ক্রেজী বয়
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৪ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৪৭:০২ সকাল
২৩/০৩/২০১৪
ইদানিং সূর্যের দেখা মিলছে,কারন এটা বসন্ত কাল। শীত বিদায় নিলেও রাতে তাপমাত্রা শূন্যে নেমে যায়। বিকেলে রোদ থাকলে সাইকেল নিয়ে বের হই। আজ রবীবার,ছুটির দিন। দুপুরের পরপরই বের হলাম। চমৎকার আরামদায়ক রোদের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে প্রকৃতি দর্শন করতে থাকলাম। বেশ ভাল লাগছিল। কখনও রাস্তায় কখনও ফুটপাথের উপর দিয়ে চালাচ্ছিলাম। চারিপাশটা আজ চমৎকার লাগছে। বেশীরভাগ মানুষ বোধহয় আজ বীচে গিয়েছে। এমন উষ্ণ দিনে বহু লোক সাগরের কাছাকাছি যায়। রাস্তায় অফিস ছুটির সময় ছাড়া খুব একটা যানবাহন দেখা যায় না। ধীর লয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে বিভিন্ন রমক দোয়া দুরুদ পড়তে থাকি,কখনও কুরআন তিলাওয়াত করি আবার কখনও গান গাই। ভালই লাগে। আর চারিদিকে দুচোখ ভরে অপার সৌন্দর্য দেখী।
হঠাৎ দেখলাম ফুটপাথের উপর একটা চমৎকার মেয়ে দাড়িয়ে আছে,পায়ের স্যান্ডেল হাতে এবং সাথে একটা ব্যাগ। স্পষ্ট শরীর ফুটে ওঠে এমন পোষাক পরে আছে। মুখের দিকে দ্বিতীয়বার তাকাতেই আমার কাছে মোবাইল ফোন আছে কিনা জিজ্ঞেস করল। বললাম আছে। তাকে দেখে মনে হল নেশাখোর,তবে বেশীদিন ধরে বোধহয় নেশা করেনা। একটা ফোন কল করতে চাইল। কিছুটা সঙ্কচ নিয়ে মোবাইলটি প্রদান করলাম। মনে হচ্ছিল,ফোনটা হাতে নেওয়ার পর যদি বলে এই ফোন আমার,তখন আমি কি করব ? সে একটা ছেলেকে ফোন করল এবং নিজের অবস্থান জানালো। সম্ভবত সে তার বয়ফ্রেন্ড। ফোন শেষে সে আমাকে মোবাইল সেটটি ফেরত দিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করল,আমিও রাস্তা মাপলাম। খানিক পর তার বয়ফ্রেন্ড আমাকে ফোন করতে থাকল,বোধহয় মেয়েটার অবস্থান পরিষ্কার বুঝতে পারেনি। ভারি ঝামেলা,আমি তো তাকে অনেকদূর ফেলে এসেছি। যাই হোক চলতেই থাকলাম,একসময় তারা পরষ্পরকে পেয়ে যাবে।
খানিক পর রাস্তায় কিছু বাচ্চাকে সাইকেল চালাতে দেখে তাদের সঙ্গী হলাম,ভালই লাগল,তারাও মজা পেল মনে হয়। এবার একটা পার্কে এসে থামলাম। এখানে সবুজ ঘাসপূর্ণ মাঠের পাশেই আছে একটি ছোট লেক। সেখানে প্রচুর হাস। বালিহাস,থলথল করে হাটতে থাকা হাস ,আরও কয়েক রকমের। দেখে খুব লোভ লাগল। সত্যিই আনমোনে হাস রান্না করতে থাকলাম। বাচ্চারা,বুড়োরা এসেছে হাটতে। আমিও খানিক হাটলাম এদেশে বুড়োদের কোনো কাম-কাজ নেই,সমাজে কোনো দামও নেই। শুনেছি এদেরকে নাকি ‘ওল্ড ফার্ট’ বলে। ব্যাপারটা চরম অপমানজনক। কখনও কখনও ওল্ড হোমের বুড়োবুড়িরা এদিকে হাটতে আসে। চোখাচোখী হলেই একবার হ্যালো বলে নিজেদের গল্পে মনোনিবেশ করে,হয়ত সকলে হ্যালো পর্যন্তই তাদের সাথে কথা বলে। তাই ওরা বেশীদূর আগায় না। বহু স্থানে ওল্ড হোম দেখেছি,তাদের প্রতিটা দিন একই রকম।
কেউ তাদেরকে ফিল বা মিস করেনা না নয়,কিন্তু যে ধরনের সমাজ এরা প্রতিষ্ঠিত করেছে,তাতে কমার্শিয়াল মানুষেরা ইচ্ছা করলেও অনেক কিছু করতে পারেনা। অনেকের সাথে তাদের সন্তানদের কোনো যোগাযোগ নেই। অনেকে তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে বা একসাথে থাকার আবদার করেও বিফল হয়ে ওল্ড হোমে এসেছে। এদের চেহারা সুরত দেখে মনে হয়না এরা এখানে শান্তিতে থাকে। যে বয়সে একজন মানুষ তার সন্তানের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে,সন্তানকে আশা করে,তাদের সহচর্জে বসবাস করতে চায়,ঠিক সে সময়ই এরা বিতাড়িত হয়। অনেকে এমন আছে,যাদেরকে এখানে রেখে যাওয়ার পর আর কখনই তারা দেখা করতে আসেনি। বিভিন্ন সংস্থা ভলানটিয়ারদের মাধ্যমেও এদেরকে সেবা করে থাকে,পয়সার বিনিময়ে প্রতিনিয়ত সেবা করার লোকও থাকে। এদের বয়স অতিক্তি হয়ে গেলে যখন চলার শক্তি কমে যায়,তখন এদের অবস্থা হয় আরও করুন। কর্তৃপক্ষ কখনও কখনও এদের জন্যে সঙ্গীতের আয়োজন করে,কিন্তু এসবে ওই বয়সে আর তাদেরকে চাঙ্গা করতে পারেনা। মরার পর নিকটজনরা আসে,তখন একটা অনুষ্টান হয়,মৃতকে সম্মানিত করা হয়। সকলের নিকটজনরা লাশ নিতে স্বেচ্ছায় আসে এমন নয়। অনেককে খোজাখুজি করেও পাওয়া যায় না। তারা ব্যস্ত মানুষ। একদিন তারাও এভাবে অন্যকে ব্যস্ত দেখবে। এটাই তাদের নিয়তি।
বাসার কাছের পার্কে চলে আসলাম। এখানকার পিচ্চিরা আমাকে বেশ পছন্দ করে। সকলে আমার সাথে বাস্কেটবল খেলতে চায়। আমারও ভাল লাগে। একসময় গুলশান পার্কে নিয়মিত এটা খেলতাম,সেখানেও বাচ্চারা,তরুনরা আমাকে পছন্দ করত। গুলশানে তো একটা জুনিয়র গ্রুপই তৈরী করে ফেলেছিলাম।
খেলছিলাম ভালই কিন্তু একটা বিপত্তি বেধে গেল। মাঠের একপাশে দেখলাম এক তরুন,বয়স ১৫ বছরের বেশী হবেনা। সে কোথা থেকে একটা সোফা জোগাড় করে তার ওপর বস্ স্টাইলে বসে থাকল,চোখে তার সানগ্রøাস। তার ভাবসাব দেখে হাসি লাগল কিন্তু কিছু বললাম না। একদৃষ্টে সে খেলা দেখতে লাগল। মাঠের বেশীরভাগ তরুন এবং শিশুরা তার সোফাকে ঘিরে দাড়িয়ে থাকল। খানিক পর কিছু ছেলে তাকে কিছু একটা বলার পর সে হঠাৎ পকেট থেকে চাকু বের করে কয়েকজনকে ধাওয়া করল। অবস্থা এমন হল যে, যাকে সামনে পাবে,তার পেটেই চাকু ঢুকিয়ে দেবে। পাগলের মত বাচ্চাদেরকে ধাওয়া করতে থাকল,আর সব বাচ্চা ভয়ে মাঠ ছেড়ে দৌড় দিল। আমি ইতিপূর্বে এমন দৃশ্য দেখিনী। এদেশে নতুন এসেছি,নিয়ম নীতি এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারিনি। আমি ইচ্চা করলে এক কিক করে ওর চাকু ফেলে দিতে পারতাম এবং ধরে খুটির সাথে বেধে রাখতে পারতাম,কিন্তু আমি কিছুই করতে পারলাম না। এদের নিয়ম-কানুনের প্রতি অজ্ঞতার বিষয়টিই আমাকে বাধা দিল।
ইতিপূর্বে অনেকবার মার্কিন বালক,তরুনরা প্রচুর খুন খারাবী করেছে। যদিও বেশীরভাগই পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না,তারপরও পরিসংখ্যান বলে,কিশোর অপরাধের সংখ্যা বিশাল। অনেকে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে ছোট খাট কারনে সমবয়সীদের হত্যা করে। স্কুলে এমন প্রচুর ঘটনা ঘটেছে।
এক মেক্সীকান বয়ষ্ক কালো লোক বাস্কেটবল খেলার সময় অনেকের মধ্যে দাড়িয়ে বিড়ি ফুকছিল,সেটা দেখে তাকে খুব অসামাজিক মনে হল। বেশ বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকাচ্ছিলাম। কিন্তু সেই লোকটিই উক্ত বালকের দিকে ছুটে গেল তাকে নিবৃত্ত করার জন্যে। আমিও পেছন পেছন গেলাম। ছেলেটি ক্রোধে ফুসছিল। লোকটি তাকে সান্তনা দিতে লাগল। সকল মানুষ সমান নয়,কেউ ভুল করলে ক্ষমা করতে হয়,এমন কিছু কথা বলে লোকটি তার থেকে চাকুটি নিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিল। তারপর তার সাথে খানিক কথা বলল এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দিয়ে তাকে বশ করল। খানিকক্ষন খেলাও করল। কিছুক্ষন পর যারা তাকে আক্রমনাত্মক কথা বলেছিল,তারা এসে দু:খ প্রকাশ করল। ছেলেটি শান্ত হল এবং তার বাড়ির পথ ধরল। আমিও বাড়ির পথ ধরলাম। মনে মনে ভাবলাম কি ক্রেজী বয় রে বাবা ! আবার মনে হল, এটাই তো হওয়ার কথা। বেশীরভাগেরই মা আছে বাপ নেই,বাপ আছে মা নেই, অথবা কোনটাই নেই,অথবা আছে কিন্তু পোষ্য। শিখবে কোথা থেকে। আছে অগাধ স্বাধীনতা,যা খুশী তা করবার। নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা এদেরকে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। পারিবারিক সুশিক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা এদের কারো কারো দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বোঝা যায়। এরা যা উপার্জন করেছে,সেটাই ভোগ করছে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শতভাগ সঠিক কথা বলেছেন। মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করলেও এরা জঙ্গলের পশুর মত যৈবিক চাহিদা পূরণ করে। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ অথচ এরা কি স্রষ্টার দেয়া নির্ভূল নিয়ম অনুযায়ী পারিবারিক ও সামাজিক সিস্টেম গড়ে তুলতে পেরেছে? বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়া তথাকথিত গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কের কারণে জারজ সন্তান জন্ম নেয়ার ফলে পিতা-মাতা যেমন বার্ধক্যের সময় নিজের সন্তান থেকে কোন সার্ভিস পাচ্ছে না তেমনি সন্তান সন্তুতিরাও মানবীয় গুনাবলী সম্পন্ন হয়ে বেড়ে উঠছে না।
যাই হোক খুবই ভাল লাগল। দুঃখের বিষয় এই ওল্ডহোম সংস্কৃতিটা এখন আমাদের দেশেও চালু হচ্ছে এবং কিছু মিডিয়া বিষয়টা প্রমোট ও করছে।
যাক আমি এবার আপনার পিছনে লাগলাম।
আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি, লাইটহাউস ব্লগের ফাহমিদা মুন্নি আপনার কাজিন ? আর উনিই কি ফাহমিদা খানম ?আপনার একটা কমেন্ট দেখেছিলাম সেখানে
ফাহমিদা মুন্নি আপু কে ঐ ব্লগে যাওয়ার পড়েই ওনার পোষ্ট দেখেছি।
হয়তো হারিকেনরে কিছু বলেছিলাম......।
আমি আর কিছু জানিনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন