অমুসলিমদের চোখে ইসলামী শাসন: পর্ব ১

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২০ মার্চ, ২০১৪, ০৮:৩৩:২১ সকাল



লেখাটি lighthouse24.com নামক ব্লগ থেকে নেওয়া। লেখক: ফাহমিদা মুন্নি। লেখাটি খুব ভাল লাগল তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

লিংক:

http://lighthouse24.org/blog/post/viewPost/?postid=471

ইসলামী শাসনব্যবস্থার কথা বলতে গেলেই সবচাইতে বেশী যে প্রশ্নের আমি সম্মুখীন হয়েছি তা হল, ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের কি হবে? বর্মানে, গণতান্ত্রিক শাসনের নীচে সংখ্যালঘুদের দুরবস্থা প্রত্যক্ষ করে অনেকেই এ জন্য ইসলাম বা মুসলিমদের দায়ী করে। কিন্তু, যে বিষয়টি তারা ভুলে যায় তা হল, মুসলিম অধ্যুষিত দেশে অমুসলিমদের নিয়ে চলমান ঘৃণ্য রাজনীতি আসলে নষ্টভ্রষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থারই অবশ্যম্ভাবী ফসল। এর সাথে ইসলাম বা মুসলিমের কোন সম্পর্ক নেই। অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করেছেন, মুসলিমরা কি অমুসলিমদের উপর শরীয়াহ আইন চাপিয়ে দেবে? তার অর্থ, আকারে ইঙ্গিতে বলা তাদের কি নিজ ধর্ম পালন করা থেকে জোর করে বিরত রাখা হবে, কিংবা, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হবে? পাশ্চাত্যের মিথ্যা প্রচারণার অসহায় শিকার মুসলিমদের মনে ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিমদের থেকেও এখন বেশী ভয়। যা কিনা সময়ের সাথে পরিণত হয়েছে প্রচন্ড রকম এক ইনফিরিওরিটি কমপেক্সে। কিন্তু, ইসলাম যখন তেরশ বছর পৃথিবী শাসন করেছে, তখন কি এ বিশাল ও বিস্তৃত সাম্রাজ্যে সবাই মুসলিম ছিল? তাদের কি জোরপূর্বক কখনও ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল? তারা কি ইসলামী শাসনের নীচে কোনপ্রকার অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল? ইতিহাস কি বলে? পাশ্চাত্যের অবিরাম মিথ্যা প্রপাগান্ডার ফাঁকফোকড় দিয়ে এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সৎ ও সাহসী অমুসলিমের লেখায় দ্যর্থহীন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বুশের তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে নীতিগত সমর্থন জানিয়ে ২০০৬ সালে পোপ বেনেডিক্ট সিক্সটিন যখন বলেছিলেন যে, মুহাম্মদ তলোয়ারের জোরে তার ধর্ম প্রচার করেছে এবং মুহাম্মদ আনীত ধর্ম শয়তানী ও অমানবিক। তখন, পোপের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে উরি এ্যাভনেরী নামে জার্মান বংশোদ্ভুদ একজন ইহুদী লেখক “Muhammad’s Sword” নামক তার একটি রচনায় নিম্নোক্ত সত্যগুলো তুলে ধরেছেন:

“…ইসলাম অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে কি ব্যবহার করেছে, তা একটি সাধারণ পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রমাণ করা যায়। আর তা হল, মুসলিম শাসকগণ তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছে যখন তারা এক হাজার বছরেরও বেশী সময় এ পৃথিবী শাসন করেছে, যখন তলোয়ারের সাহায্যে ধর্ম বিস্তারের ক্ষমতা তাদের ছিল? বাস্তবিক ভাবে, তারা কখনোই তা করেনি।

শত শত বছর মুসলিমরা গ্রীস শাসন করেছে। গ্রীকরা কি মুসলিম হয়ে গিয়েছিল? কেউ কি তাদের জোরপূর্বক ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করেছিল? বরং, বিপরীত ভাবে, খ্রিষ্টান গ্রীকরা অটোম্যানদের শাসনামলে উচ্চ পদে আসীন ছিল। বুলগেরিয়ান, সার্ব, রোমানিয়ান, হাঙ্গেরিয়ান এবং অন্যান্য খ্রিষ্টান জাতি গুলো একই সাথে কিংবা বিভিন্ন সময়ে অটোম্যানদের শাসনের নীচে বসবাস করেছে এবং তারা দৃঢ় ভাবে তাদের স্বীয় ধর্মকেই আঁকড়ে ছিল। কেউ তাদেরকে মুসলিম হতে বাধ্য করেনি এবং তাদের মধ্যে বেশীর ভাগই ছিল নিবেদিত প্রাণ খ্রিষ্টান । ……

…..১০৯৯ সালে ক্রুসেডাররা জেরুজালেম দখল করে নেয়, এবং তারপর তারা তাদের শান্তিপ্রিয় প্রভু ঈসা মসীহ’র নামে সেখানকার মুসলিম ও ইহুদী অধিবাসীদের নির্বিচারে হত্যা করে। এখানে উল্লেখ্য যে, ঐ সময়ে, ৪০০ বছর মুসলিমদের অধিকারে থাকা ফিলিস্তিনে খ্রিষ্টানরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এ বিশাল সময়ের মধ্যে তাদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দেবার কোনপ্রকার চেষ্টা করা হয়নি। …..

….মুসলিমরা ইহুদীদের উপর ইসলাম চাপিয়ে দিয়েছে এরকম কোন দলিলপ্রমাণও নেই। বরং এটা সর্বজনবিদিত যে, মুসলিমদের শাসনামলে স্পেনের ইহুদীরা তাদের বিকাশের এমন সূবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল, যা আজকের সময়ের পূর্বপর্যন্ত ইহুদীরা কখনই কোথায় পায়নি। …মুসলিম স্পেনে ইহুদীরা ছিল মন্ত্রী, কবি এবং বিজ্ঞানী। মুসলিম টলেডোতে খ্রিষ্টান, ইহুদী এবং মুসলিম স্কলাররা একত্রে কাজ করতেন এবং তারা প্রাচীন গ্রীক দর্শণ এবং বিজ্ঞান শাস্ত্র অনুবাদ করতেন। সেটা ছিল এক সোনালী যুগ। সুতরাং, এটা কিভাবে সম্ভব হত যদি তাদের নবী তলোয়ারের জোরে ইসলাম প্রচারের জন্য নির্দেশ দিতেন?

বরং, এরপর যা ঘটেছিল সেটাই হল বলার মতো বিষয়। যখন ক্যাথলিকরা স্পেন মুসলিমদের কাছ থেকে পূনরুদ্ধার করলো, তারা ধর্মের নামে এক ত্রাসের রাজত্ব তৈরী করলো। সেখানে বসবাসরত ইহুদী এবং মুসলিমদের তারা তাদের প্রদত্ত নিষ্ঠুর প্রস্তাবনার মধ্য হতে একটিকে বেছে নিতে বললো: হয় খ্রিষ্টান ধর্মগ্রহণ করা, অথবা, নির্মম ভাবে তাদের হাতে মৃত্যুবরণ করা কিংবা দেশ ত্যাগ করা। তাহলে প্রশ্ন আসে, লক্ষ লক্ষ ইহুদীরা কোথায় গিয়েছিল যারা তাদের ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিল? তারা কি পালিয়ে গিয়েছিল? বস্তুত: তাদের প্রায় প্রত্যেককেই মুসলিম বিশ্ব দু’হাত উম্মুক্ত করে সাদরে গ্রহণ করেছিল। সেফারডি (স্প্যানিশ) ইহুদীরা মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র বসতি স্থাপন করেছিল, পশ্চিমে মরক্কো থেকে পূর্ব ইরাক, উত্তরে বুলগেরিয়া (যা তখন অটোম্যান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল) থেকে দক্ষিণে সুদান পর্যন্ত। কোথাও তাদেরকে কখনও কোনপ্রকার অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়নি। বস্তুত: তারা ইনকুজিশনের নামে বর্বর অত্যাচার, ফ্লেমস অব দ্যা অটো-দ্যা-ফে (flames of the auto-da-fe), গণহারে দেশ থেকে নির্বাসন, যা কিনা সকল খ্রিষ্টান দেশগুলোতে একেবারে হল্যুকাস্ট পর্যন্ত হয়েছে এর কোনকিছুর সাথেই পরিচিত ছিল না।

কিন্তু, এর কারণ কি ছিল? মূলত: এর কারণ ছিল, ইসলাম সুনির্দিষ্ট ভাবে আহলে কিতাবদের অত্যাচার-নির্যাতন করাকে নিষিদ্ধ করেছে। ইসলামী সমাজে ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের জন্য একটি আলাদা জায়গা নির্ধারিত আছে। তারা হয়তো একেবারে মুসলিমদের সমপরিমাণ অধিকার ভোগ করেনি, কিন্তু, যা ভোগ করেছে তা ছিল প্রায় সমপরিমান। তাদেরকে, (অমুসলিম হিসাবে) একটি নির্ধারিত ট্যাক্স প্রদান করতে হত, কিন্তু তাদেরকে এর বিনিময়ে সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে ‍মুক্তি দেয়া হতো। বস্তুত: এটা ছিল এমন এক বিনিময় যা অনেক ইহুদীদের কাছেই অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য ছিল। ….

…প্রতিটি সৎ ইহুদী যারা নিজেদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানে, তারা ইসলামের প্রতি এক গভীর কৃতজ্ঞতা বোধ ছাড়া আর কিছু বহন করবে না। কারণ, ইসলাম ইহুদীদের ৫০টি প্রজন্মকে রক্ষা করেছিল, যেখানে (একই সময়ে) খ্রিষ্টান বিশ্বে তাদেরকে বর্বর ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে এবং বহুবার তাদেরকে তলোয়ারের জোরে ধর্মান্তরিত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

সুতরাং, “তলোয়ারের জোরে বিশ্বাস প্রচার” আসলে একটি শয়তানী কিংবদন্তী, এটা একটা মিথ যার জন্ম মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত ইউরোপে…

তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন তারা এগুলোকে জনসম্মুখে প্রচার করছে? কেন এই সময়ে?

বস্তুত: বুশ এবং তার ইভানজেলিক সমর্থকদের “ইসলামোফ্যাসিজম” কিংবা “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধ” এই সব শ্লোগানকে একটি নতুন ক্রুসেডের প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই, যখন সন্ত্রাসবাদ মুসলিম শব্দটির একটি প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। বস্তুত: বুশের নিয়ন্ত্রণ কর্তাদের জন্য বিশ্বের তেলের সমস্ত ভান্ডার নিয়ন্ত্রণকে যুক্তিযুক্ত করতে এটা একটি অত্যন্ত ধূরন্ধর প্রচেষ্টা। তবে, ইতিহাসে এটাই প্রথম বারের মতো নগ্ন অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে ধর্মীয় মোড়কে ঢেকে ফেলার অপচেষ্টা নয়, যেখানে দস্যুর আগ্রাসী অভিযান হয়ে যায় পবিত্র ক্রুসেড।” [By Uri Avnery, 27, September, 2006, peace activist, journalist, writer]

সূত্র: http://www.countercurrents.org/avnery270906.htm

http://jamesray.hubpages.com/hub/Killing-in-the-Name-of-God

http://www.jabulela.com/animals-humans/inquisition-torture-tools

http://www.christianity.com/church/church-history/timeline/1201-1500/first-

Muhammad's Sword By Uri Avnery

http://www.countercurrents.org

বিষয়: বিবিধ

১৪৯২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

195075
২০ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : সুন্দর লিখা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ।

ইহুদীরা অভিশপ্ত আর নাসারারা (খৃষ্টানরা ) পথভ্রষ্ঠ
195076
২০ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৮:৫০
শেখের পোলা লিখেছেন : শোর করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ৷ আল লেখককে শুভেচ্ছা৷
195297
২০ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৬
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : আপনার লেখাটা পড়ে খুব ভালো লেগেছে।
195414
২০ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:৪৮
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
195443
২০ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
195780
২১ মার্চ ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
196606
২৩ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:১০
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
201720
০২ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৫
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : ভালোই করেছেন শেয়ার করে। যারা জানেনা জানলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File