আমেরিকান কুত্তা-বিড়াল
লিখেছেন লিখেছেন দ্য স্লেভ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১২:৩৫ রাত
প্রায় দুদিন প্লেনে পার করেছি,আজ জানুয়ারীর ২০ তারিখ। রাতে মার্কোপোলো রেস্টুরেন্টে দাওয়াত ছিল। থাই জাতীয় খাবারের অর্ডার করলাম এবং গলা পর্যন্ত খেলাম। এটা ছিল মুরগী,চিংড়ী,ভাতের সমন্বয়ে তৈরী একটি খাবার। আরও খেলাম ভিন্ন স্বাদের মুরগী এবং টমেটো,ঘাস লতা-পাতা সমন্বয়ে তৈরী সালাদ। একজন জানাল আজ নিউ ইয়র্কে ব্যপক তুষারপাত হয়েছে এবং সকল ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি,সুবহানাল্লাহিল আযিম ! ইয়া আল্লাহ ! আপনিই সর্বোত্তম ! আর ১২ ঘন্টা পূর্বে এই ঘটনা ঘটলে সর্বনাশ হতে পারত। নিজেকে জীবন্ত মনে হল।
তবে বাইরে শীত থাকলেও সকল দোকান,রেস্টুরেন্ট,বিমানবন্দর অফিস আদালতের ভেতরে গরম থাকে। সরকার বাড়ী,অফিস,দোকান সকল স্থানে এনার্জী সরবরাহ করে থাকে বিরতিহীন। আমেরিকার লোকেরা অতিরিক্ত ভোগপ্রবন। এরা যেকোনো মূল্যে ভোগ করে থাকে। চরম গরীব লোকটিও ভোগের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট হয়।
আমার প্রতিবেশী মি. টম এমন একজন ব্যক্তি যার ইহজগতে একটি কুকুর ছাড়া কেউ নেই,অথবা কেউ থাকলেও তার কিছু এসে যায় না। গত বছর তার বাবা মা মারা গেছে,অবশ্য ৫৮ বছর বয়সে কারো বাবা মা বেঁচে আছে শোনাটাও আমাদের কাছে কম বিশ্ময়কর নয়। লোকটা একজন কেমিস্ট কিন্তু মন্দার বাজারে তার চাকুরীটা চলে গেছে। সে খুব চুপচাপ স্বভাবের,তার কোনো বন্ধু নেই। মানুষের সঙ্গ তার পছন্দ নয়। কখনই বিয়ে শাদী করেনি এবং কোনো কালেও তার মেয়ে বন্ধু ছিলনা। তবে এক বৃদ্ধা মহিলার সাথে তার বন্ধুত্ব আছে ,সেটা ভাই এর মত। তাকে হ্যালো না বললে আগ বাড়িয়ে কাওকে কখনই হ্যালো বলেনা। গুড মর্নিং বললে শুধু মর্নিং বলে শেষ করে। কুকুর-বিড়ালের সাথে তার উঠা-বসা। সে কুকুরের সাথেই ঘুমায়। তবে লোকটা খুব ভাল। মানুষের সাথে যোগাযোগ না থাকার কারনে কিনা জানিনা,তবে সে খুব উপকারী লোক,যদিও যেচে কারো উপকার করতে যাওয়া তার কাজ নয়।
দীর্ঘদিন চাকুরী না থাকায় এবং নতুনভাবে কোনো চাকুরী করতে না চাওয়ায় সরকার তাকে বেকার ভাতা প্রদান করেনা। সে এখন তার জমানো টাকা খরচ করছে,অথচ তার তিনটি গাড়ী রয়েছে। তার একটি হবি হল মাইন বা বোমা অনুসন্ধানী টিমের মত করে রাস্তাঘাটে,বাগানে,মাঠে মেটাল অনুসন্ধান করা। এ লক্ষ্যে বহু রকমের যন্ত্রপাতি সে কিনেছে। ভাবছিলাম তার-কাটা শ্রেণীর লোক। কিন্তু যখন শুনলাম সে এই হবির কারনে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু স্বর্ণের রিং,নেকলেস,আংটি,ধাতব মুদ্রা খুঁজে পেয়েছে,তখন ভাবলাম হবিটা লাভজনক। তার কুকুরের একটা ইতিহাস আছে। এখানে যেসব কুকুর বেওয়ারিশ এবং যেগুলো হারানোর পর পশু খোয়াড়ে আশ্রয় নিয়েছে,তাদের মালিকেরা দুই সপ্তাহের মধ্যে খবর না নিলে সেগুলোকে গুলি করে মারা হয়। এমনই একটি অনাথ কুকুরকে সে প্রাপ্ত হয়েছিল। কুকুরটা সত্যিই ভাল। প্রথমবার আমাকে দেখে আমার কাছে আসতে চাইলে আমি ভয় পেয়ে যাই, কিন্তু দেখলাম সে কিছুই বলেনা বরং একটু ইয়ার্কী বাজ টাইপের। সে কখনই ডাকেনা,এমনকি তার বাড়িতে কোনো আগন্তুকের আগমনেও সে ডাকেনা,তবে পরিচিত হওয়ার জন্যে গায়ে লেগে থাকে। একে এভাবেই প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে। ভাবছিলাম পশ্চাৎদেশে ঝেড়ে একখান লাথি মারলেও কি সে ডাকবে না ? মনে হল মাইরের উপর ওষুধ নেই, পেটালে ওর মুখ দিয়ে বিড়ালের আওয়াজও বের করা সম্ভব।
মনিবঅন্তপ্রাণ কুকুরটিকে যে কেউ বসতে বললেই বসে পড়ে,যেতে বললে খানিকদূর গিয়ে দাড়িয়ে থাকে। আর চোখের দিকে তাকালেই সে বুঝতে পারে,আমি রাগ করে তাকে যেতে বলিনি,তাই আবার কাছে আসে। বসা অবস্থাতে মাঝে মাঝে হাত দিয়ে পায়ে ধাক্কা মারে এবং চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে,অবশ্যই তার নখগুলোকে থাবার নীচে লুকিয়ে রাখে। ওর কান্ড দেখলে যে কেউ ওর সাথে থাকতে চাইবে। কিন্তু আমি কুকুরের সাথে মাখামাখি করিনা। আমেরিকাতে সম্ভবত: মানুষের সমসংখ্যক কুকুর-বিড়াল রয়েছে। কিছুটা বেশী থাকলেও অবাক হব না। আমি এক বিড়ালকে চিনি যাকে দেখে তাড়িয়ে দিচ্ছিলাম কিন্তু সে আমার কোলের উপর উঠে বসে থাকে এবং চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। জীবনে প্রথমবার এত কাছ থেকে বিড়ালের চোখ দেখলাম,অসাধারণ সুন্দর। এমতাবস্থায় কারো পক্ষে সম্ভব নয়,তাড়িয়ে দেওয়া। এরা ভয় পেতে অভ্যস্ত নয়,কারন কেউ এদের সাথে কখনই খারাপ আচরণ করেনি।
টমের বোনসম বন্ধুটি মারাত্মক অসুস্থ। তার পাকস্থলিতে কিছু গোলযোগ হয়েছে এক যুগ পূর্বেই ডাক্তার সার্জারী করতে বলেছিল কিন্তু সে তা করায়নি। কারন তার স্বাস্থ্যবীমা কোম্পানী মোট খরচের ৮০ভাগ প্রদান করবে,বাকী ২০% এর অর্থ অন্তত তিন হাজার ডলার আসবে,যেটা সে দিতে প্রস্তুত নয়। তাই প্রতিবার যখন প্রচন্ড ব্যাথা ওঠে,তখন সে হযম করে এবং ভিন্ন কিছু মেডিসিন খেয়ে ব্যাথা ভুলে থাকে। হাসপাতালে যদি অনাকাঙ্খিতভাবে বেশীদিন থাকতে হয়,তাহলে খরচের পরিমান কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা সহসা আচ করা যায়না। আর হাসপাতালগুলো যতক্ষন রোগী আটকে রাখবে,ততক্ষন তাদের লাভ। কিন্তু এবার আর শেষ রক্ষা হলনা। তাকে হাসপাতালে নিতেই হল এবং ডাক্তার বলল তার দ্রুত সার্জারী দরকার কারন পরিস্থিতি বিপজ্জনক। হাতে কাজ না থাকায় গেলাম সাথে।
বেশ দারুন হাসপাতাল। সেবার মান এমন হয় তা জানা ছিল না। পয়সা খরচ হলেও এরা সেবা দানে অতি পটু এবং অসুস্থ না হলেও এদের সেবা নিতে লোভ লাগতে পারে। বিশাল বিশাল সব যন্ত্রপাতি। রোগীর জন্যে যে বেড দেখলাম,সেটি একটি আধুনিক রোবটের মত। এর সাথে রাজ্যের যাবতীয় সুবিধা সংযোজন করা হয়েছে। এমনকি রোগী তার স্বজনদেরকে ফোন করতে পারে,টিভি,ভিডিও ইন্টারনেট সবকিছুই ব্যবহার করতে পারে। চিকিৎস্যা বিজ্ঞানের সর্বশেষ প্রযুক্তি তারা ব্যবহার করছে। তবে পয়সা ছাড়া এখানে কারো বেইল নেই।
ভদ্র মহিলা অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেও জিজ্ঞেস করছিল এটার কোনো বিকল্প আছে কিনা। তার পুত্র এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করল না,তার বন্ধুও কিছু বলল না। শুধু বলল-তুমি কি নিশ্চিত যে-সার্জারী ছাড়া তুমি ঠিক থাকবে ? মনে মনে গালি দিলাম,এই মুহুর্তে সিদ্ধান্ত প্রদানের জন্যে স্বয়ং রোগীর উপর নির্ভর করছে দেখে। চুপ থাকতে পারলাম না। বললাম-দেখুন আপনি যদি কিছু ওষুধ খান তাহলে সেটা এ মুহুর্তের জন্যে হয়ত আপনাকে নিষ্কৃতি দিবে কিন্তু তা আপনার জন্যে ধ্ব¦ংস ডেকে আনবে। সামনে আপনি আরও দূর্বল হয়ে পড়বেন এবং একই কারনে যখন আপনি বিছানায় পড়ে থাকবেন,তখন মানুষেরা ধরে আপনাকে হাসপাতালেই নিয়ে আসবে, আর তখন সার্জারিই করবে,কিন্তু তখন সেই ধকল নেওয়ার শক্তি-সামর্থ হয়ত আপনার শরীরে আর থাকবে না। এখন আপনি যথেষ্ট সুস্থ্য আছেন,ফলে এখন সার্জারী করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারেন। শুধু শুধু সময় নষ্ট করবেন না। আর টাকার চাইতে কি আপনার জীবনের মূল্য কম ? নার্সকে বললাম-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চাই। ডাক্তারকে বললাম সবকিছু ঠিক আছে আপনি কাজ করতে পারেন। এরপর একজন নার্স,তারপর আলাদাভাবে একজন অজ্ঞান করা বিশেষজ্ঞ এসে তার কাছে বেশ কিছু প্রশ্ন করল এবং আমার কোনো প্রশ্ন আছে কিনা জানতে চাইল। বললাম কতদিন এখানে থাকতে হবে ? তিনি বললেন ২দিন লাগতে পারে। ভাবলাম যাক খরচ অনেক কমবে। একটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হল। এরপর ডাক্তার এসেও একই রকম প্রশ্ন করে সর্জারীর ব্যাপারে মত আছে কিনা জানতে চাইল। বললাম সব ঠিক আছে, আপনি শুরু করুন। সর্জারী হয়ে গেল।
ইতিমধ্যেই তার পুত্র কাজ আছে বলে যেতে চাইলেন,পুত্রের মেয়ে বন্ধু তার বিড়ালের খাওয়ানো এবং ঘুম পাড়ানোর মত মহান কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন জানালেন। তার বন্ধু কিছু বলল না তবে বেশীক্ষণ থাকার ইচ্ছা আছে তাও মনে হলনা। তার কুকুরটিকেও বাইরে হাটতে নিয়ে যেতে হয় এবং কখনই এই নিয়মের বত্যয় ঘটেনি। অগত্যা আমাকেও তাদের সাথে চলে আসতে হল। ভদ্র মহিলার একমাত্র মেয়েকে পাওয়া গেলনা। এমনকি টেলিফোনেও রেসপন্স করল না। তার মা কেমন আছে সেটা ৪র্থ দিনেও জানতে চাইল না। অথচ এই মেয়েটাই নাকি তার মায়ের খুব প্রিয় মেয়ে। যেদিন তার মা প্রচন্ড ব্যাথায় বেডে শুয়ে ছটফট করছিল সেদিন সে বাড়ির দরজার নক করল এবং দরজা খোলার পর তার ভাইয়ের মেয়ে বন্ধুর হাতে একটি চাবি প্রদান করে ওখান থেকেই বিদেয় হল,ঘরে শুয়ে ছটফটরত তার মাকে একবারের জন্যেও দেখল না। সম্ভবত: তার কোনো কাজ ছিল, তবে অফিস শেষে গুরুত্বপূর্ণ কি কাজ তা জানা নেই। তার মার সাথে তার শত্রুতা আছে এমন নয়,বরং তারা মাঝে মাঝে একসাথে কফি শপে যায়। কিন্তু বিষয় আমি যা বুঝলাম তা হল,এদের অধিকাংশ লোকই সবকিছু এদের ব্যক্তিগত লাভ লোকসান দ্বারা হিসেব করে। সে হিসেব কষে দেখেছে এ মুহুর্তে তার মার আশপাশে থাকলে মূল্যবান সময় নষ্ট হবে, মায়ের দু:খে দু:খি হলে মন খারাপ হবে এবং তখন বন্ধুদের সাথে ফান করতে কষ্ট হবে,পৃথিবীতে যেহেতু ফুর্তি করতে এসেছি তাই এই স্বল্প সময়টাকে দু:খে ভরানোর মানে নেই এবং মায়ের সাথে সময় অতিবাহিত করলে অফিসে সমস্যা হবে,মা অসুস্থতার কারনে তার কাছে বেশিক্ষন থাকতে অনুরোধ করতে পারে,যা সরাসরি লোকসান,এছাড়া মায়ের পেছনে যদি কিছু পয়সা খরচ হয়ে যায় সেটা তো নির্ঘাত ধ্বংস। তাই এই এড়িয়ে চলা।
ভদ্র মহিলার বোন আসল। একমাত্র তিনিই এই বোনটিকে নিয়ে বেশ চিন্তিত মনে হল এবং বেশ খোজ খবর করতে লাগলেন। ফুল এবং উইশ কার্ড প্রদান করলেন। তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হোক এই কামনা করলেন এবং অফিস শেষে অনেকক্ষন তার সাথে থাকলেন। এরপর তার বিড়াল এবং কুকুরগুলোকে খাওয়ানোর সময় হল। তিনি তার বোনের অসুস্থ্যতার কথা বলতে বলতে বিড়ালের প্রসঙ্গে কথা বললেন। বিড়ালটির কিডনী ভাল কাজ করছে না। গত মাসেই ডাক্তার যে রিপোর্ট দিয়েছে তাতে তার ঘুম হারাম হয়ে যাবার জোগাড়। বিড়ালটির বয়স ২২বছর, ১১ বছর পূর্বে তিনি এই বিড়াল বাবাজিকে এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়েছিলেন। তারপর বহু দিন তার সাথে কেটে গেছে। তার স্বামী বিড়ালের সাথে ঘুমাতে ঘুমাতে বিড়ালকে ভালবেসে ফেলে। হঠাৎ করে তিনি নেশায় আসক্ত হতে শুরু করেন এবং দাম্পত্য কলহের জের ধরে স্ত্রী তার বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ করেন। এখন আদালত রায় দিয়েছে যে তিনি স্ত্রীর বাড়ির ১৫০ ফুটের মধ্যে ঢুকলেই গ্রেফতার হবেন। তাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। এখন তিনি বিড়ালটিকে দাবী করছেন,কিন্তু ভালবাসার বস্তু ইচ্ছা করলেই যে পাওয়া যায় না,তার স্ত্রী তা প্রমান করে দিয়েছেন। যেহেতু বিড়ালটি তার স্ত্রীর অতএব শুধুমাত্র ভালবাসার জোরে লোকটি এই বিড়ালটি দাবী করতে পারেনা। তবে বিড়ালটি অতি দূর্বল হয়ে পড়াতে স্ত্রীর মনে দয়া হয়। তিনি স্বামীর এক বন্ধুর মাধ্যমে এই দু:সংবাদটি প্রদান করেছেন।
বিড়ালটির শরীরের আরও বেশ কিছু স্পেয়ার পার্টস ভালভাবে কাজ করছে না। ডাক্তার যখন বলল-তাকে ইনজেকশন পুশ করে ‘পুশ ডাউন’ করতে হবে,তখন ভদ্র মহিলা কেঁদে কেটে অস্থির। মেরে ফেলতে হবে এই শব্দটি উচ্চারণ করা মালিকের নিজের হৃৎপিন্ডের জন্যে ক্ষতিকর বলে পুশ ডাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয়,এর অর্থ একই তবে সহ্যের সীমার মধ্যে পড়ে। ভদ্র মহিলার চোখদুটি ছলছল করে উঠল। আমি কিভাবে শান্তনা দিব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শুনেছিলাম সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব ক্ষমতায় থাকাকালে তার মা মারা গেলে তিনি মন্ত্রী কাজী জাফরসহ দেখতে গেলেন। এরশাদ স্বভাবিকভাবে দু:খ প্রকাশ করলেও কাজী জাফর মহা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার কান্নায় মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সকলের মা মারা গেছে,তার নিজের মা’সহ। শেষটায় স্বয়ং এরশাদ তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন-‘আপনি থামুন, আর কাদবেন না,মা তো সকলেরই মরে ! ’ যাইহোক আমি সহজে কাঁদতে পারিনা,তবে ভেতরে খুব দু:খ হয়। আমার পিতার মৃত্যুতেও আমার চোখে পানি আসেনি,যদিও ভেতর থেকে প্রচন্ড খারাপ লাগা কাজ করছিল। বিড়ালের কষ্টে কিভাবে দু:খিত হব বা তা কোন ভাষায় প্রকাশ করব ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমার বরং পূর্বের সেই ঘটনাটা মনে পড়ল। এক গ্রাম থেকে ফেরার পথে এলাকাবাসী একটি হুলো বিড়াল বস্তায় ভরে আমার হাতে দিয়ে বলেছিল এর জ্বালায় বাঁচিনা, তুমি একে বহু দূরে নিয়ে ছেড়ে দেবে। এলাকাবাসীর উপকার আমি করেছিলাম,যদিও তিন দিন পর বিড়ালটি এলাকায় ফিরে আসে। কিন্তু এহেন কষ্টের সান্তনা স্বরূপ একটি শব্দ মনে পড়ল,বললাম- ওহ স্যাড !
ভদ্র মহিলার পিতা এখনও বেঁচে আছেন। তিনি এরশাদের সমবয়সী, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে তিনি আনন্দের সাথেই বসবাস করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুদিনের কথা বলেছিল কিন্তু ভদ্র মহিলাকে ৫ দিন থাকতে হবে। অথচ তার পিতা তাকে একবারও দেখতে আসল না। এরা সত্যিই আমুদে জাত। জীবন সায়াহ্নেও এদের কোনো বোধদয় নেই।
এখানে অবশ্য কুকুর বিড়ালের ভালবাসার বিপরীত ঘটনাও আছে। এক বাড়ির কুকুর অতিমাত্রায় ডাকাডাকি করার কারনে পাশের বাড়ির লোকটি মামলা করে। লোকটি কয়েকদিন সময় নিয়েছে বিশেষ ট্রেইনারের মাধ্যমে ডাকাডাকির উপশমের জন্যে। কয়েক দিনেই আমার ধারনা হয়েছে এদেশে মানুষের থেকে কুকুরের দাম অনেক বেশী। বিষয়টা নাকি ফান নয়,বরং সত্য। কারন ফেসবুকে দেখলাম এব বুড়ো স্টাটাস দিয়েছে এরা মানুষের চাইতে ভাল। কারন এরা বিশ্বাস ঘাতকতা করেনা এরা খুবই বাধ্য ইত্যাদী।
আসল ঘটনা হল এদের জীবন দর্শন। এদের জীবনের উদ্দেশ্য হল-খাও দাও ফুর্তি কর। এই নীতি মানলে মানুষ প্রচন্ড আতœকেন্দ্রীক হয়ে পড়ে এবং অপরের জন্যে জীবন বাজি রেখে কাজ করা তো দূরে থাক, সাধারন ছাড়ও দেওয়া কষ্টকর। এটা তখনই সম্ভব যখন কিছু বদান্যতা দেখালে নিজের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা বলছি না। আসলে পরিমানের ভয়াবহতায় একথা বলাই সঙ্গত যে এরা সকলেই প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রীক এবং নিজের ক্ষতি স্বীকার করে অপরের উপকার করার মানুষিকতা এদের ভেতর নেই বললেই চলে। যেহেতু এটাই কালচার তাই বিষয়গুলো নিয়ে এরা চিন্তিতও নয়। এটাই তাদের স্বাভাবিকতা,এটাই নিয়ম।
শুনেছি বহু বৃদ্ধকে তাদের সন্তানরা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আর কখনই যোগাযোগ করেনা। এমনকি পিতা-মাতা সেখান থেকে ফোন করলেও বিরক্ত হয় এবং চিঠি লিখলেও উত্তর প্রদান করেনা। এমন নি:সঙ্গ,অপদস্ত মানুষেরা তখন অতি মাত্রায় প্রানীর ভালবাসা উপভোগ করে,এমনকি কেউ কেউ প্রানীর নামেও সম্পত্তি উইল করে। জীবনের কাছে এমন অপদস্ত মানুষেরা কুকুর-বিড়ালকে মানুষের চাইতেও উন্নত শ্রেণীর সার্টিফিকেট দিতেই পারে।
সেদিন রাস্তা দিয়ে হাটার সময় এক ভদ্র মহিলার কুকুর আমার গায়ের উপর উঠল। আমি তো ভয়ে অস্থির। আমি বরাবরই এদের পশ্চাতে কিক করতে অভ্যস্ত থাকায় এরাও রাস্তায় একা পেলে কামুড় দিতে আসত, অন্তত ঘেউ ঘেউ করতে করতে কাছে আসত। সেসময়ও আমি কয়েকবার লাঠি নিয়ে তাড়া করেছি। তবে প্রচন্ড ভয় করলেও আমি দাড়িয়ে পড়তাম,এতে তারা কামুড় দিত না। তবে ছোটবেলায় পাগলা কুত্তাও অনেক দেখেছি। ঘটনার আকশ্মিকতায় নাজেহাল হলাম। যে সাইজের কুত্তা, ঝেড়ে কিক করলে দশ হাত দূর গিয়ে পড়বে,কিন্তু এটা তো ভিন্ন দেশ,এখানে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। মহিলা তাকে আদর করে কিছু কথা বলার পর সে আমাকে ছাড়ল। তিনি দু:খ প্রকাশ করলেন এবং বললেন সে তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিল,ভয় পেয়ে যাবে তা বোঝেনি,সে খুব কিউট। মনে মনে বললাম তুই আমার তরুন বয়সের সময় দেখা করতিস এই কুত্তাডা নিয়ে। তোকে দেখাতাম আমি কত কিউট ছিলাম ! কুকুরের মাংস হালাল হলে তোর সামনেই জবাই করে খেয়ে ফেলতাম !
নাহ, আমি এত খারাপ না। পরিস্থিতি বুঝি। এমনকি কুকুরটা কামুড় দিলেও আমি ক্ষমা করার পক্ষে। আমার সহ্য ক্ষমতা আমার নিজেকেই বিশ্মিত করে। আমেরিকায় কুকুর নিয়ে যে তাল বেতাল দেখছি,তাতে সামনে হয়ত আরও কিছু লিখতে হতে পারে। আজ এটুকুই থাকুক।
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৯ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই গতিশিল সুন্দর লিখাটার জন্য ধন্যবাদ।
ভালো লাগলো আপনার লেখাটি।
বি:দ্র: আমি এই পরিক্ষার কথা ভাবলেই গায়ে কাটা দেয়। যে কবার গায়ে তেলাপোকা উঠেছে লাফিয়ে উঠে যা তা করেছি....
অ্যামেরিকান জীবনের এই চিত্রগুলো এখনই লেখার ভাল সময় কারণ কিছদিন পর আপনি এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন, তখন আর এসব চোখে পড়বেনা।
আর আমাকে মেইল করবেন,যদি কোনো উত্তর না দিতে পারি।
Neither of your FB ids are working? I sent messages to the new id. Its kind of important
মন্তব্য করতে লগইন করুন