বাচ্চা শয়তান (আবারও শুরু হল)
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৮ মার্চ, ২০১৪, ১০:২২:১৬ সকাল
ধুম ধাম মাইর। ওমা একি ! যেন ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের উপর রয়েল বেঙ্গ ল টাইগার ! মাইর কি একটু অর্ধ্বেক ! কচা গাছের ডাল দিয়ে পশ্চাৎ দেশে যথেচ্ছাচার। ব্যাথা এবং ভয় সমভাবে প্রভাব বিস্তার করাতে ছেলেটা কখন যে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করে দিয়েছে তা সে বুঝতেই পারেনি। বয়স তার কতই বা হবে, বড় জোর ছয় বছর।
ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন রান্নাঘরের পিড়িতে বসতে পারিনি। হ্যাঁ,এ আমি ছাড়া আর কেউ নয়। প্রথমদিন যখন বসতে কষ্ট হচ্ছিল তখন মাকে জিজ্ঞেস করলাম,নীচের দিকে ব্যাথা কেন ? আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না ,ব্যাথা কেন লাগছে। মাইর খাওয়ার ব্যাপারটা ওটাই প্রথম। মা এর কারণ বলেছিল কিনা মনে নেই তবে বুঝতে শেখার পর মনে হয়েছিল মা সেদিন যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছিল। তখনকার দিনে ৬/৭ বছরের শিশু তেমন কিছু বুঝতনা। অথচ এখনকার শিশুদের জ্ঞান বুদ্ধি দেখলে মনে হয় লেখা পড়ার পাঠটা এরা পেটের ভেতর থেকেই চুকিয়ে এসেছে। অন্তত গত বছরে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনার পর আমার এমন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাসার নীচের গ্যারেজে দেখলাম তিনটা মেয়ে ঘুর ঘুর করছে। বয়স ছয় বছরের বেশী কোনো ভাবেই হবেনা। অভ্যাসবশত একটু খুনসুটি করলাম,মানে ওদের দিকে তাকিয়ে একটু শিষ দিলাম। একজন আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল- ‘মেয়ে মানুষ দেখলে শিষ দিতে ইচ্ছা করে, না ? ’ কিছুক্ষণের জন্য পাথর হয়ে গেলাম। পর মুহুর্তেই স্বাভাবিক হলাম কারণ এক জনের কথা মনে পড়ল,সে বলেছিল- ‘রুহ্ এর বয়স বেড়ে গেছে। তাই এখন সব পেকে পেকে বের হচ্ছে।’ সে যাই হোক মূল ঘটনায় ফিরে আসি ঃ
ঘটনাটা হল,আমি উলঙ্গ ছিলাম। এটা অবশ্য কোনো ঘটনা না। আমি বৃষ্টির মধ্যে এ অবস্থায় কাদামাটি খেলছিলাম ,আসলে সেটাও তেমন গুরুতর অপরাধ নয় ,অপরাধ হল আওয়ালের সাথে কেন কাদা-মাটি খেলছিলাম ? অওয়ালদের বাড়ি ছিল আমাদের বাড়ির পেছনে,দূরত্ব মাত্র দশ ফুট। সে ছিল সাংঘাতিক বদ কিসিমের। বয়সে ও আমার থেকে এক বছরের বড়। ওর সাথে ওই বয়সে আমার মেশা নিষেধ কেন,তা আমি জানতাম না। আমি এটাও জানতাম না ওর বড় ভাইয়ের সাথে আমার বড় ভাইয়ের কেন মেশা নিষেধ। আওয়ালদের পরিবারে ওর ভাই আজিজই কেবল ক্লাশ নাইন পর্যন্ত উঠেছিল, গর্ব করার মত ! তবে গর্বটা তাকে নিয়ে নয়,অবশ্যই হেড মাস্টারকে নিয়ে। আওয়ালকে আমি কখনও স্কুলে যেতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। ওকে নিয়ে বাড়িতে কেউ পড়িয়েছে বলে মনে করতে পারিনা। সে সারাদিন খেলা ধুলা করত এবং ওর মধ্যে এক ধরনের সুপ্ত শয়তান কাজ করত। ব্যাপারটা সেই ছোট বেলা থেকেই বুঝতাম ,আসলে আমিও তো একই জাতের। আওয়ালকে ভাল লাগার মূল কারণ বোধহয় এটাই ছিল। আমার কাছে চিরতার পানি,কুইনাইন,নিমের ছাল এগুলোর চাইতে অধিক তিতা ছিল পড়া-শুনা নামক ব্যাপারগুলো। কিন্তু কপালের ফের,কি করব !
সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল মুষলধারে ,সম্ভবতঃ সেটা ছিল বর্ষাকাল। বর্ষায় মাঠ-ঘাট ডুবে গেলে আমার খুব ভাল লাগত। আমি আনন্দে আত্মহারা হতাম। সেদিন আমি আর আওয়াল আমাদের বাড়ির সামনের প্রশস্ত মাঠে(পরবর্তীতে এটা হয়েছিল রেড ক্রিসেন্টের মাঠ বা আমাদের ভাষায় সমিতির মাঠ) খেলা করছিলাম মনের আনন্দে। আমাদের পরনে প্যান্ট ছিলনা(আওয়ালের অবশ্য প্যান্ট পরার অভ্যাস গড়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছিল)। ও বয়সে পরনে প্যান্ট না থাকাটা বোধ হয় ও সময়ের ফ্যাশনই ছিল কারণ আরো যাদের নাম মনে পড়ছে তাদেরকে কল্পনায় স্পষ্ট নগ্ন দেখা যাচ্ছে । আমরা সাত/আট বছর পর্যন্ত প্যান্ট খুলে নদীতে গোসল করেছি। যাইহোক আমি আর আওয়াল কাদা পানিতে আনন্দে আত্মহারা। হটাৎ বাজারের দিকের রাস্তা ধরে একটা বাঘ হুঙ্কার দিয়ে তেড়ে এল,হাতে তার ছাতা। আওয়ালের কথা মনে নেই। ওর কথা সে সময়ে মনে না থাকার কারণটা আমার কাছে এখন স্পষ্ট। হাশরের ময়দানের ভয়াবহতায় কেউ অন্য কাউকে নিয়ে ভাববার বিন্দুমাত্র অবকাশ পাবে না,সবাই ইয়া নাফসি ! ইয়া নাফসি ! করতে থাকবে অর্থাৎ আমার কি হবে ! আমার কি হবে ! আমার ব্যাপারটা ওরকমই ছিল,আওয়ালের কথা ভাবার সময় ছিল না। সেদিন অসময়ে আমার বাঘ সদৃশ পিতা আমাদের বেনাপোলের অফিস থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। ঘটনার আকশ্মিকতায় আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়। দৌড়ে পালাবার সাহস হারিয়ে ফেললাম। আমার সামনেই কচা গাছের ডাল ভাঙ্গা হল। তারপর আমার বাম হাত ধরে,কচার ডাল দিয়ে.....। আমার চিৎকারে বাড়ির লোক এবং আশপাশের লোক জড় হল এবং টানা হ্যাচড়া করে আমাকে উদ্ধার করল। এরপর অনেকদিন পর্যন্ত আওয়ালের সাথে খেলা করা হয়নি। আপনারা ভাবছেন আওয়াল এমন একজন ব্যক্তি যার সাথে দেখা না হলে,খেলা না করলে আমি বাচতাম না ? ব্যাপারটা সেরকম না। আমি যখন পড়তাম এবং দুপুরে মার সাথে ঘুমাতাম তখন আওয়াল খেলা করত এবং আমাকে দূর থেকে অথবা জনালার ওপাশ থেকে ডাকত। তার আবেদন প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা আমার ছিলনা।
চলিতেছে.....
বিষয়: বিবিধ
১১৭৫ বার পঠিত, ৩৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চলুক..
মন্তব্য করতে লগইন করুন