মেয়েটার কি মন ভেঙ্গে দিলাম !!!
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ জুন, ২০১৪, ১২:০৮:২০ দুপুর
কর্মক্ষেত্রে আমি বড্ড কেতাদূরস্ত লোক। পোষাকের প্রতি আমার একটা চাপা দূর্বলতা আছে। সেই সুবাদে মাঝে সাঝে এটা ওটা কেনা হয়। অনেকে উপহারও দিয়েছে,দেয়। এখানে আমার অফিসিয়াল পোষাক সাদা শার্ট,প্যান্ট,টাই,সু। গুনে দেখিনি কিন্তু সম্ভবত আমার টাইয়ের সংখ্যা শত পার হয়ে যাবে,যার একটা বড় অংশই সাথে এনেছিলাম। আমি সিরিয়ালি পরি। এক ড্রয়ার থেকে অন্য ড্রয়ারে স্থানান্তর করে হিসেব রাখি,কোনটা পরা হল আর কোনটা হলনা।
গত ৩ মাসে অন্তত ৬০টি টাই পরেছি। সেদিন সবথেকে স্মার্ট ম্যানেজার বলল-আমি তোমার কাছে হেরে গেলাম। আমি গোপনে তোমার সাথে কম্পিটিশন করেছি কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলাম না। ভদ্রলোকের কথা শুনে অবাক হলাম। কারন আমি তার সাথে কম্পিটিশন করিনি। এটা আমার স্বাভাবিক অবস্থা। তবে লক্ষ্য করতাম হঠাৎ করে সে নতুন নতুন শার্ট,প্যান্ট টাই পরে আসছে। এসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতাকে আমি ভয় পাই,কারন এ পথ ধরে অহংকার এবং একটি অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা থেকে অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হতে পারে। অবশ্য এখানে সে সুযোগ নেই। এরা মাত্রা বোঝে।
আমি তাকে বললাম, তোমার পোষাকগুলো সুন্দর এবং আমি তা পছন্দ করেছি। কোম্পানীতে আমার ফ্যাশন নিয়ে অনেকে আগ্রহী,যদিও আমি এসবে আগ্রহী নই,বরং এটা আমি এমনিই করি। পরিপাটি থাকা আমার স্বভাব।.....ঘটনা আসলে এটা নয়।
আসল ঘটনা :
ভিন্ন একটি ডিপার্টমেন্টে একটি মেয়ে আছে, সে মেয়েটাকে দেখলে যে কেউ অনায়াসে ডানাকাটা পরি বলে চালিয়ে দিতে পারবে। যারা পরি বিশ্বাস করেনা,তারাও বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে। সার্ভিস চেক করার সময় ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে যেতে হয়, তখন কখনও কখনও খেয়াল করেছি মেয়েটি তাকাচ্ছে এবং চোখে পড়ার মত করেই তাকাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে আমার কখনই কথা হয়নি। আমার তার ব্যাপারে কোনো আগ্রহও তৈরী হয়নি। আমি স্বাভাবিকভাবে দু,একবার তাকাই এটাই শেষ। আমেরিকাতে আমি আমার ঈমান আমলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়ে রক্ষা করি। গৃষ্মের আগমনে এসব দেশের মেয়েদের পোষাক ছোট থেকে ছোটতর হয়। আমি এসবে পাত্তা দেইনা । আমার ভেতর এসংক্রান্ত আগ্রহ নেই,তা নয়,বরং আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করি। কর্মক্ষেত্রে আমি শতভাগ প্রফেশনাল। কিন্তু মেয়েটির বিষয়টি বুঝলাম না।
বেশ কয়েক সপ্তাহ থেকে দেখছি সে আশপাশে আসছে কিন্তু আমার সাথে তার কথা হয়নি। আমার আশপাশে থাকা অনেকের সাথে কথা বললেও আমার সাথে বলেনি। আমার সম্পর্কে তার কৌতুহল আছে বুঝতাম। আর একারনেই কাছে আসলে মুখের ভাব সিরিয়াস করে থাকতাম। হাসিখুশী ভাব না দেখলে আমেরিকানরা সাধারনত: কথা বলতে উৎসাহী হয়না। সিরিয়াস টাইপ লোক এরা তেমন পছন্দ করেনা।
একদিন মেয়েটি যখন কাছে আসল,তখন টমি নামক অবসরপ্রাপ্ত আর্মী অফিসার,যিনি এখানে আমার কলিগ আমাকে জি্ঞেস করল-হে ম্যান, এত কথা হল কিন্তু জানাই হলনা তুমি কোথা থেকে এসেছো। বললাম-বাংলাদেশ থেকে। দেশটা বোঝাতে ভারতের পাশে বলতে হয়। তখনই মেয়েটা জিজ্ঞেস করল-কোন দেশ ? তাকেও বললাম। এরপর আর কোনো কথা নেই। ভাবতাম আমি বাদামী চামড়ার লোক,সে সাদা এবং অসম্ভব সুন্দরী। অামার ব্যাপারে তার আগ্রহ থাকবে কেন ?
যদিও এখানে একজন আরেকজনের তথ্য রাখেনা বা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলে না,কিন্ত সে আমার ব্যাপারে কিছু তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করত্ ।
আজ এক ঘটনা ঘটল। মেয়েটা হঠাৎ আমার পেছনে এসে দাড়াল। আমি তার উপস্তিতি টের পেয়ে হাসি হাসি মুখটি মোটামুটি চুন করে ফেললাম। সে আস্তে করে জিজ্ঞেস কলল-আচ্ছা তোমার বয়স কত ? আমি অবাক হলাম,কারন এরকম প্রশ্ন এরা করেনা বললেই চলে।তারপরও আমি বয়স বললাম...। শুনে বলল- তোমাকে দেখে মনে হয় বয়স অন্তত ১০/১২ বছর কম। হাসলাম।
লাঞ্চের সময় ব্রেক রুমে দেখলাম সে বসে আছে। এবার সে আমার সাথে আমার দেশ এবং ব্যক্তিগত পরিচয় জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম। কিন্তু তার ব্যাপারে আমি কিছু জানতে চাইনি। হঠাৎ সে জিজ্ঞেস করল- আচ্ছা তুমি কি বিবাহিত ? এসময় আমার মাথায় এক চিন্তা আসল।
চিন্তা করলাম একে আস্কারা দিতে ভিষণ ইচ্ছে হচ্ছে। নিজের ভেতর একটা ভাব উথলে উঠছে যে- এরকম একটা মেয়ে আমার সাথে যেচে কথা বলছে। ...কিন্তু আমি কি একে চাই ? সে কি আমার ঈমান,আমলের জন্যে উপকারী হবে ? সে কি আমার বাহ্যিক চাকচিক্য দেখে আগ্রহী হয়নি ? সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা অর্থ এদের কাছে কেমন তা কি আমি স্পষ্ট জানিনা ?
তাহলে ক্ষনিকের এই আবেগের জন্যে এত বড় ঝুকি কেন নিব ? তার চাইতে মিথ্যা বলা শ্রেয়। আমি বললাম- জি, আমি বিবাহিত। সঙ্গে সঙ্গে জি্ঞেস করল- বাচ্চা আছে ? মনে হল-বাচ্চা নেই জানলে কি সে কাছে আসবে ? ....বললাম- বাচ্চা নেই,তবে হবে। এটা মিথ্যা বলিনি,কারন ভবিষ্যতে বিয়ে হলে বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। কিন্তু সে বুঝল-আমার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। তার সাথে কথা বলার সময় মনে তেমন হচ্ছিল না যে- সে খুব আবেগী। কিন্তু খানিকটা বুঝতে পারছিলাম যে,তার ভেতরে একটা ইচ্ছা কাজ করছিল। তাকে খানিকটা আশাহতও দেখাল,যদিও সে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিল। ....কাজে মন দিলাম আবার।
বাকী সময়ে দেখলাম আমার দিকে তার তাকানো আগের মত নেই। হঠাৎ নিজের কাছে খারাপ লাগল।নিজেকে কেমন জানি বঞ্চিত মনে হল। মনে হল, আহ্হা....বিষয়টা না বললেই বোধহয় ভাল হত। সঙ্গে সঙ্গে মনে হল- ওরে শয়তান নফস, তোর ধোকা বড্ড নিখুঁত ! তাহলে কি এতদিন আমি তার তাকানোকে উপভোগ করতাম ! মনে হয় তাই। .....যাইহোক, নিজের আবেগের মুখে জুতো মারতে পেরে আমি খুশী। কাজটা করতে অামার নিজেরও ভাল লাগেনি,বিষয়টা উপভোগ করতে ইচ্ছাও হচ্ছিল কিন্তু শেষে এসে আবেগে কষে একটা কিক করে দিলাম। মিথ্যা একটা বলেছি কিন্তু বলে বেঁচেও গেছি। ....
বিষয়: বিবিধ
১৩৮১ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কিছু মেয়ে অভিব্যক্তি, স্মার্ট, চাকুরীর ধরণ কে গরুত্ব দিয়ে সঙ্গী নির্বাচন করে। হয়ত সেও তাই করেছিল। পাশ্চাত্যে মানুষের আভ্যন্তরীণ গুনের কদর খুবই কম! বাহ্যিক চাকচিক্য ও ফিটফাটকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়। পরিনতিতে তারা কখনও ততটুকু দাম্পত্য জীবনে সুখী হয়না, যতটুকু সুখী হয় আমাদের দেশের একজন গরীব কৃষক। মানুষের সৌন্দর্য টিকে থাকে মাত্র ১০ থেকে ১৫ বছর আর গুণ থেকে যায় আমরণ। অনেক ধন্যবাদ
অন্ততপক্ষে সিটিজেন শিপ নেওয়ার জন্য কিছুদিন কোর্ট শিপ করে দেখতে পারতেন। তবে ভাল রান্না করতে পারে কিনা আগে খবর নিতে হবে।
যেঁচে একজন সুন্দরী মেয়ে আপনার কাছে আসতে চাইছিল , তাকে মুসলিমে কনভার্ট করে সেরকমভাবে গড়ে তুলে ''আপনায়া'' করে নিতে পারতেন ।
এখন বলি আবেগের পাছায় লাথি মারছেন ভাল কথা, ভাবাবেগে ভুগতেছেন কেন?
এসব ব্যাপার আমি মনে করি প্রকাশ না করে হজম করে নেওয়া ভাল।
বেডিডারে মুই বাতলিয়ে দিতুম এই পোলাডারে পটানোর লিগ্যা প্রধান ওষুধ অইলো জোরছে খানাপিনার আয়োজন করো।
প্রয়োজনে তারে বুঝাইয়া খও যে বাংলাদেশের বাবুচি টমি মিয়া হেতির ছাত্র আছিল।
যা করেছেন ভালই করেছেন। আফসোস বা ইতস্তত করার প্রয়োজন নেই আর।
মে আল্লাহ্ মেক ইউ স্ট্রঙ্গার।
অথবা অলরেডি ফেসে গেছেন...
শয়তানকে কষে কিক মারেন ভাল...তবে পেছন দিক থেকে সে ভয়াবহ হামলা করতে পারে।
আপনার লাফ/ফাল দেখে আমার ভয় হচ্ছে, হ্য়ত আপনি পরাজিত হতে চলেছেন...
এসব ব্যাপার আমি মনে করি প্রকাশ না করে হজম করে নেওয়া ভাল...যত (ঘাটাবেন/চিন্তা করবেন/আলোচনা করবেন) ততই সুবাস ছড়াবে আর আপনি এক অজানা-অচেনা ঘাতকের হাতে পড়ে যাবেন...
আপনার জন্য দোয়া রইল...
মন্তব্য করতে লগইন করুন