২১শে ফেব্রুয়ারীকে ধর্ষকদের হাত থেকে রক্ষা করুন

লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০২:১৪:৪০ রাত

আমি ছোটবেলায় স্কুলে যতগুলো পত্র লেখা শিখেছি,তার মধ্যে সরকারী,বেরকারী সব রকমই ছিল। সেগুলো বাংলায় ছিল । কোনো বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্যে স্কুল থেকে যেসকল পত্র বিভিন্ন স্থানে লেখা হত ,তা বাংলাতেই হত। ইংরেজীতে পত্র লেখা আমরা শিখেছি কিন্তু ওটা ছিল স্কুলের পরিক্ষার খাতায় লেখার জন্যে। বাস্তব ক্ষেত্রে বাংলাই ছিল মাধ্যম। এটি বেশী দিনকার কথা নয়।

বাংলা ভাষার চর্চা এখনও আছে। এখনও আপনি সরকারী,বা বেসরকারীভাবে কোনো ক্ষেত্রে বাংলায় পত্র লিখতে পারেন। কিন্তু আপনি বোধহয় নিজেই বুঝে ফেলেছেন যে, কোথাও বাংলায় পত্র লিখলে আপনার কপালে কি নিয়তি অপেক্ষা করে। বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে ইংরেজীতে পত্র না লিখে বাংলায় লিখলে অপনার চাকুরী তাৎক্ষনিকভাবে চলে যাবে এটা আপনার জানা। কিন্তু সরকারী ক্ষেত্রেও যে াাপনি হেনস্থার শিকার হতে পারেন,তা কি জানা আছে ?

আপনি কোনো স্থানে এমনটা করে দেখুন।তাদের মুখের আকৃতি এবং চাহনী থেকে অনুমান করতে পারবেন যে,তারা আপনার শিক্ষা দীক্ষা নিয়ে সন্ধিহান।

আপনি কোথাও গিয়ে ইংরেজীতে কথা বলুন,দেখবেন,তারা আপনাকে বেশী শিক্ষিত ভাবছে। বাংলায় বলুন এবং দেখুন।

আপনি কোনো অনুষ্ঠানে বাংলা গান বাজান,দেখবেন মানুষ আপনাকে কিভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্ল করে। ইংরেজী বাজান,দেখবেন আপনাকে আপার ক্লাশ ভাবছে।

আপনি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলুন এবং দেখুন মানুষ কি বলে। দেখবেন তারা হয় আপনাকে খ্যাত বলছে,নয়ত গোপাল ভাড় বা প্রফেসর সাহেব বলে তাচ্ছিল্ল করছে।

আপনি চাকুরীর নিয়োগকর্তা হলে বাংলায় বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন প্রার্থীদের কি অবস্থা হয়। তারা ভাববে এই পোস্টের বেতন বেশী না। ফলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই আপনি কাঙ্খিত প্রার্থী পাবেন না। এবং তারা আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খারাপ বা নীচের ধারনা পোষণ করবে। ইংরেজীতে বিজ্ঞাপন দিন, দেখবেন ভাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত স্থান থেকে আবেদন আসছে।

ভাবছেন,তাহলে শুধু একদিনই বাংলায় কথা বলব,সেটা ২১শে ফেব্রুয়ারী। না , তা হবে না। তাহলে একদিনেই মানুষ আপনার সম্পর্কে তথ্য জেনে যাবে। এটা আপনি হতে দিবেন কেন ? তাই ২১শের দিনটি হল একটি উপলক্ষ্য মাত্র। এটি একটি সরকারী ছুটির দিনও বটে,তাই উপভোগ করা আর কি। দেখবেন,যারাফুল নিয়ে প্রভাতফেরীতে যায়,তারাও রিমিক্স কথা কয় এবং তাদের আলোচনায় আপনি ২১শের ছিটেফোটাও পাবেন না। তারা আনন্দিত এই কারনে যে,ফুল নিয়ে লাইনের সামনে দাড়িয়েছে এবং এই উৎসবে যোগদান করে তারা ধন্য।

অনেকরে সাথে এই অছিলায় দেখা হবে,এটাই আসল। আর ইচ্ছা করলেও সকলে এখন আর বাংলায় কথা বলতে পারবে না। ইংরেজী বাংলার মধ্যে এমনভাবে ঢুকেছে,আপনি বুঝতেও পারবেন না,শব্দটা ইংরেজী নাকি বাংলা। তবে মানুষ বুঝতে পারছে,এটাই আসল ভেবে কাজ চালিয়ে যাবেন। এভাবে ভাষাকে ধর্ষন করা হচ্ছে কিনা ভেবে দেখবেন।

সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করতে হবে বলে যারা আওয়াজ তোলে,তারাও আসলে এভাবে চালাচ্ছে। এটা হল একটা শ্লোগান। এতে কিছু পরিচিতি বাড়ে,তাই এই আওয়াজ। অনেকটা গাছের ডালে বাংলা বর্ণ ঝুলিয়ে নীচে ৩১ডিসেম্বর স্টাইলে নাচানাচি করার মত। অবশ্য এটাও নতুন নয়,পূর্বে ঘটেছে।

এতক্ষন যা বললাম,তা চেতনাধারী ও অচেতন সকলেই করে থাকে। আমাদেরই কেউ কেউ ভাষা নিয়ে বেশী বলে,আর কেউ কম,কিন্তু ঘটনা মোটামুটি একইভাবে ঘটছে। ব্যক্তিগতভাবে যেসব বাংলাপ্রেমীদের সাথে কথা বলেছি,তারাও আসলে ইংরেজীর দাস। হেথা সেথা দুএকজন প্রকৃত প্রেমিক আছে কিন্তু তাদের অনেকে যখন দেখেছে,শুধু বাংলায় ভাত নেই,তখন আবার ইংরেজীমুখী হয়েছে।

শেষ কথা হল, এইটা হচ্ছে সাষ্কৃতির ব্যাপার। মানে সাংষ্কৃতিক আগ্রাসন। এই আগ্রাসন রুখতে নিজস্ব সাংষ্কৃতি বলিষ্ঠ করতে হয় এবং তা নিজ জনতার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রাখতে হয়। কিন্তু আমাদেরকে যেসব সাংষ্কৃতি শেখান হয়,তা আমাদের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। পরিবার থেকে কিছু শিখে সমাজে,বা প্রতিষ্ঠানে গেলে সে বুঝতে পারে,এরা তার পরিবারের শিক্ষার বিপক্ষে। তখন সে বেকায়দায় পড়ে সেটা গ্রহন করতে থাকে। তার মন সেটা মেনে নেয়না,আবার উপায় ও থাকেনা। এতে সে আসলে সর্বদিক দিয়ে বঞ্চিত হয়। এভাবে আমরা জীবন অতিবাহিত করি। এতে করে বাহির থেকে যখন কোনো সাংষ্কৃতি চলে আসে,নিজ সাংষ্কৃতি সম্পর্কে ধারনা বা জ্ঞান অতি সীমিত হওয়ার কারনে আমরা সেখানে গা ভাষায়। এবং মস্তিষ্ক লুটপাট হওয়াতেও আনন্দিত হই। আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারতাম এবং সেটা বুঝে কাজ করতাম,তাহলে ভাষার বিষয়,মর্যাদা বুঝতে পারতাম। এবং বাংলার গাথুনী এতটা ঢিলা হতনা। আমরা বিদেশী ভাষা শিখতাম কিন্তু বাংলাকেও ভালভাবে চর্চা করতাম। কিন্তু আমাদের সাংষ্কৃতিক দ্বন্দ আমাদেরকে মানুষিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে শেখায়। এখান থেকে ভাল কিছু আশা করা যাচ্ছে না।

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৪ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

180099
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:২২
শিকারিমন লিখেছেন : অনেক তাত্পয্য পূর্ণ লিখা। আমার দেখা কিছু বাংলাদেশী পরিবার আছে বিদেশে , যারা কখনো তাদের সন্তানদের সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলেনা। এই শিশুরা কিভাবে বাংলা শিখবে?
ধন্যবাদ আপনাকে।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০০
133115
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
180106
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০২:৩৫
নিস্পাপ লিখেছেন : অসাধরণ লিখেছেন। সত্যি ই বাংলা কে বাচাতে এখন থেকে বাংলা ভাষা ধর্ষকদের চিন্হিত করতে হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০০
133116
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনা
180112
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৩:১৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০০
133117
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনা
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০১
133118
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ধন্যবাদ
180126
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:৪৭
তহুরা লিখেছেন :
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০১
133119
দ্য স্লেভ লিখেছেন : :Thinking
180131
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৬:৩১
রাইয়ান লিখেছেন : একদম সত্যি ও বাস্তব কিছু কথা বলেছেন ভাইয়া। নিজ দেশেই বাংলা ভাষা পরবাসী , প্রতি মুহুর্তে বাংলা ভাষা লাঞ্চনার শিকার , সেই দেশেই আবার ভাষা দিবস পালিত হয় সাউন্ড সিস্টেমে হিন্দী চটুল গান বাজিয়ে ..... কবে যে আমার দেশটা এইসব দ্বিমুখিপনা থেকে রক্ষা পাবে !
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:০২
133120
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হুমম কথা সত্য...
180165
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১১
আহমদ মুসা লিখেছেন : আপনার বিশ্লেষণের সাথে দ্বিমত পোষণের কোন কারণ নেই। যারা চ্যাতনার ফেরিওয়ালা তাদের কথা বাদই দিলাম যেহেতু তাদের মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট। কিন্তু যারা "অবচেতন" তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা আরো প্রকট আকারে লক্ষ্য করা যায়। আবার অনেকেই "মাতৃভাষা বাংলা ভাষা খোদার সেরা দান" বলে স্লোগান ফেরী করে বেড়ায়। কিন্তু বাংলা ভাষার এসব দরদীদের দৈনন্দিন কাজ কর্মে, কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক ক্ষেত্রে, পারিবারিক ক্ষেত্রে, চাকর বাকর নিয়োগ দেওয়া ও নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে, দৈনন্দিন কথোপকথনে ইংরেজীর প্রতি সামান্য অবহেলা সহ্য হয় না। কারো কারো সন্তান সন্তুতিকে আবার বাল্যকাল থেকেই যেন ইংরেজীতে দক্ষতা অর্জন করতে শিখে সেজন্য তো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল/প্রতিষ্ঠান তো আছেই। হোক না সেখানে পড়াশুনার ব্যায়ভার যথেষ্ট বেশী। তাতে কি হয়েছে? আমার সন্তান তো আর "বাংগাল" থাকছে না! ইংরেজী শিখে জ্ঞানী(!) হচ্ছে! বৃটিশের ভূত আমাদের ঘাড় থেকে সহজে নামবার কোন পথ খোলা নেই। বৃটিশরা চলে গেছে অনেক আগে। কিন্তু তাদের তৈরী দাসত্বসূলভ বশংবদের সিলসিলা জারি থাকবে আরো বহুদিন পর্যন্ত। বলা যায় যতদিন পর্যন্ত প্রকৃত স্বদেশপন্থী কোন শাসক এদেশের ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ীভাবে না আসছে ততদিন এভাবে গোলামীর মানসিকতা এই জাতির মন ও মননজগত থেকে বিদায় নেবে না।
180167
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য। এখন ষ্ট্যাটাস এর আরেকটি দিক হলো ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল। দেশের আনাচে কানাচে এই স্কুলগুলি গজিয়ে উঠেছে আর দেশের মধ্যবিত্তরাও ষ্ট্যাটাস এর লোভে তাদের সন্তানদের এই স্কুলে পড়াচ্ছেন। দুঃখের বিষয় সরকারি বোর্ড ও ইংরেজি মাধ্যম চালু করেছে। জনগনের ট্যাক্স এর টাকায় পরিচালিত ক্যাডেটকলেজ গুলিও জনগনের ভাষা কে অবজ্ঞা করে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা পরিচালনা করছে। তথাকথিত ইংরেজি মাধ্যমের আন্তর্জাতিক ষ্ট্যান্ডার্ড এর নামে প্রতি বছর কয়েককোটি টাকা দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
180186
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:০৩
শেখের পোলা লিখেছেন : না না আর ইংরিজি লাগবেনা এবার আমরা হিন্দী শিখে লেগা আর ওদের সাথে কথা বলেগা৷
দু একদিন ভাষাকে ভাসিয়ে যদি কিছু আনন্দ পাওয়া যায় আর টিভিতে ছবি ওঠে তয় মন্দকি?
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৭:৩৯
133372
দ্য স্লেভ লিখেছেন : ঠিক...
180209
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ১২:০৩
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আমি শহীদ দিবস পালন করি বাংলা ভাষার তরে, আমার ছেলে কিন্তু ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে!
১০
180337
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৮:৪১
আলোর আভা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবা।
১১
181541
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:২৪
মুমতাহিনা তাজরি লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File