বাচ্চা শয়তান এবং বিএনপি-আওয়ামী জাহেলীয়া

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৬ মার্চ, ২০১৪, ১১:১৮:১২ সকাল



আমাদের এলাকার এই আওয়ামী-বিন.এন.পির মারামারিতে ছেলে বুড়ো সবাই অংশ নিত। সবাই তাদের অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ির সামনের তিন রাস্তার মোড়,গার্লস স্কুলের মাঠ,রেল লাইন অথবা নদীর ধারে জড়ো হত। তারপর একশন শুরু হত। গন্ডগোলের সময় এবং অব্যবহিত পর পর্যন্ত মানুষ বাজারে হিসাব করে চলাচল করত এবং এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় যেত না। এটা করলে শত্র“ এলাকার সাধারণ মানুষকেও পেটানো হত। যারা এসকল মারামারিতে বীরত্ব প্রদর্শণ করতে পারত, পার্টির মধ্যে তার কদর বেড়ে যেত এবং সে বা তারা আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তুতে পরিনত হত। সবাই তার প্রশংসা করত।

মারামারি কেন করা হচ্ছে,কেন করতে হবে,এর ফলাফল কি এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি কখনও কোনো আলোচনা শুনিনি। আমাদের এলাকার লোকের একটাই কথা ছিল যে, ওদেরকে মারতেই হবে এবং আমারেদকে জিততে হবে। এ ব্যাপারে তারা পূর্ব পুরুষদের বীরত্বগাঁথা বর্ণনা করত । কাউকে পুলিশ ধরলে নেতারা থানা থেকে তাদেরকে ছাড়িয়ে আনত আর কোর্টে চালান করলে আমি কাউকে ১৫ দিনের বেশী থাকতে দেখিনি,যদিও অস্ত্রসহ ধরা পড়েছে। থানা পুলিশ নিয়ে কেউ চিন্তা করত না। আর মোবারকপুর কৃষ্ণনগর মারামারিতে আমি জীবনে একবার মাত্র পুলিশকে আসতে দেখেছি।

তাদেরকেও দোষ দেওয়া যায়না। তারা সম্ভবত: ভয়ে ভয়ে থাকত। কারণ তাদের চাইতে এদের অস্ত্র কোনো অংশেই কম ছিলনা,তাছাড়া সংখ্যায় এরা বেশী ছিল। অনেকবার পুলিশকেও ধাওয়া করা হয়েছে। অধিকাংশ সময়ই পুলিশ ঘটনার শেষের দিকে আসত দর্শকের মত। পুলিশ সাধারণত: এলাকায় ঢুকত না। বাজারে একটু ভাব নিয়েই তারা বিদেয় হত। আমাদের অংশের যুবকরা তাড়া খেয়ে ফেরৎ আসলে প্রবিনরা বলতো-ছি:ছি: তোরা এটা কি করলি ? ইজ্জত বলে কিছু আর থাকলো না। আমরা ওদেরকে তাড়া করে ঘরে তুলে দিতাম আর তোরা....। প্রবিনদের খুশি করতেও আবার নতুন করে হামলা,ভাংচুর হত। কিছু লোক থাকত ভাংচুরের পর লুটপাট করার জন্য।

কেউ প্রতিপক্ষকে নৃশংসভাবে পেটালে বা মাইর খেলে সে হিরো হয়ে যেত। একদিন শুনলাম হাসুকে রেল লাইনের উপর আওয়ামী লীগের ছেলেরা রামদা দিয়ে ৮টা কোপ দিয়েছে। ঘটনার বর্ণনা শুনে ভাবলাম হাসু ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। দৌড় দিলাম। দেখলাম হাসুর হাতে পায়ে অনেকগুলো কোপের চিহ্ন। তাকে ব্যান্ডেজ করা হল কিন্তু সে গালি দিয়ে বলছিলো অমুককে মাল(অস্ত্র) আনতে বলার পরও সে যথা সময়ে আনতে পারলে না। ইস ! আমার হাতে মাল থাকলে মেরে দিতাম। হাসু মাইর খেয়ে হিরো হয়ে গেলো এবং মাইর দিয়ে হিরো হতে সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে বাজারের দিকে দৌড়ালো।

এ সময়ে আমি চিন্তা করছিলাম এবং বলছিলাম ,ওহ ! যদি আরেকটু আগে আমি এখানে উপস্থিত হতাম তাহলে কোপানোর দৃশ্যটা দেখতে পেতাম। আওয়ামী লীগ অথবা বি.এন.পি কারো প্রতি আমার কোনো বিশেষ দূর্বলতা ছিলনা। এলাকার কারো কারো উপর আমার রাগ ছিলো, আমি ভাবতাম তারা মাইর খেয়ে আসুক আর যাদেরকে পছন্দ করতাম তাদের ক্ষেত্রে ভাবতাম তারা মেরে আসুক। তবে অল্প কয়েকজনকেই শুধু অপছন্দ ছিলো। ওপাশের কারো প্রতি কোনো মায়া আমার ছিলনা। ওদেরকে আমি চরম শত্র“ মনে করতাম। ভাবতাম ওরা সব মারা যাক।

মারামারির পর আমরা মারামারির ঘটনা বিভিন্নভাবে বর্ণনা ও বিশ্লেষণ করতাম। যারা হিরো হয়ে আসত,তাদের দিকে আমরা সম্মানের দৃষ্টি নিয়ে তাকাতাম এবং তারাও নিজেদেরকে সম্মানিত মনে করত। মারামারির দিনগুলোতে আমরা তাদের কাছাকাছি থাকতে চাইতাম এবং অস্ত্র এগিয়ে দিয়ে বাহবা পেতে চাইতাম। তবে এই মারামারির বিভিন্ন পর্যায়ে কেউ কেউ ফাও ভাবও নিত যাতে তার কদর পড়ে না যায়। ২০০৬ সালের একটা ঘটনা মনে পড়ল-বি.এন.পি জোট সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরমুহুর্তেই আওয়ামী-চার দলীয় জোট যে ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তার রেশ বেশ কয়েকদিন থাকে। এসময়ে এক রাতে মোবারকপুর ও কৃষ্ণনগরের মধ্যে গন্ডগোল হতে পারে বলে খবর রটে গেল। শোনা গেল আওয়ামী লিগের লোকেরা অস্ত্র নিয়ে মোবারকপুরের দিকে আসছে। এ সংবাদ শুনে মোবারকপুরের লড়াকু বাহিনী প্রস্তুতি নিল এবং রেল লাইন বরাবর পজিশন নিল কিন্তু ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু গ্রামের অনেক মানুষ একত্রিত হয়েছে তাই কারো কারো বিশেষ ভাব নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিল।

উ অদ্যাক্ষরের একজন হঠাৎ রেল লাইনের অপর পাশ থেকে হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এসে জানালো,সে আক্রান্ত হয়েছিলো কিন্তু একাই তাদেরকে হটিয়ে দিয়েছে। সে এমনভাবে ঘটনা বর্ণনা করল যে অনেকেই তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো। এ সময় ই অদ্যাক্ষরের একজন চাচা লোকজনকে ঠেলে রেল লাইনের উপরে যেতে যেতে বললো,আজ ওদেরকে শেষ করে ফেলব। আমার কাছে বিদেশী মাল আছে। আমরা তার চাদরের উপর দিয়ে অনুমান করলাম ভেতরে আগ্নেয়াস্ত্র আছে। সে এমন আচরণ প্রদর্শণ করল যে মনে হচ্ছিল সে একাই যথেষ্ট। সে মহা হুঙ্কার ছুড়তে ছুড়তে বাজারের দিকে চলে গেল। তাকে আর দেখা যায়নি, এমনকি ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর পর্যন্তও না। পরে শুনলাম র‌্যাব তার মালটির(আগ্নেয়াস্ত্র) খোঁজ করছে। একজনের কাছে শুনলাম চাচা হুঙ্কার দিয়ে কিছুদূর গিয়েই চাদরের নীচে থাকা গাছের শুকনো ডালটি ফেলে দিয়ে বাজার ঘুরে বাড়িতে এসেছিলো।

মারামারির কিছুদিন পর্যন্ত আমরা কৃষ্ণনগরের আশেপাশে যেতাম না। আমাদের কাউকে তারা দেখলে পেটাতো। অপরিচিত কাউকে তারা জেরা করে জানার চেষ্টা করত কোন গ্রামের লোক। এপাশের লড়াকু সৈনিকরাও এটা করত। এমনি এক ঘটনার পর আমি আমার ভায়ের হোন্ডা মটর বাইক নিয়ে বাজারের তেলের পাম্প থেকে বাইকের জন্যে তেল নিচ্ছিলাম। আমার সাথে আমার বন্ধু মাসুদ ছিল। হঠাৎ এলাকার ত্রাশ গন্ডেল এসে আমার বাইকের পেছনে ধরে বলল-“এই ! এইটা তাপসের বাইক না ? তোর বাড়ি কোথায় ?” গোন্ডেলকে দেখে মাসুদেও মুখ,আত্মা সব শুকিয়ে গেল। আমি তৎক্ষণাৎ বললাম,আমার বাড়ী পলাশী। গন্ডেল খানিকক্ষণ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল। আমি খুবই স্বাভাবিক থাকলাম এবং ভেতরের টেনশন মুখের ভাবে প্রকাশ করলাম না। পেছনে না তাকিয়েই বাইক নিয়ে প্রচন্ড বেগে পালালাম। সে যদি জানত আমি মোবারকপুরের তাহলে মটর বাইক কেড়ে নিত এবং পেটাতে পারত। কারণ,তার কাছে এটা কোনো ব্যাপার ছিল না।

বিষয়: বিবিধ

১২৫৩ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

198141
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ১২:০৬
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। চলুক আপনার ইতিহাসের সাথে আছি ।
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
148457
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়া আাইকুম সালাম
198169
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:০২
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : হুম..পড়েছি।
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
148458
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy
198182
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১৩
পুস্পিতা লিখেছেন : কোন জেলায় আপনার বাড়ি? ভয়ংকর ব্যাপার তো!
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৭
148459
দ্য স্লেভ লিখেছেন : যশোর Happy
198184
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মনে হচ্ছে আপনাদের এলাকায় ওপনিবেশিক জমিদারি চেতনা এখনও রয়ে গেছে।
বেশ ভাল লাগল। আপনাদের এলাকায় মনে হয় সামরিক বাহিনির মানুষদের পাঠান দরকার হিট এন্ড রান সিষ্টেমে গেরিলা যুদ্ধ শিখতে পারবে।
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
148461
দ্য স্লেভ লিখেছেন : এখন অনেক কমে গেছে
198193
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:২০
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
148462
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
198232
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০১:৫৪
ভিশু লিখেছেন : বিদেশে এসে আপাতত ভালো থাকুন! তবে সবার জন্য উপকারী হলেও বিশেষ করে আপনার জন্য সকাল-বিকাল আয়াতুল কুরসি পড়তে থাকা ভালো...Praying Good Luck Happy Rose
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৮
148463
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহে তা যা বলেছেন..
198239
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:০১
আব্দুল মান্নান মুন্সী লিখেছেন : আমি আমার ভায়ের হোন্ডা মটর বাইক নিয়ে বাজারের তেলের পাম্প থেকে বাইকের জন্যে তেল নিচ্ছিলাম। আমার সাথে আমার বন্ধু মাসুদ ছিল। হঠাৎ এলাকার ত্রাশ গন্ডেল এসে আমার বাইকের পেছনে ধরে বলল-“এই ! এইটা তাপসের বাইক না ? তোর বাড়ি কোথায় ?” গোন্ডেলকে দেখে মাসুদেও মুখ,আত্মা সব শুকিয়ে গেল।ঘটনা সত্য বুঝাই যায় ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ পিলাচ
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৯
148464
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy
198243
২৬ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:০৬
খোয়াব লিখেছেন : যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার বিখ্যাত দুই এলাকা!!!যশোর বেনাপোল মহাসড়কের দুই পাশের দুই এলাকা। অনেক ধন্যবাদ :D/ Thumbs Up
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৯
148465
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
198280
২৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:০২
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভাই উপরের ছবিতে কি মানুষের গুস্ত কাটা হচ্ছে?
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫০
148466
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জি এখনও কাটাকাটি চলছে। বিশ্বজিত নামের একজনকেও বানানো হয়েছিল Happy
১০
198294
২৬ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:২৫
অনুরাগ লিখেছেন : মারামারি না তবে আমাদের গ্রামে দুইমহিলার ঝগড়া শুনতে আমার ভালই লাগত ।
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫১
148467
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমাদের দেশের দুই মহিলার ঝগড়াও কম উপভোগ্য নয় Happy
১১
198348
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
শফিউর রহমান লিখেছেন : বাচ্চা শয়তানটা কে হলো এই গল্পে?
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫১
148468
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বিষয়টি চলমান....
১২
198352
২৬ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪২
শেখের পোলা লিখেছেন : এসব শুনলেও ভয় পাই৷ ভাগ্যিস আমার বাড়ি ঐ গ্রামে নয়৷
২৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
148469
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy Happy Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File