নিউপোর্ট বে
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ০৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:১৩:৪৬ সকাল
আজ গেলাম ওরেগন কোস্টে,নিউ পোর্ট বে। দিনটা শুরু হয়েছিল মেঘ দিয়ে কিন্তু কয়েক ঘন্টা পর মেঘ কেটে গিয়ে দারুন সূর্য কিরণ ছড়িয়ে পড়ল। এরা এমন সব রাস্তা তৈরী করেছে,যেখানে ঘুমিয়েও গাড়ী চালান যায়। তেল চকচকে রাস্তা এবং খুবই প্রশস্ত। সারা দুনিয়া থেকে এরা টাকা পয়সা তুলে আনে,রাস্তার অবস্থা এমনটা হতেই পারে ! আমরা পাহাড়িয়া রাস্তায় আসলাম কিন্তু রাস্তা তেমন আঁকাবাকা নয়। কারন বহু পয়সা খরচ করে বিশাল রাস্তা তৈরী করেছে পাহাড় কেটে। রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য অসাধারণ। শীতে পাইন গাছ ছাড়া আর কোনো গাছে পাতা দেখা গেলনা,তবে আরও কিছু গাছ দেখেছিলাম তার নাম জানিনা, রাস্তার দুপাশে তারা অতিরিক্ত স্যেন্দর্যের সৃষ্টি করেছিল। কিছু গাছ মনে হচ্ছে মারা গেছে,কিন্তু শীতের পর এরা আবার জেগে উঠবে। একটা স্থানে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার দৌড়। আমেরিকানরা ফাঁকা রাস্তায় একটু বেশী দ্রুত গাড়ি চালানোকে দোষের কিছু মনে করেনা। রাস্তা অবশ্য ফাঁকাই থাকে। শুনেছি দরের বাজারে অনেক পুলিশকে ছাটাই করা হয়েছে,ফলে হাইওয়েতে পুলিশের সংখ্যা পূর্বের তুলনায় কম। চমৎকার রাস্তার পাশ ধরে ছোট্ট একটা পাহাড়ী নদী বয়ে যেতে দেখলাম। ঠান্ডার সময় না হলে কি আমি সেখানে লাফ দিতাম ? সঠিক বলা যাচ্ছে না, তবে লাফ দেওয়ার মতই স্থানটা।
১৩০কি:মি: ড্রাইভ করে বীচে আসলাম। আকাশ পরিষ্কার। এটা প্রশান্ত মহা সাগর। এ অংশের পানি খুবই ঠান্ডা,ফলে মানুষ গরমের সময়ও সাতার কাটেনা,তবে দু একজনের কথা ভিন্ন। এখানে বড় সাইজের বহু সি-গাল দেখলাম। মাংশাষী পাখির মাংস হারাম তাই সি-গাল আমার মনোজগতে কখনই দোলা দিতে পারেনি। এখানে সাগর সৈকতে থাকা বাড়ির দাম মাত্রাতিরিক্ত। মিলিয়ন ডলার কোনো ঘটনা নয়। আমি অবশ্য সৈকতের এত কাছের বাড়ি পছন্দ করিনা,তাতে তাদের কিছু এসে যায় না। একটু ভুল বললাম,এটা আমার মনের কথা নয়। মানুষ হাসবে তার পরও সত্যটা বলি। সাগরের পাশে বাড়ি আমার ভাল লাগে কিন্তু আমি কখনই সৈকতের পাশে বাড়ি তৈরী করব না বা কিনব না। কারন সৈকতে অর্ধ্বনগ্ন হয়ে মানুষ সানবাথ করে। ওখানে বাড়ি থাকলে সেসব না চাইলেও দেখতে হবে,আবার আমার সন্তান সন্তুতি জন্মের পর থেকেই সেসব দেখতে দেখতে বড় হবে,ফলে তাদের ঈমান আমি চাঙ্গা করতে চাইলেও ইন্সটিংটের কারনে বালির বাধের মত অবস্থা হবে। এ কারনে বললাম এখানকার বাড়ি আমি পছন্দ করিনা। আসলেই যে কোনো সাগর সৈকতের আবেদন অতুলনীয়।
হাওয়া বইছে,ঠান্ডা লাগছে। এতটা ঠান্ডা যে একেবারে হাড়ে গিয়ে লাগে। মোটা সুয়েটার পরেছি ,হাত-মাথা দুটোই ঢাকা,তারপরও শীত ঠিকই বুঝে ফেলেছে কোথায় কিয়ে লাগতে হবে। এবার বেশ কয়েক মাইল দূরের আরেক স্থানে গেলাম।
