বাচ্চা শয়তান(আমার প্রথম স্কুল অভিজ্ঞতা)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ মার্চ, ২০১৪, ০১:৪৬:৫৭ দুপুর
আমার আব্বা আমার সাথে যে ধরনের ব্যবহার করত আওয়ালের আব্বা তার সাথে সে ধরনের ব্যবহার করত না। ওর বাপ ছিল খুবই আমুদে মানুষ এবং আওয়ালকে সে খুবই পছন্দ করত। সে আওয়ালকে সাধারণতঃ নাম ধরে ডাকত না। আওয়ালকে ডাকত- ‘ও আমার নন্দে পাখি’ বলে। নন্দে পাখির অর্থ না বুঝলেও এটা বুঝতাম যে, সে তার পুত্রকে খুব পছন্দ করে। আওয়ালের পড়া শুনা নিয়ে তার পরিবারের কোন মাথা ব্যাথা ছিলনা। তার আব্বা তাকে নিয়ে মাঠে যেত । আওয়ালের আব্বা খুব ভাল তরকারির চাষ করত। ধনে পাতা,ডাটা চাষে ওর আব্বা ছিল বিখ্যাত। অবশ্য ধনে পাতার অসহ্য গন্ধে আমি ওদের বাড়িতে যেতাম না। এম ,এল পাইলট হাই স্কুলের পেছনে ডিপ টিউব ওয়েলের পাশে ওদের বেশ বড় সড় এক খন্ড অতি উর্বর জমি ছিল। এর পাশেই ছিল সুন্দর খেজুর বাগান। সেখানে আওয়ালের আব্বা খেজুর পাতা দিয়ে তৈরী মাদুর যাকে বলে ‘বেদে পাটি’ ওটা বিছিয়ে শুয়ে থাকত। আমি যখন মাঠে যেতাম তখন এ দৃশ্য দেখে আমার মনে হত ওর আব্বা যদি আমাকে একটু ওখানে শুতে দিত ! মাঠে সব সময় খুব সুন্দর একটা হওয়া বইত। মাঠে গেলে আমার আনন্দের সীমা থাকত না। খেজুর বাগান ছিল আমার খুব প্রিয়। ওখানে গেলে আমরা দৌড়া দৌড়ি করতাম,পলাপলি খেলতাম। কয়েকটা কুল গাছ ছিল ,কাচা পাকা কোনো ব্যাপার না। কুল পেড়ে খেতে হবে এটাই ব্যাপার। ছোট ছোট খেজুর গাছে ভাড়(ছোট কলস)পাতা থাকত। অমরা পাটকাঠি দিয়ে তার মধ্য থেকে খেজুরের রস টেনে খেতাম। মাঠে আরও কত কি করতাম ! সে এক অন্য রকম আনন্দ। এসব আনন্দের বিপরিতমুখী অবস্থা ছিল লেখা পড়া । প্রথম দিনটাই আমার জন্য শুভ ছিল না। থাকবেই বা কেন ? যারা স্কুলে যেত তারা বলত-স্কুলে স্যারেরা খুব মারে। এদের মধ্যে আমার ভাইও ছিল। সে বলত স্কুলের সুন্নত স্যার,হাসান স্যার মারতে মারতে শেষ করে ফেলে আর স্কুলে না গেলে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং পেটায়। একেক স্যারের মাইরের স্টাইল একে রকম। ফলে স্কুলে ভর্তি হবার আগেই স্কুল সম্পর্কে আমার প্রচন্ড ভীতি তৈরী হয়েছিল। আমার স্কুলে ভর্তি হবার জন্য স্বশরীরে উপস্থিত হতে হয়নি। আমার আব্বা ভর্তি নিতে বলেছিল ,হয়ে গেছে। আমার খুব ভাল মনে আছে,যেদিন আমার প্রথম স্কুল সেদিন সকালে আমার মেঝো বোন আমাকে দাদুদের পুকুরে নিয়ে গেল গোসল করানোর জন্যে। আমি তো মটে গোসল করব না। কারণ গোসল করলেই স্কুলে যেতে হবে এবং স্কুল সম্পর্কে পূর্ব ধারনা সূখকর ছিল না। আর আমি জানতামও না যে স্কুল ব্যপারটা আসলে কি এবং কেনই বা সেখানে যেতে হবে। জানব কি করে ? আমাদের সময়ে মফস্বল এলাকার পিতা মাতারা সন্তানের খাওয়া পরা নিয়েই বেশী চিন্তা করতেন,লেখা-পড়ার ব্যাপারটা ছিল এক ধরনের রীতি। সন্তানের একটা নির্দিস্ট বয়স হলেই আর দশ জনের দেখা দেখি তারাও বই নিয়ে স্কুলে যেত। কাওকে কাওকে দেখা যেত ক্রমাগত স্কুলে যেতে যেতে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের পিতা মাতা জোরকরে কয়েকবার স্কুলে দিয়ে আসত এরপর আবারও তারা বিরতি দিত,এক সময় তারা ঝরে পড়ত। আমরা মফস্বল এলাকায় বড় হলেও আমাদের ব্যাপারটা এমন ছিল না। আমাদেরকে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলতে হত।
যাইহোক বহু কান্না কাটির পর আমি স্কুলে গেলাম। সম্ভবতঃ আমার মেঝো বোনই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল সেখানে। আমাদের সময়ে প্লে গ্রপ,নার্সারী,কেজি ওয়ান,কেজি টু,স্টান্ডার্ড ওয়ান,টু... ইত্যাদি ছিল না। আমরা প্রথমে পড়তাম ছোট ওয়ানে তারপর বড় ওয়ানে তারপর ক্লাস- টু,থ্রি,ফোর...। সম্ভবতঃ ছোট ওয়ান ছিল নর্সারী টাইপের কিছু যেখানে সহজ সরল পাঠ দেওয়া হত। কিন্তু অনেকে সরাসরি ক্লাস ওয়ান, বড় ওয়ান অথবা টু তে পড়ত। আমার ভাইও সরাসরি ক্লাস টু তে ভর্তি হয়েছিল। উপরের ক্লাসে সরাসরি যারা ভর্তি হত সাধারণতঃ তারা ব্রিলিয়ান্ট হত কিন্তু আমার ভাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মোটেও সেরকম ছিল না। ওর বয়স একটু বেড়ে গিয়েছিল তাই উপরের ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। তবে বয়স খানিকটা বেড়ে গেলেই যে তারা উপরের ক্লাসে ভর্তি হত এমন নয়, বয়সে বড় এমন অনেকেই আমাদের সাথে পড়ত।
প্রথম দিন আমি পাথরের মত ক্লাসের বেঞ্চে বসে থাকলাম। এটি ছিল ঝিকরগাছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমাদের বাড়ি হতে খুব বেশী হলে ২০০ গজ দূরে। আর আমাদের জমির শেষ প্রান্তেই ছিল স্কুলটা। একই সীমানার মধ্যে দুটি স্কুল। উভয়ের একই মাঠ । ওপাশেরটা সরকারী গার্লস হাই স্কুল। গার্লস হাই স্কুল ছিল দো-তলা এবং সেকেন্ড ব্রাকেড আকৃতির আর আমাদেরটা ছিল একতলা তবে উপরে টিনের ছাউনি,তার নীচে কাঠের সিলিং। একপাশে অবশ্য বড় একটা ক্লাস রুমের উপরে টালি দেওয়া ছিল। অমাদের ক্লাস হত দুই শিফ্টে। ছোট ওয়ান ও বড় ওয়ানের ক্লাস শেষ হবার পর ওখানে উপরের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হত। তারা জাইগা দখল করার জন্য আগে এসে আমাদের কাছে বই রাখত। আমরা ছুটির আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তাদের বই খাতা সযতেœ আগলে রাখতাম।
আমি বসে আছি ক্লাসের মাঝা-মাঝি । এটা ছিল টালি ওয়ালা ক্লাস রুম যার পেছনে আমাদের কাঠাল,বাঁশ বাগান। এখানে একবারে অন্তত একশ স্টুডেন্ট ক্লাস করতে পারত। এর ছিল দুটি দরজা একটি সামনে অন্যটি পেছনে। আমি দুই দরজার মাঝে বসলাম এবং পাথরের মত বসে রইলাম কারণ আমাকে এভাবেই চুপ চাপ বসে থাকতে বলা হয়েছে। আমাকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে এখানে হৈচৈ করা যাবেনা,দৌড়া দৌড়ি করার জাইগা এটা নয়,স্যার যা বলবে তাই’ই শুনতে হবে। আমি দেখলাম একমাত্র আমিই চুপচাপ বসে আছি। আর অন্য সবাই হৈচৈ, লাফালাফি,মারা-মারি করছে,যেন এটা খেলার মাঠ। আমার চাইতে বেশ বড় এবং অনেক লম্বা একটা ছেলে(তার নাম শেরেকূল) বেঞ্চের উপর দিয়ে লাফ মারতে মারতে সামনে থেকে পেছনের দিকে যাচ্ছে এবং পেছন থেকে সামনে। সে আবার উচ্চ স্বরে গানও গাচ্ছে। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি ছাড়া সবাই মহা আনন্দে লাফালাফি করছে,কেউ কেউ চোর পুলিশ খেলছে। দু একজন মারামারি করে কান্নাকাটিও করছে। আমাকে বলা হয়েছিল অনেক সময় স্যারেরা পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে,তখন যদি কাউকে হৈচৈ করতে দেখে তাহলে একেবারে মেরে ফ্যালে। আমি শিক্ষকদের সম্পর্কে যে ধারনা পেয়েছিলাম তাতে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম যে,শিক্ষক হলেন এমন এক প্রাণী যাদের কাজ হল যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের পেটানো এবং পেশার দিক দিয়ে আজরাঈলের পরেই উনার স্থান। পুরো ক্লাস যেন মাছের বাজার ,না না মাছের বাজার বেশ শান্ত, এর সাথে তুলনা করা চলে পল্টন ময়দানের কোন রাজনৈতিক সমাবেশকে। সম্ভবতঃ আমার মত কেউ স্কুল সম্পর্কে এত তথ্য পায়নি,এদের আচরণ তাই প্রমান করে। হঠাৎ ফর্সা মোটা তাজা একজন লোক প্রবেশ করল কিন্তু পল্টন ময়দানের রাজনৈতিক সমাবেশে কোন ব্যাঘাত ঘটল না বরং মনে হল এই মাত্র তাদের নেতা প্রবেশ করেছে এবং তারা তার নামে শ্লোগান দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়। স্যারের দিকে কাউকে ফিরেও তাকাতে দেখলাম না। স্যার হুঙ্কার ছাড়লেন-“এই চুপ কর !”আমার ভেতরে কি জানি একটা নেই হয়ে গেল। সবাই থামল এবং যার যার আসন গ্রহন করল। কে জানি বলল- হোসেন স্যার ! ইনিই আমাদের সেই হোসেন স্যার, যার সম্পর্কে বর্ণনা শুনে আরব্য উপন্যাসের দস্যু কেহেরমান জাতীয় কারো কথা মনে পড়া খুবই স্বাভাবিক। স্যারের হঙ্কারে সবাই থামল না তবে আমি ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেলাম। হোসেন স্যার আর সুন্নত স্যার নাকি স্কুলে না গেলে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যেত এবং বেদম প্রহার করত। স্যার রোল কল শুরু করলেন এবং বলে দিলেন আমি যার নাম উচ্চারণ করব সে “উপস্থিত” বলবে। আমি তার কথা বুঝতে পারলাম না ,সম্ভবত ভয়ের ঠেলায়। তবে অন্যরা যখন উপস্থিত বলে নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করল তখন আমিও তা বললাম কিন্তু আমার কেমন জানি লজ্জা-লজ্জা, ভয়-ভয় করতে লাগল। রোল কলের মত একটি বিষয় আছে তা আমি প্রথম জানলাম। হোসেন স্যার প্রথম দিনের প্রথম ক্লাস এমনভাবে নিতে শুরু করলেন যে,মনে হল আমরা এর আগে কয়েক বছর পড়া শুনার তালিম নিয়েছি,আমরা এখন অনেক কিছুই জানি। উনি যা বললেন,যা পড়ালেন তা আমরা বুঝলাম কিনা তাতে তার কিছু আসল-গেল বলে মনে হল না(এ ব্যাপারগুলো অনেক পরে বুঝেছি)। ক্লাস পুরো পুরি শান্ত ছিলনা। তিনি মাঝে মাঝে হুঙ্কার ছাড়ছিলেন শান্ত করার জন্য,আমি চমকে চমকে উঠছিলাম। তিনি মারেননি কাউকে। ব্যাপারটা এমন না যে তিনি মারেন না এবং তার সম্পর্কে প্রদান করা সকল তথ্য ভুল। তিনি প্রচন্ড পেটান এবং তার সম্পর্কে শোনা সকল কথাই সত্য। তবে তার মাইর খাওয়া আমার কপালে ছিল না। কারণ তার ক্লাসে আমি পাথর হয়ে থাকতাম এবং কিছুদিন পর তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যান। আমি একটা ব্যাপার এখনও বুঝি না-শিক্ষকের দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান দান করা,যেমনঃ লেখা-পড়া কেন করতে হবে,এতে লাভ কি,এর সাথে আমাদের জীবনের সম্পর্ক কি, আমাদের সার্বিক আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ,আমরা আস্তে আস্তে কোন দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ইত্যাদি। লেখা পড়া কষ্টকর বিষয় কি না,অথবা এর মধ্যে যে আনন্দ আছে তা যদি শিক্ষকরা বুঝাতে পারতেন এবং তাদেরকে তাদের মত করে শিক্ষা দিতে পারতেন তাহলে আমার বিশ্বাস বহু শিশুকে অকালে ঝরে পড়তে হত না এবং অনেককে কুইনাইনের মত জিনিসটি গিলতে হত না। শিক্ষাকে কুইনাইন হিসেবে নিলে এ শিক্ষা বাস্তব জীবনে কতটুকু কার্যকর প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাদের সময়ে এমন কোন স্টুডেন্ট পায়নি ,যে পরিবারের বিশেষ চাপ ছাড়া স্বতস্ফুর্তভাবে লেখা পড়া করতে আগ্রহী ছিল। আমি প্রায় নিশ্চিত,আমাদের শিক্ষকরা অনেক উপরের ক্লাস চষে আসলেও তারা ছিলেন মূলতঃ আমাদের মতই চিজ যারা শুধু বইয়ের পাতা মুখস্ত করেছে। কি পড়ছি,কেন পড়ছি,কেন পড়তে হবে এ সংক্রান্ত কোন জ্ঞান ঐ সময়ে আমাদের ছিল না। আতেলদের মত যদি এই বিষয়গুলো আমাদেরকে শিক্ষা দিত তবুও আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম না। আমাদেরকে আমাদের মত করে শেখানো উচিৎ ছিল এবং তা কখনই শেখানো হয়নি। ফলে আমাদের কাছে শিক্ষা অর্থ ছিল শুধুই বইয়ের পাতা মুখস্ত করা। আমি এ বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিলাম। আমি সেই ছোট ওয়ান থেকে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত “আমার বই” হিসেবে খ্যাত বাংলা বই এবং আরও কয়েকটি সহায়ক বই দাড়ি,কমাসহ মুখস্ত করে ফেলেছিলাম। অন্য ক্লাসের স্টুডেন্টরা দল বেধে আমার কাছে আসত এবং একজন আরেক জনকে বলত-“ এ (এই ছেলে)পুরো বই মুখস্ত বলতে পারে। বিশ্বাস না হয়,জিজ্ঞেস কর ?”আমাকে বললেই আমি গড় গড় করে প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত বলে দিতাম। তবে এর ফলাফল মোটেও ভাল ছিল না। আমি বুঝতাম না কেন মুখস্ত করতে হয়। তাই স্কুল জীবনের প্রথম লিখিত পরীক্ষায় খুব বিপদে পড়েছিলাম। পরীক্ষার আগে আমার বড় ভাই বোনরা বলে দিল মনোযোগ সহকারে ঠন্ডা মাথায় লিখতে। কিন্তু তারা বলেনি- কি লিখতে হয়,কিভাবে লিখতে হয়। স্কুলের স্যাররাও বলেনি। আমরা পরীক্ষার দিন হলে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ম্যাডাম প্রশ্নপত্র দিয়ে গেল। আমারা সবাই খাতা আর প্রশ্নপত্র নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থকলাম। আমরা