বাচ্চা শয়তান ও তরিকুলের দোকান

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০৩:৫৯ রাত



তরিকুলের দোকান ছিল আমার জীবনের ঘটনাবহুল স্থান। বহু আকাম কুকামের পরকিল্পনা হত এখান থেকে। তরিকুল ছিল আমার অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু,যদিও বয়সে কিঞ্চিত বড়। ছোট কাঠের দোকানের সামনে ছিল বাশের চটার তৈরী একটি লম্বা বেঞ্চ। আমরা কয়েকজন বসতাম দোকানের ঝাপের নীচের কাঠের তৈরী অংশে। দোকান খোলার পর কাঠের ঝাপিটি নীচে অবস্থিত বাঁশের খুটির উপর রাখা হত,তখন সেটা হত একটি চমৎকার বেঞ্চ। তরিকুলের কাছের লোকেরা ওখানে বসত। সে তার সমস্ত কথা আমাকে বললেও আমি সকল কথা বলতাম না। তবে মজার কাহিনীগুলো বর্ণনা করতাম বেশী। ছোটবেলা থেকেই আসর জমিয়ে ফেলতে পারতাম। তরিকুলের মা’ও দোকানদারী করত। সে সময় তরিকুল আমাদের সাথে খেলতে বা নদীতে সাতার কাটতে যেত। কারো খারাপ ঘটনাগুলো বর্ণনায় আমি কৃপনতা করতে আগ্রহী আর নাম প্রকাশ না করেই বলার চেষ্টা করব তবে সাধারণ দুষ্টুমীর ব্যাপারে বলা যায় তাতে তাদের উজ্জত নষ্ট হবে না বলে মনে করছি। আমি সে সময়ে অনেকের মধ্যে অনেক খারাপ বিষয় দেখেছিলাম এবং অনেকে আমার সাথে তাদের ঘটিত খারাপ ঘটনা বর্ণনা করেছিল,সেগুলো আমি কখনই প্রকাশ করব না। তরিকুল বেশ ভাল মনের মানুষ ছিল। দোকানদারী করতে করতেই সে কাচের মার্বেল(গুটি) খেলত আমাদের সাথে। কোনো কাস্টমার আসলে আবার দোকানে ঢুকত। তার দোকান ছিল আমাদের বাড়ী থেকে শ’দুয়েক গজ দূরে। স্কুল থেকে ফিরেই তার দোকানে গিয়ে বসতাম,এরপর একে একে অনেকে আসত। আসর জমে উঠত। তার দোকানের সামনেই ছিল এক প্রশস্ত আঙিনা। সেখানে আমরা খেলতাম। তার দোকানের চারিপাশের সকল স্থানই ছিল আমাদের খেলার জায়গা।

তরিকুলের দোকানের সুপার বিস্কুট,লাল বিস্কুট,টোস্ট,তেতুল,বাদাম এবং মর্তমান কলা ছিল আমার প্রিয়। সে কলার ঘ্রান দূর থেকে পাওয়া যেত। এখনকার কলাগুলো শুধুমাত্র পচে গিয়ে দূর্গন্ধ ছড়ায়,যদিও কেমিকেলের কল্যানে তার পঁচতেও বেশ সময় লাগে। কেউ কিছু কিনে অন্যের সাথে ভাগ করে খেত। আমিও করতাম। তবে সকলেই চাইত গোপনে একা একা খেতে। অনেক সময় অনেকে এমন সময় দোকানে আসত যখন অন্যেরা না থাকে। কারো সামনে কেউ কিছু কিনলে অন্যরা লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকাত এবং বলত-এই একটু দে। এই কথা শুনে কেউ কেউ ঝেড়ে দৌড় দিত। তখন আমরা তাকে তাড়া করে ধরতাম। এ পর্যায়ে কেউ কেউ খাবারগুলো রাক্ষস স্টাইলে খেয়ে সাবাড় করত,কারন ধরা পড়লে ভাগ হয়ে যাবে। আমি তাড়া করলে একটু কৌশল অবলম্বন করতাম। প্রথমে চোখ-মুখের ভাবভঙ্গীতে এমন ভাব আনতাম যে,এটা না খেলেও আমার চলে(আসলে ওটা না খেলে আমার চলত না)। আমি আস্তে করে হেটে তার কাছাকাছি আসতাম এবং আচমকা তার খাবার ছিনিয়ে মুখে পুরে দিতাম অথবা তাকে ভাগ দিতাম। এ কাজটি বেশী জুনিয়রদের(বাচ্চা)সাথে করলে তারা কাদত। যারা কাদত,তাদের জিনিস আমি খেতাম না। তবে পূর্বে বেয়াদবী(আমার বিবেচনায়)করলে তারটা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিতাম। তখন আবার আমার বাড়িতে নালিশ চলে যেত,এবং বকা শোনার ব্যাপারে আমি অভ্যস্ত ছিলাম।

কখনও কখনও কাউকে তাড়া করে বিফল হলে পরে প্রতিশোধ নেওয়া হত। আর ধরার পর যদি দেখতাম সে খেয়ে ফেলেছে তাহলে কয়েকটা ঘুষি লাথি মেরে ছেড়ে দিতাম। অথবা মুখের মধ্যে মাটি পুরে দিতাম। অথবা জামা কাপড় খুলে নিতাম। এসবে যথেষ্ট মজা নিহিত ছিল।

একদিন আমার সহপাঠী অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইদু (ইদ্রিস আলী)জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দোকানে আসল এবং আমার সামনেই একটি বলা কিনল। আমি যাদের সাথে মারামারি করতাম না,তাদের একজন হল ইদু। ইদুর সাথে আমার জীবনে একবারের জন্যেও মনোমালিন্য অথবা কথা কাটাকাটি হয়নি। আমরা সবকিছু ভাগাভাগি করে খেতাম। তো ইদু কলাটা ছুলে একটু একটু করে খেতে লাগল। বুঝলাম কলাটা তার খেতে ভাল লাগছে। সে অসুস্থ্য তাই এটা তার খাওয়া উচিৎ,এটা মনে করছিলাম। এটার ভাগ না পেলে মনোক্ষুন্ন হবনা,এমনটা মেনে নিয়েছিলাম। সম্ভবতঃ ইদুও চাচ্ছিল পুরোটা একাই খেতে,তাই একটু একটু করে খাচ্ছিল এবং আমার দিকে তাকাচ্ছিল। অর্ধেক খাওয়া হলে সে আমাকে কলাটা দিয়ে দিল। আর আমি সমস্ত রকমের চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে দুই কামড়ে কলাটা সাবাড় করলাম। খাবার পর আমি আশ্বস্ত হতে পারিনি। বারবার মনে হচ্ছিল,কলাটা তাকে পুরো খেতে দেওয়াই আমার কর্তব্য ছিল। অবশ্য আমি কর্তব্যপরায়ন,এমনটা বিশ্বাস করার কারন থাকা উচিত নয়।

সাবুর পরে যাদের সাথে নির্দিধায় কোনো কিছু ৫০-৫০ ভাগ করে খেতাম তাদের একজন হল ইদু। সে ভাগ করে খাওয়ার ব্যাপারে বরাবর ছিল প্রচন্ড সৎ। অন্যদের সামনে ভাগ করলে দিতে হতে পারে বলে মাঝে মাঝে তার বাড়িতে ভাগাভাগি হত। সে তার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসলেও আমার সাথে ভাগাভাগি করে খেত। তার মানুষিকতা ছিল খুবই ভাল। ইদু জীবনে একদিনের জন্যেও আমার বিরোধীতা করেনি। ন্যায় হোক আর অন্যায় হোক সে আমাকে সমর্থন করেছে।

এক সময় আমাদের হবি ছিল তরিকুলের দোকানে যত জুনিয়র বসবে তাদেরকে ল্যাংটা করে পশ্চাৎদেশে আলকাতরা মাখাবো। অনেককেই এটা করা হয়েছিল। কিছু ল্যাংটা পিচ্চি দোকানে এসেই বেঞ্চে বসে পড়ত। তাদের সাবলীলভাবে বসা দেখে আমার আর তরিকুলের মাথায় এই পরিকল্পনার জন্ম। প্রথমে আমরা বেঞ্চের উপর আলতো করে আলকাতরা মাখিয়ে রাখতাম,তারা বসে বিপদে পড়ত। তখন আমরা হাসি টাট্টা করতাম। একদিন আমাদের বাড়ির পেছনের আজিজ চাচা,যার দৈহিক শক্তি ছিল অনেক। আমি তাকে তুই সম্মোধনে কথা বলতাম। কখনও কখনও সে আমাদের সাথে মার্বেলও খেলত। তো, তরিকুলের দোকানে সে এসেই হঠাৎ ইদুর প্যান্ট খোলার চেষ্টা করল। ইদুর বয়স তখন ১২/১৩ বছরের কম হবেনা। ইদু ইজ্জত বাচাতে মরিয়া হয়ে উঠল। প্রচন্ড শক্তি নিয়ে সে বাধা দিতে লাগল। আমিসহ অনেকে এ দৃশ্য দেখে মজা উপভোগ করতে লাগলাম। সে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু,তার চাইতে বড় কথা হল আসন্ন মজায় অংশগ্রহন। আমরা যথাযোগ্য উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে উপভোগ করতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত ইদু পরাস্ত হল এবং দোকানের বেঞ্চের উপর বসে সে তার ছোট টি-শার্ট দিয়ে নীচের আব্র“ ডাকতে লাগল। টি-শার্টটা এতই অ-পর্যাপ্ত ছিল যে,সে ব্যর্থ হল। তার চোক মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেল। আমরা অট্টহাসি,করতালির মাধ্যমে উপভোগ করলাম। অবশেষে তাকে তার হাফ প্যান্টটি ফেরৎ দেওয়া হল। তবে আমার ভূমিকায় সে খুব কষ্ট পেয়েছিল। সে সময়ে সরি বলার নিয়ম ছিলনা,থাকলেও বলতাম বলে মনে হয়না।

বিষয়: বিবিধ

১৩৭১ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

214591
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৩৮
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
214593
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৪১
আবু তাহের মিয়াজী লিখেছেন : hay hay, ato deki apni moha...................... dusto cilen...valo laglo
214600
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫৭
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : এভাবে কত অলস দিন কেটেছে আমাদেরও।
214620
২৮ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৫৮
আহ জীবন লিখেছেন : যার সাথে মনের মিল থাকত তার সাথে সব কিছুই শেয়ার করা মানুষের ই স্বভাব। ছোট বেলার সব কিছুই হত নির্মল, নিষ্পাপ।

যেহেতু সে আপনার সব কিছুতেই সাপোর্ট দিত
আপনার ও দেওয়া উচিৎ ছিল।
214718
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:২১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : ভাগ্যিস আমার পাল্লায় পড়েননি। তাহলে আপনাকেই নাকানি চুবানি খাওয়া লাগতো।
214736
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:২৫
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : Thinking Thinking Thinking এই বদ পোলাটারে একটা বিয়া দেওন দরকার! Waiting Waiting
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৩৭
163009
মোঃ ওহিদুল ইসলাম লিখেছেন : অতীব সত্যি কথা কৈছেন। এটাই এ পোলাটার আসল ট্রিটমেন্ট। তয় আপ্নি ঘটকালি করেন, আমি সহকারী। Angel Angel Angel
২৯ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৪৮
163012
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : Surprised Surprised Surprised Surprised
২৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০১
163013
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : পরের সিরিয়ালে হ্যারিকেও রাখতে হপে! Smug Smug
২৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৩৪
163223
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Surprised Surprised Surprised Surprised Smug Smug Smug Worried Worried Crying Crying Crying
214768
২৯ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:২২
উদাস পথিক লিখেছেন : ভাবীকে সব বলে দিব! It Wasn't Me!
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২১
163440
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আগে ভাবি পয়দা করেন Happy
215063
২৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৩৬
আফরা লিখেছেন : আপনি আসলেই মহা দুষ্ট ছিলেন ।
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২১
163439
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এখন আমি ভাল Surprised Smug Smug
215093
২৯ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:২৪
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আপনি তো ভাল দুষ্ট ছিলেন Surprised বাবার বেতের বাড়ি পিঠে কয়টা পড়েছিল তা বলেন শুনি Waiting
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২০
163438
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বাপ ধরতে পেরেছে ৩ বার। তবে শিক্ষকের বেতের বাড়ির হিসেব নেই....
১০
215191
৩০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৪:৫২
শেখের পোলা লিখেছেন : স্যরি বা থাংক ইউ বাংলাদেশ কখনই সস্তায় পাওয়া যেত না৷ আজকাল হয়তবা মিলতে পারে৷ ভিতরের সেই সেটা কি আজও আছে?
১১
215224
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:২৯
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : আপনার বন্ধু ইদ্রিসকে আপনার সাহায্য করা উচিত ছিল।
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৯:৩৯
164050
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধুর.....মজা হত তাহলে ??
১২
215484
৩০ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৩
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : সে সময়ে সরি বলার নিয়ম ছিলনা,থাকলেও বলতাম বলে মনে হয়না।
[/b
ছোট বেলায় হয়ত [b]সরি বলার নিয়ম ছিলনা
মানে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টা মাথায় থাকতো না। কিন্তু কথা হচ্ছে থাকলে বল্লে সামস্যা কি??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File