন টু ইসলাম দেখি। যখন দেখি অনেক সিসটার ও ব্রাদারা ইসলাম গ্রহনের কারনে সবার আত্নীয় স্বজন সরে গেছে। আমি তো ওদের চেয়ে ভাল আছি। সকালে ২০/২১ মাইল দুরে গাড়ী চালিয়ে গিয়ে নামাজ পড়লাম। মসজিদে খাবারের ব্যবস্থা ছিল। পরে দু'একজনের সাথে
ওয়াল্ড পলিটিক্স নিয়ে আলোচনা হলো। তারপর বাসায় ফিরলাম।
পাশ করলে ফি দিতে হবে। না করলে কোন ফি দিতে হয় না।
ফিরদাউসে ঈদের ইচ্ছা আমারও হলো আপনার দেখা দেখি – জানিনা সে সৌভাগ্য আমার হবে কি-না
ঈদ মোবারক...
অন্য রকমের ঈদ শুভেচ্ছা নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি, আমার টাইমলাইনে। পড়ার অনুরোধ রইল।
দেশ ছেড়ে যেখানে গেছেন সেখানে গেছেন জীবনটাকে আরও ভালভাবে সাজাতে , বেটার লাইফের সন্ধানে । এতে দেশের কিছু স্মৃতি তো কাঁদাবেই ।
এমন অনেক ঈদ আসবে আপনার জীবনে , কিন্তু এরকম নিশ্চিন্ত একটা দেশে নিশ্চিন্ত একটা জীবন যাপনের সুযোগ তো সবসময়ই আসবে না । তাই নিজের ভালোর জন্য আপনাকে তো এই সামান্য কষ্ট সহ্য করে যেতে হবে ভাই সাহেব ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন