আল-কুরআনের সংরক্ষন:

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১১ জুন, ২০১৪, ০৯:২৫:১৭ সকাল





“আমিই আল-কুরআন নাযিল করেছি , আমিই একে সংরক্ষন করব।”-(আল-কুরআন,১৫: ৯)

যখন কোনো আয়াত নাযিল হত,তা রসেূলের(সাঃ) স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেঁথে যেত,অথবা আল্লাহর বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত দূত ফেরেশতা জিবরাঈল(আঃ) তাঁর(সাঃ)কাছে আল্লাহর বাণী সরাসরি নিয়ে আসতেন মানুষের বেশে এবং রসূল(সাঃ) তা মুখস্ত করতেন। এরপর তিনি(সাঃ) ফেরেশতা জিবরাঈলকে শোনাতেন কোনো ভূল হচ্ছে কিনা,তা বোঝার জন্যে। পুরোপুরি সঠিকভাবে মুখস্ত হলে ফেরেশতা জিবরাঈল বিদায় নিতেন। “ইবনে আব্বাস(রাHappy থেকে বর্ণিত-রসূল(সাHappy বলেন- রমজানের প্রত্যেক রাতে সম্মানিত ফেরেশতা জিবরাঈল তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তখন রসূল(সাHappy তাঁকে আল-কুরআন পাঠ করে শুনাতেন।”-(বুখারী)

হযরত হারিস ইবনে হিশাম(রাHappy রসূলকে(সাHappy জিজ্ঞেস করলেন- ওহী কিরূপে নাযীল হয় ? তিনি(সাHappy বললেন-সব ধরনের ওহী নিয়ে ফেরশেতা আগমন করেন, কোনো কোনো সময় ঘন্টার আওয়াজের মত শব্দ করে আসেন,যখন ওহী আগমন শেষ হয়ে যায়,তিনি যা বলেছেন আমি তার সবকিছু মুখস্ত করে ফেলি। এভাবে ওহী আসাটা আমার কাছে খুবই কষ্টকর। কখনও কখনও ফেরেশতা আমার কাছে মানুষের আকৃতিতে আগমন করেন এবং আল্লাহর বাণী প্রদান করেন। তিনি যা বলেন তা আমি মুখস্ত করে ফেলি। -(বুখারী)

এরপর রসূল(সাঃ) লিখতে জানা সাহাবাদের দ্বারা আয়াতগুলো লিখে রাখতেন। বেশ কিছু সংখ্যক সাহাবী ছিলেন এ কাজে নিয়জিত। হযরত যায়েদ বিন সাবিত(রাঃ) ছাড়াও ছিলেন আরও ৪২জন। এদের মধ্যে খুলাফায়ে রাশিদার চারজন খলিফা বা সাহাবীও ছিলেন। হযরত আলী(রাHappy বলতেন- আমাকে আল কুরআন সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর যেখান থেকে খুশী,যেভাবে খুশী। এমন কোনো আয়াত নেই ,যা দিনে অথবা রাতের কোনো সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে আর তা আমার জানা নেই। সাহাবাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ধারাবাহিকভাবে অবতীর্ণ আয়াতগুলো লিখে রাখার জন্যে।

আবু হুযায়ফা(রাHappy থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- আমি আলীকে(রাHappy জিজ্ঞেস করলাম-আপনার কাছে কি লিখিত ইলম আছে ? তিনি বললেন- না, তবে কেবলমাত্র আল্লাহর কিতাব রয়েছে আর সেই জ্ঞান-বুদ্ধী-বিবেক যা কেবলমাত্র একজন মুসলিমকে দান করা হয়, এছাড়া যা কিছু এই পত্রটিতে লেখা আছে। হুযায়ফা(রাHappy জিজ্ঞেস করলেন- এখানে কি লেখা আছে ? আলী(রাHappy বললেন-দীয়াতের(ক্ষতি পূরণ) ও বন্দী মুক্তির বিধান যে- মুসলিমকে কাফিরের বিনিময়ে হত্যা করা যাবে না।”-(বুখারী)

রসূল(সাঃ) অন্যদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন। এভাবে শুরু থেকেই কুরআনের হাফিজ তৈরী হচ্ছিলেন। অবতীর্ণ হওয়া আয়াতসমূহ নামাজে তিলাওয়াত করা হত এবং বাস্তব জীবনে ব্যপক চর্চা করা হত। রসূল(সাঃ) বলেন-“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা,যারা নিজেরা আল-কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়”-(বুখারী) “যে ব্যক্তি তার অন্তরে কুরআন গেঁথে রাখে বা মুখস্ত করে রাখে তার উদাহরণ হল ওই ব্যক্তির ন্যায় ,যে উট বেধে রাখে। যদি সে উট বেধে রাখে তবে তা তার নিয়ন্ত্রনে থাকে আর যদি সে খুলে দেয় তবে তা তার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়” -(বুখারী) । তাঁর(সাঃ) এমন কথার পর সাহাবায়ে কেরাম আরও বেশী উৎসাহিত হয়েছেন আল-কুরআন সংরক্ষনে, তার শিক্ষায় ,প্রচারে এবং প্রতিষ্ঠায়। রসূলের(সাHappy লক্ষাধিক সাহাবা তাকে অনুকণন,অনুসরণ করেছিলেন এবং সুন্নাহর চর্চা নিজেরা পূর্ণ মাত্রায় করতেন ,আর ইসলামের দাওয়াহ করাটা যেহেতু অবশ্য কর্তব্য বা ফরজ তাই তারা ব্যপকভাবে ইসলাম প্রচার করতেন।

কাগজের প্রচলন না থাকায় তখন আয়াতগুলো পশুর চামড়ায়,বৃক্ষের ছালে,জীব-জন্তুর চওড়া হাড়ে,পাথরখন্ডে লিখে রাখা হত। আল-কুরআনের আয়াতগুলো বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে নাযিল হয়েছে। বড় সূরাগুলোর সকল আয়াত একইসাথে নাযিল হয়নি,এমনকি একই সূরার সকল আয়াত ধারাবাহিকভাবেও নাযিল হয়নি। তাই রসূল(সাঃ) সাহাবাদেরকে বলে দিতেন কোন আয়াত কিভাবে,কোথায় লিখতে হবে। কোন আয়াতের পর কোন আয়াত সন্নিবেশিত হবে এবং সূরার নামগুলোও তিনি বলে দিতেন,কোন আয়াত কোন সূরার কোথায় লিখিত হবে,তাও বলে দিতেন। পুরো প্রক্রিয়াটি মহান আল্লাহর নির্দেশে এবং তাঁর(সাHappy নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত হয়েছে। ফলে আল-কুরআনের আয়াত বিকৃত হওয়া বা নষ্ট হওয়ার সুযোগ তৈরী হয়নি।

হযরত আমর ইবনে রাফে(রাHappy বলেন আমি উ¤মূল মুমিনিন হযরত হাফসার(রাHappy জন্যে কুরআন মজিদের পান্ডুলিপি তৈরী করেছিলাম। তিনি আমাকে নির্দেশ দেন-অমুক আয়াতে পৌঁছে আমাকে জানাবে। আমি সেই আয়াতে পৌঁছে তাকে অবহিত করলাম।.....(এরপর তিনি নির্দেশনা দান করেন ; রসূলের(সাHappyকাছ থেকে যেভাবে শিখেছেন ঠিক সেভাবে) - ( মুওয়াত্তা- ঈমাম মুহাম্মদ)

হযরত আয়েশার(রাHappy মুক্ত দাস আবু ইউনুস(রাHappy বলেন- উ¤মূল মুমিনিন হযরত আয়েশা(রাHappy তার জন্যে আমাকে কুরআনের একটি পান্ডুলিপি তৈরী করতে বলেছিলেন। .....(এরপর তিনি নির্দেশনা দান করেন; রসূলের(সাHappyকাছ থেকে যেভাবে শিখেছেন ঠিক সেভাবে) - ( মুওয়াত্তা- ঈমাম মুহাম্মদ)

রসূল(সাHappyএর ওফাতের পর হযরত আবু বরকর(রাHappy এবং ওমরের(রাHappy খিলাফতের সময়ও যতেœর সাথে আল-কুরআন সংরক্ষিত হয়েছিল কিন্তু সেগুলো পুস্তকাকারে ছিলনা। তবে তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান(রাঃ)এর সময়ে কিছু এলাকায় আঞ্চলিক ভাষায় কুরআন লিখিত হচ্ছিল। এতে কুরআনের বক্তব্য/ভাব বিকৃত হয়ে যেতে পারে মনে করে খলিফা ওসমান(রাHappy সকল সাহাবায়ে কেরামের ইজমা অনুযায়ী আঞ্চলিক ভাষায় লিখিত কুরআনের সকল কপি জব্দ করেন এবং তা পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেন। এরপর আর কখনও আঞ্চলিক ভাষায় তা রচিত হয়নি।

আল-কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার দীর্ঘ ২৩ বছরে যেখানে যেখানে এবং যেভাবে লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষিত হয়েছিল তা সংগ্রহ করা হয়। খলিফা তা সংগ্রহ করেন(তিনি নিজেই কুরআনী হাফিজ ছিলেন এবং হাফিজগনেরও সাহায্য নিয়েছেন) এবং পুস্তকাকারে আল-কুরআন লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর উ¤মূল মুমিনিন হযরত হাফসার(রাঃ) কাছে রক্ষিত আল-কুরআনের মূল কপির সাথে মিলিয়ে দেখা হয়। তারপর বহু সংখ্যক কপি খলিফার দায়িত্বে তৈরী করা হয় এবং খিলাফতভূক্ত বিভিন্ন অঞ্চলসমূহের বিভিন্ন স্থানে একাধীক কপি প্রেরণ করা হয়।

মূলত: আল-কুরআন কোনো কালেও অরক্ষিত ছিলনা। এটি সংরক্ষন করা হয়েছে সর্বাধিক প্রাধান্য দিয়ে। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন মাত্রাতিরিক্ত সাবধানী। রসূল(সাঃ)এর জীবদ্দশা এবং তার ওফাতের পর এটি ছিল সর্বাধিক পঠিত। বহু সংখ্যক হাফিজ সাহাবী ছাড়াও অন্যদের মধ্যেও বহু সংখ্যক কুরআনী হাফিজ ছিলেন,যারা কুরআন মুখস্ত করে রেখেছিলেন। কিন্তু ভন্ড নবী মুসায়লামাতুল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক সংখ্যক কুরআনী হাফিজ শহীদ হলে খলিফা ওসমান(রাHappy এটার সংরক্ষন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন এবং তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে কুরআন পরিপূর্ণ পুস্তকাকারে সংরক্ষিত ও প্রচলিত হয়। আজ আমাদের হাতে আল-কুরআনের যে কপিটি আছে,তা হুবহু হযরত ওসমান কর্তৃক সংরক্ষিত কপির অনুরূপ এবং রসূল(সাHappyএর উপর অবতীর্ণ হওয়া আল-কুরআন। হযরত ওসমান(রাHappy কর্তৃক সংরক্ষিত সেই কপিটি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। আল-কুরআন নামক কিতাবটি মহান আল্লাহ তায়ালা সংরক্ষিত রাখবেন পৃথিবী ধবংশ হওয়া পর্যন্ত। এটি আল্লাহর ওয়াদা।

বিষয়: বিবিধ

১৩০০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

233581
১১ জুন ২০১৪ সকাল ০৯:৩৬
চোরাবালি লিখেছেন : সুন্দর বিশ্লেষনে জানলাম অনেক কিছু। ধন্যবাদ নিয়মতি পোষ্টের জন্য
১১ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০২
180232
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পরের পোস্টে চোখ রাখুন। হাদিস কিভাবে সংরক্ষিত হয়েছে সেটা নিয়ে লেখা। অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। জাজাকাল্লাহ
233598
১১ জুন ২০১৪ সকাল ১০:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : তথ্যপুর্ন এই জরুরি পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
১১ জুন ২০১৪ সকাল ১১:০২
180233
দ্য স্লেভ লিখেছেন : পরের পোস্টে চোখ রাখুন। হাদিস কিভাবে সংরক্ষিত হয়েছে সেটা নিয়ে লেখা। অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। জাজাকাল্লাহ
233716
১১ জুন ২০১৪ দুপুর ০২:৩৫
রাইয়ান লিখেছেন : Praying Praying Praying
১১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
180438
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ Happy
233778
১১ জুন ২০১৪ বিকাল ০৫:০৮
আফরা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
১১ জুন ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
180439
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বারাকাল্লাহ ফিকুম... Happy
234414
১৩ জুন ২০১৪ রাত ০৪:০১
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : শুকরান।
১৩ জুন ২০১৪ সকাল ০৮:৫৫
181126
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইরান ।
234645
১৪ জুন ২০১৪ সকাল ১০:৪২
জোনাকি লিখেছেন : খুব সুন্দর হয়েছে ভাইয়া। মাশাআল্লাহ্‌!
জাযাকাল্লাহু খাইরান।
১৪ জুন ২০১৪ সকাল ১১:২৫
181360
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বরাকাল্লাহ....দোয়া ছাড়া কথা নাই Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File