শয়তানী ইচ্ছাসমূহ
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৩ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৪৬:৩০ সকাল
এস.এস.সি পরিক্ষার পর ভাই আমাদের পড়ার সময় স্যারের সাথে গল্প করত। সে গল্প শুনতে আমাদের খুব ভাল লাগত। গল্পের বিষয়বস্তু কোনো ব্যাপার না,টাইম পাস করাটাই ব্যাপার। এ সময়ে আমাদের গ্রাম মোবারকপুরের সাথে পার্শ্ববর্তী গ্রাম কৃষ্ণ নগরের প্রচন্ড মারামারি হত। আমাদের এলাকাকে গ্রাম বলা যায় না,এটি মফস্বল। এলাকাটি ছিল শহরের সংস্পর্শে এবং মোটামুটি শহরের সকল সুবিধাই সেখানে ছিল।
আমাদের এলাকাটি ছিল বি.এন.পির অধীনে অর্থাৎ এখানকার অধিকাংশ লোকই ছিল বি.এন.পির পক্ষে। অল্প কিছু আওয়ামী পন্থী ছিল তবে তারা ছিল কোনঠাসা অবস্থায়। মোবারকপুর ও কৃষ্ণনগরকে বিচ্ছিন্ন করেছে ঝিকরগাছা বাজার এবং রেল লাইন। কৃষ্ণনগর ছিল আওয়ামী লীগ এরিয়া। অতীতকাল থেকেই এই দুই অঞ্চলের মধ্যে দ্বন্দ ছিল। প্রায় সময়ই দ্বন্দের কারণ জানা যেত না। আমরা অস্ত্রের মহড়া দেখেই অনুমান করতাম যে কিছু ঘটেছে। প্রায়ই ঠুনকো কারনে মারামারি হত। ব্যক্তিগত ছোটখাট ঘটনা হঠাৎ করেই রাজনৈতিক হয়ে উঠত। বাজারের পাশে অবস্থিত শহীদ মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজ থেকেই মূলত: গন্ডগোলের সূত্রপাত হত। এরপর কিছুক্ষনের মধ্যেই তা বাজারে ছড়িয়ে পড়ত,দোকানপাট ভাংচুর হত। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হত।
সে সময়ে আমি আমাদের এলাকার তরুণ যুবকদেরকে হাত বোমা বহন করতে দেখতাম। অনেকে আমার সামনেই বোমা তৈরী করেছে। ধুসর রঙের কিছু বারুদ তারা সতর্কতার সাথে মেশাত এরপর বোতল ভেঙ্গে তার কাঁচ ছোট ছোট করত,তারপর কিছু ছোট পেরেক একত্রিত করত। পাশেই থাকত ডানোর কৌটা,জর্দার কৌটা এবং এজাতীয় কিছু পাত্র। আরো থাকত মিষ্টি প্যাকেট করার পর যে সুতলি দিয়ে প্যাকেট বাধত সেই সুতলি। মাঠের পুকুরের পাশে অবস্থিত শ.ম.র কলেজের রুমে এসব করা হত। মূল পর্বে আমাদেরকে থাকতে দেওয়া হতনা। পরে আমরা দেখতাম প্রচুর সুতলি পেচিয়ে সেইসব কৌটাগুলোকে অনেকটা গোল বানানো হয়েছে। এগুলো তখন সারের বস্তায় ভরে নিরাপদ স্থানে রেখে আসা হত। আমি এগুলো পুরোনো কবরের মধ্যেও লুকায়িত অবস্থায় দেখেছি আবার কখনও কখনও গাছের ডালে পাখির বাসা তৈরী করেও লুকাতে দেখেছি। আমি পাখি প্রীতির জন্য বিখ্যাত ছিলাম। কখনও কখনও পাখির পেছনেও দৌড়াতাম তার বাসা দেখার জন্য। ভাবতাম তার বাসায় তার বাচ্চা থাকতে পারে,তাকে ধরলে নিশ্চয়ই উড়তে পারবে না। আমিন নামক এক গেছোর সাথে হবিবারের বাশ বাগানে গেলাম পাখির বাসা দেখতে। ও বিশাল এক আমগাছ এবং ঘন বাশ ঝাড়ের উপরে বড় পাখির বাসা দেখে