বাচ্চা শয়তান কি বাত

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ মে, ২০১৪, ০৯:৪২:৪৯ রাত



আমার কাছে আনন্দটাই ছিল আসল। উচিৎ অনুচিতের ধার আমি ধারতাম না। একদিন আমি দেখলাম ইদু আমার দিকে হেটে আসছে আর তার সামনেই মানব বিষ্ঠা।

আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন সে ওটার উপর পা দিবে। ইদু’র স্টেপ মাপতে লাগলাম। ওটাতে পা দিয়ে সে বিব্রত হলে এক চরম খুশীর অনুভূতি লাভ করব সেই চিন্তায় আমি বিভোর। অথচ সেদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এমনই একটি অপ্রত্যাশিত বিপদ থেকে সে আমাকে সতর্ক করে উদ্ধার করেছে। আমি সেদিন এমনই এক বস্তুর উপর পা দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেই অশুভ ক্ষনে সে এই..ই.ই.ই.ই বলে উঠল উচ্চস্বরে। তখন আমি সতর্ক হলাম এবং বাঁচলাম। আজ এই পরিস্থিতিতে নিয়মানুযায়ী আমাকেও তাকে সতর্ক করার কথা। কিন্তু এই অপরিসীম মজা উপভোগে আমার নফস আমাকে এতটাই তটস্থ রেখেছিল যে আমি অন্য চিন্তার সুযোগ পেলাম না।

ইদু হাটছে,তার চোখ আমার দিকে। আমি আড়চোখে দেখেনিলাম আর মাত্র কয়েক কদম,তারপর সেই মহেন্দ্রক্ষণ(আমার জন্যে)। লাফ দিয়ে একটা চিৎকার করে অন্যদেরকে ডেকে আনব এবং তার ধরাশায়ী অবস্থার চিত্র দেখে ব্যপক বিনোদন উপভোগ করব,এই ছিল আমার একমাত্র চিন্তা। অন্যরা ব্যাপারটি লক্ষ্য করেনি। করলে তারা তাকে সাবধান করত। সে সময় কিছু স্থানীয় পিচ্চি রাস্তাঘাটে টয়লেটপর্ব সারত বেশ নিশ্চিন্তে। অনেকে সবার অগোচরে কাজটি করে ফেলত। কখনও অভিযোগ করলে তাদের মায়েরা এটা পরিষ্কার করে দিত। আর আমাদের খেলার এরিয়াতে এটা করা হলে আমরা ওটার উপর বালি,মাটি দিয়ে রাখতাম এবং একটা আস্ত ইট চাপাও দিতাম যাতে কারো পায়ের স্পর্শে তা উম্মুক্ত না হয়ে পড়ে।

যাইহোক ইদু হাটছে। হঠাৎ তার পা বিষ্টার একেবারে কাছে এসে পড়ল আর আমি মহা আফসোসের সর্বোচ্চ অভিব্যক্তিতে ফেটে পড়লাম....“ইশরে...!” বলে। এক বিশাল চিৎকার দিয়ে বললাম-একটুর জন্যে হলনা। ঠিক সে মুহুর্তে ও পায়ের দিকে তাকালো এবং উক্ত বস্তু দর্শনে এক লাফে সরে আসল এবং বারবার পা চেক করতে লাগল। আমি বললাম লাগেনি কিন্তু মিস হয়ে গেল। আমি স্টেপ গুনছি এবং আশা করছিলাম এক স্টেপ ঠিক ওটার পরে পড়বে। সে অন্যদের মাঝে দাড়িয়ে আমাকে খানিক গালি-গালাজ করল। দুজন মুরব্বী আবার আমার কর্মকান্ডে হাসতে শুরু করল। তবে এসব ক্ষেত্রে সব সময় মিস হয়েছে এমন নয়। বহুবার আমি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ঘটনা ঘটিয়েছি এবং এজাতীয় ক্ষেত্রে তাদেরকে সতর্ক করিনি।

আমরা যখন মাঠের পুকুরে গোসল করতে যেতাম,তখন হবিবারের বাশবাগানে এ জাতীয় ঘটনা বেশী ঘটত। হবিবারের বাশ বাগান ছিল যশোরের ভেতর সবচেয়ে বড়। ৩৫বিঘা জমির উপর এ বাশবাগান। এর ভেতর কিছু পরিবারকে তারা থাকতে দিয়েছিল। আর বাশবাগানের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে আমার স্কুল এবং হাসপাতাল অবিমুখে। রাস্তার ওপারে আছে বস্তী। ওটা ম্যাথর পট্টি,আমরা ওটাকে লাইন পাড়া বলতাম। লাইন পাড়ার অর্থ হচ্ছে ওদের বস্তী/পাড়ার পাশ দিয়ে রেল লাইন চলে গেছে। মূলত রেলের জায়গাতে ওরা ঘর বানিয়ে যুগযুগ ধরে বসবাস করছে,যদিও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ওটা দখল করে তাদের কাছ থেকে কিছু ভাড়া আদায় করে। যাইহোক উক্ত লাইন পাড়ায় সে সময় টয়লেট ছিল বলে মনে পড়ছে না। তারা সকলে হবিবারের বাশবাগানে এ পর্ব সমাধা করত। আর বাশবাগানের ভেতর যে কটা পরিবার ছিল তারাও বাশবাগানকেই টয়লেট হিসেবে গ্রহন করেছিল। যে কবি বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠতে দেখে কবিতা লিখেছিলেন,সে কবি হবিবারের বাঁশ বগানে না এসে ভালই করেছেন। নইলে এই চমৎকার কবিতাটি থেকে দূর্গন্ধ ছড়াতে পারত। আমরা স্কুলে যাবার সময় ডানে অবস্থান করা বাগানের কিছু কিছু অংশে নিঃশ্বাস বন্ধ করে জোর কদমে হাটতাম।

বাঁশবাগানের ভেতর দিয়েই মাঠের পুকুরে যেতে হত,অবশ্য মুল রাস্তা ধরেও যাওয়া যেত কিন্তু আমরা ভেতরের রাস্তা পছন্দ করতাম। এটা আমাদের জন্যে সোজা হত। ভেতর দিয়ে কম সময়ে পুকুরে উপস্থিত হওয়া যেত। পথে হবিবারের বাশ বাগানের ভেতর আরো দুটি পুকুর পড়ত কিন্তু সেগুলো আমরা পছন্দ করতাম না। সেখানে কমই গোসল করেছি আর মজা পায়নি। খোলামেলা না হওয়াতে সেগুলো তেমন পছন্দ ছিলনা। মাঠের পুকুর ছিল যেমন বড় তেমনি খোলামেলা। এর দুধারেই শান বাধানো বড় ঘাট ছিল। বহু লোক আসত এখানে গোসল করতে। এই মাঠের পুকুরে আমার অনেক ইতিহাস আছে। এটা ছিল আমার প্রিয় পুকুর যেখানে লাফালাফি করে আমি চরম তৃপ্তী পেতাম এবং তিন/চার ঘন্টার নীচে গোসল শেষ করতে পারতাম না। বাশ বাগানের ভেতর কিছু পয়েন্ট ছিল যেখানে আমরা নাক মুখ বন্ধ করে দ্রুত পদক্ষেপে হাটতাম। আমি অনেক সময় সকলের আগে আগে গিয়ে আমাদের হাটার রাস্তায় কোনো মানব বিষ্ঠার অস্তিত্ব খুজে পেলে তার ওপর বাশের শুকè পাতা বিছিয়ে রাখতাম। এরপর আবার দলের সাথে মিলিত হতাম অথবা উক্ত স্থানের পাশে বাশের কচি পাতা ছিড়ে তার গোড়ার নরম অংশ খাওয়ায় লিপ্ত হতাম যাতে তারা ভাবে আমি এ কাজটি করার জন্যেই এখানে অবস্থান করছি। অথবা প্রসাবের নিয়তে বসে পড়তাম। মাথা থাকত ওদের রাস্তা বরাবর। খানিক পরে যখন ২০/২৫ জনের দলটি উক্ত স্থান পার হত তখন কারো না কারো পায়ে ওই জিনিস লাগতই। তবে বেশ কয়েকবার মিসও হয়েছে। অনেক সময় আমি দূর থেকে বলতাম এ রাস্তা দিয়ে আয়,কারন ওদিকে খারাপ জিনিসে ভরপুর। তারা আমার কথা শুনে ধরা খেত বটে কিন্তু আমি স্বীকার করতাম না যে আমি জানতাম এ পথেও ওটা ছিল। কারন আমি অবিশ্বাসী হলে এক দিনেই মজা ফুরিয়ে যেতে পারে বলে মনে করতাম।

হবিবারের ঐতিহাসিক বাঁশ বাগানে দূর্গন্ধ ছড়ানোর কাজ আমরা দল বেধেও করতাম। আমাদের লজ্জা শরম তখন এখনকার মত ছিলনা। এ বাঁশ বাগানে আমি যে কত লোককে মানব বিষ্ঠার ওপর হাটিয়েছি তার কোনো হিসাব নেই। কেউ ফান্দে পড়লে আমি চরম পুলক অনুভব করতাম। কেউ কেউ নাক মুখ ভেংচী দিয়ে অশ্রাভ্য গালি-গালাজ করত,তা শুনতেও যথেষ্ঠ মজা লাগত।

বিষয়: বিবিধ

১৩১৫ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

216664
০২ মে ২০১৪ রাত ১০:০১
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
216689
০২ মে ২০১৪ রাত ১১:০৫
আহ জীবন লিখেছেন : গ্রামের বাড়িতে দুষ্টামির মজাই আলাদা। ভালো রকমের শয়তান ছিলেন তো দেখি!!!! Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Skull Skull Skull Skull
০৩ মে ২০১৪ সকাল ১০:২০
164979
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy Happy
216759
০৩ মে ২০১৪ সকাল ০৭:২০
শেখের পোলা লিখেছেন : যাক আল্লাহ বাঁচিয়েছে ঐ বাচ্চাটা আর বড় হয়নি৷ নয়ত আজও এমন চলতে পারত৷ তবে ও বস্তু পথেঘাটে এখন কমেই গেছে৷পরে আবার আসব৷
০৩ মে ২০১৪ সকাল ১০:২০
164980
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
216779
০৩ মে ২০১৪ সকাল ০৮:২২
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনি তো ভালো বাঁদরামী করেছেন Smug আমি হলে আপনাকে ঠিক ফাঁদে ফেলতাম। বেচে গেছেন।
০৩ মে ২০১৪ সকাল ১০:২১
164981
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহেহে তা যা বলেছেন....Rolling on the Floor Rolling on the Floor
216881
০৩ মে ২০১৪ দুপুর ০২:২৩
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : হের লিগ্যাই তো চিন্তা কইরা কুল কিনারা পাচ্ছিলুম না ব্লগটি পড়ার সময় আমার মনিটর দিয়ে এত্তো দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ক্যান?
০৪ মে ২০১৪ সকাল ১০:১৮
165338
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor কোনো এক কমেন্টে বলেছিলেন আপনি আপনার প্যান্টে ইয়ে করে দিয়েছেন কিন্তু সর্দীর কারনে অনুভব করতে পারছেন না। ....আপনার সর্দীটা বোধহয় সেরে গেছে Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
217586
০৫ মে ২০১৪ রাত ০৪:০২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : কি আর বলবো,দুষ্ট ছেলের দুষ্টা পড়ে মনে হচ্ছে এখনই আবার শুরু করি।
০৬ মে ২০১৪ রাত ১০:৫০
166368
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওই টাওয়ারটার মাথা থেকে লাফ দেন....কোমরে দড়ি বেধে...

নেচে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি বলবে নাহহহহহ....আমি তোমাকে ভালবাসি...ওভাবে মরো না, এই কথা শুনে উত্তেজনায় আপনার কোমরের দড়ি যাবে ছিড়ে...Rolling on the Floor Rolling on the Floor
218403
০৭ মে ২০১৪ সকাল ১১:২০
নিভৃত চারিণী লিখেছেন : আমি কিন্তু একেবারেই ভদ্র মেয়ে। মোটেই দুষ্টুমি করি না। Cheer Cheer Cheer

ভালো লাগলো। ছোটবেলাটা ভেসে উঠলো চোখের সামনে।যদিও আমরা এত দুষ্টুমি করার সুযোগ পাই নি। ধন্যবাদ।
০৭ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৩৭
166460
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File