জানতাম না যে, এগুলো দিয়ে কি করব। পরিক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক জ্ঞানই আমাদের শিক্ষা দেওয়া হয়নি। কেউ কখনও বলেনি একটা প্রশ্ন পত্র দিবে তখন ওটা দেখে ওটার উত্তরগুলো খাতায় লিখতে হবে। আমি দেখলাম আমার সামনের ছাত্রটা দাড়িয়ে তার সামনের বেঞ্চের ছাত্রের খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর সে তার খাতায় কিছু একটা লিখল। সে দাড়িয়ে ঝুকে দেখছে এবং তা লিখে ফেলছে। আমি তখন দাড়িয়ে ওর খাতার দিকে তাকালাম এবং সে যা লিখল আমিও তাই লিখলাম। পরেরবার তাকিয়ে দেললাম একটু আগে যা লিখেছিল তা কেটে দিয়ে নতুন করে লিখেছে,সম্ভবত ওর সামনের স্টুডেন্টও এটা করেছিল। আমিও একইভাবে কেটে দিলাম এবং ওকে দেখে লিখলাম। আমার পেছনে এবং পাশের স্টুডেন্টরা আমাকে দেখছিল। আমি তখন প্রায় নিশ্চিত যে,পরিক্ষা মানে হল, একজন যা লিখবে তাকে দেখে অন্যরাও তাই লিখবে। বেশ কিছুক্ষণ এ বিশ্বাস স্থায়ী হল। এমন সময় একজন ম্যাডাম(ঝর্ণা আপা) ঝাঝ ওয়ালা কন্ঠে বলল-এই থাম,ওকে দেখছিস কেন ? তোরা পড়া শুনা করিসনি ?” আমাকে বলল-“এই প্রশ্নপত্র তোল ! ” আসলে আমার প্রশ্নপত্র বেঞ্চের নীচে পড়ে গিয়েছিল,আমি তা খেয়াল করিনি,দরকারও ছিলনা। ওটা পড়লেই কি ? ওর গুরুত্বই তো বুঝিনি। আমি প্রশ্নপত্র তুললাম তখন ম্যাডাম বলল এটা পড়ে দ্যাখ, এখানে প্রশ্ন লেখা আছে,তোরা এখানকার প্রশ্নের উত্তর ওই খাতায় লেখ ! ” তা এটা আগে বললে কি এমন ক্ষতি হত ? হটাৎ সবাই বসে পড়ল এবং প্রশ্নপত্রের দিকে মনোনিবেশ করল। আমাদের ক্লাসে অনেক মেধাবী স্টুডেন্ট ছিল কিন্তু এদের অনেকেই আর লেখা পড়া করেনি। সম্ভবত শিক্ষা ব্যবস্থা জীবন মুখী না হওয়া এবং শিক্ষার গুরুত্ব বাস্তবতার নিরিখে না বোঝা’ই এর কারণ ছিল। এভাবে বহু মেধাই বিকশিত হবার আগেই নিঃশেষ হয়ে গেছে আর এর জন্য দায়ী শিক্ষা ব্যবস্থাপনা,যা অনেককে অঙ্কুরেই ধ্বংস করেছে এবং অনেকের মূল্যবান সময়,পয়সা,শ্রম নিয়ে তাকে অকর্মণ্য বলদে পরিনত করেছে। এর শুরুর দিকটার চাইতে শেষের দিকটা অনেক করুন। সেখানে তাকে শেখানো হয় শিক্ষার প্রাপ্তী একটি ভাল চাকুরী। তাই চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে খোঁজা খুঁজি। অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে পঠিত বিষয়ের সাথে কর্ম জীবনের সম্পর্ক খুবই দূরবর্তী। এ ব্যাপারগুলো বহুকাল আগে থেকে শুরু হয়ে আজ অবধি চলছে। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা শিক্ষার্থীদের সাথে বরাবরই প্রতারণা করে এসেছে।
চলছে...
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৩ বার পঠিত, ৩৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের ছিলেন থার্ড স্যার পিটাইয়া তক্তা বানাই দিতেন।
প্রাণী যাদের কাজ হল
যেভাবেই হোক শিক্ষার্থীদের
পেটানো এবং পেশার দিক
দিয়ে আজরাঈলের পরেই উনার
স্থান। খাইছেরে ...
মন্তব্য করতে লগইন করুন