দিনটি গেল কেনা-কাটায়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:৪৫:০৬ সকাল
২৮/০৩/২০১৩
আজ পোর্টল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পূর্বে যখন এসেছিলাম তখনও বৃষ্টি হচ্ছিল। গত ৫দিন ধরে অনারবত বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে যখন তখন বৃষ্টি হয় আবার রোদ ফুটে ওঠে। রোদ ওঠার কিছুক্ষন পর মনে হয় আদৌ বৃষ্টি হয়নি এখানে। বেশীরভাগ বৃষ্টিই পিচপিচে ধরনের। মাঝে মাঝে কয়েক মিনিটের জন্যে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়। রাস্তার কয়েকবার বৃষ্টির দেখা পেলাম আবার রোদের দেখাও পেলাম। লং ড্রাইভ বরাবরই ভাল লাগে। রাস্তা যদি হয় এমন দারুন তবে ড্রাইভ করতে মজা আছে।
বহু মাইল পাড়ি দিয়ে পোর্টল্যান্ডে আসলাম। চিন্তায় ছিল কলাম্বিয়া নদী দর্শন করব। এর পাশে হাটব। কিন্তু যেইনা কলাম্বিয়া নদীর কাছাকাছি আসলাম অমনি মারাত্মক বৃষ্টি শুরু হল। এমন বৃষ্টি সচরাচর দেখা যায়না। নদীর পাশের হাইওয়ে ধরে চলা ছাড়া উপায় রইল না। সোজা চলে গেলাম ৪০কি:মি: দূরের সেন্ট হেলেনস। ভাবলাম একটু হাটব,কিন্তু সেই সময়ই চরম বৃষ্টি আবারও নামল। এবার গেলাম এখানকার ওয়ালমার্টে। কিছু কেনাকাটা করে ফিরতি পথ ধরলাম। চরমৎকার আবহাওয়া,ভাবলাম কমম্বিয়া নদীর ধারে হাটব। কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে সৌন্দর্য উপভোগ করব। ডানে দেখলাম পাহাড়ের গা বেয়ে বিপুল বেগে জমে থাকা বৃষ্টির পানি স্বশব্দে নেমে আসছে। দেখতে ভালই লাগল। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভাল। সেই পানিতে রাস্তা সয়লাব না হয়ে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড নালা দিয়ে পানি নেমে যাচ্ছে। বামে কলাম্বিয়া নদী। ভাবলাম একটু থামব, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হল। মনে হল বৃষ্টি আমার মনের কথা বুঝে শত্রুতা করছে।
এক হালাল স্টোরে আসলাম। আজ শনিবার,ছুটির দিন। অনেক মুসলিম আজ এখান থেকে অনেক কিছু কিনছে। আমিও কিনলাম অনেক কিছু ,খেয়ে আজ সয়লাব করব। ফেরার পথে সেলাম স্থানে গেলাম। সেখানে এক বন্ধুর বাসায় আইসক্রিম,স্ট্রবেরী,কলা খেলাম। সেখান থেকে কস্টকো স্টোরে গেলাম এবং কিনলাম টুনা মাছ,শ্যামন মাছের বড় একটা প্যাকেট,চাল,অলিভ অয়েল,আলু। এখন থেকে অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করব,এটা নাকি খুবই স্বাস্থ্য সম্মত। হার্টে তিনবার সার্জারী হয়েছে এমন একজন আমাকে এটা বলেছিল। তার কথা শুনে মনে হয়েছিল অন্য তেল খেলে হার্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আমি জীবনেও অলিভ অয়েল খাইনি এবং আমার হার্ট প্রশংসাযোগ্য আচরণ করে যাচ্ছে। এবার এই তেল খেয়ে দেখী কোনো প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। রাতে ফিশ ফ্রাই খেলাম প্রচুর। জীবনেও এমনটা হয়নি। শুধু মাছ খেয়ে আমি কোনো বেলা পার করিনি। এবার করলাম। ভাল লাগল।
প্রচুর কেনাকাটা করলাম। গত দুইমাসে ব্যপক পোষাক,জুতো কিনেছি। বাড়িতে যেমন এসব রাখার জায়গা ছিলনা,এখানেও সেই সঙ্কটে পড়েছি। মূল্যহ্রাস দেখলে আমার হুশ থাকেনা। ধার করেও কিনেছি। এক স্টোরে গিয়ে যখন হাটাহাটি করছিলাম,তখন দেখলাম একটা টেবিলে কিছু পানীয় সাজিয়ে কয়েকজন ছেলে মেয়ে মানুষদেরকে সেটার বিষয়ে বয়ান করছে। জিনিসটা হল ক্যাফেইন ফ্রি এনার্জী ড্রিংক। বাঙ্গালী নাকি ফ্রি পেলে আলকাতরাও খায়,বোধহয় ঘটনা সত্যি। এনার্জী ড্রিংক আমি পছন্দ করিনা এবং খাইও না। কিন্তু ফ্রি পেয়ে দু-বার ঝাড়লাম। কিনতে পারি এই ভেবে তারা যখন আশাবাদী হয়ে কিছু বয়ান করছিল, তখন এক ফাকে কেটে পড়লাম। এ সপ্তাহের পে-চেক দিয়ে কেনাকাটা করেও ধার নিয়েছি। আমার এই পুলাপাইনের স্বভাবটা পাল্টানোর দরকার। তবে দিনটা কিন্তু ভাল কেটেছে।
আরেকটা মজার বিষয় মনে পড়ল। কস্টকো স্টোর থেকে বের হয়েই দেখী পার্কিং লট বরাবর একটা হাস বেশ তাড়াহুড়ো করে স্টোরের দিকে আসছে। তার চালচলন দেখে সাংঘাতিক মজা লাগল। আমি তাকে ডাকলাম,ভাবলাম পালিয়ে যাবে,কিন্তু এরা কারো দ্বারা কখনও বিরক্ত না হওয়াতে ভয় কি জিনিস তা শেখেনি। এরকম জিনিস দেশে দেখলে মনোমাঝে অন্য চিন্তা ঘুরপাক পেতে পারত। কিন্তু ভালবেসে ডাকলাম কাছে। সেও কাছে আসল। কিন্তু সে খাবার আশা করছিল। আমার হাতে ঠোক দিতে এসে বুঝল হাতে কোনো খাবার নেই। সে আশাহত হয়ে ফিরে যাচ্ছে দেখে আমার খারাপ লাগল। একটা কেকের প্যাকেট ছিড়ে কেক বের করে তাকে আবার ডাকলাম। সে মনে হল বেশ আনন্দ পেয়েছে। পড়ি মরি করতে করতে ছুটে আসল এবং কেক খেল। একটা আস্ত কেক খাওয়ার পর সে আমার কাছে দাড়িয়ে থাকল। মনে মনে বললাম,ওরে হাভাতে ! তুই আরও খেতে চাস ! খাদকের থেকে হিস্যা ! জানিস এইটার দাম কত ? দূর হ ! আমি চলে আসলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখী সে স্টোরের দিকে ছুটে যাচ্ছে। বুঝলাম বেহায়া ধরনের হাস। এরা পার্শ্ববর্তী লেকে থাকে। ওখানেই ওদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা আছে কিন্তু মাঝে মাঝে রুচীর পরিবর্তন করতে এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে ওরা। এখানকার লেকে এদের সংখ্যা অনেক। মাঝে মাঝে মনে হয় এদের উদ্দেশ্যে কিছু রেসিপী উৎসর্গ করি। কিন্তু বেরসিক আইন-কানুন যত বাধা।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৮ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতকিছু কিনলেন শুধু নিজের জন্য। একটু অবাক হলাম। হাঁসটিকে ঈর্ষা হচ্ছে। কেউ যদি চাইলেই কেক খাওয়াতো?
এতো খাই খাই কইরা তো সব শেষ কইরা ফালাইলেন . . . .. . আপনি যে বাঙ্গালী তার প্রমাণ কিন্তু আপনি রেখেছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন