সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়ুবী !!! আপনার অথর্ব উত্তরসুরী বলছি !!!

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৩ জুলাই, ২০১৪, ১১:০০:০৪ সকাল



যে মুহুর্তে আপনার ঘটনাগুলি অন্য অথর্বদেরকে শুনাচ্ছি,সে মুহুর্তে আপনার সেই প্রিয় পবিত্র ভূমী নিরপরাধ মুসলিম নারী-শিশুর রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। আমি জানি, এ ঘটনা আপনার কাছে নতুন নয়,কিন্তু যেসকল ঘটনা আপনার জীবনের উদ্দেশ্য বদলে দিয়েছিল,সেসকল ঘটনাই আমাদেরকে সুখ-নিদ্রায় শায়িত রেখেছে। আমি নিশ্চিত, আপনি জীবিত থাকলে আমাদেরকে ক্ষমা করতেন না। নির্যাতিতের আর্ত চিৎকারে আজ আপনার মত কাওকে আশা করছি।

৪৯০ হিজরী বা ১০৯৭ সাল। ক্রসের ধারকেরা মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল এডেসা,এন্টিওক,আলেপ্পো দখল করে নিল। এরপর ১০৯৯ সালে পবীত্র নগরী জেরুজালেম দখল হয়ে যায়। এর কয়েক বছরের মধ্যে ফিলিস্থিন,সিরিয়ার কিছু অংশ ক্রুসেডারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

খ্রিষ্টান ঐতিহাসিকরা লিখেছে-“বাইতুল মুকাদ্দাসে বিজয়ীর বেশে প্রবেশ করার পর ক্রুসেড যোদ্ধারা এমনভাবে ব্যপক হত্যাযজ্ঞ চালায় যে, যেসব ক্রুসেড যোদ্ধা ঘোড়ায় চড়ে ‘মসজিদ ই ওমর’ এ গিয়েছিল তাদের ঘোড়ার হাটু পর্যন্ত রক্তের বন্যায় ডুবে গিয়েছিল। বাচ্চা শিশুদের পা ধরে দেওয়ালে আছাড় দিয়ে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রাচীরের ওপর থেকে তাদেরকে চক্রাকারে ঘুরিয়ে দূরে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হয়েছে। ইহুদীদেরকে তাদের উপাসনালয়ের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে পুড়িয়ে।

এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা,৬ষ্ট খন্ডের ৬২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রয়েছে ঃ “দ্বিতীয় দিন জ্ঞাতসারে, সম্পুর্ণ ঠান্ডা মাথায় এর চেয়েও ভয়াবহ ও হ্নদকম্প সৃষ্টিকারী নির্যাতনের পূনরাবৃত্তি করা হয়(উপরের বর্ণনাটা প্রথম দিনের)সেনাপতি ট্যাংকার্ড তিন শত বন্দীর জীবনের নিরাপত্তা দানের ওয়াদা করেছিল। কিন্তু তাদের সবাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর শুরু হয় ব্যপক গণহত্যা। নারী,পুরুষ,শিশু সবাইকে হত্যা করার পর তাদের দেহ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। নিহত মানুষের লাশ ও কর্র্তিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গের স্তুপ জমে ওঠে এখানে সেখানে। অবশেষে এই নির্মম হত্যাযজ্ঞের পরিসমাপ্তি ঘটলে আরব বন্দীদের দিয়েই তা পরিষ্কার করা হয়।”

প্রখ্যাত ইংরেজ খ্রিষ্টান ঐতিহাসিক লেনপুল বলেন ঃ “এই চরম হতাশাজনক পরিস্থিতিতে মুসলিমদের জিহাদ ঘোষণার প্রয়োজন দেখা দিল। প্রয়োজন দেখা দিল এমন একজন নেতার আবির্ভাবের যার বীরত্ব,সাহসিকতা ও সামরিক ব্যক্তিত্বের কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করবে। উপরন্তু তূর্কমেন সর্দার ও তাদের অধীনস্ত বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদের এমন একদল যুদ্ধবাজ,ঈমানদার নওযোয়ান সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল যারা ক্রুসেডারদের কৃত যুলুম ও বাড়াবাড়ির হিসেব নেবে এবং এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবে।”(সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী,পৃষ্ঠা- ২৯)

এই প্রতিক্ষিত মুহুর্তে মুসলিম উম্মাহ তাদের নেতাকে পেয়ে যায়, এই মুজাহিদ ছিলেন সূলতান ইমামুদ্দীন জঙ্গী। ১১৪৪ থেকে ১১৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি ক্রুডোরদেরকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়েন। তাদের বড় বড় দূর্গ দখল করে নেন এবং বহু এলাকা মুক্ত করেন। তিনি ১১৪৬ সালে শহীদ হন কিন্তু রেখে যান তার যোগ্য উত্তরসূরী, যিনি তার এই বিজয়ের ধারাকে সমুন্নত রেখেছিলেন,কাফিরদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন,তিনি হলেন ইমামুদ্দিন জঙ্গীর যোগ্য পুত্র সুলতান নূরুদ্দীন জঙ্গী। তিনি ১১৪৬ সালের মধ্যেই অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে হারিম দূর্গ দখল করেন এবং এরপর এন্টিওক,ত্রিপলী ও মিসর পূণরুদ্ধার করেন।

নূরুদ্দীন ছিলেন সিরিয়ার শাসনকর্তা বা সুলতান। ইবনে জওজী(প্রখ্যাত ঐতিহাসিক) বলেন ঃ “নূরুদ্দীন সীমান্তে জিহাদ করেন এবং কাফিরদের কব্জা থেকে পঞ্চাশটিরও বেশী শহর মুক্ত করেন। অধিকাংশ শাসক ও সুলতানের চেয়ে তার জীবন ছিল উত্তম। তার আমলে রাস্তা ঘাট ছিল নিরাপদ। সর্বত্রই নিরাপত্তার আবহাওয়া বিরাজ করতো। বাগদাদের খলিফার আনুগত্য ও অধীনতা স্বীকারকে তিনি নিজের জন্য বাধ্যতামূলক মনে করতেন।” (আল মুনতাজাম)

সম্পদের বিশাল সমৃদ্ধির কারনে তিনি মিসর,শাম,জাযীরা,মাওসিল সমস্ত এলাকার সকল ট্যাক্স মাফ করে দেন। তার বীরত্ব,ন্যায়ের শাসন,চরিত্র ইত্যাদির বর্ণনা করতে গিয়ে ‘ইবনুল আছির ’ তাঁর ‘তারিখুল কামিল’ গ্রন্থে বলেন, “খুলাফায়ে রাশেদীন ও ওমর বিন আব্দুল আযীযের পর নূরুদ্দীনের মত এত বড় ন্যায় পরায়ন,বীরত্তপূর্ণ এবং অনুপম চরিত্রের অধীকারী শাসক আমি আর দেখিনি ।”

এক ব্যক্তি নূরুদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে বিচারক সূলতানকে আদালতে ডেকে পাঠান। সূলতান নূরুদ্দীন বিচারকের কাছে লোক পাঠিয়ে আগেই জানিয়ে দেন যে,আমি হাজির হচ্ছি, তবে খবরদার ! পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ যেন না ঘটে। বিচারক বললেন,আমি আল্লাহকে ভয় করি,বিচার কাজে কে সুলতান,আর কে সাধারণ জনতা, তা আমি পরোয়া করি না। আদালতে সুলতান নির্দোষ প্রমানিত হন এবং তিনি উক্ত মিথ্যা অভিযোগকারীকে তখনই মাফ করে দেন।

মযলুমের উপর ক্রসেডারদের প্রতিনিয়ত করা অত্যাচার উৎপীড়নে তিনি সর্বদা চিন্তিত থাকতেন। এজন্য তার সমস্ত মনোযোগ ছিল জিহাদের প্রতি। ফিলিস্তিনের মা,বোন,ভাইদের উপর করা নির্যাতনের ঘটনা তাকে ভিষনভাবে পীড়া দিত। তিনি শত্র“ সৈন্যের খুব কাছে অল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তাবু ফেললে তার বন্ধু পরামর্শ দেয়, বিজয়ী দুশমনদের এত কাছে থাকা ঠিক হবে না। সূলতান নূরুদ্দীন তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন ঃ “আমার কাছে স্রেফ এক হাজার ঈমানদার অশ্বারোহী সৈনিক থাকলে আমি শত্র“কে পরোয়া করি না। আল্লাহর কসম ! যতক্ষন না আমি মুসলিমদের এই পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারছি,ততক্ষন পর্যন্ত ছাদের নীচে আশ্রয় নেব না।”

এদিন থেকে সুলতান আর ছাদের নীচে অবস্থান করেননি তিনি তাবুতে থাকতেন। আল্লাহ তার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করেছিলেন,তিনি ফিলিস্তিনের অধিকাংশ অঞ্চল মুক্ত করেছিলেন। তবে তার আরেকটি উদ্দেশ্য সফল হয়নি,তা হলো জেরুজালেম উদ্ধার। ১১৭৪ সালে তিনি কন্ঠনালীর প্রদাহে মারা যান। তিনি রোগ গ্রস্থতার জন্য তার স্বপ্ন পূরণ করতে না পারলেও তার সেই লালায়িত স্বপ্ন পুরণ করেন তার বিখ্যাত সেনাপতি ও মিসরের গভর্ণর সুলতান সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবী। যিনি ছিলেন স্ফিত বক্ষ এবং চওড়া কাধের অধিকারী। অনেকের মাঝে দাড়ালেও যার মাথা দেখা যেত দূর থেকে। যার ছিল সুঠাম দেহ ও অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি হাত। একটি অবমানাকর ,বিভিষিকাময় পরিস্থিতিতে মজলুম ও মুসলিম উম্মাহ যার আগমনের প্রতিক্ষা করছিল তিনিই হলেন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদের যোগ্য উত্তরসূরী, সূলতান নূরুদ্দীন জঙ্গীর যোগ্য সেনাপতি আমাদের রোল মডেল সূলতান সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবী বা ইতিহাসখ্যাত গাজী সালাহ্উদ্দীন।

ঐতিহাসিক লেনপুল বলেন ঃ “সালাহউদ্দীনের থেকে এমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি,যা দ্বারা বোঝা যায় যে, ভবিষ্যতে তিনি এক বিরাট ব্যক্তিত্বে পরিনত হবেন। বরং তিনি সবসময় নিশ্চুপ,শান্তিপ্রিয় ও সাধারণ একজন ভাল মানুষের মত জীবন যাপন করতেন। তিনি(সৈনিক জীবনের পূর্বে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার ছিলেন) ছিলেন অতি উত্তম স্বভাবের লোক এবং সর্বপ্রকার লোভ ও সমস্ত রকমের চারিত্রিক দূর্বলতা মুক্ত।”

সালাহউদ্দীন মূলতঃ সুলতান নূরুদ্দীন জঙ্গীর পিড়াপিড়ীতে মিসরের শাসন ক্ষমতা বুঝে নেন। তিনি কোনভাবেই এ দায়ীত্ব নিতে চাচ্ছিলেন না এমনকি তাকে দায়িত্ব চাপানো হচ্ছে দেখে তিনি তল্পি তল্পা গুছিয়ে চলেই যাচ্ছিলেন। সুলতান নুরুদ্দীন বহু বোঝানোর পরও যখন কাজ হলো না তখন নুরুদ্দীন তাকে বাধ্য করলেন। সম্ভবতঃ নূরুদ্দীন বুঝেছিলেন তার গুপ্ত প্রতিভার কথা। সালাহ্উদ্দীন আইয়ুবী নিজের সম্পর্কে বলেন ঃ “নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও কতকটা বাধ্য হয়ে আমি মিসর ভূমিতে আসি। আমার মর্জি মাফিক আমি মিসরে আসিনি। আমার ব্যাপারটা ছিল আল কুরআনের ওই আয়াতের মত,যেখানে আল্লাহ বলছেন, “সম্ভবত তোমরা এমন কিছু অপছন্দ কর যা তোমাদের জন্য কল্যানকর।”

সূলতান সালাহ্উদ্দীন মিসরের দায়িত্বপ্রাপ্ত হবার পর পূর্বের বিলাসী জীবন সম্পুর্ণ পরিত্যাগ করেন এবং নিজের উপর কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করেন। মিসরে গভর্ণর হিসেবে দায়ীত্বপ্রাপ্ত হবার আগে তিনি ছিলেন বিশাল ধনী এবং আড়ম্বড়পূর্ণ জীবনে অভ্যস্ত। আর দায়ীত্বপ্রাপ্ত হবার পর সাধারণ জনতা এবং তার মধ্যে কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি বরং তিনি ছিলেন সাধারনের চাইতেও সাধারণ। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে,ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সারা জীবন তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে জীহাদ করবেন। এজন্য তার জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে তাবুর মধ্যে। তাকে শত্র“র বিরুদ্ধে শুধু অস্ত্রের যুদ্ধই চালাতে হয়নি কূটনৈতিক যুদ্ধও চালাতে হয়েছিল। তিনি অত্যন্ত শক্তিশালী গোয়েন্দা বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। ক্রুসেডাররা তৎকালীন বিখ্যাত সুন্দরী নারীদের দ্বারা মুসলিম শাসক ও প্রভাবশালী অংশকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করত, মূলতঃ তারা ছিল বিশেষ গোয়েন্দা যাদের অনেকেই ছিল ইহুদী। ক্রুসেডাররা ইহুদী মেয়েদেরকে খুব ছোট বেলায় অপহরণ করে প্রশিক্ষন দিত । যার ফলে বড় হয়ে এসমস্ত মেয়েরা তাদের কাজের ব্যাপারে হতো সু-নিঁপুন এবং ষড়যন্ত্র,ছলনা,বিশ্বাসঘাতকতাকে তাদের ধর্ম মনে করত। এরকম বিখ্যাত ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত সুন্দরী নারীদেরকে দিয়ে ক্রুসেডাররা সালাহ্উদ্দীনকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছে,বিভিন্নভাবে টোপ ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু তারা কখনই সফল হয়নি, কারণ তিনি ছিলেন সুলতান সালাহউদ্দীন, যার চরিত্র সম্পর্কে প্রত্যেকটা ঐতিহাসিক বলেন,তার চরিত্র ছিল ভয়াবহ শক্তিশালী,কঠোর,ওই সমস্ত নারীরা ছল-চাতুরী দূরে থাক, তার কাছা কাছিই আসতে পারেনি,তিনি সে সুযোগ দেননি।

তার নিজের দেহরক্ষীদের মধ্যে খ্রিষ্টানরা গোয়েন্দা ঢুকিয়ে তাকে বার বার হত্যার পরিকল্পনা করেছে কিন্তু তিনি ছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদের যোগ্য উত্তরসূরী। আর তাই আল্লাহর অশেষ রহমতে একাধিক যোদ্ধার সাথে লড়বার কক্ষতা তার ছিল। ঘুমন্ত অবস্থায়ও আক্রমন করে তাকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি, কারণ তিনি সর্বাবস্থায় শত্র“র আক্রমনের ব্যাপারে তটস্থ থাকতেন। প্রতিকূল অবস্থাতেও তিনি কোন উপায় বের করে পরিস্থিতিকে নিজের অনকূলে আনতে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি এমন দুঃসাধ্য সাধন করেন যে, ক্রুসেড়াররাও তার উচ্চসিত প্রশংসা কীর্তন করতে শুরু করে। তিনি ক্ষণে ক্ষণে যুদ্ধের পরিকল্পনা পাল্টাতেন এবং দ্রুততার সাথে সঠিক যুদ্ধপরিকল্পনা করতেন আর এসব বিষয়ে তিনি একাই সিদ্ধান্ত নিতেন। তিনি পরিকল্পনা প্রণয়নে এতটা গোপনীয়তা অবলম্বন করতেন যে ,যুদ্ধ শুরুর কিছু আগে তার যোদ্ধারা পরিকল্পনা জানতে পারত। তিনি যে ঈমানী চেতনায় উদ্দীপ্ত সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলেন তারা বিশ্রাম নিতে অভ্যস্ত ছিল না। যে কোন সময়ে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত থাকতো। সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর যুদ্ধ পরিকল্পনা ছিল তার নিজস্ব ধাচে তৈরী। গোয়েন্দা তথ্যকে কাজে লাগিয়ে তিনি শত্র“কে এমন ধোঁকা খাওয়াতেন যে, তার অল্প সংখ্যক সৈন্যের সাথেও শত্র“র বিশাল বাহিনী চরমভাবে পরাস্ত হতো। এ পর্যায়ে একটি ঘটনা বর্ণনা করার লোভ সামলাতে পারছি না ঃ-

*** তরুণ সুলতান সালাহ্উদ্দীন মিসরের সেনা প্রধান ও গভর্ণর নির্বাচিত হওয়াতে মিসরের মুনাফিকরা মেনে নিতে পারেনি। আর যারা তার যোগ্যতা পরিমাপ করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা বলেছিল-‘এ বালককে আমরা সব বুঝিয়ে-পড়িয়ে উপযোগী করে নেব।’ যখন সালাহ্উদ্দীন মিসরে আসেন তখন ইহুদী-নাসারা চক্র প্রভাবশালী বহু মুসলিম নেতা ও সামরিক অফিসারদেরকে বিভিন্ন সুবিধাদীর মাধ্যমে বস করেছে। তারা এক অঞ্চলের শাসককে অন্য অঞ্চলের শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলত এবং উভয় অংশের মধ্যে নিজেদের গুপ্তচর রেখে সর্বদা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করত। মুসলিমদেরকে ভেতর থেকে দূর্বল করার যে চক্রান্ত বহু পূর্ব থেকে শুরু হয় তা এখানে পায় নতুন মাত্রা এবং তা ফলতেও শুরু করে। ইসলামী খিলাফতের বিভিন্ন প্রদেশে এবং সৈন্যদের মধ্যে এ সময়ে যে লোকটি বন্ধু বেশে সাফল্যের সাথে বিশৃঙ্খলা বাধাতে সক্ষম হয় তিনি হলেন-ইতিহাসখ্যাত প্রখ্যাত স্বভাব-কুচক্রী ইহুদী হাসান ইবনে সাবাহ্। এ লোকটি ইহুদী-খ্রিষ্টান চক্রের প্রত্যক্ষ মদদে তার “ফেদায়ী” নামক একটি দূর্ধর্ষ গুপ্ত ঘাতক ইউনিটের মাধ্যমে সু-কৌশলে বিভিন্ন প্রদেশের সেনাবাহিনী ও শাসকের দেহরক্ষীদের মধ্যে নিজেদের অনুগত বাহিনী নিয়োজিত করে এবং তারা ঈমানদার সেনা অফিসার ও গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদেরকে গুপ্ত হত্যা করতে শুরু করে(এই গুপ্ত ঘাতক শ্রেণী পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছিল এবং পরবর্তীকালে তা ভিন্ন নামে ভিন্ন রূপে মুসলিম উম্মাহ কে ধ্বংসের চক্রান্তে মেতে ওঠে)। একইসাথে এর দোষ চাপানো হয় অন্য মুসলিমের উপর,ফলাফল স্বরুপ বিশৃঙ্খলা প্রাপ্তী। তারা কিছু আঞ্চলিক শাসককেও তাদের হীন চক্রান্তের সাথী বানাতে সক্ষম হয়। এ সময়ে মিসরে ৫০ হাজার সুদানী সৈন্য ছিল তার কমান্ড করত ‘নাজী’ নামক এক মুনাফিক ও খিষ্টানদের দালাল। সে চক্রান্তের অংশ হিসেবে সৈন্যদের একটি বিশাল অংশকে নারী ও মদের প্রতি অনুগত হতে বাধ্য করে। সুযোগবুঝে যাতে এ সকল সৈন্যরা বিদ্রোহ করতে পারে তার সকল আয়োজন সে নিরলসভাবে সম্পন্ন করতে থাকে। সুলতান নুরুদ্দীন জঙ্গী চক্রান্তের খবর জানতেন তাই সালাহ্উদ্দীনকে প্রেরনের সময় তিনি ঈমানদার এবং চৌকস একদল গোয়েন্দা ইউনিট তার সাহায্যার্থে পাঠান। এ ইউনিটের যিনি প্রধান ছিলেন,তিনি তার সু-কৌশল,ন্যায় নিষ্ঠতা,বিশ্বস্ততা ও দূর্ধর্ষ কর্ম কান্ডের কারনে ইতিহাসে একটি বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন। তিনি হলেন আলী বিন সুফিয়ান।

পরের পর্ব : জুকী

বিষয়: বিবিধ

৪৬৫৫ বার পঠিত, ৩২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

244312
১৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:১৭
রাইয়ান লিখেছেন : মুসলিম বীর যোদ্ধাদের এই বিজয় গৌরব গাঁথাগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের আলোকিত সৈনিকদের বেশি করে পরা উচিত , জীবনবোধে , উপলব্ধিতে এর ব্যাপক চর্চা চালানো উচিত , তবেই না আমরা নতুন নতুন সালাহউদ্দিন আইয়ুবী পাব , যারা বঞ্চিত ও অসহায়ের পাশে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দাঁড়াবে , কোনো দুনিয়াবী ক্ষুদ্র স্বার্থে নয়। আপনাকে শুকরিয়া এত সুন্দর ও সময়োপযোগী লেখাটি দেবার জন্য। জাজাকাল্লাহ।
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
189772
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান
244313
১৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:২৫
গ্যাঞ্জাম খান লিখেছেন : সময়োপযোগী পোস্ট। কর্তৃপক্ষ লেখাটি স্টীকি করলে ভাল হতো।
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০৮
189773
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ
244316
১৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
আহমদ মুসা লিখেছেন : আমাদের পূর্ব পুরুষদের গৌরবগাথা ইতিহাস আজ আমাদের নবীন প্রজন্মের প্রতিনীধিদের জানতে দেয়া হচ্ছে না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিখানো হচ্ছে চোর ডাকাতরাই হচ্ছে আমার বীর পুরুষ। সুলতান সালাহউদ্দীন আয়ুবী, মুহাম্মদ বিন কাসেম, তারিখ বিন জিয়াদ, মুসা বিন শামশীরদের মত পূর্বসূরীদের সাথে পরিচিত করানোর পরিবর্তে আমাদের নতুন প্রজম্মকে বিভ্রান্ত করে শিখানো হচ্ছে কুখ্যাত ডাকাত সরদার সূর্যসেন, মক্ষ্মী রানী প্রীতিলতা সেন নামের অমানুষদের বীর পুরুষ হিসেবে।
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০৯
189774
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন
244334
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:৪২
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:১৭
189986
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
244345
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:০৯
পুস্পিতা লিখেছেন : এখন মুসলমানদের ভিতর সালাউদ্দিন আইয়ুবী নেই, আছে হাসিনা, সিসি, বাসার আল আসাদ, সৌদি বাদশা ইত্যাদি...
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:১৮
189987
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মুসলিমের সর্বনাশ করেছে মিরজাফররা। যুদ্ধে মুসলিম ধ্বংস হয়নি।
244348
১৩ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১৫
সন্ধাতারা লিখেছেন : Muslims must know the glorify history for getting correct lesson to apply in our present society. Jajakalla khairan
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:১৯
189988
দ্য স্লেভ লিখেছেন : right u r. jajakallah khairan
244355
১৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:১৫
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:১৯
189989
দ্য স্লেভ লিখেছেন : লোড করছি
244369
১৩ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:২০
189990
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
রিপোর্ট করুন!
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:২১
189991
দ্য স্লেভ লিখেছেন : মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন ! জাজাকাল্লাহ খায়রান। ***রিপোর্ট করুন াংশটি ভুল হয়েছে

244391
১৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩১
আফরা লিখেছেন : এলেখা এখন পড়া যাবে না ,পড়ে পড়ব ।
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:২১
189992
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এরই নাম আলস্য বা অলসতা Happy
১০
244410
১৩ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : আমাদের জন্য হয়ত এমন কাউকে আল্লাহ মনোনিত করবেন,অপেক্ষা করুন৷
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:২২
189993
দ্য স্লেভ লিখেছেন : তেমনটাই হওয়ার কথা। আল্লাহ যেন তাই করেন
১১
244475
১৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:০২
আনিস১৩ লিখেছেন : We need another leader like him.


Waiting for next part...
Thanks.
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৮:২২
189994
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ। ঠিক বলেছেন
১২
244554
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:১৬
জোনাকি লিখেছেন : বাংলাদেশে ও ফিলিস্তিনে গাজি সালাউদ্দিন দরকার। দরকার সব মুসলিম দেশে ওদের মত নেতা। কিন্তু নেতা কে হবে? পর্নোফাইড সোসাইটির কালো থাবা গ্রাশ করে নিচ্ছে ইয়ং জেনারেশনকে।
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০১
190019
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সত্য। তরুন,যুবকদের চরিত্র ধ্বংস করছে যাতে তারা গোলামের বাচ্চা থেকে যায়। জীবনেও যাতে লিডার না হয়।
১৩
244562
১৪ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:৩৮
মোহাম্মদ রিগান লিখেছেন : আপনার কথা শুনে ভাল লাগলো
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ১২:০২
190020
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
১৪
244639
১৪ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০২:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এখানে কি কেউ নেই?
এখানে কি নেই তারিকের মত কেউ
এখানে কি নেই সালাহদিন সম কেউ
এই দুর্দিনে হৃদয় কে জাগাবার।
১৪ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:০৫
190071
আহ জীবন লিখেছেন : নাই ভাই নাই। ম্যাচের কাঠির মাথায় থাকা বারুদ টুকুর স্ফুলিঙ্গও আমাদের অবশিষ্ট নাই।

জেগে জেগে ঘুমালে কে জাগাবে?

হালাল হারামের গুরুত্ব কি এখনও কি বুঝতে পারছি?
১৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:১৪
190099
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সময় আসছে জাগবার। মুসলিম তার অস্তিত্বের প্রশ্নে জাগবে। হাদীস বলছে বীজয় মুসলিমদের। হতাশ হওয়া যাবেনা।
১৫
244828
১৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০১:২৯
ইবনে হাসেম লিখেছেন : হতাশ হওয়া মুসলিমের কর্ম নয়। আমাদেরকে এভাবে এসব মুসলিম বীরদের বিজয়গাঁথা বেশী বেশী করে পাঠের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে; আপনি বেশ সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছেন্ জাযাকাল্লাহ্
১৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:২১
190297
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File