সূর্য মামা মেঘে ঢেকে গেছে। বাতাসের তীব্রতা কিছুটা বেশী। বাতাস আর পানি জমজ ভাই। একে অপরের কাছে আসলে পিরিত যখন গলায় গলায়,ঠিক তখনই এরা কেন জানি মানুষের উপর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে ওঠে। আর মানুষও একখান চিজ। গায়ে গতরে সেরকম না থাকলেও মস্তিষ্ক জটে এরা বরাবর চ্যম্পিয়ন। শাসন ক্ষমতা পেলে এরাও অনেক সময় সমুদ্রের ঝড়ো বাতাস-পানি মার্কা আচরণ করে।
এখানে আগ্নেয় শীলা সমুদ্রের এ অংশকে যে রূপ দান করেছে তা দেখার মত। বিশাল বিশাল ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। তীর ঘেষে উঁচু স্থানে একটি ক্ষুত্র শহর। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। নানান রকম পণ্য-সম্ভারে জর্জরিত দোকানগুলো। রাস্তার পাশ ধরে হাটতে থাকলাম সাগরের ভয়াল রূপের মিনি ভার্সন দেখার জন্যে। তীব্র গর্জনে ঢেউগুলো যখন আছড়ে পড়ছে তখন সৃষ্টি হওয়া বাষ্পে রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আমার ঢাকা,তারপরও ঠান্ডা লাগছে,অথচ আজ তেমন ঠান্ডা নয়। মনে হল এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠিনি। প্রকান্ড ঢেউ যখন আগ্নেয় শীলার উপর আছড়ে পড়ছে তখন কিছু পানি একটি গর্তে এতে পড়ছে এবং তার উপরিভাগে থাকা একটি ফাটল দিয়ে মহা শব্দে পানি অনেক উপরে উঠে আসছে। এটি ব্লো হোল। সে এক দেখার মত ব্যাপার। দেখলাম অনেকক্ষন ধরে। এখান থেকে সাগরের সৌন্দর্য দেখার মধ্যে মজা আছে। তীরের অংশে স্তপীকৃত শীলারাশি,বিশাল ঢেউ সবই দারুন। দৃষ্টি আরেকটু প্রসারিত করলে সাগরের আরেক কিনার ধরে দেখা যায় বিশাল বিশাল শীলাখন্ড সাগরের ভেতরে ঢুকে গেছে এবং স্থলভাগের শেষ অংশ ছুরির মত সাগরের পেটে গিয়ে বিধেছে। সে অংশও দারুন। সেখানে অবস্থিত গাছগুলি বাতাসে আন্দোলিত হওয়া দেখতে ভাল লাগছিল। ব্যপক ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে দাড়িয়ে থাকলাম। এক বুড়োকে দেখলাম পাশ ঘেষে চলে গেল কিন্তু তার পোষাকাদী আমার মত এতটা ভারী শীতের উপযোগী নয়,তাতে তার সমস্যা হচ্ছে বলেও মনে হল না। নিজের উপর মায়া হল। এই ঠান্ডা বুড়োকে কাবু করতে পারছে না,আবার আমি নিজ শক্তি বলে এত তড়পাচ্ছি, নাহ মানাচ্ছে না। বুড়োর কাছে হেরে গেলাম। আসলেই অভ্যস্ত হতে একটু সময় লাগবে।
বিভিন্ন দোকানের মধ্যে ঢুকলাম,বিভিন্ন শৌখিন পণ্য দ্রব্য দেখলাম। এক দোকানে চামড়ার বিভিন্ন দ্রব্য দেখে লোভ লাগল কিন্তু সামলালাম। চামড়াজাত দ্রব্য দেখলে আমার আবার হুশ থাকেনা। অপেক্ষাকৃত কম দামে চামড়ার বিভিন্ন জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু সেসব জিনিস একাধিক থাকার কারনে আর আগ্রহী হলাম না। এগুলো মেক্সিকো থেকে এসেছে,ফলে কিছুটা সস্তা। শুনেছি অনেক আমেরিকান সস্তা হওয়ার কারনে মেক্সিকোতে চিকিৎস্যা করাতেও যায়। দেখলাম কিছু কিছু পণ্য আর্টিফিসিয়াল চামড়ার তৈরী কিন্তু দেখলে বোঝার উপায় নেই। বুঝলাম নয় ছয় সবখানেই হয়। দারুন একটা চাকু দেখেছিলাম,অবশ্য এখানকার চাকুগুলোর প্রায় সবটাই অত্যন্ত চমৎকার। শুনেছি হাতল বাদ দিয়ে শুধু নাইফটি ৪ ইঞ্চি লম্বা হলে তা বহন করার অনুমতি আছে। কিন্তু এটার কোনো কাজ মনে পড়ল না। আমার তরুন বয়সে এরকম একটা জিনিস পেলে না ঘুমিয়ে বহু রাত পার করে দিতাম উত্তেজনায়। ছুরি নিয়ে মজার মজার সব কাহিনী আছে,এখন বলব না।
নিউপোর্ট বে’র আরেক অংশে আসলাম। এখানে উন্নত মানের জেলেরা উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে মাছ ধরে।সীল,হাঙ্গর এমনকি তিমিও আছে সাগরের এ অংশে। মাঝে মাঝে সীলেরা দল বেধে ওপরে উঠে আসে। তিমিও নিকটবর্তী স্থানে লাফ ঝাপ দেয়।এছাড়া আরও হাজার রকমের মাছ রয়েছে। মাঝ এখান থেকে ধরলেও মাছের দাম কিন্তু সস্তা না। স্টোরে সবথেকে সস্তা মাছের কেজী অন্তত ২০ ডলার হবে। বহু জাতের মাছ আছে এখানে। কোনো এক স্থানে জাপানিজ স্টাইলে সুশী মাছ খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে দেখলাম। এটা একটা বিখ্যাত এবং বিষাক্ত মাছ। এই মাছের পেটের কোনো একটা অংশ কেউ খেলে মারা পড়বে,এমনকি জাপানে প্রতি বছর অনেক লোক এই সুশী খেয়ে মরে। তারপরও খাওয়া বন্ধ নেই। মাছটা কাচাই খেতে হয় ,তবে তা প্রস্তুত করতে শেফ’কে এক যুগের বেশী সময়ের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয় এবং সুশী প্রস্তুতের কঠিন পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হয়ে তবেই কাটাকাটি। এটি জাল দিয়ে ধরা হয়না,বরং বিশেষ বর্শী দিয়ে একটা একটা করে ধরে বিশেষভাবে রক্ত বের করে দিয়ে মারতে হয়, নইলে স্বাদের তারতম্য ঘটে। জিনিসটা অনেক দামী, তবে কাচা মাছ খাওয়ার লোক আমি না। তবে সুশী না খেলেও আরেক ধরনের মাছের ফ্রাই খেয়েছি। এটাকে সিদ্ধ বলাই শ্রেয়,কারন এর চারিপাশে একটি আবরণ ছিল সম্ভবত বেসনের,তার মধ্যেই ছিল সিদ্ধ মাছ। পয়সা দিয়ে কেনা তাই খেয়ে ফেলেছি,নইলে এ বস্তু খাওয়ার লোক আমি না। অবশ্য ভিন্ন স্বাদ নেওয়ার একটা বাসনাও আমাকে অনেক সময় অনেক কিছু খেতে বাধ্য করে। মনের উপর সব সময় জোর দেওয়া ঠিক না। মন খুব নরম জিনিস।
বিষয়: বিবিধ
১৭৩০ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এজায়গাতে যাওয়া হয় নি !
চলুক.........
আবশ্য আপনি তো সামনে লোভনীয় খাদ্য পেলে পেছনে আপদ আছে নাকি বিপদ আছে তার খবর রাখার মানুষ না!!!
হা হা হা
চলতে থাকুক।
জাপানি মাছটি আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। পোটকা মাছ। এটি ভুল করে খেয়ে আমাদের দেশেও অনেকে মৃত্যবরন করেছে। তবে সুশি কেবল পোটকা মাছের হয়না। জাপানে যাওয়ার ভাগ্য না হলেও অন্য জায়গায় সুসি খাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। স্বাদ ভালই।
কিছু টাকা এদেরকে দিয়েন>-
http://www.onbangladesh.net/blog/blogdetail/detail/7898/anamul1305/38293
তাহলে এত টাকা খরছ করার মাণে কী?
জায়গাটা ভারী সুন্দর
মন্তব্য করতে লগইন করুন