ডুবন্ত মানব নওসের আলী
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৭ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:১০:০৬ রাত
একবার ইয়াতিম খানায় নওশের আলী নামক এক লোকের অলৌকিক কসরস হল। সে পানির নীচে অক্সিজেন ছাড়াই দশ ঘন্টা থাকতে পারে। এলাকার লোক-জনে ইয়াতিম খানার মাঠ ভরে উঠল। আমরা গেলাম পুকুর পাড়ে। দেখলাম সে ডুবে আছে। কিছুক্ষণ পরপর সে হাত উপরে ওঠায়,কখনও পানির নীচে ফিডারে করে দুধ খায়। সে এক মজার দৃশ্য। সারাদিন ধরে এই দৃশ্য দেখলাম। এ সমস্ত অনুষ্ঠান তখন প্রচুর হত এবং মানুষের উপস্থিতি থাকত অনেক। একসাথে এক এলাকার অধিকাংশ লোককে দেখা একটা বিরাট আনন্দের বিষয়। প্রত্যেকে অন্যের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়,গল্প গুজব করতে পারে। আমরা তা করছিলাম এবং এটা সেটা কিনে খাচ্ছিলাম বা ভাগ বসাচ্ছিলাম। তবে নওশের আলীর চেহারা দেখিনি। কারন, সন্ধ্যাা হয়ে গিয়েছিল এবং আমাকে আবার পড়াশুনা করতে হত।
কেউ কেউ তার ডুবে থাকার ব্যপারটিকে অলৌকিক ভাবত। কেউ বলত ভাওতাবাজি। কেউ বলছিল সে আসলে ওখানে নেই,কেটে পড়েছে গোপনে। এখানকার আয়োজকদের সাথে যোগসাজস আছে তার। পরে টিকেটের টাকা ভাগাভাগি করে নিবে(প্রবেশ টিকেটের দাম মনে নেই তবে আমরা টিকেটের লোক না)। কিন্তু যখন বহুক্ষণ পর তার হাত দেখা গেল তখন তাদেরকে আর কথা বলতে দেখা যায়নি। তবে খানিক্ষণ পর কেউ কেউ বলতে শুরু করল ,সে হাত দিয়ে পানিতে আঘাত করছে,এর অর্থ হল সে উপর থেকে অক্সিজেন নিচে নিয়ে যাচ্ছে। যাক তাও ভাল,আওয়ালের মত বলেনি যে, পানির নীচে দুহাত দিয়ে সজোরে পানি ঠেলে সেই শুণ্য স্থানে নাক ঢুকিয়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। এমনকি মাঠের পুকুরের পানিতে সে দুহাত দিয়ে পানি কেটে দেখিয়েছিল কিভাবে পানি দুদিকে সরে একটি শুণ্যস্থান তৈরী করছে। কেউ কেউ বলল,পানির নীচে লুঙ্গি ফুলিয়ে সে নাকটি তার সাথে সেটে রেখেছে। এমনকি একজন বলল এটা আমিও করেছি অনেকবার এবং নদীতে এটা করে দেখাবেও বলল। আমরা অবশ্য তাকে আর পায়নি। পরে যতবার ডেকেছি ততবারই কোনো না কোনো অজুহাতে কেটে পড়েছে।
যখন তরিকুলের দোকানে বসে সিদ্ধান্ত নিলাম সে একটা ভূয়া ,ঠিক তখনই তার এক সাথী বলল-সে ভূয়া না,আমি নিজেই তাকে এটা করতে দেখেছি। বললাম তুই তাহলে ওরকম করে দেখা ? সে দেখাবে বলল কিন্তু তাকে আর পাওয়া গেলনা। বুঝে নিলাম দুটোই ভূয়া। অনেক পরে টেলিভিশনে নওসের আলীকে দেখলাম। সে সময় পানির নীচে ভিডিও ক্যামেরা রাখা ছিল এবং স্পষ্ট দেখলাম সে মুখ বন্ধ করে রেখেছে এবং ফিডারে দুধ খেতেও দেখলাম। বুঝলাম পূর্বের সকল বিশেষজ্ঞরা বিশেষভাবে অজ্ঞ ছিল। নওসের আলী সাক্ষাৎকারে বলেছিল,ছোটবেলা থেকে সে অনুশীলন করেছে দীর্ঘক্ষণ পানির নীচে থাকার ব্যাপারে এবং ধীরে ধীরে সময় বেড়ে এখন তা দাড়িয়েছে প্রায় ১২ ঘন্টার মত। তবে এর থেকেও বেশী সময় সে থাকতে পারে কিন্তু দীর্ঘক্ষণ পানির নীচে থাকলে শরীরের ত্বকে সমস্যা হয়। ত্বক অতিরিক্ত নরম হয়ে যায় এবং সে সময় কোনো ছোট মাছের সাথে আঘাত লাগলেও ওই অংশের চামড়া উঠে যেতে পারে বা ক্ষতি হতে পারে। এত দীর্ঘ সময় পানির নীচে থাকলে গিনেজ বুকে তার ওঠার কথা। কিছু বুঝলাম না।
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৬ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ পিলাচ মাছের কামর খাইনাই তবে কাটা খাইছি ১২ ঘন্টা
মন্তব্য করতে লগইন করুন