বানূ মুস্তালিক এবং হুনায়নের যুদ্ধে যা ঘটেছিল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৪৩:১২ সকাল
বানূ মুস্তালিক:
কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে এই বানূ মুস্তালিক গোত্রের গোত্রপতি ছিলেন হারেস ইবনে আবু যারার,কারো কারো মতে তিনি ছিলেন আরবের একজন প্রখ্যাত এবং প্রভাবশালী সর্দার।
এই ব্যক্তির কন্যা ছিল জুওয়াইরিয়া। যুদ্ধের পর বন্দী হিসেবে জুওয়াইরিয়া সাবিত ইবনে কায়েসের হাতে পড়েন। জুওয়াইরিয়া মুক্তিপনের বিনিময়ে মুক্তি চাইলে সাবিত রাজি হন। কিন্তু সেসময় জুওয়াইরয়ার কাছে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় তিনি রসূল(সাঃ)এর কাছে আসেন তাকে অর্থ সাহায্য করার জন্যে। তখন রসূল(সাঃ) তাকে বলেন-এভাবে মুক্ত হওয়ার চাইতে যদি আরও উত্তম উপায়ে তোমাকে মুক্ত করা হয় তবে কি তুমি গ্রহন করবে ? জুওয়াইরিয়া জানতে জান সেটা কি। তখন তাকে তিনি(সাঃ) বলেন-আমি তোমার মুক্তিপণ আদায় করব এবং বিয়ের প্রস্তাব করলাম,তোমার অভিমত কি ? জবাবে জুওয়াইরিয়া স্বানন্দ চিত্তে রাজি হয়। অতঃপর রসূল(সাঃ) তার মুক্তিপণ পরিশোধ করে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।-(আবু দাউদ)
ইবনে হাজার তার ইসাবাহ হাদীস গ্রন্থে এবং ইবনে সাদ তার তাবাকাত গ্রন্থে লিখেছেন যে, “জুওয়াইরয়ার পিতাই তার মুক্তিপণ পরিশোধ করেন এবং বলেন যে, আমার কন্যা দাসী হলে সেটি আমার মর্যাদা হানিকর হবে। রসূল(সাঃ)বলেন-বিষয়টি আপনার কন্যার উপরই ছেড়ে দিন,তার অভিমত নিন। হারেস তার কন্যাকে নিজেকে অপদস্ত না করার পরামর্শ দেন। কিন্তু তার কন্যা বলেন-আমি রসূলের খেদমতে থাকতে মনস্থ করেছি। অতঃপর রসূল(সাঃ)তাকে বিবাহ করেন।”
রসূল(সাঃ) জুওয়াইরিয়ার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার সাথে সাথে যেসকল সাহাবী দাস-দাসী হিসেবে যুদ্ধবন্দী নারী-পুরুষ প্রাপ্ত হয়েছিলেন তারা সঙ্গে সঙ্গে সেসকল নারী-পুরুষদেরকে মুক্ত করে দেন। তারা বলেন -যে বংশের সাথে আল্লাহর রসূলের আত্মীয়তা হয়েছে,সে বংশের লোকেরা আমাদের দাস-দাসী হতে পারে না।-(-(সীরাতুন্নবী-আল্লামা শিবলী নূমানি এবং অধিকাংশ সীরাতগ্রন্থ)
হুনায়নের যুদ্ধ
মক্কা বিজয়ের পর আরবের অনেক গোত্র থেকে লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহন করে। অনেক গোত্রের কিছু লোক এবং অনেক গোত্রের সকলে ইসলাম গ্রহন করে। এই বিষয়টি হাওয়াজিন ও ছাকিফ গোত্র মেনে নিতে পারেনি। কারন ইসলামের বিজয়ে তাদের প্রভাব ক্ষুন্ন হবার স্পষ্টতা তারা দেখতে পাচ্ছিল।
মক্কা বিজয়ের পূর্বেই হাওয়াজিন গোত্র মক্কার প্রতিটি স্থানে ভ্রমন করে এবং সকলকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে। পূর্ণ এক বছর তারা চেষ্টা চালিয়ে মক্কার সকল গোত্রকেই নিজেদের প্রভাবে আনে এবং মুসলিমদের সাথে একযোগে যুদ্ধে সম্মত করে চুক্তি করে। হাওয়াজিন ও সাকিফ গোত্র ছিল প্রচন্ড যুদ্ধবাজ এবং দক্ষ যোদ্ধা।
রসূল(সাঃ) মক্কা থেকে মদীনাতে প্রত্যাবর্তনের সময় হাওয়াজিনের কাছে ভুল সংবাদ পৌছে যে- তিনি(সাঃ) তাদেরকে আক্রমন করতে আসছেন। ফলে হাওয়াযিন ও সাকিফ গোত্রদ্বয় তাদের সকল শাখা প্রশাখাসহ(কা'আব ও কিলাব গোত্রদ্বয় বাদে) মুসলিমদের আক্রমনে প্রস্তুত হয়। হাওয়াজিন তাদের সকল নারী ও শিশুদেরকে সাথে নিয়ে আসে,যাতে লড়াইয়ে কোনো রকম পিছুটান না থাকে।
ঈমাম বুখারীর মতে সেসময় রসূল(সাঃ)এর সাথে দশ হাজারের কিছু বেশী(অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে ১২ হাজার) সৈন্য ছিল,যাদের অধিকাংশই ছিল নওমুসলিম। এটি ছিল হুনায়নের যুদ্ধ। প্রথমে হাওয়াজিন গুপ্ত আক্রমনে মুসলিমদেরকে ছত্রভঙ্গ করে। পরে মুসলিমরা আবারও সংগবদ্ধ হয়ে আক্রমনে তাদেরকে পরাস্ত করে। বাকী সৈন্য তায়েফে গমন করে, মুসলিমরা তায়েফ অবরোধ করে। যুদ্ধে তারা পরাজিত হয়। একইসাথে ‘আওতাসের যুদ্ধ’ হয় এবং কাফিররা মুসলিমদের হাতে পরাজিত হয়। মুলিমদের হাতে আসে ২৪ হাজার উট,৪০ হাজার বকরী,৪ হাজার উকিয়া চান্দি,তাদের সৈন্য ও যুদ্ধক্ষেত্রে সৈন্যদের সঙ্গ দিতে আসা তাদের নারীসহ ৬ হাজার যুদ্ধবন্দী ।
রসূল(সাঃ) যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে অপেক্ষা করতে থাকেন,যাতে তাদের আত্মীয়-স্বজন এসে এ ব্যাপারে আলোচনা করে। কিন্তু একটানা কয়েকদিন গত হলেও কাফিরদের পক্ষ থেকে কেউ আগমন করেনি। যখন যুদ্ধবন্দীদেরকে জেয়েররানায় অবরুদ্ধ রেখে রেখে গনিমতের মালামাল বন্টন করা হয়েছে, তারপর একটি প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয় যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে কথা বলার জন্যে।
প্রতিনিধি দলের নেতা যুহাইর ইবনে সাদ বললেন,যাদেরকে বন্দী করা হয়েছে তার মধ্যে আপনার দুধমাতা হালিমার গোত্রও রয়েছে। আমরা আপনার কাছে দয়া এবং অতি উত্তম আচরণ কামনা করি। তখন রসূল(সাঃ) বললেন, যোহরের নামাজের সময় সমবেত মুসলিমের কাছে আপনার অবেদনটি প্রকাশ করুন। তিনি তাই করলেন। এরপর রসূল(সাঃ)সকল মুসলিমের উদ্দেশ্যে বললেন-আমি আব্দুল মুত্তালিবের পরিবারের পক্ষ থেকে ছাড় দিলাম,এবং সকল মুসলিমের কাছে সুপারিশ করছি যাতে সকলে যুদ্ধবন্দীদের ব্যপারে ছাড় দেয়। রসূল(সাঃ)এর আবেদনে সমবেত সকল মুসলিম সমস্বরে বলল-আমাদের অধিকার আপনার উপর অর্পিত হল। তখন ৬হাজার বন্দীকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।
-(সীরাতুন্নবী-আল্লামা শিবলী নূমানী)
আগামী পর্বে আমরা বানূ কুরায়যার ব্যাপারে আলোচনা করব এবং ঘটনা কি ঘটেছিল তা জানব। এরপর অঅমরা চলে যাব,ইসলাম দাস-দাসীর সাথে কি আচরণ করে সেটায় । সাথে থাকুন
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনি বোধ হয় দেখেননি এখনো-
আফরামনি কত্তসব খাবারের আয়োজন করে দাওয়াত দিয়েছেন-
আমি এইমাত্র হাজিরা দিয়ে এলুম..
তবে আপনার কম পড়ে যাবে মনে হলো-
হয়তো রান্নাঘরে আরো আছে
বনু মুস্তালিক এবং হুনায়ন উভয ক্ষেত্রেই দেখা যায় বন্দি বিনিময় বা ক্ষতিপুরুন আদায় কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে আপনার অভিজ্ঞতা জানানোয় অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন