"আস-সালামুআলাইকুম ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা" -একটি সীরাত গ্রন্থ--১ম পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ জুন, ২০১৪, ০৮:৩৩:৩১ সকাল
---------------------------------(ভূমীকার কিছু অংশ বাদ দিলাম)
আমি ছোটবেলা থেকেই দুষ্ট প্রকৃতির ছিলাম। প্রচন্ড শয়তানীর কারনে প্রতিবেশী,আত্মীয়-স্বজন,ঘর ও বাইরের লোকের বিরাগভাজন হয়েছি কতবার তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এর পাশাপাশি কখনও কখনও আমার মধ্যে ইসলামের প্রতি প্রীতি উথলে উঠত। বিশেষকরে রাতে আমি অনেক কিছু নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতাম। আল্লাহকে ভাবতাম,তিনি আমাদের আচরণ দেখছেন তা জানতাম। রাতে বন্ধুদের সাথে আল্লাহর বিষয় নিয়ে,ইসলামের বিষয় নিয়ে যতটুকু জানা ছিল তা বলতাম। তাদেরকে সদুপদেশ দিতাম। আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতাম আল্লাহ আমার এই চাহনীও দেখছেন। কখনও চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম,আমার ভাল লাগত। আমার মনে হত আল্লাহ আমাকে দেখছেন,যদিও আমি তাকে দেখতে পাচ্ছিনা। তিনি ওপরে থাকেন জানতাম,তাই মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকাতাম এবং মনে মনে অনেক কিছু চাইতাম আল্লাহর কাছে। কখনও কখনও ওয়াদা করতাম দুষ্টুমী না করার, কিন্তু দিনে আমার সেসব ওয়াদার কথা মনে থাকত না। সেসময় আমি বেশ কয়েকবার স্বপ্নযোগে রসূল(সাঃ)এর সাক্ষাত লাভ করেছি এবং একবার দেখেছিলাম তিনি আমার কর্মকান্ডের কারনে কাঁদছেন। তখন আমি এতটাই অনুতপ্ত হলাম যে,ব্যথীত হৃদয়ে তার(সাঃ)সামনে দাড়িয়ে ওয়াদা করলাম,আমি আর খারাপ কাজ করব না। কিন্তু সে ওয়াদা আমি রাখিনি। এক রমজানে আমি স্বপ্ন দেখলাম-আমার ডানে মাদুরে উপবিষ্ট রসূল(সা এবং বায়ে হযরত আবু বকর(রা,আমরা সেহরী করছি। এরপর আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং তখন ছিল রমজানের সেহরীর সময়। আমি ঘুম থেকে উঠে সেহরী করলাম, কিন্তু আমার দূর্ভাজ্ঞ, দুপুরে আমি রোজা ভেঙ্গে ফেললাম।
(*** সু-মহান,অতিশয় দয়ালু এবং মহা-ক্ষমাশীল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমার সকল পাপ ক্ষমা করুন ! পৃথিবী এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়,আখিরাত কোথাও যেন আল্লাহ তায়ালা আমাকে কোনো প্রকার শাস্তি প্রদান না করেন ! আমাকে যেন তাঁর রাস্তায় চলে সর্বোচ্চ সফল হওয়া মানুষের কাতারে স্থান দান করেন ! পাঠকগণ আমিন বলুন। হতে পারে আল্লাহ আপনার দোয়া কবুল করে আমাকে এবং একইসাথে আপনাকেও ক্ষমা করে দিবেন এবং মহা পুরষ্কার প্রদান করবেন। ***)
আমার ভেতর ইসলামের প্রতি আবেগ-অনুভূতী ছিল সর্বদা। ইসলামী বিষয়গুলো কিভাবে যেন আমার ভেতর গভীর অনুভূতির সৃষ্টি করত। আমি সকল বিষয়ের থেকে আল্লাহর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতাম। ইসলামের পক্ষে ভাল হয় এমন বিষয়ে আমার সদা সমর্থন থাকত। ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হোক এমনটাই আমার ইচ্ছা ছিল। আলিমদের সংস্পর্শ আমার ভাল লাগত। তাদের অনেকেই ছিল অহংকারী ধরনের কিন্তু তারপরও তাদের কাছাকাছি থাকতে ভাল লাগত। তারা সদুপদেশমূলক অনেক বানোয়াট কাহিনী ইসলামের নামে বলত। আমি সেগুলোতে অনুপ্রাণিত হতাম। আলিমরা ব্যক্তিগত ইবাদত পালন করলেও নিজেদের ব্যক্তিত্বকে এমন পর্যায়ে উন্নিত করতে সক্ষম হননি,সে পর্যায়ে উন্নিত হলে মানুষ আদর্শ বা মডেল হিসেবে অনুকরণ করতে শুরু করে, বরং তাদের প্রায় সকল বক্তব্যেই পরনির্ভরশীলতার ছাপ পাওয়া যেত। তারা ইসলামের স্বপক্ষে সমাজের মধ্যে মোটেও কোনো বলিষ্ট কণ্ঠস্বরের সৃষ্টি করতে পারেনি। সমাজপতিরা অসন্তুষ্ট হয় এমন কথা তারা বলত না অথবা কখনও কারো গায়ে তাপ লেগে যাবে,এটা ভেবে পূর্বেই নানানভাবে অনুনয় বিনয় প্রকাশ করত বা বিভিন্নভাবে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য প্রদান করত। পরনির্ভরশীল আলিমদের কাছ থেকে বিশেষ কিছু না শিখলেও তাদের বয়ান আমার মনে ইসলামের প্রতি একটি স্থায়ী আবেগ-অনুভূতীর সৃষ্টি করে। আর পরিবারে ইসলামের মোটামুটি চর্চা থাকাতে,মায়ের কাছ থেকে উপদেশমূলক কাহিনী,সুন্নাহভিত্তিক বিভিন্ন কাহিনী,নবীদের কাহিনী ইত্যাদী শোনার কারনে অন্তরের গভীরে ইসলামের একটি চারা রোপিত হয়েছিল। এবং কোনোভাবেই সেই চারাটি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হতে পারে,সে ব্যাপারে যিনি সর্বদা সাহায্য করেছেন,তিনিই হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। তিনি ছাড়া আমার কোনো অস্তিত্ব নেই। তিনি সাহায্য না করলে আমি যে কোনো মুহুর্তে ধবংশ হয়ে যেতাম।
কোথাও ইসলাম বিরুদ্ধ কিছু ঘটতে দেখলে বা ইসলামকে কটাক্ষ করা হলে আমার ভেতরে জ্বলত এবং আমি তা সহ্য করতে পারতাম না। ইসলাম বিরুদ্ধ বিষয় সর্বদা আমার কাছে প্রচন্ড ঘৃণার অনুভূতি সৃষ্টি করত। এমনকি আমি এসব বিষয়ে স্বপ্নও দেখতাম। একবার স্বপ্নে আমি রসূল(সাঃ)এর সেই বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছি এবং আবু জেহেলকে না চেনায় একজনের কাছে আবু জেহেলের ব্যাপারে জেনে নিয়ে তাকে চরম ক্রুদ্ধতায় হত্যা করেছি। আমার হাতে তলোয়ারের সমান লম্বা একটি বাঁশের কঞ্চী ছিল এবং যখন সেটা দিয়ে আঘাত করলাম; তখন সেটা তলোয়ারের মত কাজ করল,একাধীক আঘাত করলাম এবং আবু জেহেল নিহত হল।
আমি একজন আদর্শ মুসলিম হতে চাই। একজন টগবগে যুবকের জন্যে দায়িত্ব সচেতন,আদর্শ মুসলিম হতে পারা কষ্টকর বৈকি। কিন্তু যৌবনের ইবাদতকে যারা মূল্যায়ন করে তাদের জন্যেই সফলতা। আমি সফল হতে চাই ইহকাল এবং পরকালে। কিন্তু আমার কোনো রসদ নেই। তবে আমি আল্লা অশেষ দয়ার ওপর নির্ভর করি, আমার ভেতরের একটি চাওয়া আছে,তা হল সু-মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আমাকে ক্ষমা করেন এবং যারা সফল হয়েছেন,তাদের কাতারে রাখেন। তিনি যেন আমাকে মানুষের মুখাপেক্ষী না করেন ! পৃথিবী এবং আখিরাত সকল স্থানে যেন আমাকে শান্তি দান করেন ! মহান আল্লাহ যেন আমাকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন ! আমার আমলের অবস্থা অনুযায়ী এই চাওয়া ধৃষ্টতামূলক মনে হলেও রসূল(সা জান্নাতুল ফিরদাউস চাইতে বলেছেন। আর আমি চরম পাপী,অযোগ্য এতে সন্দেহ নেই, কিন্তু আল্লাহ তো ক্ষমাশীল ! আমি নি:স্ব , কিন্তু আমি যার কাছে প্রার্থনা করছি তিনিই তো গোটা মহাবিশ্ব এবং এর ভেতর-বাইরে যা কিছু আছে তার স্রষ্টা ! তিনি অনাদী,অনন্ত,অসীম,চীরস্থায়ী,অ-মুখাপেক্ষী, সকল বিষয়ে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতী। তিনি সু-বিশাল,তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন,তিনি দান করতে পছন্দ করেন,তিনি কিছু দিলে তা কখনই কমে যায় না। ফলে আমি সেই মহা পরাক্রমশালী,ক্ষমাশীল আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাচ্ছি। তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিলে, সে ব্যাপারে তিনি একক ক্ষমতাশালী। আমি সেই মহা ক্ষমতাশালী আল্লাহর কাছে আমার বিষয়ে সাহায্য চাচ্ছি ! আমি আল্লাহকে চরমভাবে ভয় করি, কিন্তু একইসাথে আমি ভুল করি,পাপ করি,ভুলে যাই, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন ! চীরস্থায়ী শান্তি দান করুন !
আমি অনেক বছর পূর্ব থেকে সীরাত গ্রন্থ রচনার স্বপ্ন দেখতাম। এবং সেটি হবে এমন একটি সীরাত গ্রন্থ যেটি রচিত হবে সহজ-সরল ভাষায় ,যেখানে মানুষ সত্য জানতে পারবে সূত্রসহ। সীরাত গ্রন্থটির নামও মনে মনে ঠিক করে ফেলেছিলাম। স্বপ্নে রসূল(সাঃ)কে দেখার পর যখন আমি সালাম প্রদান করলাম; তখনকার অনুভূতি এখনও অনুভব করতে পারি। যখনই তা ভাবি, মনে হয় আমি আমার রসূলকে(সাঃ) এখনই সালাম সালাম প্রদান করছি। সেই অনুভূতি থেকে আমি এই সীরাত গ্রন্থটির নামকরণ করলাম-“আস্-সালামুআলাইকুম, ইয়া রাসূলুল্লাহ(সাঃ)।” নামকরনের স্বার্থকতা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন,কিন্তু আমি আমার অনুভূতী থেকে এটি করেছি। সীরাত গ্রন্থের ক্ষেত্রে নাম করনের স্বার্থকতা বিবেচ্য বিষয় হতে পারে না।
আমি যা সত্য বলে জানি সেটাই এই কিতাবে অন্তর্ভূক্ত করেছি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যা কিছু মিথ্যা বা মিথ্যার সংমিশ্রণ মনে হয়েছে বা অধিক প্রচলিত হওয়ার কারনে সত্য বলে মনে হয় কিন্তু আদতে মিথ্যা; তাও সাধ্য অনুযায়ী পরিহার করেছি। কিন্তু তারপরও আমার লেখা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হতে পারে,জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে অসত্য তথ্য অন্তর্ভূক্ত করা হয়ে থাকতে পারে, সেসব বিষয় পাঠকের চোখে পড়লে জানাতে অনুরোধ করছি। আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই এই সীরাত গ্রন্থটি লিখেছি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যেন আখিরাতে এটাকে আমার নাযাতের ওসিলা হিসেবে গ্রহন করেন !
বি:দ্র: মূল লেখা আসবে আগামী কাল ইনশাআল্লাহ ,এবং কিছু স্থানে আমার সূত্র দরকার। আলিমরা সে সম্পর্কে অবহিত করলে উপকৃত হব। আমি পরে জানাবো কোথায় সূত্র দরকার। জাজাকাল্লাহখায়রান
বিষয়: বিবিধ
১৫২৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমীন। অন্তর থেকেই দোয়া করছি আল্লাহ্ আপনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দিন। আমার জন্যেও একি দোয়া করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন