স্প্রিংফিল্ডের পথে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৬ মে, ২০১৪, ১২:২৮:২৬ দুপুর
তারিখ: ৫ই মে,২০১৪
গত কয়েকদিয়ে কয়েকটি স্থানে ভ্রমন করেছি। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এমনকি সময় থাকা সত্ত্বেও,শুধুমাত্র অলসতার কারনে লেখা হচ্ছে না। তবে লেখা প্রসব করার বেদনা নিয়েই দিন গুজরান করছিলাম। আজ ছিল রবিবার। কোথাও যেতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু সেটা কোথায়,তা বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে গাড়ির তেলের দাম বেড়েই চলেছে। শীতে কম থাকে আর গৃষ্মে বেড়ে যায়। এখানে প্রতিদিনই তেলের দাম ওঠানামা করে। একেক কোম্পানীর তেলের দাম একেক রকম। আজ সেইফওয়ের পেট্রোলের দাম প্রতি গ্যালন ৩.৭৩ ডলার। এরা আবার এদের স্টোরে বেশী কেনাকাটা করলে তেলের ক্ষেত্রে প্রতি গ্যালনে সর্বোচ্চ ১ ডলার পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেয়। শেল কোম্পানীর তেলের দাম দেখলাম ৩.৮৭ ডলার। অথচ মাস দুয়েক আগে এটা ৩ ডলারের কমে তেল বিত্রী করেছে। এরা তেলের ক্ষনির মালিক হওয়ার কারনে বিভিন্ন অজুহাতে দাম বাড়ায়। গৃষ্মে মানুষ বেশী ভ্রমন করে,এসময় গাড়ী বিক্রীর পরিমানও ব্যপক বৃদ্ধী পায়। তাই এই সময়েই এরা তেলের দামটা বেশী রাখে। তারপরও এই দাম অস্ট্রেলিয়ার চাইতে অনেক কম। ২০১৩ সালে সেখানে প্রতি লিটার দেখেছিলাম ১.৭ ডলার(প্রতি গ্যালন ৬.৪৪ ডলার)। যাইহোক মোটামুটি কাছাকাছি হয় এমন কিছু খুজে না পেয়ে বসে ছিলাম। হঠাৎ ভাবলাম ফার্মহাউসের রাস্তা ধরে মোটামুটি লং ড্রাইভ করলে কেমন হয় ! সেটাই হল।
আমার বাড়ির আশপাশে বেশ কিছু ফার্ম হাউস আছে। তাদের কয়েকটিতে ঘোড়াও দেখেছি কিন্তু বাড়ির পাশের সৌন্দর্যের দাম কম,এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য। দূরে গিয়ে এই একই দৃশ্য দেখার মধ্যে একটা মজা আছে। মন নতুন কিছু দেখতে চায়,দৃশ্য এক হলেও দূরত্ব একটু নতুনত্য তৈরী করে। মন ওটাকেই নতুন বিষয় হিসেবে ধরে নিয়ে মারহাবা বলে ওঠে। তাছাড়া বাড়ির পাশের দৃশ্য এবং দূরের সমজাতীয় দৃশ্যের মধ্যে কিছুটা অমিলও থাকে। মন সেসব অমিলকে দেখেই বুঝে ফেলে। বিষয়টা বেশ জটিল। আমি আবার জটিল জিনিস নিতে পারিনা। তার চেয়ে বরং ঘুরতে থাকি পথে প্রান্তরে।
চতে শুরু করলাম। রাস্তার দুপাশে সবুজ ঘাসের মাঠ। হাজার হাজার একর জমিতে ঘাসের চাষ করা হয়েছে। সে দৃশ্য দেখতে যে কি ভাল লাগে ! একইসাথে গম,মিন্ট,হ্যাজেল নাট,আঙ্গুর,আপেলসহ নানান ফল-ফসলের চাষ করা হয়েছে। কোথাও পাহাড়ের পাদদেশে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে গাছ লাগানো হয়েছে। সেসব গাছ একইসাথে বেড়ে উঠেছে সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে। সুশৃঙ্খল বনভূমী দেখতে ভাল লাগে। ফসলের ক্ষেত অত্যন্ত যতেœর সাথে রক্ষনাবেক্ষন করা হয়। সর্বক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এবং প্রযুক্তির ব্যবহার চোখে পড়ে। বিশাল বিশাল ভূখন্ডে পানি সেচের জন্যে জমিতে আড়াআড়ি বড় বড় বিশেষ পানির পাইপ সেট করা হয়। একটি প্রধান পাইপ বড় বড় চাকার সাথে যুক্ত থাকে। মূল পাইপ থেকে কিছুদূর পর পর একাধীক চিকন পাইপ এদিক ওদিক করে বসানো আছে। সেখান থেকে প্রবল বেগে বৃষ্টির মত পানি ঝরতে থাকে ভূমীতে। ক্ষেতটির প্রস্ত অনুযায়ী সেচ যন্ত্রটির দৈর্ঘ্য নির্ভর করে। শতাধীক মিটারের নীচে এগুলোর দৈর্ঘ্য দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না। এটি কয়েকটি মোটরের সাহায্যে ধীরে ধীরে চালনা করা হয় ক্ষেতের একদিক থেকে আরেক দিক। এভাবে এটি বৃষ্টির ধারায় ক্ষেত্রে পানি সিঞ্চন করে। ফসল কোথাও খারাপ হতে দেখিনি। এসব দেখে ভেবেছি বাংলাদেশের মত প্রাকৃতিকভাবে উর্বর জমি এরা পেলে সারা বিশ্বের অধিকাংশ ফসল এরাই ফলাতো।
এটা বসন্ত। কয়েকদিন যাবত রোদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। আজ সকালে খানিক মেঘ করে এখন আবার সূর্য উদীত হয়েছে। তাপমাত্রা ৬৫ডিগ্রী ফারেনহাইট। এটাকে গরম বলা হয়। আমার কাছে বেশ আরামদায়ক তাপমাত্রা। চলছি, কোথাও কোথাও বড় বড় গাছ,অথবা বিশাল সমসূমীর পাশেই কিছুটা বন-জঙ্গল,আবার সবুজ সমতল ভূমী। ডানে-বামে ফার্ম হাউস। এর ভেতরেই আছে কৃষকের চমৎকার সব বাড়ী। অধিকাংশই কাঠ-এ্যালুমিনয়ামের তৈরী। তবে কিছু বাড়ি পুরোপুরি কাঠের তৈরী। সেগুলোর আকর্ষন অন্য রকম। কোথাও ফুলের বাগান। কোনো কোনো বাড়ির সামনের অংশের ঘাস মুড়িয়ে রাখা হয়েছে,কোনো কোনোটা দেখলে সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করে। কারো বাড়ির সাথে একটি বড় ঘেরা স্থান,যেখানে ঘোড়াগুলো ঘাস খাচ্ছে। কোনো কোনো উম্মুক্ত সবুজ মাঠে গরু অথবা ভেড়া চরে বেড়াচ্ছে। এসব পশুদের শরীর স্বাস্থ্য খুবই যুৎসই। বিশেষ করে ভেড়া দেখলেই আমার পিকনিকের কথা মনে পড়ে। অনুমতি পেলে তাড়িয়ে ধরে জবাই করে,চামড়া ছুলে ওখানেই রান্না করা আমার কাছে কোনো ঘটনা না।
দুপাশে সবুজের ছড়াছড়ি,তার মাঝ ধরে চলেছি। একে একে পার হয়ে যাচ্ছি হালশে,শেড সিটি,হারিসবার্গ,জাংশন সিটি। এসব স্থানে ঘাসের বিজ সংগহের বড় বড় স্টোর রয়েছে। কয়েকটা কারখানাও দেখলাম। যান্ত্রিক গাড়ির সাহায্যে ক্ষেত থেকে ঘাসের বীজ সংগ্রহ করা হয়।
আজ ইউজিন এবং স্প্রিংফিল্ডের দিকে যাচ্ছি। আসলে কোনো দর্শনীয় স্থানের উদ্দেশ্যে নয়,বরং রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগের জন্যেই যাত্রা। একারনেই হাইওয়ে-৫ বাদ দিয়ে ছোট হাইওয়ে-৯৯ ধরে অগ্রসর হচ্ছি। তবে মাঠ-ঘাটের ভেতর দিয়ে এটি অগ্রসর হলেও রাস্তা সোজা। কোথাও কোথাও ছোট নদীর উপরের ব্রীজে এসে থেমেছি। খুব ভাল লেগেছে। সর্পীল বেগে বয়ে চলা চমৎকার ছোট নদী এবং তার দুপাড়ের সবুজ প্রকৃতি দেখলে চোখ জুড়াবেই। রাস্তায় এক স্থানে এসে পানি পানের বিরতি নিলাম। কোমল পানীয় এড়িয়ে চলছি কিন্তু এই পানীয় আমাকে দেখলে এমনভাবে তাকিয়ে থাকে,আবেদন উপেক্ষা করার উপায় থাকেনা। তবে একেবারে এক লিটার খেয়ে ফেলা আমার উচিৎ হয়নি, বিশেষ করে এমন উচ্চ ক্যালরীযুক্ত পানীয়টি। নাহ, আর খাওয়া যাবেনা।
ইউজিনের ওয়ালমার্টে আসলাম। ওয়ালমার্ট আমার বেশ প্রিয়,যদিও বেশীরভাগ জিনিস অন্য স্টোর থেকে কিনি। দামে সস্তা হওয়াতে অনেকগুলো টাই এবং বেল্ট কিনে ফেললাম। খাবার জিনিস না কিনলে মানুষ কি বলবে,এই চিন্তা করে ৩ পাউন্ড ব্লু-বেরী,১ পাউন্ড ব্লাকবেরী,২ পাউন্ড স্ট্রবেরী,কিসমিস,ক্রানবেরী,আপেল,কলা,জুস,চিপস,বিস্কুট,দৈ,তরমুজ ইত্যাদী কিনলাম। এমন খাওয়া খেলাম,যেকোনো লোক দেখলে ভাবত-এই ছ্যামড়া জীবনে কিছু খায়নি !
এবার আসলাম স্প্রিংফিল্ড ওয়ালমার্টে ,এখানে ঘুরলাম। সস্তায় একসাথে প্যাক করা ৫টি টিশার্ট পাওয়া যাচ্ছিল,কিন্তু নিলাম না। সস্তা দেখলে আমি তালকানা হয়ে যাই কিন্তু বুঝলাম আমার বিবেচনাবোধ জাগ্রত হতে শুরু করেছে। এবার ঢুকলাম এক বিশাল স্পের্টসের দোকানে। আহা এটা একটা জায়গা বটে। অনেক কিছু দেখে পছন্দ হল কিন্তু দাম অনেক বেশী। বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্রান্ড এরা বিক্রী করে। তবে একটা সাইকেল আমার খুব পছন্দ হল। সাইকেলটা যে কেউ দেখলেই পছন্দ করবে। এটার চাকা খুবই সরু কিন্তু মজবুত। উন্নতমানের স্টিল দিয়ে এটি তৈরী। হ্যান্ডেলটি ধরলে মনে হবে এ জিনিস না চালিয়ে বাড়ি ফিরব না। হাতলটি গোলাকার হয়ে শেষের দিকে খানিক চ্যাপ্টা হয়ে শেষ হয়েছে,এতে চালক ধরতে মজা পাবে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হবে। একেবারে চকলেটের মত খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করল জিনিসটা। তবে সমস্যা হল,এটার দাম মাত্র ১৩শ ডলার বা বাংলা টাকায় এক লক্ষ টাকা। কেনা সম্ভব নয় কিন্তু তার পরও এটা নিয়ে তাদের সাথে খানিক কথা বললাম। তারপর পেছনে তাকাতে তাকাতে চলে আসলাম।
এবার আসলাম এমন একটা রাস্তা ধরে,যে রাস্তা অপ্রসস্ত কিন্তু অসাধারণ। এর দুধারে সুন্দরভাবে গাছ লাগানো। কি গাছ তা জানিনা কিন্তু তার রং হালকা সবুজ এবং কোনো কোনোটার রং উজ্জ্বল সবুজ। সাথে আছে সবুজ সুন্দর ঘাসে পরিপূর্ণ লন। সে না দেখলে ঠিক বোঝা যাবেনা কতটা সুন্দর। আসলাম স্প্রিংফিল্ড শপিং মলে। এটা একটা বিশাল শপিং মল। এর ভেতরে বড় মুভি থিয়েটার আছে,আজ ছুটির দিনে অনেকেই দেখলাম ঢুকছে। এখানে আছে বিখ্যাত সব ব্রান্ডের দামী পোষাক ও সামগ্রীর দোকান। আমি শুধু দেখার জন্যে ঘুরঘুর করলাম। গুলশানের আর্টিসান থেকে স্টক-লটের যেসব জামা-কাপুড় কিনতাম ৫শ-১হাজার টাকার মধ্যে,এখানে ঠিক সেরকম জামা কাপুড়ের দাম ৪০-৫০% ডিসকাউন্ট দেওয়ার পরও ৫০-৯০ ডলার। কিছু কিছু পোষাকের দাম মাত্রাতিরিক্ত। মনে মনে বললাম,যারা এসব বানিয়েছে,তাদের চেহারা যদি দেখতে তবে এটা পরতে লজ্জা পেতে। নিকটে থাকা আরেক ওয়ালমার্টে গেলাম। এটি একেবারে ছোট খাট দেখলাম। এরকম ছোট ওয়ালমার্ট এর আগে দেখিনি। হাটাহাটি করে অনেক সময় ইতিমধ্যে ব্যয় করেছি। চলে আসলাম। কারন ৭০ কি:মি: দূরের কর্ভালিসের হালাল স্টোরে যাব।
আবারও অত্যন্ত চমৎকার ফার্ম হাউসের পথে সেদিকে অগ্রসর হলাম। পথে কয়েকবার বৃষ্টি এবং রোদের দেখা পেলাম। আজ ইন্ডিয়ান মশুর ডাল কিনলাম ৫ কেজী,মশলাপাতি,মাংস এসব তো আছেই। ডাইল না হলে আমার চলেনা। কর্ভালিসে দুটি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে মাঝে মাঝে হাভাতের মত খাই। তারা বিভিন্ন রকমের রান্না-বান্না করে। মাত্র ১০ ডলারে সকল খাবার চেখে দেখা যায়। আল্লাহ যেন আমার রিয্ক বর্ধিত করে দেন ! খেতে আমার খুব ভাল লাগে।
বিষয়: বিবিধ
১৬০৫ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওয়ালমার্ট আমার বেশ প্রিয়,যদিও বেশীরভাগ জিনিস অন্য স্টোর থেকে কিনি। দামে সস্তা হওয়াতে অনেকগুলো টাই এবং বেল্ট কিনে ফেললাম। খাবার জিনিস না কিনলে মানুষ কি বলবে,এই চিন্তা করে ৩ পাউন্ড ব্লু-বেরী,১ পাউন্ড ব্লাকবেরী,২ পাউন্ড স্ট্রবেরী,কিসমিস,ক্রানবেরী,আপেল,কলা,জুস,চিপস,বিস্কুট,দৈ,তরমুজ ইত্যাদী কিনলাম। এমন খাওয়া খেলাম,যেকোনো লোক দেখলে ভাবত-এই ছ্যামড়া জীবনে কিছু খায়নি !
আমি ও আপনার মতই দোয়া করি। খাইতে আমারও খুবই ভাল লাগে।
সবুজ ভাইয়ার সাথে একমত।
তবে ইবনে বতুতা ভাইয়ার ছবি এবং লিখা সবসময়ই আনন্দদায়ক।
সাইকেলটা দেখতে মন চাইতেচে।
খুব ভাল লাগলো। ভ্রমনের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের বিষয় আছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন