বাচ্চা শয়তান ইয়াতিমখানার মাঠে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ মার্চ, ২০১৪, ১২:১৭:৪৭ রাত
একবার এলাকার ত্রাশ কুষ্ণনগরের গোন্ডেল মোবারকপুরের শিশু সদনের ভেতরে ঢুকে তপন নামের একজন বি.এন.পি ক্যাডারকে চাকু মেরে পালায়। এ দু:সাহসিক কাজের জন্য তার এলাকায় সে হিরো বনে যায়।
মোট কথা মারামারির ব্যাপারটি উভয়পক্ষ বেশ উপভোগ্য করে তুলত। দুদিন পর দেখলাম আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে গোন্ডেলের আধা-মরণ যাত্রা যাচ্ছে। এলাকার বি.এনপির বড় ভায়েরা বড় বড় লাঠি দিয়ে তাকে পেটাতে পেটাতে শিশু সদনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে নিয়ে তারা সাংঘাতিকভাবে পেটালো। তবে গোন্ডেলের ব্যাপারে কথা প্রচলিত ছিল যে,শত পেটালের তার কিছুই হয়না। অনেক পেটানোর পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হল। কয়েকদিন পর আবারও সে উপযোগী হয়ে উঠল।
এলাকার ইয়াতিম খানা বা শিশু সদন ছিল অনেকগুলো আকর্ষনের কেন্দ্র বিন্দু। এলাকায় ফুটবল প্রতিযোগীতা হলে ওখানেই হত। বহু বছর পর্যন্ত এটি ভোট কেন্দ্রও ছিল। কখনও কখনও রাজনৈতিক সমাবেশও হত,গান বাজনাও হত। এর মাঠটি বেশ বড় এবং পুরোটাই সবুজ খাসে পরিপূর্ণ। চারিদিকে সুউচ্চ পাচিল দ্বারা পরিবেষ্ঠিত। এর এলাকা যথেষ্ট বড় এবং পুরোটাই নানা রকম গাছ গাছালিতে পরিপূর্ণ। এর ভেতর আছে আমলকী বাগান। গাছগুলো খুবই চমৎকারভাবে সাজানো। তবে আমলকী খেতে ভাল লাগেনা বলে গাছগুলোর সৌন্দর্য বুঝতাম না। আমি আমগাছের সৌন্দর্য বেশ ভালই বুঝতাম। আমাদের বাড়ী থেকে ইয়াতিম খানায় দ্রুত যেতে আমরা অধিকাংশ সময় এর এক পাশের পাচিল ব্যবহার করতাম। বাদল জামাইদের(ফুফা অর্থে)বাড়ির উঠান পার হলেই চিকন এক রাস্তা,তার পরই ইয়াতিম খানার পাচিলের শেষ অংশ। খুব কম সময়ই মূল রাস্তা ধরে প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করেছি।
আমার বয়স যখন ৭/৮ তখন থেকেই এই বড় পাচিল আমি টপকে আসছি। দেওয়ালের শেষ মাথার ত্রিভূজে বেশ কয়েকটি ইটে ছোট ছোট গর্ত ছিল আমি সেখানে পা রেখে আট ফুট উঁচু দেওয়ালের উপর উঠতাম। এটি চরড়ায় ছিল দশ ইঞ্চি। আমি এর উপর দিয়ে বেশ কিছু দূর হেটে মাটির যে অংশ অপেক্ষাকৃত উচু সেখানে লাফ মারতাম। এ অংশে একটি বড় পুকুর আছে। এটির কিনারা ধরে ভেতরে প্রবেশ করতাম। দিনের যে কোনো সময়ে আমরা এখানে খেলা করতে আসতাম। আমি একাও আসতাম। ভেতরে যারাই খেলা করুক না কেন তাদের কাছাকাছি আসতেই তারা ডেকে নিত। পরিচিত অপরিচিত কোনো ব্যাপার ছিল না। একবার জিজ্ঞেস করত খেলব কিনা। আমি প্রস্তুত থাকতাম খেলার জন্যে। কখনও কখনও তাদের খেলোয়াড় ঘাটতি থাকলে দূর থেকে দেখেই বলত,সে আমাদের দলে খেলবে বা আমরা তাকে নিলাম। এটি শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়,সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল। এ পর্যায়ে সে খেলতে রাজি না হলে তাকে নানাভাবে বুঝানো হত এবং চাপাচাপি করে হলেও খেলতে বাধ্য করত। দেখা যেত তার আগ্রহ নেই কিন্তু এখনভাবে সকলে অনুরোধ করত যে কিছুক্ষনের মধ্যেই সে স্বতস্ফুর্তভাবে খেলতে শুরু করত। কেউ বাপ-মায়ের বকা শুনে মন খারাপ কওে বশে থেকে বিশেষ সুবিধা করতে পারত না। আর একবার খেলায় ঢুকে পড়লে সকলে আনন্দে মেতে উঠত। খেলা শুরু হবার পর কেউ আসলেও তাকে নিরাশ করা হতনা। যে কোনো এক দলে তাকে নিয়ে নেওয়া হত।
সে সময়ে ক্রিকটের ততটা চল ছিলনা। ফটবলেই আমরা বেশী আনন্দ উপভোগ করতাম। কারন ফুটবলে সকলে একসাথে পরষ্পরের কাছাকাছি থেকে খেলতে পারে। আমরা খেলার মধ্যে মজার মজার কথা,হাসি ঠাট্টাও করতাম। তবে বাইরের কোনো দলের সাথে প্রতিযোগীতা হলে আমরা ভাব গাম্ভির্য নিয়ে খুবই মনযোগের সাথে খেলতাম। একেক জনের খেলার স্টাইল ছিল একেক রকম। কে কেমন খেলে তা আমরা জানতাম এবং সেভাবেই ব্যবস্থা নিতাম বা প্রস্তুত থাকতাম তবে বাইরের খেলোয়ারদের ব্যাপারে অনেক হিসেব করতে হত। কেউ কেউ থাকত বয়সে বড়,কেউ ছোট,কেউ সম বয়সী। খেলার ক্ষেত্রে এটা কোনো ব্যপার ছিলনা। অনেক সময় কেউ বল দ্রুত বেগে টেনে প্রতিপক্ষের গোলের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতেই দেখা যেত ছোট্ট এক খেলোয়ার মোক্ষম সময়ে তার বলটা ছোট্ট এক কিকে বেসামাল করে দিয়েছে। তখন সে মহা আফসোস করত,কারণ অনেক ভাল খেলোয়ারকে ফাঁকি দিয়ে সে ছোট একজনের কাছে পরাজিত। আমি অনেক সময় এভাবে বল টেনে নিয়ে যখন দেখতাম পিচ্চি কেউ সামনে তখন হুমকি দিতাম অথবা বিশাল একটা আওয়াজ বের কওে ভড়কে দেয়ার চ্ছো করতাম। কখনও কখনও তাতে কাজও হত। ওরা বলের সামনে না এসে রাস্তা ছেড়ে দিত। তবে বার বার এতে কাজ হতনা। আবার অনেক সময় এমন ভাব করতাম যেন বলে সজোরে কিক করে তার গায়ের উপর ফেলব। এতে ভয়ে সে সরে যেত।
এলাকায় কিছু জুনিয়র ছিল যারা প্রতিপক্ষের খেলোয়ারদের পায়ের সাথে লেগে থাকত। এদেরকে ফাঁকি দেওয়া কষ্টকর ছিল। এদের প্রতি আমাদের নির্দেশও এমন থাকত। বলা হত, ওরা তোকে ফাঁকি দিয়ে ডি বক্সে ঢুকলে কিন্তু তোকে খুন করে ফেলব। মাঝে মাঝে তাদের ভুল-ত্র“টির জন্যে পেটাতামও। তবে খানিকক্ষণ কান্নাকাটি করে ওরা আবার হাসাহাসিতে লিপ্ত হয়ে পড়ত। কেউ কাদলে অন্যরা তাকে হাসানোর চেষ্টা করত,সান্তনা দিত এবং যে মেরেছে তাকে তিরষ্কারও করত। তবে আমি বা আরো দু-একজন ছেলে কাউকে মারলে কেউ আমাদেরকে তিরষ্কার করত না। বিশেষ করে আমি সারাক্ষণ মারামারির তালে থাকতাম এবং আমার দোষ আলোচনায় উঠত না,কারণ আমার ফুফাত ভাই সাবু আমাকে অন্ধভাবে সমর্থন করত। সে আমার থেকে দুই বছরের বড় এবং বেশ জ্ঞান বুদ্ধি রাখত। যে কোনো পরিস্থিতি সামলানোর জন্যে আমরা তাকেই সামনে এগিয়ে দিতাম এবং সে জয় করে আসত। ফলে তার সমর্থন থাকায় আমার বিপক্ষে কেউ যেত না। আমি এখনও অবাক হয়ে যায় যে, আমি দিনে প্রথম দিকে গড়ে দুটি এবং পরে অন্তত একটি অঘটন ঘাঁটাতাম অথচ একটি ঘটনাও মনে পড়ছে না যে, সে আমাকে অসমর্থন করেছে। কখনও কখনও সমস্যা বড় আকার ধারণ করত এবং তখনও সে আমাকে উদ্ধার করে আনত। সে ছিল অন্যায়ের প্রতিবাদী এবং খুবই সৎ।
শারিরীকভাবেও সাবু বেশ শক্তিশালী ছিল। ফলে আমি সর্বদা তার উপর আস্থা রাখতাম যে,সে কোনো না কোনো পথ বের করবেই। মূলত: অন্যায়কে সমর্থন করাও অন্যায় কিন্তু আমি তার সামনে যখন ঘটনা উপস্থাপন করতাম তখন নিজের দোষ চেপে যেতাম। আর আমার প্রতি তার অসম্ভব ভালবাসা থাকার কারনে সেও আমার অন্যায় দেখতে পেতনা। আর সে আমার থেকে মাত্র দুই বছরের বড় ছিল ফলে খুব বেশী সিনিয়রের মত জ্ঞান-বুদ্ধি তার থাকার কথা ছিলনা তবে তুলনামূলকভাবে সে অন্যদের থেকে যথেষ্ট দক্ষ ছিল। তার রাগও ছিল এবং কখনও কখনও অঘটনও ঘটিয়েছে তবে আমার মত এমনটা শয়তানি তার মধ্যে ছিল না। খেলা-ধুলা হোক আর অন্য সময় হোক আমরা তাকেই মানতাম। আমাদের ভেতরকার ফয়সালা সেই করে দিত অধিকাংশ সময়।
এ মুহুর্তে মনে পড়ছে সাবু ওর স্যান্ডো গেঞ্জির এক পাশে গিট দিয়ে সেখানে ওদের বাড়িতে ভাজা মুড়ি নিল এবং সাথে টটে(ছোট)কলা। এই কলার ভেতর শক্ত বিচি থাকে কিন্তু খুব মিষ্টি। আমরা চলে গেলাম এম.এল স্কুলের পেছনের ডিপ টিউবয়েলে। এরপর খেজুর বাগানে। সময়টা ছিল বেশ। তবে আমি কিছু খেলে ঠিক ওর মত সততার সাথে ভাগাভাগি করতাম না।
বিষয়: বিবিধ
২৭১৫ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মামা দুইটা কলা কিনলেন এবং দুই ভাগনে কে দিয়ে দিলেন।
মামারতো কলা নেই তাই দুই ভাগনে আধা আধা করে মামাকে কলা দিলে আর এই পুরাটাই হলো মামার কলা। [সংগৃহীত !]
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
ভালো লাগলো || ধন্যবাদ || পিলাচ || মাইনাস || অনেক ধন্যবাদ || স্বাগতম ||
কুইক কমেন্ট তৈরি করুন
তবে আপনার লেখায় অনেক বিনোদন আছে।
দুষ্টুমিতে কি অনেক মজা???
আমার বড়ো ভাই ওহ!!! সে কি অত্যাচার
মন্তব্য করতে লগইন করুন