আশান্বিত হয়ে উঠে দেখল সেখানে বোমা রাখা আছে। যখন পুলিশ বিশেষ অভিযানে বের হত তখনই মূলত: বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র বিশেষ বিশেষ স্থানে লুকিয়ে রাখা হত। বোমা দেখলে আমার ভয় করত ,কারণ তা ফুটে যাবার সম্ভাবনা ছিল। অদক্ষ হাতে তৈরী বোমা অনেক সময় যথা সময়ে ছুড়ে দিলেও ফুটত না। কিন্তু আমি বোমা দেখে পিছু হটতাম।
একদিন তরিকুলের দোকানে বসে আছি, বিশ্বাস পাড়া থেকে একজন লোক দোকান থেকে বিড়ি কিনে তা আমার পাশে বসে টানতে লাগল। তার হাতে দেখলাম খবরের কাগজে মোড়ানো একটি গোল বস্তু। বিড়ি ধরানোর সময় সে বস্তুটি আমার হাতে দিয়ে বললো-ধর। আমি ধরে দেখলাম সুতলি প্যাচানো বস্তুটি অনেক ভারী। জিজ্ঞেস করলাম এটা কি ? সে বলল-এটা বোম। আমি তখন ভাল করে নেড়ে চেড়ে দেখলাম। সে বললো বেশী নাড়াচাড়া করিস না। আমি তাকে তা ফেরত দিলাম,সে বাজারের দিকে চলে গেল। এটিই ছিল প্রথম বোম ধরা,এরপর আমি আর কখনই বোম ধরিনি।
আমি মারামারি পছন্দ করলেও বোমাবাজি পছন্দ করতাম না। আমার ভাল লাগত বিভিন্ন ধরনের ছুরি,রাম দা,ক্রিচ,বন্দুক,রিভলবার,হকিস্টিক ধরতে। সবসময় স্বপ্ন দেখতাম এগুলোর। এগুলো পাবার ব্যাপারে এতটাই উদগ্রীব ছিলাম যে,আমি বাড়িতে হাতুড়ি দিয়ে লোহার মোটা তার পিটিয়ে ছুরি তৈরী করতাম। আমার ছিল ছেনি,করাত,হাতুড়ি এবং অবসরে আমি তা দিয়ে শৈল্পিক কাজ করতাম। মারামারি গন্ডগোল বাধলে আমার আনন্দের অন্ত থাকত না। আমি অস্ত্রের প্রতিেিযাগীতা দেখার জন্য রেল লাইন অথবা কলেজের কাছাকাছি যেতাম এবং এ ব্যাপারে কারো নিষেধ মানতাম না। বড় ভাইরা যখন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করত তখন আমি তা ধরতাম এবং আমার সাংঘাতিক ভাল লাগত। মোবারকপুর-কৃষ্ণনগর মারামারি শুরু হলে আমাদের বাড়ির পাশ পাশ দিয়ে মানুষ অস্ত্র নিয়ে দৌড়াতে থাকত। বাজারের দিক থেকে কিছুক্ষণ পরপর বোমার আওয়াজ শোনা যেত। বড় আওয়াজ শুনলে আমরা বোলতাম এটা ডানোর কৌটা,ছোট আওয়াজ শুনলে বলতাম জর্দার কৌটা। কেউ কেউ লেদে পিস্তল তৈরী করতে পারত এবং শুনতাম সাইকেলের রট কেটে বন্দুকের নল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্ত্র শিল্পে আমাদের এলাকা প্রসিদ্ধ ছিল। ছোট বেলা থেকে এগুলো দেখতে দেখতে এগুলোর প্রতি আমার ভালবাসা তৈরী হয়েছিলো। কিন্তু আমি এগুলো দিয়ে কাউকে মারব এমনটা ভাবতাম না। লাঠি অথবা হকিস্টিক দিয়েই আমি কাউকে মারার কল্পনা করতাম। কিন্তু রাম দা দিয়ে কেউ কাউকে কোপাচ্ছে অথবা কেউ কাউকে গুলি করছে এমন দৃশ্য দেখতে আমার ভাল লাগত। আমি আনন্দের সাথেই এগুলো দেখতাম। কলেজ এবং রেল লাইনের উপর আমি কয়েকবার এমন দৃশ্য দেখেছি। আমি কাঠ দিয়ে সুন্দর সুন্দর তলোয়ার,ক্রিচ,বল্লম,বর্শা,পিস্তল তৈরী করতাম। এমনভাবে রং করে তা রাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম যাতে দেখে আসল জিনিস মনে হয়।
মাঝে মাঝে কাপড়ে মুখ বেধে নকল অস্ত্র নিয়ে কোনো দোকানের সামনে দিয়ে দৌড় দিয়ে বাগানে ঢুকে পড়তাম। আড় চোখে দেখতাম ভিত বিহবল দৃষ্টি নিয়ে মানুষ আমাকে দেখছে,তখন পুলক অনুভূত হত। আমি অন্যদিক দিয়ে ঘুরে স্বাভাবিক হয়ে উক্ত স্থানে হাজির হয়ে আলোচনা সমালোচনা শুনতাম। মাঝে মাঝে রাতে খেলনা রিভলবার ধরে বন্ধুদেরকে বলতাম আমাকে ধাওয়া কর। তারা আমাকে ধাওয়া করত আর আমি মুখ ঢেকে রিভলবার নিয়ে মানুষের মধ্য দিয়ে দৌড় দিতাম। মানুষ ভাবত বড় কোনো গুন্ডা,সন্ত্রাসীকে ধাওয়া করা হয়েছে। তারা উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকত। তখন আমার সাংঘাতিক ভাল লাগত। আমি অধিকাংশ সময়ই খালি হাতে বাড়ি থেকে বের হতাম না। আমার প্রায় প্রত্যেকটা প্যান্টের ভেতরে আমি শেলাই করে চিকন ও লম্বা বিশেষ পকেট তৈরী করে রাখতাম যাতে সেখানে ছুরি ঢুকিয়ে রাখা যায়। আমি লোহা পিটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ছুরি তৈরী করতাম। ফল কাটা ছুরিও প্যান্টের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখতাম বিশেষ ভাবের জন্য। আমি মাঝে মাঝে রাতেও প্যান্টের পকেটে ছুরি নিয়ে ঘুমাতাম। অনেক রাতে মারামারির স্বপ্ন দেখতাম,সে স্বপ্ন আমার খুব ভাল লাগত।
বিষয়: বিবিধ
১৬৫৬ বার পঠিত, ৩৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পাইপের মত কলমের ভেতর থেকে শীষটা বের করে। পাইপের মাথার অংশ কেটে নিয়ে ভেতরে দিয়াশলাইয়ের বারুদ ঢুকিয়ে পাছায় আগুন লাগিয়ে দিতাম। সাঁই করে উড়ে কিছুদূর গিয়ে পড়তে। আমার মনে হতে এই মাত্র একটা টোমাহোক ছুড়লাম!
সাবধান আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেউ যদি আপনার এই ইতহাস এর খবর দেয় তাহলে আল ফায়েদা বলে গুয়ান্তানাম বে তে পাঠাবে।
তবে আপনি কোন আর্মস ফ্যাক্টরিতে চাকরির চেষ্টা করেন। মনে হয় ভাল করবেন।
কি সুন্দর !!! এক্কেবারে বিনা বেতনে শিখিয়ে দিলেন।।।
আপনাকে রেন্ডিয়ার(হাশমীরে)আর চীনের চেচনিয়ায় পাছানো দরকার এইগুলান তৈরী করে দেয়ার জন্য।
আমাদের শৈশবে বোমার এমন জয়জয়কার ছিল না। তবে সামান্য যেটুকুন দিয়ে বোমা ফোটানোর স্বাদ নিতাম তা হলো, একটি ফাঁপা বড় চাবির খোলের ভেতর ম্যাচ এর কাঠি হতে বারুদ নিয়ে ঢুকিয়ে একটি পেরেক ঐ খোলে স্থাপন করার পর পেরেকের মাথার অংশটিকে হাতুড়ির মত করে মেঝের উপর বাড়ি দিতাম আর তাতে সেখানে বেশ কড়া শব্দের সাথে আগুনের ফুলকিও দেখা দিতো, এই যা...
মন্তব্য করতে লগইন করুন