জু-লজিতে অনার্স

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:০৬:৪৭ রাত



ও চাচা !! আরে ও চাচা !! ওরকম করে তাকাচ্ছেন ক্যান ? আপনাকেই ডাকছি।

: কন

:একটা চাকরী হবে, খুব জরুরী।

:মশকরা করেন ? আমি বেচী বাদাম,ঝালমুড়ী,আর আমার কাছে চাকরী চান ?

: কি করব চাচা, চাকুরী যে বড় দরকার।

:শহরে জান,সেখানে চাকুরী আছে।

: ওরে চাচা শহর থেকেই আসলাম...

:তাইলে আবার জান।

:না চাচা আপনি আমারে চাকরী দেন।

:দূর মিয়া ..রাস্তা ছাড়েন...মশকরা করে........ তরে কে চাকুরী দিব...বান্দর জানি কুনহানকার !!!

:আস সালামুআলাইকুম স্যার

:জি,আসুন

:ধন্যবাদ স্যার, আস সালামুআলাইকুম

:জি বসুন

:আস সালামুআলাইকুম

:আচ্ছা,আপনিই মি: বাঘা

:বাঘা হই আর মঘা হই সালামের উত্তর টা দেন।

:ওয়া আলাইকুম। আপনি জঙ্গী নাকি ?

:কেন স্যার ?

: সালাম দিলেন ৩ বার।

:কেন স্যার জঙ্গীরা কি ৩ বার সালাম দেয় ?

: নাহ,মানে সালাম নিয়ে আপনি এতপেরেসান,এ কারনে।

:কেউ সালাম দিলে উত্তর দেওয়া জুরুরী যদি সে মুসলিম হয়,আমি ভেবেছিলাম আপনি শুনতে পাননি।

:আমি শুনেছিলাম কিন্তু আমাদেরকে সমাজের মত হতে হবে। সমাজ যেভাবে চলে ওভাবে চলতে হবে। বিশেষ করে অফিসে এখন এসব সালাম টালাম চলেনা।

:স্যার সমাজ তো ডায়নোসরের মত কোনো প্রানীর নাম না,যে তার কথা মত চলতে হবে। ওটা প্রতিষ্ঠান,আমরা যেভাবে বানাবো সেভাবে চলবে। আমরা সালাম চালালে তা চলবে না কেন স্যার ?

: আপনি বাচাল টাইপের,যাইহোক, আপনার ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্যে বড় স্যারও আসছেন।

:গুড মর্নিং স্যার

:গুড মর্নিং

:ইনিই ক্যান্ডিডেট ?

:আস সালামুআলাইকুম স্যার

:ধন্যবাদ,বসুন...

: (হারামজাদাদের ডি.এন.এ তে কি সমস্যা আছে নাকি ? নাম আব্দুর রহমান,ওবায়দুর রহমান আর সালাম দিলে সালামের উত্তর নেয় না। এমন ভাব দেখায় যেন সালাম দিলে ইজ্জত চলে যাবে। ব্যাঙের ছাতা কোথাকার !)

: তা আপনার নাম কি ?

:আমি বাঘা

:কি করেন ?

:বেকার

:থাকেন কোথায় ?

:আপাতত বাড়িতে

:আপনার পিতা কি করেন ?

:দিনমজুর,রাতমজুরও বলতে পারেন,উনি মাঝে মাঝে রাতের কাজ করেন।

:আপনার সাবজেক্ট জু-লজি,তাই তো ?

:জি স্যার

:আমাদের এটা তো গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান।

:সমস্যা নাই ,আমি পারব স্যার। পশুর সাথে যেখানে খাপ খাওয়াতে পারি,সেখানে মানুষ তো নস্যি,স্যার।

আমি ঠিকই পারব। একটু সুযোগ দিয়ে দেখুন।তাছাড়া পশুর সাথে গার্মেন্টের সম্পর্কও আছে এমনকি আপনার সাথেও।

:কি ??

:জি স্যার আপনি তো গরুর চামড়ার জ্যাকেট গায়ে দিয়ে আছেন,অতএব একটা সম্পর্ক তো আছেই।

:আচ্ছা বলেন, ইরিত্রিয়ার রাজধানীর নাম কি ?

:আদ্দিস আবাবা

:আমাদের জাতিয়তাবাদের ভিত্তি কি?

:আপনি আওয়ামী লিগ,নাকি বি.এন.পি পন্থী স্যার ?

:তার মানে ?

:আপনি আওয়ামী লীগ হলে আমরা বাঙ্গালী,বি.এন.পি হলে বাংলাদেশী,আর মুসলিম হলে,আমাদের জাতিয়তাবাদের ভিত্তি-আমরা মুসলিম এবং এক উম্মাহ

: উত্তর লাগবে না। বলেন,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি ছিল ?

:চেতনা কি ছিল তা অধিকাংশ মানুষই জানত না। আর যারা চেতনার ব্যাপারটা জানত,তাদের অধিকাংশই যুদ্ধ করেনি স্যার। আমার মনে হয় স্যার- চেতনা পরে এসেছে,আগে এসেছে জীবন বাচানো ফরজ এই চেতনা। মানে জীবন,দেশ বাচাতে লড়াই।

: যুদ্ধে ভারত ছাড়া আমরা জিততে পারতাম না,এটা মানেন কিনা ?

:স্যার এটা মানলাম না। হতে পারে ভারত সাহায্য করাতে বিজয় তাড়াতাড়ি হয়েছে কিন্তু তারা না হলে পারতাম না এমনটা মানা ঠিক হবেনা।

: পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের একটা কতৃত্ব আমাদের উপর থাকা উচিৎ কিনা ?

:তাইলে তো স্যার বলতে হয়,ভরতের উপরও তার পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহের একটা নিয়ন্ত্রন থাকা উচিৎ।

:বুঝছি আপনি চেতনা বিরোধী।,আচ্ছা শাহবাগের সাবলিল গনমানুষের জোয়ারের ব্যাপারে আপনার উপলব্ধী কি?

: স্যার উপলব্ধী হল,সেখানে উপস্থিত অনেকের নিয়ত ভাল ছিল কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই যখন বেশী মানুষ জড় হল,তখন এক পক্ষ তাদের নিজেদের উদ্দেশ্যে ওটাকে ব্যবহার করেছে। আবার এমনও হতে পারে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেরে নেতুত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

:আপনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে ?

:না স্যার আমি চাই বিচার হোক কিন্তু প্রকৃত অপরাধীর বিচার হোক। আর বিচার প্রক্রিয়া টেলিভিশনে লাইভ দেখান হোক। এত টক শো দেখাতে পারে,ওটা দেখালে সমস্যা কি ? জনগণ জানুক বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ কিনা। তাতে জনগনের অভিযোগও কম হবে।

:আমার ধারনা আপনি জঙ্গী।

:কেন স্যার ? আমি পশুপাখির বিষয়ে পড়েছি বলে জংলী থেকে জঙ্গী ?

: নাহ,আপনি যেভাবে কথা বলছেন ,তাতে মনে হচ্ছে জঙ্গী।

: না,স্যার আমি জঙ্গী নই। জীবনেও কাওকে থাপ্পড় মারিনি। অস্ত্রও নেই। কাওকে গালিও দেইনা। আমি মানুষের কল্যান চাই। তাইলে আমি জঙ্গী কিভাবে ?

: আচ্ছা আপনার মামা,খালু কেউ আছে ?

:জি আছে স্যার।

: তারা কি করেন ?

:স্যার তারাও চাকুরী খুজছে,তাদের নিয়ে আসব স্যার ?

:ওহ গড ! এ কার পাল্লায় পড়লাম....

আচ্ছা বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কতজন লোক মারা গেছে

:৫৪৬৭৮৯জন,বিশ্বাস না হলে গুনে আসেন।

:তাদের নামগুলো জানা আছে ?

:জি আছে স্যার,তাদের পুরো বংশ পরিচয়সহ বলতে পারব স্যার,শুধু চাকুরীটা দেন।

:তোর কোনো চাকুরী নেই। যার চেতনা নেই,তার চাকুরীও নেই।.....এই এই কি করছিস.....

: তোর জুতা দিয়ে তোকে পেটাব..দালালের বাচ্চা...দালাল...

: এই কে আছিস একে নিয়ে যা...

:পালানোর আগে তোর মুখে একখান জুতার বাড়ি মেরে যাই.....



স্যার আস সালামু আলাইকুম

:ওয়া আলাইকুম সালাম।

:স্যার একটা প্রশ্ন করব ?

:করুন

:আপনি কি অনেক বছর থেকে এখানে কাজ করছেন ?

: জি ,কেন ?

:না,মানে ইদানিং কালে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছে তারা সালামের উত্তর দেয়না।

:হুমম,হতে পারে। তবে ধারনা নেই।

:স্যার আমার একটা চাকুরী দরকার।

:কিন্তু এটা তো চিড়িয়াখানা। এখানে তো কুলী মজুরের চাকুরী বেশী,আর এখন কোনো চাকুরীও খালি নেই।

:স্যার আপনার পায়ে ধরি একটা চাকুরী দেন।

: আচ্ছা খেতে না পেয়ে যে সিংহটা মারা গেছে,ওটার ব্যাপারে একটা চিন্তা আছে। রাজি থাকলে একটা ব্যবস্থা করতে পারি।

:স্যার খেতে না পেয়ে আরও অনেক পশুই তো মারা গেছে,স্যার কর্মচারীরা কি ওদেকে ঠিক মত খাওয়ায় না ? আমি হলে কিন্তু স্যার ঠিকই খেতে দিতাম। অবুঝ পশুকে কষ্ট দিতে নেই। হাদীসে আছে এক পতিতা মহিলা এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোতে আল্লাহ তাকে মাফ করে জান্নাত দিয়েছিলেন।

: হুমম ঠিক,কিন্তু কর্মচারেদের আর দোষ কোথায়। আসলে আরা তো ছা-পোষা মানুষ নিজেদের বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে যেভাবে দিন গুজরান করি,তাতে পশুপাখির পেটের দিকে তাকানোর সময় পাওয়া যায়না। তাই মাঝে মাঝে.....যাই হোক,তুমি রাজি ?

:জি স্যার আমি রাজি কিন্তু কাজটা কি ?

:কাজ হর মরা সিংহটার চামড়া পরে ওর খাচায় লাফঝাপ মারবে..দর্শক ভাববে এটাই প্রকৃত সিংহ। বেতন ৩৫০০টাকা।

:স্যার এই পরিমান বরাদ্দ কি কোনো ছোট সাইজের পাখির জন্যেও বরাদ্দ আছে ?

: তুমি চাকুরী করবে কিনা বল ?

: আমি রাজি স্যার।

এরপর বাঘা মিয়া সিংহের চামড়া পরে নাচানাচি করতে লাগল। সিংহের পাশের খাচাটায় থাকত রয়েল বেঙ্গল টাইগার।একদিন বাঘা নাচানাচি করতে করতে পাশের খাচার লকের উপর গিয়ে পড়ে আর দরজাটা খুলে যায়। বাঘা জানে এটিই তার জীবনের শেষ দিন। কল্পনায় সে পেছনে ফিরে যায়,দুনিয়ার প্রতি কত মায়া,সব তার মনে পড়ে। কিন্তু সবকিছু বিসর্জন দিয়ে সে চোখ বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে থাকে,তার পাপ মার্জনার। দুহাত জোড় করে সে বসে থাকে।এই বুঝি রয়েল বেঙ্গল টাইগারটা তার উপর ঝাপিয়ে পড়ল ! কারন বাঘ নিশ্চয়ই তার এই মিথ্যে চামড়ার ভেতরের মানব মাংসের গন্ধ পেয়েছে। তাছাড়া বাঘও ক্ষুধার্ত। কিন্তু অনেকক্ষন যাবন চোখ বন্ধ করে দোয়া দুরুদ পড়ার পরও বাঘ তার উপর ঝাপিয়ে পড়ছে না দেখে সে চোখ খুলল...

সে দেখল -রয়েল বেঙ্গল টাইগারটাও তার সামনে হাটু গেড়ে দুহাত জোড় করে বসে আছে। বাঘা তখন সহাস্যে বলে উঠল-ওহ !! আপনিও জু-লজিতে অনার্স ???

ব:দ্র: কাওকে আঘাত করার জন্যে লেখা নয়। তবুও কেউ আঘাত পেলে ক্ষমা প্রার্থী।

:

বিষয়: বিবিধ

১২৮৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

184314
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:৩১
শিকারিমন লিখেছেন : সিরাম হৈছে
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ০২:২৫
136752
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Happy
184367
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩৫
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আমাদের পুরো সমাজটাই শুধু নয়, বরং গোটা দেশটাই যেন জু(কার)লজিতে এম এ (অনার্স), বি এ ফাইনাল।
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ০২:২৫
136753
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ঠিক
184369
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩৭
আহমদ মুসা লিখেছেন : আমাদের রাজনৈতিক ও নীতি নির্ধারকদের মধ্যে এ ধরনের জু লজিতে পাশ করা লোকদের সংখ্যা বেশী।
184476
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৫:৪৭
মোঃজুলফিকার আলী লিখেছেন : সে দেখল -রয়েল বেঙ্গল টাইগারটাও তার সামনে হাটু গেড়ে দুহাত জোড় করে বসে আছে। বাঘা তখন সহাস্যে বলে উঠল-ওহ !! আপনিও জু-লজিতে অনার্স ???

........ অনেক সুন্দর। ধন্যবাদ।
184678
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৭
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : চমৎকার হয়েছে।আমি আরো মনে করেছিলাম অন্য কিছু........।
184702
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:৩৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাল্লাগ্লো।
184748
০১ মার্চ ২০১৪ রাত ১২:০০
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
184862
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : এক্কেবারে খাপের খাপ৷ দারুণ! একা একা আর কত হাঁসা যায় বলুন? ভাগ্যিস জু-লজী পড়িনি৷
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
137278
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor
184885
০১ মার্চ ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : রম্য ইন্টারভিউটি পড়ে সত্যি বলছি অনেক মজা পেলাম Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৬
137279
দ্য স্লেভ লিখেছেন : Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor Rolling on the Floor

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File