বাচ্চা শয়তান ৫
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৯ মার্চ, ২০১৪, ০৯:২৮:৪০ সকাল
কিছুক্ষণ স্যারকে গালাগালি দিয়ে আমরা কাগজ দিয়ে চোর-পুলিশ খেলতাম। এ খেলায় চারজন দরকার হয়। লোক ম্যানেজ করা কোনো ব্যাপারই ছিলনা। বৈঠকখানা বা রিডিং রুমের রাস্তার পাশের দরজা খুলে আমরা আমাদের শুভাকাঙ্খিদেরকে ডেকে নিতাম। চারটি কাগজে চোর,ডাকাত,পুলিশ,দারোগা লিখে তা ভাজ করে চারজনের মাঝে ছুড়ে দেওয়া হত। দারোগার নাম্বার ছিলো ৯০০, সে পুলিশকে বলতো-চোরকে খুজে বের করো। পুলিশ চোরকে ধরতে পারলে ৮০০ পয়েন্ট পেত আর না পারলে ০০ পেত এবং চোর পেত ৮০০। ডাকাত পেত ৬০০ পয়েন্ট। চোর এবং পুলিশ হবার জ্বালা এবং সম্ভাবনা ছিল। চোর লেখা কাগজ কারো হস্তগত হলে সে এমন ভাব নিয়ে থাকত যেন সে অবশ্যই চোর নয়। পুলিশ অনেক সময় ধোকা খেত। তবে বেশী ভাব নেওয়া জনকে অনেক সময় চোর হিসেবে শনাক্ত করা হত। আমরা প্রায়ই কাগজে চিহ্ন করে রাখতাম যাতে তা বাইরে থেকেই বোঝা যায়, তাই কিছুক্ষণ পরপর কাগজ পরিবর্তন করতে হত।
খেলা শেষে স্কোর হিসাব করে মর্যাদা নির্ণয় করা হত যথাক্রমে রাজা,রানী/উজির,চাকর,ম্যাথর। ম্যাথর হলে ইজ্জতে বড্ড লাগত,কারণ রাজা তার টয়লেট পরিষ্কার করার জন্য নিয়োগ দিত এবং তার দিকে তাকিয়ে ঘৃণায় সবাই থুথু ফেলত। আমাদের সময় এবং আমাদের পূর্বে এ খেলাটি করেনি এমন মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
এছাড়া আমরা আম,জাম,লিচু,কাঠাল নামক এক ধরনের খেলা খেলতাম। এর আরেক নাম ছিল রাম,সাম,যদু,মধু তবে আমরা এটা লেখা পছন্দ করতাম না। সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন তোলা যাবে না, কারণ আমরা তা বুঝতাম না। রাম,সাম শব্দগুলো আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল তাই আমরা তা লিখতে পছন্দ করতাম না। এ খেলা জোড়ায় জোড়ায় অথবা আলাদা আলাদাভাবে খেলা হত। একেকটি ফলের নাম চারটি কাগজে লিখে মোট ষোলটি কাগজ চারজনের মাঝে বন্টন করা হত। একজন আরেক জনের কাছে কাগজ পাস করত। প্রত্যেককে একই ফলের চারটি কাগজ মেলাতে হত,মেলাতে পারলে সে চ্যাম্পিয়ন হত।
নাম,দেশ,ফুল,ফল নামক খেলা করতাম। এ খেলায় অনেক জন একসাথে অংশ নিতে পারত। একজন একটি অদ্যাক্ষর উচ্চারণ করত আর সঙ্গে সঙ্গে সেই অদ্যাক্ষর সম্বলিত যে কোনো নাম,দেশ,ফুল,ফলের নাম খাতায় লিখতে হত। যার লেখা হয়ে যেত সে এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনত এবং তারপর লেখা বন্ধ করতে হত। মিলিয়ে দেখা হত কে কতটি লিখতে পেরেছে। প্রায় সময়ই আমি আজগুবি এক শব্দ লিখে প্রতিষ্ঠিত করতাম যে,এই নামে ফল আছে এবং দেশ আছে। এমনকি এর স্বপক্ষে ইতিহাসও বানিয়ে ফেলতাম এবং তারা অধিকাংশ সময়ই মানতে বাধ্য হত। তারা ভাবত-হয়ত এমন দেশ থাকতেও পারে। এখনকার সময়ে মনে হতে পারে,এইটা একটা খেলা হলো ? কিন্তু তখন মনে হত এটাই আসল খেলা।
আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও আমরা এজাতীয় খেলা করতাম। এ ধরনের খেলাগুলো সাধারণত আমরা পড়ার সময় খেলতাম।
যেদিন আমাদের স্যার থাকত না,সেদিন বলা হত,স্যার না থাকলে পড়া যাবে না,এমন কোনো কথা নেই। নিজেরা পড়াশুনা কর। স্মৃতি হাতড়াতে গলদঘর্ম হবার কোনো কারণ নেই, অবলীলায় বলতে পারি ,এজতীয় কথা শুনে কোনোদিন পড়িনি। আমি বরং আশা করতাম কেউ পড়ার ব্যাপারে শুধু উপদেশ দিক। প্রচন্ড ধমক,মাইর,কোনো কিছু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবার ভয় না থাকলে লেখা-পড়ার ব্যাপারটি ছিল চরম অবাঞ্চিত। মাঝে মাঝে ভাবতাম লেখা-পড়া করতে হবে এ চিন্তাটি কেন বিলুপ্ত হলনা,কেন এটাকে আমাদের উপর চরম নির্মমতায় চাপানো হল ? মাঝে মাঝে স্যার বাড়িতে যাবার আগে আমাদেরকে বেশী বেশী পড়া তৈরী করতে দিয়ে যেত। আমরা আগেই ঠিক করে রাখতাম যে,স্যার পড়া জিজ্ঞেস করলে কি বলব। যুক্তিসঙ্গত অজুহাত না থাকলেও আমরা পড়তাম না। এক্ষেত্রে সাধারণত আমার জ্বর হত আর পান্নার মাথা যন্ত্রনা হত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৫ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
majhe majhe ram sham jodu modhu khelai 4 typer 4 ta niye boshe thaktam. keo game dite parto na.
মন্তব্য করতে লগইন করুন