বাচ্চা শয়তান ৪

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ১৪ মার্চ, ২০১৪, ১২:৩৭:০৯ রাত



সাধারণতঃ আমার ছুটির পর পান্নাকে আরও কিছুক্ষণ পড়তে হত। আমার ছুটির সময় পান্না আমার দিকে এমনভাবে তাকাত যেন আমি খুবই ভাগ্যবান, যেন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। সে বার বার খোলা দরজা দিয়ে বাড়ির দিকে তাকাত। তখন স্যার ধমক দিয়ে উচ্চস্বরে পড়তে বলত যাতে বাড়ি থেকে বাপ মা তা শুনতে পায়।

আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার ওপারে ছিল লিপিদের বাড়ি। ওরা ছিল পাঁচ ভাই বোন। ওরা সন্ধ্যা থেকে পড়া শুরু করলে এলাকায় কেয়ামত শুরু হত। আমরা বৈঠক খানায় টিকতে পারতাম না পড়ার শব্দে। আমি নিশ্চিত ঢাকা শহরে এমন হলে পাশের বাড়ির লোকেরা মামলা টুকে দিত,ইউরোপ-আমেরিকা হলে তুলকালাম হত। ওভাবে না পড়লে নাকি ওদের মুখস্ত হতনা। ওদের পড়া শেষ হলে মনে হত ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দিল। এলাকার প্রায় সবাই উচ্চস্বরে পড়া শুনা করত। প্রায় সবাই উচ্চস্বরে পড়ার সময় এক লাইন পড়ে উ... শব্দ করত অনাবশ্যকভাবে। আর এক প্যারা পড়ে পরবর্তী প্যারায় যাওয়ার আগে উ...উ...উ... করে টান দিয়ে অগ্রসর হত। এদের মধ্যে পান্না সম্ভবতঃ একটু বেশীই করত। আমি অনেক সময় লক্ষ্য করেছি সে পড়তে পড়তে অন্য মনষ্ক হয়ে পড়লে খুব বেশী উ.. উ... করত। সম্ভবতঃ স্যারকে বুঝাত আমি পড়ছি। স্যারের ধমক বা বেতের বাড়ি খেলে উ.. উ..’র পরিমান বেড়ে যেত এবং বেশ কিছুক্ষণ কান্নার রেশ চলত।

আমাদের এলাকায় অনেক স্যার ছিল যারা তাদের স্টুডেন্টদেরকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিত এবং তাদের সাথে তাদের স্যারদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু আমাদের বাড়িতে যারা আসত তারা দুদিন পরই বাঘের মত আচরণ করত(এখন বুঝি আমাদের সাথে তারা যথেষ্ট ভাল আচরণ করেছে,স্যারের স্থানে আমি থাকলে মুন্নাকে ক্ষমা করা অসম্ভব ছিল)। আমি আর পান্না কয়েক জন টিচারকে বিদায় করেছি তাদের কঠোরতার কারনে। পান্না আর আমি তাদের ব্যাপারে মাকে বলতাম স্যার একেবারেই পড়াতে পারেনা। এই স্যারের কাছে পড়লে আমরা ফেল করব। তখন আমাদের ভবিষ্যত মঙ্গলের জন্য স্যার চলে যেত। তবে কয়েকবার এমন দেখা গেছে যে,আমরা বলতে বাধ্য হয়েছি-আগেরটাই ভাল ছিল। তবে আমি শয়তানি করলেও পড়া শুনায় খারাপ ছিলাম না। রেজাল্ট ভাল হত তাই অনেক সময় মাইর মাফও হয়ে যেত।

আমাদের বাড়িটা শুরুতে একতলা ছিল তারপর আমি যখন ক্লাস টুতে পড়ি তখন আড়াই তলা বানানো হয়েছে। মূল বিল্ডিংয়ের পাশে রান্না ঘর অতি প্রাচীন কালের । ঘরটি অনেক বড় এবং পাকা। এর উপরে টালি এবং ফ্লোর মাটির। সাথে বারান্দা আছে। সেখানে একটি চুলা ছিল যেখানে মুড়ি,খৈ ভাজা হত এবং বিভিন্ন রকম পিঠা,পায়েস তৈরী করা হত। এসব তৈরী করার সময় আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। মুড়ি,খৈ বড় বড় টিনের ভেতরে ঢুকিয়ে রাখা হত। খেজুরের পাটালী গুড় সাথে মুড়ি এবং খৈ এর সাথে নারকেল কুরা,গুড় অথবা ছাতু ছিল তখনকার উপাদেয় খাবার। রান্না ঘরের পাশেই আরেকটা বড় ঘর ছিল যেটা গেট পর্যন্ত চলে গেছে। এখানে এক সময় পরিবারের দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য ফ্রিজিয়ান গাভি থাকত। তবে তাদেরকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বিশাল আকৃতির জন্য। একবার এক গাভির দুধ দোয়ানোর জন্য মোটা সোটা এক লোককে ডেকে আনা হল। লোকটা বালতি নিয়ে গরুর পেছনের পায়ের কাছে বসে যেই না কিছুটা দুধ দুয়েছে অমনি প্রচন্ড এক ফ্লাইং কিক। লোকটা(নিনাম বালা) শুন্যে উঠে বালতির উপর পড়লো আর দুধ তার মাথায়,মুখে,পায়ে একাকার। লোকটা গরুকে ঝাড়ি দিতে দিতে বিদেয় হল আর আমরা পরবর্তী কয়েক মাস এ দৃশ্য বিভিন্নভাবে বর্ণনা করে হাসা হাসি করলাম এবং এটা নিয়ে অনেক কবিতা তৈরী করলাম।

গোয়াল ঘরটা পাকা,এরপরই মূল গেট এবং তার পাশে একতলা বিশাল বৈঠকখানা। চারপাশে পাচিল পেছনদিকে একটি গেট তার ওপাশে একটি বাগান যেখানে কাঠাল,আম,লেবুসহ অন্যান্য গাছের সমারোহ । বাম পাশে বলাকা ফুফুদের বাড়ি,পেছনে আওয়ালদের বাড়ি এবং সাবুদের বাড়ি এর পাশেই আমাদের আরেকটি বাগান এটা আতা গাছের জন্য বিখ্যাত ছিল এছাড়া ছিল কাঁঠাল,শিশু গাছ,বাঁশ,রয়না ইত্যাদি। এরপর স্কুলের বড় পাচিল। আমি,ভাই আর পান্না বাড়ির শিক্ষকের কাছে পড়তাম। বাড়ির স্যারেরা মাঝে মাঝে পেটাত। মাঝে মাঝে বলত- এই পড়াটা মুখস্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ছুটি নেই, সেদিন আবার আমাদের পড়া শেষ হতে দেরী হত। দেরী করে আসার কারণটা মা জানতে চাইত। তখন এমন ভাবে আমরা বর্ণনা করতাম যাতে শিক্ষকের এ কাজটা দোষ হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু মা এটা নিয়ে শিক্ষকদেরকে কিছুই বলত না। আমরা কেউ বাড়ির শিক্ষকদের পছন্দ করতাম না। আমাদের কাছে বাড়ির শিক্ষক ছিল “গু” । গু কে মানুষ যেমন ঘৃণা করে আমরা আমাদের লজইন মাস্টারদেরকে তেমনি ঘৃণা করতাম। অন্য বাড়ির লজইন মাস্টাররা তাদের বাড়িতে গেলে কয়েকদিন করে থাকত কিন্তু কেন জানি আমাদের বাড়ির মাস্টাররা একটু বেশী দায়িত্ব সচেতন হত তাই একদিনের বেশী তাদের বাড়িতে থাকত না। আমার ধারনা তারা গরিব হবার কারনে তাদের বাড়িতে তারা বেশী দিন থাকত না,যাতে তাদের বাপের উপর বেশী চাপ না পড়ে। কিন্তু তাদের অবস্থা এতটা খারাপ ছিলনা। সম্ভবতঃ তারা আমার আব্বাকে ভয় করত,বেশী দিন বাইরে থাকলে আব্বা যদি অসন্তুষ্ট হয় ! কিন্তু তারা কেন যে আমাদের দিকটি বিবেচনা করতনা, তা বুঝলাম না। তবে যখনি তারা বাড়িতে যেত তখন আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। স্কুল থেকে ফিরে যেদিন শুনতাম স্যার বাড়িতে গেছে সেদিন আনন্দে পেট ভরে যেত,বেশী খেতে পারতাম না। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা যথারীতি বৈঠকখানায় প্রবেশ করতাম। সর্ব প্রথম পান্না স্যারের বসার স্থানের দিকে তাকিয়ে বলত- “শুয়োর”(দুঃখিত স্যার)। এরপর আমি টেবিলের উপর উঠে স্যার বরাবর অনবরত লাথি মারতাম। টেবিলের উপর উঠে লাফাতাম,পায়ের নীচে থাকত আমাদের বই খাতা।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯১ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

191973
১৪ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:৪৬
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য
191983
১৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:৩৩
আরোহী রায়হান প্রিয়ন্তি লিখেছেন : তখন মনেহয় খালি দুষ্টুমি করতেন। সেটাই কি খাবো খাবো দুনিয়া খাবোতে রূপান্তরিত হয়েছে নাকি? Big Grin
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
144477
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
192012
১৪ মার্চ ২০১৪ রাত ০৪:১৭
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : গু !!! I Don't Want To See I Don't Want To See I Don't Want To See
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
144478
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ওয়াক থু...
192038
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:১৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : I like your writing
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
144479
দ্য স্লেভ লিখেছেন : thnks bro
192079
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩১
গেরিলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
192080
১৪ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩২
চোথাবাজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৭
144480
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
192135
১৪ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০৩:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মুড়ি দিয়া গুড় আর নারকেল কোড়া.....
কতদিন খাইনা।
তবে আপনার ভাইগ্য ভাল আমি আপনর মাস্টার হইনাই। মানে আপনি যাযা করেছেন সেগুলি আমার পুর্ব থেকেই জানা কিনা।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৭
144481
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হেহেহে বেচে গেছেন...
192143
১৪ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:০৪
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : মুই আপনের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাইনি। হের লিগ্যা আপনের কুপাল ভালা আছিল। পিচ্ছি শয়তানডারে কিভাবে পিচ্ছি ফিরিস্তা বানানো যায় তার উপ্রে এম. এ (অনার্স) বি. এ ফেইল, আই. এ. ফাসঁ কোর্স বেশ(কম)প্লিটেড।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৯
144482
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম কার যে কপাল তা তখন দেখা হলে বোঝা যেত...অন্তত গু গোবর খাওয়ার হাত থেকে বেচে গেছেনTongue
192160
১৪ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৪:৩২
আহমদ মুসা লিখেছেন : বাচ্চা শয়তানটা এখন কোথায়?
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০০
144483
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সে এখন ওবামার দেশেHappy
১০
192184
১৪ মার্চ ২০১৪ বিকাল ০৫:১১
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আপনি যদি বাচ্চা হন তাইলে এখনকার পোলাপানতো বুড়া ধাড়ি শয়তান!
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০০
144484
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম এখনকার পুলাপাইনের দুষ্টামির ধরণ ভিন্ন
১১
192402
১৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৬:৪৭
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন ভদ্র ছাত্রদের জন্য এক মাত্র আমার মামা কাদের মাষ্টারই ছিলেন উপযুক্ত,যেমন স্বাস্থ শরীর তেমনই গলার আওয়াজ, সেই সাথে বেতের সঞ্চালন পদ্ধতি৷
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০১
144485
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমার জীবনে যথেষ্ট কাদের স্যার পেয়েছি...
১২
192711
১৫ মার্চ ২০১৪ রাত ০৯:৩০
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। আহারে এই পোষ্টটা যদি ছোড কালে দিতেন তাইলে প্যাদানি কারে কয় .....।
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০১
144488
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম...তা বটে। ওয়া আলাইকুম সালাম
১৩
193838
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৭:৩১
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : উফফ, এই দুষ্ট বাচ্চাটাকে পিটা দেয়ার জন্য হাত নিশপিশ করছে! Time Out
১৮ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:০৩
144491
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আমার বাপ আমাকে ধরতে পারেনি আর আপনি....মাইরের পর সাবধান....কি দিয়ে কি যে খাওয়াব বুঝতেও পারবেন না...

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File